কি করে বলি মাগো আমি মুক্ত , ছ'টা বছর শরীরের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি । এই চার দেওয়ালের মধ্যে লজ্জা, ঘেন্না চেটে খাচ্ছি - তবে খুব সুখেই আছি ! অন্তত তোমার পোষ্য কুকুর গুলোর জোর- জবরদস্তি থেকে নিস্তার পেয়ে ।
প্রতিদিনের কথা মনে পড়লে আমার রক্তে যেন উজান স্রোত বয় । আমার স্কুল যাওয়ার পথে, ওরা আমাকে হিংস্র মাংসাশী প্রাণীর মতো শিকার করেছিল । আমি আর বাড়ী ফিরিনি । শেষ অবধি বেছেই নিয়েছি, চার দেওয়ালে আবদ্ধ সুখের কাজ।
অনেক টাকা পাই , আর আমি গরীব নই , আজ আমার সবই আছে এই অন্ধকার জগতে ।
মা ! এ জীবনটা তো আমি চাইনি , পাঁচজনের মতো আমিও বাঁচতে চেয়েছিলাম , আজ বাইশ বছরেও এই অন্ধকারেই আলো খুঁজে বেড়াই । বাইরের জগত আজ আমার কাছে অচেনা কিম্বা আমিই ওদের কাছে । এত ভিড়ের মাঝে তবু আমি একা , এ সমাজ কি আমার জন্য নয় ?
আমাগো কোনো দ্যাশ নাই , শুধুই স্বাধীনতার পরে স্বাধীনতা আসে সেবার ওদের তাড়িয়ে ১৯৪৭ -এ পেলুমগে পাকিস্তান সে কি অত্যাচার হতি লাগলো খানেরা এসি আমাগো বউ ছেলে মেয়ের ইজ্জত লুটতিছে
আবারো লড়াই করতি হবে , লেগি পড়লাম হক্কলে মিলে ১৯৭১- এ বাংলাদেশ হ'ল । সে তো আর আমার দ্যাশ বললেই হ'ল না , বাংলাদেশ কইছে ও নাকি আমার দ্যাশ না , ভাবতি লাগলাম ভারতে পড়ি গিছি । আবারও কতো ঝামেলা হতি লাগলো কোনো দ্যাশ আমাগো পরিচয় দিলো না গো , ছিটমহলে পড়ি গিছি নাকি আমরা ! কোন দ্যাশের দায় নাই আমাগো নিয়ে , ছাওলটাকে ভারতের ইশকুলে ভরতি করি দিলুম, সবাই ভয় দেখাতি লাগলো , ওরে পুলিশে দেবে ও বাংলাদেশি ।
পড়াশুনো হ'ল না আর , বিদেশে চলি গেল যে ছাওয়ালটা , কেরালাতে এখন রাজমিস্ত্রি কাজ করতিছে ।
এতগুলা বছর পর আজ আবার এই ২০১৫ -এ স্বাধীনতার স্বাদ পেলুম ,
এই আনন্দের দিনেও একটু কষ্ট থেকি গেল - মা আসতি চেল না , ও ভিটে ছাড়তি চাইছে না , বড় মায়া পড়ি গেছে ভিটেটার 'পর । আমারো তো ভবিষ্যৎ আছে , ছেলেপুলেও মানুষ হবে ভালোভাবে , আগামী যদি ওদের জন্য কিচু করে ! তাই চলি এলুম ।
আবারো স্বাধীনতার জন্য অপেক্ষা করতি হবে কিনা জানি নে , তবু সকাল থেকি সবাইরে মিস্টি মুখ করাতেছি , তেরঙা পতাকা নিয়ে ছুটে বেড়াতেছি , উৎসব হতিছে আমাগো -তৃতীয় স্বাধীনতার ,
আজ বুক ফুলিয়ে বলতি পারবো - আমি ভারতীয় , বড় গর্ব হতিছে আমার
এবার অন্তত পুরুষ হও , ছেঁড়া শাড়িটা আর চলছে না । না ! জুয়া খেলে শাড়ি আনতে হবে না ।
চালিয়ে নেব কটা দিন কোনভাবে , ওপারের আলম ভাই যদি না আসত , কি করে চলতো এই চারটি পেট ? বুধবার , শনিবার আমার খুউব কষ্ট হয় , ও ছাড়তে চায় না খিদে না মেটা পর্যন্ত ।
আগের দিন ওর নোখের আচড়ে দ্যাখো কালশিটে পড়ে গেছে ।
ভেবেছি ছেলেটাকে কোন গ্যারেজে কাজে পাঠাবো , খেয়ে পরে অন্তত বাঁচবে ।
রীতার মা বলছিল -কোলকাতায় ওর এক আত্মীয়ের বাড়িতে কাজের জন্য ১২-১৪ বছরের মেয়ে খুঁজছে ।
মেয়েকে না হয় ওখানে পাঠিয়ে দেব অভাব তো ঘুচবে -
জানি তুমি বাঁধা দেবে না আমাদের উপার্জনের টাকায় হয়তো মদ জুয়ার বহরটা বাড়বে ।
মনে আছে, সেবার তোমাকে টাকা দিইনি বলে , উনুনের ওপর ভাতের হাড়িতে লাথি মেরে বলেছিলে - মাগি তোর বেশ্যামির টাকায় রান্না খাব না ।
কেমন স্বামী তুমি স্ত্রীর শরীর বেচা টাকা ওড়াও ! কেমন বাপ ছেলেমেয়ের মুখে দুটো খাবার তুলে দিতে পার না !
তোমার মত পুরুষের মৃত্যু হোক ........ মৃত্যুই হোক ।
শহরের রাস্তা ভালো করে চেনে না , তবু এ গলিটা যেন তার বহুদিনের পরিচিত । ছোট মেয়েটিকে মা বলেছিল - শহরে যাস , খাবার কষ্ট হবে না , রোজ দুপুরে মিড ডে মিলের জন্য আর তোকে স্কুলে দৌড়াতে হবে না ।
সারা দিনের ভাবনা যার মাথায় , এক বেলার খাবারে তার কি পেট চলে ?
তাই তো শহরে আসা মেয়েটির , কি সুন্দর হয়েছে মেয়েটি , মুখে রং না মাখলেও যে কোন পুরুষ তার যৌবনের গন্ধ পায় । চোখ দিয়ে চেটে খায় তার সমস্ত শরীর ।
আজ যে কোনো কষ্ট নেই , একটা ল্যাপটপ কিনেছে , স্মার্ট ফোনে ফেসবুক করে ছুটির সময়গুলো কাটায়।
তুমি বলেছিলে গল্পটা কাল বলবো এক এক করে তো অনেক গুলো দিন কেটে গেল
গল্প যে গল্পই থেকে গেল শোনা হ'ল না আর ।
সেই রাতের কাহিনী নির্জন সেই মঞ্চ , আর টাকা দিয়ে কাড়াকাড়ি নিলামটা হয়েছিল বেশ ।
আজ যখন দু'জনের সেই সেদিনের ছবি দেখি একা একা মালা গাথি সুখ-স্মৃতি আর আনন্দমুখর দিনগুলির ।
আজ তোমার শরীরে যে ভাইরাস গুলো রাত্রি যাপন করে তুমি ভেবে নিও -এ প্রাপ্তি শুধু তোমার নয় , যারা প্রজাপতির মতো সুন্দর শরীরে থাবা বসিয়েছে যারা লাল চোখ দেখিয়েছে , যারা বলেছে ছিঃ ছিঃ
তারাও তো এর অংশীদার ।
তুমি এ ভাইরাস যন্ত্রনা একা কেন সবে ? এই সু-সময়ে সঙ্গী করে নিও ঐ মধু লোভীদের ।
যে প্রেম দেখেছিলাম আমি সর্বনাশা চোখে তা অস্পষ্ট হয়ে গেছে মরূভূমির কুয়াশায় মাটির গন্ধে এখন আর বৃষ্টি নামে না , যৌবনের বৈতরনী পার করে সে আজ নিমেষে হারিয়ে যায় । ইচ্ছেগুলো জমাট বেঁধে যে পর্বত হয়েছিল তার চূড়ায় আজ বিষাক্ত স্মৃতি বাসা বেঁধেছে ।
এখন সিগারেটের ধোঁয়ায় সুখ খোঁজে ঠোট । স্পর্শের কাছাকাছি আর কোন নীরবতা নেই যার বুকে 'জীবন' লিখেছিলাম - সে বুকে কেউ পেরেক ঠুকেছে , একটি ঠোঙায় তাকে 'প্রেম' উপহার দিয়েছিলাম ।
জীবনের জীর্নতায় সে ছুটেছে যাযাবরের মতো , সেই সাঁওতালি মেয়েটি আজ তীক্ষ্ণ খুঁজে বেড়ায়- শুধুই সাপের গর্ত ।