কবি জিয়াদ আলির কবিতা
*
বুড়ো বয়সের কথা
কবি জিয়াদ আলি

গ্যাংটকে টক মেলে
নাসিকেতে নস্যি
লাসা গেলে মিলবে না
এক ফোটা লস্যি |

চাইলেই পাওয়া যায়
হোটেলে হবিষ্যি ?
বুড়ো হলে বড় জ্বালা
ছেলে ভাবে পুষ্যি  |

নাতি কাঁধে চেপে বলে
তুমি এক দস্যি |

. *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
তাকে চাই
কবি জিয়াদ আলি

শ্রমের সহজ মূল্যে সবকিছু কিনে নেওয়া যায় ?
প্রভাতী সূর্যের রঙে জেগে ওঠা চাষি বউ
কলের মজুর
পাখির ডানায় মাখা নিদ্রার আবেশ
নদীর জলের মধ্যে ফেনায়িত আবেগের
তীব্রতম ঘ্রাণ
সন্ধ্যার শিশিরে ভেজা ঘাসের নম্রতা ?

কে থাকে বন্ধক কার কাছে
মানুষ না মানুষের
নিজস্ব সময় ?

ও সব নিগৃঢ় প্রশ্ন যে শেখায় প্রথম সংকেত
তার নাম মে দিবস
তাকে চাই অমল উদ্ভবে |

. *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
অমল পৃথিবী
কবি জিয়াদ আলি

হিমেল হাওয়ায় আজো রাইফেলের শব্দে প্রতি রাতে
হঠাৎ অন্ধকারে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়
ঘুমুতে পারি না আর এইখানে স্বদেশে ও ঘরে
সময় সংসার ঘর ক্রমাগত লুটোপুটি খায় |
চোখ মেলে দরজা খুলে দেখি
আমাদের চারপাশে তাক করে বসে আছে
পশুর মতোন চোখ জ্বেলে রাখা হিংস্র শ্বাপদেরা |

মানবতা ---- হেঁকে হেঁকে যারা সব এতো দিন ধরে
অহিংসা অহিংসা বলে ভনিতায় বুকে আঁকে চাঁদ
তাদেরই বশংবদ বাণী বাহকের দল দ্যাখো
আমাদের চারপাশে বসে আছে ঘাতকের মতো,
প্রসারিত দৃষ্টির নিকটে
দেখা যায় বাঁধা আছে বাতাবী লেবুর সেই গাছে
অতি প্রিয় আশিসের বৃদ্ধ মা ও বাবা,
রক্তের অঢেল স্রোতে গাছ-তলা মাটি ভিজে আছে
আশিসের বৃদ্ধ বাবা এবং মায়ের সারা দেহ
অসংখ্য গুলির দাগে একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গ্যাছে |

অমল পৃথিবী তুমি----- এ আমায় কোথায় এনেছো !
এখানে তো স্বাধীনতা হীনতায় উপেক্ষিত
যৌবনের স্বাদ
এখানে জীবন আখ-মাড়াইয়ের যাঁতা-কলে পেষা
এখানে জীবন সেই কিনু গোয়ালার
গলির মধ্যে মরা শুধু এক বেড়ালের ছানা |
সমস্ত হৃদয় আজ চৌচির হয়ে ফেটে পড়ে
তছনছ হয়ে যায় মানবিক এ-মহাবাগান |

অমল পৃথিবী তুমি---- এ আমায় কোথায় এনেছো !
রক্তমাখা কপোতাক্ষে আমি আর তাকাতে পারি না,
বাঙলার শিশুর দেহ ভেসে যায় খড়ের নৌকায়
বাঙলার শিশুর দেহে বসে আছে শকুনের ছানা----
অমল পৃথিবী তুমি কী সান্ত্বনা দিচ্ছ আমায় !

আমার সমুখে মরে চাষীবউ, কলের মজুর,
আমার সমুখে মরে হারানের বিধবা দুলালী,
আমার সমুখে নারী--- নাচঘরে বিবস্ত্রা নায়িকা,
আমার সমুখে রক্ত--- পিশাচের রক্ত-হোলি খেলা |
আমার সমুখে দ্যাখো পড়ে আছে অতি প্রিয়
আশিসের মা
আমার সমুখে দ্যাখো পড়ে আছে
প্রিয়তম প্রেয়সী আমার |

অমল পৃথিবী দ্যাখো নগরীর নগ্ন প্রাচীপটে
ক্রুশবিদ্ধ মহম্মদ ঝুলে থাকে
হতাশ পথিক,
অমল পৃথিবী দ্যাখো মহাদেব ন্যাংটা হয়ে গ্যাছে
অমল পৃথিবী দ্যাখো ভাঁওতা-ভূত জেসাসের পাশে
আফিম ব্যাপারী সেই ঈশ্বরের
মৃতদেহ ভাসে |
এ সব অবশ্য মূল্যে ভুলে যাও---- চালাকির দেবতা মহান
কিছুই পারে না দিতে
শুধু কিছু মৌন অবসাদ-----
অমল পৃথিবী তুমি---- কী আমায় বোঝাবে এখন ?

অমল পৃথিবী তুমি গর্জে ওঠো শহরে বন্দরে,
অমল পৃথিবী তুমি রহমান কামারের ঘরে ঢুকে পড়ো,
অমল পৃথিবী তুমি মাঠে নামো দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে
জীবন চাষীর হালে লাঙলের শক্ত ফলা ধরো |
অমল পৃথিবী তুমি এনট্রি নাও সারা দেশ জুড়ে |

অমল পৃথিবী তুমি কী আমায় সান্ত্বনা দেবা----
প্রতিটি রাতেই দেখি বোমারু হাওয়ায় ছোটে গুলি
প্রতিটি রাতেই আজ আমাদের ঘুম ভেঙে যায়,
ঘুমুতে পারি না আর এইখানে
স্বদেশে ও ঘরে,
এখন বাতাস যেন হেঁকে যায় গেরিলা পৃথিবী
জেগে ওঠে, কথা বলে মানবিক আকাঙ্ক্ষার আয়ু
জেগে ওঠে সারা দেশ মুক্তির আশায় |

অমল পৃথিবী তুমি ঘুমায়ো না, ঘুমায়ো না আর |

.
            *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
ঘরের চেয়ে মিছিল ভালো
কবি জিয়াদ আলি

ঘরের চেয়ে মিছিল ভালো
ঘর যেখানে বন্ধ্যা চতুষ্কোণ
হাজার হরিণ চোখ অমেয়
হলেও সে তো গৃহীর বাঁধা মন |

ঘরের চেয়ে মিছিল শ্রেয়
ঘর যেখানে মোহের মৌন মায়া
অনেক কিছই থাকলে দেয়
তবুও যার ভিন্ন ছায়া কায়া

ঘরের চেয়ে মিছিল শ্রেয়
মিছিল থেকে শত্রু মারার পণ
ঘরের মিছিল সে দুর্বহ
তাতেই তবু মুক্তি জেতার রণ |

.       *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
নির্বাসন থেকে
কবি জিয়াদ আলী

যা কিছু অলক্ষ্যে ছিল
তাকে ছুঁয়ে দেখার আগ্রহে
মটরের খেত ভেঙে যত যাই শীর্ণা সেই
নদীটির কাছে
নদী ঠিক তত দূরে দূরে
সরে যায় ক্রমাগত---
শালিকেরা হাসে।

আশ্বিনের পরন্ত বিকেল
হরিদ্রা বর্ণের গুঁড়ো গায়ে মেখে
কিশোরী চাঁপাও গাঢ় হয়,
আমি তাকে দেখব বলে কতবার উদোম শরীরে
দরজা জানালা খুলে বসে থাকি
ভাড়া করা বাংলোর ভিতর।
প্রজাপতি উড়ে যায় অনায়াসে,
আমার দুচোখে
ঈর্ষার আগুন জ্বলে :
নীল আকাশে মেঘের আশ্রয়।

আমার আশ্রয় কই,
কার হাত বন্ধু-বেশে এগোয় সম্মুখে,
আমি নতজানু হই---
নদী, তুমি ধুয়ে দাও আমার শরীর,
মেঘমালা আমাকে সাজাও।
বন্ধুর মতোই কেউ হাসে---বলে ওঠে
নিজের খোলস তুমি নিজেই ছাড়াও।

.       *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর