কবি জয়দেব বিশ্বাসের কবিতা
*
এ কেমন দিন
কবি জয়দেব বিশ্বাস

মৃত্যু যখন চোখ মেলে থাকে
গোলাপও তখন ফোটা ফেলে ,
ভোরবেলাকার মাড়িয়ে যাওয়া শিশির ভেজা ঘাসগুলোও
বুক চাপড়ায় ,
শ্মশান খুঁজে নেয় তার প্রফুল্ল ,

শিকল বাঁধা সুখগুলো তাই আজ বর্ণহীন ।

তোর ঋতুমতী নদীতে যারা সাঁতার কেটেছিল ,
সেখানে কি আর জোয়ার আছে ?
জীবনটাই যখন লোডশেডিং, সেখানে আলো ঢুকবে কি কখনো ?

একটু জল দিস ঘাসের গোড়ায় , তারা আরো সবুজ হবে ।
যেদিকে সূর্য ওঠে সেদিকে নতজানু হয়ে প্রণাম সেরে নিস ।

আর জিজ্ঞাসা করিস- 'এ কেমন দিন ?'
এ সকাল কার জন্য ?

যে সকালে শুধুই অন্ধকার নেমে আসে ?
সূর্যোদয় না হয়েই কেবল অস্ত যায় ?
যে সকাল প্রতি মুহুর্তে আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়ায় ?
এ কি সেই সকাল ?
অমোঘ প্রেমের শরীরের চোরাস্রোত !

আজ মেয়েটার কপাল ফেটেছে
বিন্দু বিন্দু রক্ত গড়িয়ে পড়েছে বুকের উপর ।
বুক বেয়ে মাটিতে , মাটি লাল হচ্ছে ..
সমস্ত মাটি ভিঁজে গেছে
তার আর্তনাদে , আঘাত শরীরের রক্তে
তবু পৃথিবী যেন সে কাহিণী গোপন রাখে ।
আস্তে আস্তে লুটিয়ে পড়ে মেয়েটি
কোন মহামানবের মুর্তির উপর ...

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ছেঁড়া কাগজ
কবি জয়দেব বিশ্বাস

শেষ পাতাটা যখন ছিঁড়ে গেছে
নৌকা বানিয়ে নিও
ভাসিয়ে দিও ঐ বানভাসি জলে ,
যদি সে ঠিকানা হারায় ,
যদি সে ধাক্কা মারে বুকে
আমায় খুঁজো তবে ।

আমি এখন গাছের ডালে চাঁদিয়ালের সাথে ,

ঝোড়ো হাওয়ায় দেখা হয়েছিল
ওদের কাটাকুটি খেলায় ।

কখনো উড়োজাহাজ কখনো বা এরোপ্লেন ,
ছেঁড়া কাগজের উপকরণে
নানা নক্সায় স্বাধীন আমি ।

অলস দুপুরে পদ্ম হয়ে ফুটেছি
তোমার নরমশোভা হাতে ।
আমাকে বাতাসে ভাসিয়েছো ,
এক সাগর জলে ।
তাই রৌদ্রের গন্ধে অনেক ছুটেছি আমি ,

এখন খোলামনে এক আকাশ বিচরণে

চিঠির খামেই রাত কাটে ।

ভালো থেকো তুমি দুঃস্বপ্নের রাতে ,

অক্ষর সাজিও প্রতিটি পাতায়
ছেঁড়া কাগজের অলিন্দে অলিন্দে ।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অন্ধকার গলি ৩
কবি জয়দেব বিশ্বাস

শরীরটা ভেঙে গেছে
সঙ্গমে সঙ্গমে ।
একসময় একশো পুরুষ চোখের খিদে ছিলাম ,
তখন আমার মসৃণ দেহে -
সূর্য হাসতো  ,
চোখে যেন বীরঙ্গনার কাহিণী
গোলাপ স্পর্শের কত ইচ্ছে ছিল ওদের ,
কাঁটার ভয়ে এগোত না ।

যৌবনে যে ফুল ফুটেছিল
সে ফুল এখন ভ্রমরের সাথে খেলা করে ।

অহংকার নিয়ে যে নদী বয়ে যেত...
সে নদীর কোলাহল এখন শুধুই বাবুদের সাথে ।

মনে আছে ঐ পাঞ্জাবী বাবুটা !
উপহার দিয়েছিল আমায়-
দশ মাস দশ দিন গচ্ছিত রেখেছি সময়ের জঠরে ।

শরীর ভেঙে নতুন সূর্যোদয় হ'ল
তিন দিনের মাথায় অস্ত গেল
কুমারী মায়ের কোলে ।

তবু চোখ দিয়ে জল গড়াল না ,
রক্তের ফোটা পড়ল মাটিতে ,

বাবুরা আসে আর শরীরের চুম্বনে জন্ম দিয়ে যায়...
কত ফুলের ।
হয়তো কেউ ফোটে কিম্বা ঝরে পড়ে
এমনই কোনো অন্ধকার গলিতে  বেজম্মা হয়ে ।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর