কবি জয়ন্ত মণ্ডলের কবিতা
*
শরত-সোহাগ
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

এই মাত্র মৌসুমী ই-মেলে তোমার মেসেজ পেলাম ,
তুমি বলেছ -
''আমি আগামী শরতে ভোরের শিশির হবো ''
আমার কর্তব্য-ক্লান্ত মন তো
ঘড়ির কাঁটায় চেপে বসে আছে ,
আমার স্বপ্নগুলোর চোখের কোণে
এখনো শ্রাবনের ঘনঘটা ,
মেঘগুলোকে শুকোতে দিয়েছি -
একটু পেঁজা পেঁজা হলেই
আমিও পৌঁছে যাবো -
ভোরের আকাশ হয়ে সূর্য দেবো -
রং মেখে নিও l

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
উপলব্ধি
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

গন্তব্য - নদীর মোহনা -
হাঁটছি বীতশোক বৃদ্ধের মতো,
চোখে আয়ুর কংকাল আর
কাঁধে সংস্কারের বোঝা নিয়ে হেঁটে চলেছি -
স্ত্রী-পুত্রের এঁটো পাতার ভীড়ে ;
পিঠে আ-শৈশব স্মৃতির কচুরিপানা আর
ক্রীতদাসী ভালোবাসার অবক্ষেপিত পলি,
তবু হাঁটছি নীল সাগরের ডাকে,
চাঁদের অহংকার , সূর্যের স্পর্ধা কিছুই নেই -
নেই অনিবার্য কক্ষপথের ঔদ্ধত্য -
আছে অযাচিত সংগ্রহশালার
হাজার বছরের দলিল ;
সম্মুখেই লবণাক্ত যতিচিহ্ন -
সমুদ্রপ্রাপ্তি নিয়েই এবার
মরণোত্তর পথচলা শুরু,
প্রতিদানে তাই বলে যাই -
'ভুলে যেও'

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অবশেষে
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

সময়ের মেয়েলি বুকে
একদিন ভীরু নি:শ্বাস রেখেছিলাম
ঠিক কুয়াশা বালিশের মতো ;
তোমার ওষ্ঠে তখন পানকৌড়ি হাসি
আর অধরে মোহনার তিয়াসা-
মধ্যাহ্ন সূর্যতপের মতো
তুমি চাইছিলে প্রাপ্তির স্বর্গ ;
না পাওয়ার পিপাসা বাঁচিয়ে রাখতে
আমি আটকে গেলাম গৌরচন্দ্রিকায়,
তারপর বিদ্রোহের অকাল বৈশাখে
পুড়ে গেলো কিছু ক্ষণজন্মা বসন্ত ;
আজ গোধূলির রং ছুঁয়ে
তুমি আবার এসেছো !
তোমার অনুরাগের চিবুকে টোল পড়েছে -
তবে কী বয়স কুড়িয়ে এনেছো !
এবার আমি শুধু বর্ষা চাই -
অনুরক্ত অভিমানেরা মোমের মতো
গলে পড়ুক অপেক্ষার অসংযমে l

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নষ্ট অহংকার
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

অনুরক্ত কিছু বসন্ত ধুলো মেখে
পড়ে আছে অহংকারী দেরাজে -
কিছু নাবলা কথা শুকনো গোলাপ হয়ে
সহ্য করছে তেলাপোকার ধকল -
কিছু নোনালাগা স্মৃতি
জীবন্ত জীবাশ্মের মতো
থামিয়ে রেখেছে ঘড়ির কাঁটা ,
আজ আবার হটাত দেখা -
এ কোন তুমি !
তোমাকে দেখেও জ্বালামুখ ঘুমন্ত -
নানা , আমি রক্ত চাই না , মাংস চাইনা,
চাই ভাংগা-চোরা কংকাল ;
দশ বসন্তে চাপা পড়া
নষ্ট অহংকার l

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্বপ্নের কবিতা
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

তৃণাংকুর ওষ্ঠে শয্যা পেতে
ঘুমিয়ে থাকা বোধ ঢেলে
ইচ্ছে ছিলো -
তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখবো ;
সামাজিকতার অক্টোপাসে আজ তারা
ডানা-ছাঁটা পায়রার স্বপ্ন -
যেন মন্থ-কূপে আটকানো কচুরিপানা-
অন্তরে ছিলো শ্রাবস্তির মেহনত , আর
কলমে জোয়ার-ভাঁটার সন্ধিক্ষণ ;
চেয়েছিলাম সৃষ্টির অপ্রতুল ইংগিত
আর বর্ণমালার একান্ত আনুগত্য ,
তবু সূর্য-মাখা জ্যোতি
রোজ মিলিয়ে যায় ,
এবার জংধরা খাঁচা ভেংগে
ইচ্ছেদের উড়িয়ে দিই
গন্তব্যহীন ফিনিক্স পাখির মতো -
দেখি খোলা আকাশের ক্যানভাসে
স্বপ্নেরা কবিতা হয়ে আছে -
.                 একান্ত বাধ্যতায় l

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সাধের নীড়
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

বলছে কপোত,  সময় খারাপ
সাবধানেতে থেকো ,
আদর মাখা ডিমগুলো সব
যত্ন করে রেখো l
কপোতী বলে, ফিরে এসো -
বিষাদ-করুণ সুরে,
আমায় ছেড়ে যেওনা যেন
ফুড়ুত্ করে উড়ে l
কপোত বলে আনবো আমি
ডাল - শস্য - দানা,
চেয়ে দেখো ক্ষুধায় কাতর
আমার দুটি ছানা l
কপোতী বলে ঝড়-ঝামটায়
গাছের ডালে যেও,
দুপুর বেলা ক্লান্ত হলে
যা হয় কিছু খেও l
কপোত বলে চিলের নজর
আড়াল করে রেখো,
ছাতার মতো ডানার নীচে
সংগোপনে ঢেকো l
কপোতী বলে, ওগো প্রিয়
আমার নাহি ভুলো,
খাঁচা-সুন্দরীর ছলাকলা
এড়িয়ে তুমি চোলো l
কপোত বলে বাকুম বাকুম
এবার আমি যাই,
বাচ্চা মেয়ের সাধের পেঁপে
একটু যদি পাই !
কপোতী বলে বিষ-মাখা মাছ
সিন্টুবাবুর ঘাটে,
খেয়াল রেখো চারখানা ফাঁদ
তেপান্তরের মাঠে l
এমনি করে স্বপ্ন বোনা
ছোট্ট বাসা ঘিরে,
সুখ-দু:খের জীবন কাটে
সোহাগ-মাখা নীড়ে l

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সমাধান
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

দুষ্টু হাওয়া বড়োই অস্থির -
বিপন্ন পিপাসা বোঝে না!
এলোপাতাড়ি কিশোরি অঙ্গের
চড়াই-উতরাই মেপে
গোধূলির আবির মেখে কাঁপতে থাকে
বৈকালি-সূর্যের কফিন ছুঁয়ে ;
সহ্যের এজলাসে আজ তার শুনানি-
স্পন্দনহীন দ্বীপে নির্বাসনের রায় -
তাই মূঢ়তার বলিরেখা রৌদ্রহীন ,
বুড়ো তানপুরায় সুর-কাঁদানো অতীত
রাহুভেদী কর্ণের মতো হৃদয় খোঁড়ে -
এখন মেঘ নেই , ঝড় নেই -
যদি আঁধার গড়িয়ে চাঁদ আসে
তার মৌন অহংকার নিয়ে ,
বসবো হৃদয়ের নরম ছায়ায় -
বনলতা সেনের চোখে চোখ রেখে
হালভাংগা নাবিকের মতো খুঁজবো
দারুচিনি দ্বীপের রহস্য -
সময়ের চুন-বালি-খসা ভগ্নাংশে
এই হোক জীবনের শেষ সমাধান l

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সাধনা
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

রাত জেগে হাত বোলায় মাথে
বিন্দি পিশির জা,
ভুল করে আজ ছোট্ট খোকা
ডাকলো তারে মা l
স্বপ্ন-হারা শূন্য ঘরে
সাতকুলে নেই কেউ,
বক্ষ-পিজুস-কুম্ভে যেন
লাগলো কিসের ঢেউ l
দুপুর বেলা কৃষ্ণসেবা
পূজার আসন পাতি,
নয় নিয়ম ভেংগে আজ হাতে তার
খোকার দুধের বাটি l
কাল যে হাতে পরিয়ে দিত
বেলপাতা আর ফুল,
আজ সে হাতে কাজল দিতে
হয়নি কোনো ভুল l
সন্ধ্যেবেলার সাধন-ভজন
ভক্তি কথা ফেলে,
আজ গোধূলী কাটবে তার
লুকোচুরি খেলে l
ধূপ-ধুনো সব শুকনো লাগে
শূন্য লাগে বুক,
খোকার কাঁথার গন্ধে যেন
মাতাল করা সুখ !
আজ পুনরায় স্বপ্ন দেখে
বিন্দিপিশির জা,
খোকার মাঝে হারিয়ে যাবে
হয়ে খোকার মা l

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কেন ?
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

মেয়েটির হাতে রাতের তারা ছিলো
ছিলো কোকিল ডাকা ভোর,
শিশিরে পা ডুবিয়ে সে হাঁটতো
মেঘ-ছেঁড়া রোদের মতো,
সূর্যকে মুঠোয় ভরে চুমু খেতো উল্লাসে,
বাতাসের গলা ধরে
কোকিল হতো মুহুর্মুহু,
সবুজ-জুড়ে আঁকতো আঁকিবুকি
শিশুর প্রথম প্রলাপের মতো,
কঠিন শাসনের কালো পাঁকে সে ছিল
পাকাল মাছের মতো অধরা -
মেয়েটি আদো-কণ্ঠে উদ্বোধনী সংগীতের মতো -
ছল ছল হেসে উঠতো,
মোহনার মতো বেণী দুলিয়ে
ছুটত হরিণ শিশুর মতো ;
মেয়েটির কবিতা চুরি হলো -
আজ সে রিপু করা চাঁদের মতো নিষ্প্রভ -
চার দেয়ালের অন্ধকারে
তার পৃথিবী হারিয়ে যেতে যেতে
প্রশ্ন রাখে -
'কেনো ? কেনো ? কেনো ? '

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কর্মফল
কবি জয়ন্ত মণ্ডল

একটি অপুনর্ভব অভাব বোধ ,
একটি স্তন্য-বন্চনার উলংগ স্মৃতি
পৃথিবীর ভবিষতে কে সিংহাসনচ্যুত করে ;
জন্ম দেয় স্বরলিপিহীন সংগীতের মতো মাকড়সার সংসার ,
গভীরতার ভারে আক্রান্ত ভালোবাসা
লাভ-ক্ষতির অংকে পূর্ণ হয় ,
পাথুরে কর্তব্য শেষনি:শ্বাস ফেলে
বৃদ্ধাশ্রমের বিছানায় -
রচনা করে নিজের সমাধি l

.      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর