কবি জোহরা উম্মে হাসান-এর কবিতা
*
শাস্তি
কবি জোহরা উম্মে হাসান

সব কথা শেষ , তবু কেন মুখোমুখি বসে আছি
এখনো দুজনা ? দুজনা ? এই মাত্রর ওয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গ্যাছে বিলটা ।
শোধ করে দিলে চুকে বুকে যাবে সবটা !
পেয়ালা জুড়ে ধুমায়িত চা সকাতর , শুকিয়ে যাওয়া
চৌবাচচার মতো মরমে মরে। নো অ্যাডেড সুগার
কুকিজ এর পাশ ধরে সারি বাঁধা পিঁপড়ার কসরত চলছে বেড়ে ।

সিনার দেয়ালের বুকে লাফালাফি টিকটিকি জুটি
প্রাইভেসীর সীমারেখা লঙ্ঘন করে কেবলি পাতছে আঁড়ি !
জোড়ায় জোড়ায় নরনারী আসছে যাচ্ছে, যাচ্ছে আসছে রেস্তোরায় ।
আমরা তার কোনটির দলে ? কোনটির দলে ?

পকেটে অযথা হাত অথবা ঘনঘন ঘড়ি গোনা
বারে বারে মনে করিয়ে দিচেছ, সময় বড়ই সংক্ষিপ্ত !
বড়ই সংক্ষিপ্ত ! পাতলা চুলে নখের ডগা চালিয়ে ওদের একজন বললো-
কেউ যদি কিছু মনে না করেন , আমরা আর একটু
বসতে চাই এখানে । আর একটু । প্লীজ ! প্লীজ !
অন্যজন মাথা নাড়িয়ে একাগ্রতা প্রকাশ করলো
প্লীজ ! প্লীজ !

চিলতে কাপ-পেয়ালা হঠাৎ করে বলে উঠলো :
না , না , কিছুতেই না, তোমাদের শাস্তি
সময় মতো আস্বাদ গ্রহন না করার জন্য !!


.        
           ****************                                
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দেয়া ভালবাসার সময়
কবি জোহরা উম্মে হাসান

ফুটপাতের উপর বসে গায়ে গায়ে রোদ্দুরের
নাকছাবি পোহাচেছ কজন ! টেরিকাট চুল
উড়ু উড়ু মনের উসকো খুসকো যুবকটি লেপটে আছে
ডোরা কাটা শাড়ি , নীল চুড়ি যুবতীটির গায় ! পাশে গোমড়া মুখো একজন,
শাশুড়িই হবে হয়তো , চারদিকে পান পিকছিটিয়ে চোখে মুখে জানান দিচেছ- আমাদেরও
তো বয়স ছিলো , তা বোলে এতো আদিখ্যেতা ?

কয়েকটা চুনো পুঁটী রোদ কাঁথা গায়ে ।
বট পাতার নীচে সুখ সুখ রোদে থৈ থৈ নানান জাতের মুখ !
যে যার মতো মহা ব্যস্ত যেন !
রোদেরও তো আবার হিসেব আছে।কতোটা সময় সে দেবে পোহাবার ,
কতটা সময় ধান কাঁথা শুকোবার
কতটা সময় হেলা ফেলা করে কাটিয়ে দেয়ার আর কতটা সময় অভিসারের ...।

এখন সময়  পোহাবার , হয়তো বা
অভিসারের ! ঝুড়ি বাদাম বুকে ফিঁকে ঠোঁট ছেলেটির মন আজ ভারী ।
ভীষণ ভারী ! য়ুনিভা বন্দ অকারনেই
বাদাম খোলার জলে ডুব দেবে কারা ?
ফুলের দোকানীরও একটুএকটু করে কষ্ট জমছে বুকে ! বুকের মধ্যে !

অতঃপর তাদের দেখা মিললো , জোড়ায় জোড়ায় বাঁধা
কপোত –কপোতী যেন !
লাল, নীল , সাদা , বেগুনী
হলুদ , সবুজ কত কত !
ওরা এসে চিলতে ফুটপাতের
বুক জুড়ে বসলো । হাসলো , খেললো –করলো যত হুটোপুটি ,খুনসুটি । বাদাম চিবলো ,
কেউ ফুল পড়লো  খোঁপায় , কেউবা রেখে দিলো সযত্নে বুক পকেটে !

রোদটা তখন হঠাৎ করেই ভালবাসার সময় দিলো বাড়িয়ে !


.                
            ****************                                
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সম্পর্ক
কবি জোহরা উম্মে হাসান

আমাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে
সে সম্পর্কের কোন নাম নেই
ধাম নেই-নেই আবাস-বাড়ি
বিনিসুতোর মতো এমন কোন সুতো নেই
যা দিয়ে বেঁধে রাখা যায়
সম্পর্কবিহীন এ সম্পর্ককে । তবুও তো তা টিকে
আছে , হয়তো অনেকদিন -----।

সব সম্পর্কই রক্তের নয়
অথচ দেখ ; রক্ত কেমন এক মুগ্ধ কপটতায় বেঁধে রেখেছে সবাইকে মায়াজালে,
অন্যায় -অপবাদে
তুচ্ছ-অবহেলায় ! সেরা সম্পর্কের তবকে
একচেটিয়া বাজারে অভিনব কায়দায়------।

আমাদের সম্পর্কের কোন নাম
নেই, হতে পারে এ কোন নিদারুন ছলনা
রাজা-রানি, সখা-সখী , প্রেমিক-প্রেমিকা
মা-বাবা, ভাই-বোন, কেউ নই কারো
তবুও টিকে আছে এ সম্পর্ক
ইচ্ছা-অনিচ্ছার দোলাচলে ।

নকল সিংহাসনে বসে জাহির করিনা
অসম্ভব ক্ষমতার কথা,বলিনা ব্যাকুল
আদ্র সুরে কোন ভালবাসার কথা ।
তবুও টিকে আছি দেখ কি অসম্ভব বিশ্বাসে
ও অবিশ্বাসে আমরা। যেমন করে টিকে আছে
আলোকলতার সারি সুউচ্চ গাছের মাথায়
পরপ্স্পর পরপ্স্পরকে আঁকড়ে ধরে ।


.                   ****************                                
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কাঁটাতারের বেড়া
কবি জোহরা উম্মে হাসান

কাঁটাতারের দু পারেই রদ্দুর ,দু পারেই অন্ধকার
দু পারেই ছায়া, আলো দু পারেই
দু পারেই মানুষ ,মানুষ দু পারেই !
মানুষ আর পাখি, পাখি আর মানুষ
কিইবা তফাৎ !পাখিদের নেই কোন ঠিকানা
কোন কোন মানুষেরও নেই কোন গেহ , নেই আবাস
তাই বুঝি তাঁরা অকালে পাখি হয়ে যায়
ডানা ভাঙ্গা পাখি , দেহ গেথে তারে তারে
হৃদয় ? হৃদয়ে কেঁদে মরে অক্ষম হৃদয়ে হৃদয়ে!
কেটে দাও সেই সব হাত , নিষ্ঠুর, ক্ষমাহীন
ভেঙ্গে দাও যত বেড়া । কাঁটাতার পেরুলেই কেন তীর ?
দেখ পাখিরা কত ভালবাসে পাখিদের
আর মানুষ কাকে ভালাবাসে  ? অন্তত
মানুষকে নয় ? কাঁটাতারের বেড়া তাই তো বলে !


.                
     ****************                                
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আষাঢ়ের প্রথম কদম ফুল
কবি জোহরা উম্মে হাসান

এ কোউন পরযায়ী মেঘের  সাথে ভালবাসা হৈল গো
সই , কোউন পরযায়ী মেঘের  শাইথে প্রেম হৈল মোর ?
সে ঘোরে দিন বিহারে,  আকাশের সাথে চলে তাঁর পিরিতের
যত মাতলামি । যখন সে কৃষ্ণ কালো , আকাশও ঘোর কালো
যখন সে ধূসর ফিঙ্গে সাদা পিঙ্গল ,  সে রুপ
আকাশেরও গো সই ! আকাশেরও !

আমার কপাল পোড়া গো সই , আকাশের সাথে পাল্লামি ?
তবু সে মোরেও ভালবাসে  গো সই , যখন তাঁর আমায়
ছুঁতে সাধ হয়,সে জল হোয়ে আসে গো  সই মিত্তিকায়, ঘাসে
ঘাসে ,  জল হোয়ে আসে ! আসে ব্রজ নিনাদ ,বাউল বাতাস
সাথে নিয়ে ! আমি জলেরে ডরাই না সই
ডরাই  বাকি সব ঝনঝনানি !  কেবল
জল হইয়া আসলে  কি ক্ষতি গো তাঁর ,  রাজার সাথে কেন গো
এতশত পাইক পেয়াদার কেচ্ছামি ?

শোন  গো সই ,  কাইল  সে  এসেছিল চুপি চুপি
বৃষ্টি হয়ে দিনমান ।  খেলেছিলো  আমায় নিয়ে জল খেলা
জলে জলে চোখে জল, সে জল মিলিয়ে গেল রুমোল
বাতাশে । নদীর জলে সিনান করি দুজন
দিনভর  চলে জলকেলী কেলীজল খেলা ! খেলতে খেলতে
যখন যায় বেলা , সে আমায় উড়িয়ে নিয়ে গেল নীপবনে !
সেথায় সে মোর খোঁপায় পরিয়ে দিলে আষাঢ়ের প্রথম কদম ফুল !


.              
            ****************                                
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর