কবি জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় - জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার, হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। মা
অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায় তাঁকে এবং তাঁর অগ্রজ কপিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে গান গাওয়ার জন্য খুব উত্সাহিত
করতেন।
১৯৪৪-৪৫ সালে, ইস্কুলে পড়ার সময়ে, তাঁদের বাড়িতে গ্রামোফোন আসে এবং তার সঙ্গে বাক্স ভর্তি রেকর্ড।
১৯৫৩ সালে প্রথামতো গান শেখার সুযোগ আসে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর অন্যান্য সঙ্গীত
গুরুদের মধ্যে রয়েছেন চিন্ময় লাহিড়ী ও সুধীন দাশগুপ্ত।
তিনি চন্দননগর কলেজ থেকে বি.কম. পাশ করে গানের জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সালে প্রথম
আকাশবাণী কলকাতায় গান গাওয়ার সুযোগ পান। সে বছরই চাকরি পান সরকারী শিক্ষা বিভাগে।
কবি তাঁর এ কোন সকাল গ্রন্থের ভূমিকায়, স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন যে শুরুতে মহাত্মা গান্ধী রোডে নিক্কো
বোর্ডিং নামের একটি মেস বাড়িতে তাঁকে থাকতে দেন বন্ধু সঙ্গীত পরিচালক অশোক রায়। কিছুদিন পর
সেখানে এসে ওঠেন আকাশবাণীর সংবাদপাঠক ও আবৃত্তিকার দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মেসের
উল্টোদিকের মেসে থাকতেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সেখানে আড্ডা জমাতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিমল কর
ও আরও কবি সাহিত্যিকেরা।
সেই সময়ে তিনি মূলত কবিতা ছড়া ইত্যাদি লিখতেন। বন্ধু অশোক রায়ই তাঁকে গান লেখার জন্য
“প্ররোচিত” করেন!
সত্তরের দশকে তারাশঙ্করের “কবি” উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন রাজেশ্বর মিত্র। তাতে তিনি মুখ্য চরিত্র নিতাই
কবিয়ালের গান গাওয়ার সুযোগ পেলেন। রবীন্দ্রসদনে তাঁর গান শুনে প্রশংসা করেন স্বয়ং হেমন্ত
মুখোপাধ্যায়, যাঁর নিজেরই ওই গানগুলি গাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তাঁর সময়ের অভাবের জন্য গাইতে
পারেন নি।
এরপর জটিলেশ্বর নিজেই রচনা করেন মধুসূদনের “কৃষ্ণকুমারী”-র নৃত্যনাট্যরূপ। কৃষ্ণকুমারীর সাফল্যের পর
রচনা করেন আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষে, কিশলয় বইয়ের তিন স্রেণীর তিনটি খণ্ড থেকে বেছে নিয়ে, রাগিণীর
প্রযোজনায় নৃত্যনাট্য “গরিব মুচি”, “সামিয়ানা”, ও “বুড়ির কৌটো”। এরপর রচনা করেন সমকালীন রাজনীতি
নির্ভর নৃত্যনাট্য “ফুটপাথে পুরাণের গল্প”।
তিনি বিভিন্ন নাটকেও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বরূপা থিয়েটারে নারায়ণ
গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে "স্বরলিপি"। এই নাটকের সঙ্গীতের কথা শুনে পণ্ডিত রবিশঙ্কর নাটকটি
দেখতে গিয়েছিলেন এবং প্রশংসা করেছিলেন। এছাড়া রয়েছে “পান্নাবাঈ”, “ঘন্টাফটক”, “বন্যপ্রেম” প্রভৃতি।
দিলীপ রায় পরিচালিত “নীলকণ্ঠ” ছায়াছবিতে তিনি যুগ্মভাবে দেবাশিস দাশগুপ্তর সঙ্গে সঙ্গীত পরিচালনা
করেন। একটি নজরুলগীতি ছাড়া আর সব গান তাঁরই লেখা। এরপর সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন দিনেন
গুপ্তর “নটী বিনোদিনী”, রাজা সেনের “দামু” ছায়াছবির জন্য।
জটিলেশ্বরে মুখোপাধ্যায়ের প্রথম রেকর্ড বের হয় মেগাফোন কোম্পানি থেকে ১৯৬৩ সালে, সুধীন দাশগুপ্তর
উদ্যোগে। অ্যালবামটির সব কটি গানের কথা ও সুর সুধীন দাশগুপ্তর নিজের। এরপর ১৯৬৪ সালে সলিল
চৌধুরীর কথা ও সুরে মেগাফোন থেকেই বের হয় “পাগল হাওয়া”। তাঁর সঙ্গীত অ্যালবামের সংখ্যা বহু।
সেই সূত্রে ১৯৬৮ সালে এইচএমভি থেকে বের হয় “বধূয়া” রেকর্ডটি। এরই একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গান
“বধূয়া আমার চোখে জল এনেছে”।
১৯৭৪ সালে এইচ.এম.ভি. থেকে রেকর্ড করা “এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার” গানটি তাঁর
পরিচয়গীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন থেকেই গানটির প্রথম লাইনটিকে, সমাজের দুরবস্থা, দুর্দশার বিরুদ্ধে
স্লোগান করে নিয়েছে বাঙালী। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনেও এটাই ছিল অন্যতম
শিরোনাম, মঞ্চে মঞ্চে, বিভিন্ন হোর্ডিং, পোস্টার ও ব্যানারে।
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসঙ্গীত সংগ্রহ” সংকলনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাঁর "অনেক শহর গ্রাম ছাড়িয়ে"
গানটি। এই গানটি পূরবী মুখোপাধ্যায়, অনুশ্রী-বিপুল, লোপামুদ্রা মিত্র, নীতিশ রায় প্রমুখ জানা-অজানা বহু
শিল্পী, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশন করেন।
তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সনির্বাচিত গানের সংকলন “এ কোন সকাল” (২০০১), “স্বরবরণ”, “আমার
রবীন্দ্রনাথ”, “দিনগুলি মোর” (২০১৪), পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা সহ ছড়ার বই “ছড়িয়ে
আছে ছড়ার মত” প্রভৃতি।
২০১৩ সালে তাঁকে রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি থেকে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
আমরা মিলনসাগরে কবি জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গান ও কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে
দিতে পারলেই এই প্রয়াসের সার্থকতা। এই পাতা তাঁর প্রতি মিলনসাগরের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
উত্স - জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সৃজন প্রসঙ্গ, “এ কোন সকাল” (২০০১ ) কাব্যগ্রন্থ।
. জয় মুখার্জী
. www.thestatesman.com/
. www.prothom-alo.com/
কবির ফেসবুক পাতা - https://www.facebook.com/Jatileswar-Mukherjee-599165806798821/
কবি জটিলেশ্বর মুখোপাধ্য়ায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
১০টি কবিতা নিয়ে এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ৪.৬.২০১৫
২৩টি নতুন কবিতা নিয়ে পাতার পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১৪.৬.২০১৬
কবির প্রয়াণ-দিবস সংযোজন - ২৪.১২.২০১৭
...