কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্তর কবিতা
মন্দিরের চাবী
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের চাবী” দ্বিতীয়
সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ
সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।


হে ঠাকুর,---
মন্দিরে ঐ কিসের চাবী
কিসের দাবী ক’রে?
দ্বার খোলো গো দুয়ার খোলো
দেখ্ ব আঁখি ভ’রে---
চোখ-জুড়ানো মূর্ত্তি মায়ের
প্রাণের দাবী ক’রবো দায়ের
আমরা গড়ি কুলুপ-তালা
তোমরা লাগাও দোরে
ধিক্, তোমাদের বিবেক! মোদের---
প্রবেশ নিষেধ ক’রে!


মন্দিরে কি দিয়েছ মা’র
পায়ে পদ্ম ধরি?
জানোনা কি পূজার পদ্ম
মোরাই চয়ন করি?
সেই সে-বছর পদ্ম লাগি
দুধের ছেলে অনুরাগী---
রইলো জলে ; ---তোমরা শুধু
বললে “আহা মরি!”
প্রাণ দিয়ে মা’র পায়ের পদ্ম
মোরাই চয়ন করি।


ব’লবে মোরা অসীম পাপী
জন্ম হ’তে ত্রুটি
নইলে বল কিসের পুণ্য
তোমরা নিচ্ছ লুটি!
পূজায়োজন মোরাই করি
উত্সবেরি উত্স ভরি
অশ্রু-স্বেদের ধারায় মোদের
অস্থি-মাংস কুটি
মূর্ত্তি গড়াই বাদ্যি বাজাই
নিরঞ্জনে জুটি।


ঋদ্ধি সিদ্ধি তোমায় দিয়ে
চালাই টেনে বুনে
আজন্ম কাল ছুটি তোমার
জন্মান্তরের গুণে!
বল্ বে মোদের সহস্র দোষ?
তোমার তাহে কেন গো রোষ?
মা-ই মোদের করুক বিচার
সকল কথা শুনে
লাঙল ধ’রে প’ড়ল কড়া
হাতে কাপাস ধুনে।


বলি, কিসের তরে পূজা তোমার
তোমরা পুণ্যখনি!
ব্যবসাদারী ফাঁদ পেতেছ
বিপ্র-শিরোমণি!
প্রণাম দিলে প্রণামী চাও
পূজা কর.---বোনামী তা-ও
দক্ষিণারি লোভে শুধু
পূজ দাক্ষায়ণী!
স’রে দাঁড়াও দ্বার খুলে দাও
মোদের স্পর্শমণি!


স্খলন পতন সব পুরাতন
গ্লানি পঙ্কলেশ
পূন্যতোয়া জাহ্নবীতে
হয় নি কি তা’ শেষ?
মায়ের ছেলে নই কি প্রভু?
নর্দ্দমাতে প’ড়ে,--- কভু
নর্ম্মদা কি মুক্তিক্ষেত্রে
হয়না কো নিঃশেষ?
মুক্তি-ক্ষেত্র! মিথ্যাকথা
শুচিবাই-এর দেশ।


মাতৃ-ঘাতী ভার্গবেরো
কুঠার গেল খুলে
অপৌরুষী কীর্ত্তি রামে
পশু-রক্তে মুক্তি পেলে---
শিবক্ষেত্রে ব্যাধের ছেলে,
মহাপ্রভুর প্রেমের মন্ত্রে
সিন্ধু উঠে দুলে,---
ধিক্! শতধিক্! অছুৎ-বাদে
শিকেয় রাখো তুলে।


নাই কো মোদের শিক্ষা দীক্ষা
পশুর মত মানি
মুখ বাঁকায়ে হেসো নাকো
তোমরা মহাজ্ঞানী।
তোমার লাগি করি চুরি---
চোর বোলোনা ;---হাসির ছুরি-
উপহাসের বিষ মিশিয়ে
ব্রহ্ম-অস্ত্র হানি
আমার গ্লানি তোমার মানি
কোলেই লহ টানি।


রোষের বশে যদিই কিছু
ব’লেই থাকি জোরে
তুষাগ্নি যে জ্বলছে বুকে
অনন্তকাল ধ’রে!
পড়ে আছি মূঢ়-মত্ত
সন্ধ্যা হলেইি মদোন্মত্ত
ঘুমের-মড়া, কুম্ভকর্ণ
অর্দ্ধ-জীবন ধ’রে
মাথার ঘামে পথের ধূলা
কাদায় উঠে ভ’রে।

১০
আমরা না হয় মূর্খ ; সূক্ষ্ম-
-বিচার নাহি জানি
তোমরা তো সব বেদোজ্জলা-
-বুদ্ধি-অভিমানী,-
সর্ব্বভূতে সমদৃষ্টি!
গুণ-কর্ম্ম-ভেদে সৃষ্টি---
এই তো ভগবানের বাণী
শাস্ত্র নাহি জানি
আস্ তে যেতে সবাই সমান
তফাৎ নাহি মানি।

১১
বর্ণ যদিই বড় তবে
শ্বেতাঙ্গেরাই শুচি!
বর্ণ জন্য নয় জঘন্য
ঘৃণ্য হাড়ি মুচি,
মিথ্যা তবে কৃষ্ণ-কালী
কর্ লে কালো মাখিয়ে কালি
ইষ্টনিষ্ঠা কালো তোমার---
কালোই তোমার শুচি
বলিহারি হায়রে তোমার
বর্ণচোরা রুচি!

১২
সমান তোমার নইকো মোরা
কনিষ্ঠ তা’ জানি
জ্যেষ্ঠ হ’য়ে ক’রবে স্নেহ
শ্রেষ্ঠ তবে মানি।
নইলে যদি দেমাক ভরে
ভ্রুকুটি-ক্রূর-ব্যঙ্গ ক’রে
বল্ বে “এদের ছায়া মোদের
নিন্দা কলুষ গ্লানি,”
আমরা ব’লব শুনেছি ঢের
(এই লাইন পুরোটাই ছাপাতে বাদ পড়েছে)

১৩
ইহ-কাল তো গেল এবার
সবার কাজে খাটি,
পরকালের পাথেয় আর---
কোরোনা ভাই মাটি ;
পুতুল পূজা ক’রতে যদি
মিথ্যা হ’ত অশ্রু-নদী
রুখোনা দ্বার---দেখনা ওই
মাটির ভিতর মা-টী
মৃন্ময়ীতে চিন্ময়ী মোর
আছেন জানি খাঁটি।

১৪
মন্দিরে কি আছেন মাতা
কিম্বা গেছেন চ’লে?---
মাতৃপূজা করতে হ’বে
মন্ত্র ব’লে ব’লে?
ধ’রবো গিয়ে চরণ সোজা
তোমার সঙ্গে পড়া-বোঝা
ক’রবনা আর ক’রব পূজা
হৃদয়পদ্ম-দলে
স’রে দাঁড়াও দ্বার খুলে দাও
লুটব পদতলে।

১৫
বলি, --- তোমরা কি মা’র পোষ্যপুত্র
আমরা হ’লাম ত্যক্ত,
বুক চিরে দাও দেখি না কা’র
বক্ষে বেশী রক্ত!
ভক্তি জানো তোমরা ঠাকুর
মানুষ মোরা নইকো কুকুর
সাক্ষী মানি দেবতারে
কে তাঁর বেশী ভক্ত
তোমরা বুঝি সাধের ছেলে
আমরা পরিত্যক্ত!

১৬
মা, তুমি আজ স’রে দাঁড়াও
কিম্বা এস সামনে,---
আজ হয়ে যাক বোঝাপড়া
চণ্ডালে আর বামনে!
শুভ্র চর্ম্ম যদি তাঁদের
মসীবর্ণ এই আমাদের
কাহার খুনে লাল বেশী আজ
দেখবি চোখের সাম্ নে
রক্ত দিয়ে পরীক্ষা হোক
পুঁথির দোহাই চাস্ নে।

১৭
ঠাকুর,
তোমার পায়ে পড়ি
গড়িয়ে পড়ি পা’য়
আর কোকো না শত্রু-হাসি
লজ্জা বাড়ে তা’য় ;
ভায়ের খুনে হাত রাঙিয়ে
ঘরে পরে লোক হাসিয়ে---
আর কোরো না বাড়াবাড়ি
মায়ের পদছায়---
ভায়ে ভায়ে খুন-খারাপি
মায়ের প্রাণ যায়!

১৮
আজ শালিশের ফয়শালা হোক-
নালিশ নেবো তুলে
“ভাই” বলো আজ চামার মুচি
মুদ্দোফরাস ভুলে।
একই রক্ত সবার শিরায়
একই সূর্য্য শরায় শরায়
একই মায়ের কোলের ছেলে
জাত যাবে না ছুঁ’লে
সে-মায়ের মন্দিরের চাবী
দিতেই হ’বে খুলে।

.           ***********************          
.                                                               
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
ভারতবর্ষ
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।


কে বলে তোমারে ভারতবর্ষ
.        শুধু আমাদের জন্মভূমি
খেলায় ধূলায় ক্ষুৎ-পিপাসায়
.        জুড়াবার ভূমি জননী তুমি

কি যে আছে হেথা, কী যে নাই হেথা
.        হিসাব করিয়া কঠিন বলা
কত শব যেথা শিব হ’ল সেথা
.        ভাবিলে মাটিতে যায় না চলা।

ব্রীহি ও ধান্যে শিশির-প্রাহ্নে
.        শস্যশীর্ষ বিনয়-নত
সেই ক্ষীরধার ঝরিছে মাতার

.           ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
ন্যায্য অধিকার
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।  এই খবিতাটি রাউণ্ড
টেবিল কনফারেন্সের সময় লেখা।


( On the eve of the R. T. Conference )
বিদ্রোহ নয়, বিপ্লব নয়, ন্যায্য অধিকার
.                                                ---সত্যেন্দ্রনাথ

শান্তি নহে, সন্ধি নহে, ভিক্ষা নহে আজি
গললগ্নীকৃতবাসে আসিবে না সাজি’
ভারত-সন্তান ; তা’রা মাতৃপূজা তরে
যাচিবেনা কা’রো কাছে কভু যুক্তকরে
কা’রো কৃপা লাগি।

.                নাহি ধর্ম্ম, কর্ম্ম নাহি,
ইহ-পরকালে সুখ স্বর্গ নাহি চাহি
যত বর্ষ যত মাস যত রাত্রি-দিন
নাহি হয় জননীর বন্ধন বিলীন
সন্তানের করে,---ততদিন মনে হয়
সংসারের স্বর্গসুখ পুতিগন্ধময়---
বৃথা বাক্য, বৃথা কাব্য, রঙ্গ-পরিহাস,
তিক্ত লাগে মুখে অন্ন-ব্যঞ্জনের রাশ
শয্যায় কণ্টক ফুটে।

.                ছিন্ন চীর পরি’
ওই হের কাঙ্গালিনী দুঃখে আছে মরি’
লাজে মাথা নত,---অনাবৃত অসংবৃত
বক্ষোবাস চক্ষে আনে বারি। অনাদৃত
বক্ষের বালক স্তনন্ধয় শুষ্কস্তন টানে---
এইনা ভারত! এই তো ধ্বংসের পানে
মাতা পুত্র কন্যা চলে ছুটে---বিদেশীর
শাসনে শোষণে, সাম্রাজ্ঞী যে ধরিত্রীর
শিখর-বাসিনী, ললাটে হিমাদ্রি-চূড়,
পাদপদ্মে সুবর্ণ সিংহল,---অতি রূঢ়
অপমানে লুণ্ঠিত ধরায়।

.                                এস সাজি
শান্তি নহে, সন্ধি নহে, ভিক্ষা নহে আজি।

*         *        *        *        *         *

এস আর্য্য অনার্য্যের মহাসম্মিলনে
ভারতের সাগর-সৈকতে প্রাণপণে
নিজ গোত্র-প্রবরের পবিত্র প্রভায়

.           ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
ভোটরঙ্গ
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।


দরিদ্রে আশ্বাস দিয়া ভিক্ষা কর “ভোট দাও”---বলি
ধনীর বিশ্বাস নিয়া লহ ধন চাটুবাক্যে ছলি’
একেরে অন্যের হ’তে প্রতিশ্রুতি দাও পরিত্রাণে
উভয়ে বঞ্চনা করি “ভোটরঙ্গ” রসিকেরা জানে!

.           ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
নারী-শক্তি
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।


প্রতি গৃহে মহাশক্তি
হৃদয়ের শ্রদ্ধা-ভক্তি
.        চয়ন করিয়া চুপে চুপে
বিরাজিছ মহামায়া
জননী ভগিনী জায়া
.        কভু প্রিয়তমা সখী রূপে।

ধাত্রী তুমি ধরিত্রীর
যেন ভাগীরথী-নীর
.        জীবন-রসের তুমি খনি
তথাপি চিনিতে নারি
হে রহস্যময়ী নারি!
.        পুরুষের নয়ন মণি।

গৃহে লক্ষ্মী-স্বরূপিনী
কঙ্কণের রিণিঝিনি
.        উঠে শঙ্খ মঙ্গল-নিনাদ,---
সীমন্তে সিন্দুর-বিন্দু
শান্ত সুমহান সিন্ধু
.        মৌনমুখে নাহি বিসম্বাদ।

কভু বহু-চর্য্যা করি’
বহুজনে বক্ষে ধরি’
.        অনাদি নির্ঝরে করি’ স্নান
নিঙাড়ি’ বক্ষের সুধা
.        তুষিবারে তৃষিতের প্রাণ।

পিপাসিত মরে পুড়ে
কভু কাছে কভু দূরে
.        ফিরে ঘুরে পতঙ্গের মত
রূপ বহ্নি-শিখাপরে


.           ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
হয় জয় নয় মৃত্যু
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

“হতো বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গঃ জিত্বা বা ভক্ষ্যসে মহীম্” --- গীতা

ওঠো ভাই, বেলা নাই, নদীসম চলে কাল-গতি
কী স্বপ্নের ঊর্ণাজাল বুনিতেছো ‘মাকোশা’র মত?
জয়যাত্রা করে সবে তুমি কেন মোহচ্ছন্ন-মতি,---
কেন মিছে কল্পনার জল্পনার আলিম্পনে রত?
পঞ্চজন-রণক্ষেত্রে পাঞ্চজন্য বাজে ওই শোনো
.                হয় জয়
.                        নয় মৃত্যু
.                                সে-মৃত্যুর
.                                        গৌরব পরম।


.                  ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
সর্বহারার বন্দনা
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।


শৌর্য্যের বন্দনা-গানে ইতিহাস পরিপূর্ণোদর,
জ্ঞান-বৃদ্ধে স্তুতি করি’ স্তবস্তোত্র হ’ল বহুতর,
আমি আজ তাহা করিবনা।

.                                ব্যার্থকাম ধরাতলে,
ধরণী কর্দ্দম হ’ল, অবিশ্রাম শ্রম-স্বেদ-জলে,
উদয়াস্ত দিনমান অবমান অবসাদ
পাণ্ডুর বদনে যা’র রসনার বিগত সুস্বাদ
তিক্ত কটু লাগে ধরা,---শর্করার ভারবাহী পশু,
আঁধার-জীবনে আলো নাহি দিল ভাগ্য-বিভাবসু,
দ্বারে দ্বারে করাঘাত করি কা’রো খুলিল না দ্বার,
তাহারে বন্দনা করি।

.                        ধনী যা’র কেড়ে নিল ধন,
রাজারে রাজস্ব দিয়া পথে বাহিরিল অকিঞ্চন,
কাচে ও কাঞ্চনে যা’র একাকার, অভাবের হেতু
বিমুখ যাহারে সবে, মুখ তার যেন ধূমকেতু!


.                  ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
আন্দামান
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই কবিতাটি কাব্যগ্রন্থের
পরবর্তী সংস্করণে যুক্ত করা হয়। নেতাজীর আন্দামানে গিয়ে কৌমী নিশান (জাতীয়
পতাকা) ওড়াবার কথা রয়েছে। সেই দিনটি ছিল ৩০শে ডিসেম্বর ১৯৪৩।  


.                        আন্দামান, আন্দামান!
.                        ভারত তোমারে করিল দান,---
আদরে লালিত স্নেহের দুলাল
হিমগিরি-সম উন্নত-ভাল
অসিদ্ধার্থ ব্যর্থ জীবন---
.                        অখ্যাতনামা পরম প্রাণ,---
ভারত-মাতার কারা-সূতিকার
.                        ধাত্রী তুমি মা বিদ্যমান।

মায়ের অধিক দিলে ভালবাসা
.                        পূত পরম স্নেহ---
মরণ-শয়নে শেষযাত্রায়
.                        যাহারা ঢালিল দেহ ;---
তাহাদের তুমি বক্ষে তুলিয়া
.                        চুম্বিলে চাঁদমুখ
অন্তিম-ক্ষণে মহামুহূর্ত্তে
.                        ভুলা’লে সকল দুখ।

.                        আন্দামান! আন্দামান!
.                        তোমার বক্ষে উদীয়মান
নব-জীবনের দীপ্ত তপন
.                        জাগাল সুপ্তিমগন প্রাণ
ভারত মাতার অষ্টম শিশু
.                        শৃঙ্খল হ’তে করিতে ত্রাণ।

উদিল যে শিশু অন্ধ কারায়
.                        মুক্তির টিকা পরিয়া ভালে
মুক্তির ‘গীতা’ গাহিল জগতে
.                        জনম লভিয়া বন্দীশালে।
চক্রে তাহার ত্রিজগৎ ঘোরে
.                        সূর্য্যচন্দ্র হাতের ভাঁটা
গিরিদরী তা’রে রুখিতে কি পারে
.                        মত্ত হাতীরে পদ্মকাঁটা?

দ্বীপান্তরের বাঁশীও বাজিল
.                        ধ্বনিল দ্বীপান্তরের কথা
যাহারা শুনিল তাহারা জানিল
.                        বুঝিল তোমার বুকের ব্যথা।

বাংলা-মায়ের কোলের দুলাল---


.                  ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
ধনী ও দরিদ্র
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।


সুবর্ণ চমস মুখে সুস্বাদু পিষ্টক সুরভিত
কুবেরের বরপুত্র দুগ্ধফেন-শয়নে শয়ান,
সুকোমল বরবপু স্মরশরে করে জর্জ্জরিত
অমৃতসরসী-মুখে ইন্দীবর-নিন্দিত-নয়ান।
দরিদ্রা দোহদবতী জননীর সাধ নাহি মিটে
সন্তানেরা খায় অন্ন পায় যদি শালপত্র থালে
ভূ-শয্যায় দৃঢ়বপু মস্তকেরে ন্যস্ত করি ইঁটে
জেগে উঠে গিরি টুটে ভাগীরথী কেটে আনে খালে।

.                  ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
ধর্ম্মের নামে যত অধর্ম্ম
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এ
বং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

জরথুস্ত্র ও খৃষ্ট মহম্মদের চরণে জানাই নতি
হিন্দুর একাদশাবতারেও অচলা আমার রহুক মতি
এক প্রাথনা সকল ধর্ম্মে, এক ঈশ্বরে ভজহ ভাই,---
ধর্ম্মের নামে যত অধর্ম্ম লুপ্ত হইলে বাঁচিয়া যাই।

কোথা ঈশ্বর সবার স্রষ্টা? সবার দ্রষ্টা দৃষ্টি তাঁর?

.                  ***********************          
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর