অনুরক্ত কিছু বসন্ত ধুলো মেখে পড়ে আছে অহংকারী দেরাজে - কিছু নাবলা কথা শুকনো গোলাপ হয়ে সহ্য করছে তেলাপোকার ধকল - কিছু নোনালাগা স্মৃতি জীবন্ত জীবাশ্মের মতো থামিয়ে রেখেছে ঘড়ির কাঁটা , আজ আবার হটাত দেখা - এ কোন তুমি ! তোমাকে দেখেও জ্বালামুখ ঘুমন্ত - নানা , আমি রক্ত চাই না , মাংস চাইনা, চাই ভাংগা-চোরা কংকাল ; দশ বসন্তে চাপা পড়া নষ্ট অহংকার l
বলছে কপোত, সময় খারাপ সাবধানেতে থেকো , আদর মাখা ডিমগুলো সব যত্ন করে রেখো l কপোতী বলে, ফিরে এসো - বিষাদ-করুণ সুরে, আমায় ছেড়ে যেওনা যেন ফুড়ুত্ করে উড়ে l কপোত বলে আনবো আমি ডাল - শস্য - দানা, চেয়ে দেখো ক্ষুধায় কাতর আমার দুটি ছানা l কপোতী বলে ঝড়-ঝামটায় গাছের ডালে যেও, দুপুর বেলা ক্লান্ত হলে যা হয় কিছু খেও l কপোত বলে চিলের নজর আড়াল করে রেখো, ছাতার মতো ডানার নীচে সংগোপনে ঢেকো l কপোতী বলে, ওগো প্রিয় আমার নাহি ভুলো, খাঁচা-সুন্দরীর ছলাকলা এড়িয়ে তুমি চোলো l কপোত বলে বাকুম বাকুম এবার আমি যাই, বাচ্চা মেয়ের সাধের পেঁপে একটু যদি পাই ! কপোতী বলে বিষ-মাখা মাছ সিন্টুবাবুর ঘাটে, খেয়াল রেখো চারখানা ফাঁদ তেপান্তরের মাঠে l এমনি করে স্বপ্ন বোনা ছোট্ট বাসা ঘিরে, সুখ-দু:খের জীবন কাটে সোহাগ-মাখা নীড়ে l
রাত জেগে হাত বোলায় মাথে বিন্দি পিশির জা, ভুল করে আজ ছোট্ট খোকা ডাকলো তারে মা l স্বপ্ন-হারা শূন্য ঘরে সাতকুলে নেই কেউ, বক্ষ-পিজুস-কুম্ভে যেন লাগলো কিসের ঢেউ l দুপুর বেলা কৃষ্ণসেবা পূজার আসন পাতি, নয় নিয়ম ভেংগে আজ হাতে তার খোকার দুধের বাটি l কাল যে হাতে পরিয়ে দিত বেলপাতা আর ফুল, আজ সে হাতে কাজল দিতে হয়নি কোনো ভুল l সন্ধ্যেবেলার সাধন-ভজন ভক্তি কথা ফেলে, আজ গোধূলী কাটবে তার লুকোচুরি খেলে l ধূপ-ধুনো সব শুকনো লাগে শূন্য লাগে বুক, খোকার কাঁথার গন্ধে যেন মাতাল করা সুখ ! আজ পুনরায় স্বপ্ন দেখে বিন্দিপিশির জা, খোকার মাঝে হারিয়ে যাবে হয়ে খোকার মা l
মেয়েটির হাতে রাতের তারা ছিলো ছিলো কোকিল ডাকা ভোর, শিশিরে পা ডুবিয়ে সে হাঁটতো মেঘ-ছেঁড়া রোদের মতো, সূর্যকে মুঠোয় ভরে চুমু খেতো উল্লাসে, বাতাসের গলা ধরে কোকিল হতো মুহুর্মুহু, সবুজ-জুড়ে আঁকতো আঁকিবুকি শিশুর প্রথম প্রলাপের মতো, কঠিন শাসনের কালো পাঁকে সে ছিল পাকাল মাছের মতো অধরা - মেয়েটি আদো-কণ্ঠে উদ্বোধনী সংগীতের মতো - ছল ছল হেসে উঠতো, মোহনার মতো বেণী দুলিয়ে ছুটত হরিণ শিশুর মতো ; মেয়েটির কবিতা চুরি হলো - আজ সে রিপু করা চাঁদের মতো নিষ্প্রভ - চার দেয়ালের অন্ধকারে তার পৃথিবী হারিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন রাখে - 'কেনো ? কেনো ? কেনো ? '
একটি অপুনর্ভব অভাব বোধ , একটি স্তন্য-বন্চনার উলংগ স্মৃতি পৃথিবীর ভবিষতে কে সিংহাসনচ্যুত করে ; জন্ম দেয় স্বরলিপিহীন সংগীতের মতো মাকড়সার সংসার , গভীরতার ভারে আক্রান্ত ভালোবাসা লাভ-ক্ষতির অংকে পূর্ণ হয় , পাথুরে কর্তব্য শেষনি:শ্বাস ফেলে বৃদ্ধাশ্রমের বিছানায় - রচনা করে নিজের সমাধি l