কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্তর কবিতা
|
হিন্দু-মুসলমান
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ভক্ত সাধু মহাজন রামদাস স্বামী
স্বহস্তে দুহিয়া দুগ্ধ দেন পাঠাইয়া,---
ফকির হাফিজ পার্শ্বে পরিচয়কামী
শ্রদ্ধান্বিত পার্শ্বচরে পরামর্শ দিয়া।
ফকির মধুর হেসে অর্দ্ধেক রাখিয়া
অবশিষ্ট অর্দ্ধদুগ্ধ দেন পুন তা’য়,---
দুগ্ধোপরি গোলাপের পত্র বিছাইয়া
সুরভি ভরিয়া দুগ্ধে হাস্য-সুষমায়।
. ***********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
স্বাধীনতা
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ মন্দিরের
চাবী (১৯৩১)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা
বাজেয়াপ্ত করা হয়।
স্বাধীনতা নহে কল্পকরুর গলিত ফল
ব্যাদান করিলে বদন-বিবরে পড়িবে গ’লে!
প্রাংশুলভ্যে উদ্বাহু বালখিল্য-দল
জম্বুক সম নাচিবে কি চাহি জম্বুফলে?
সে ফল লভিতে উদগ্র কর-চরণ ভরে
দীর্ঘ করিয়া প্রত্যবয়ব সম্প্রসার
প্রাণপণে নহে, প্রাণাধিক প্রিয়, তাহার তরে
পণ কর বীর! দেশ জননীরে মুক্তিবার।
. ***********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
স্বাধীনতার মূল্য
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
পরের দুয়ারে ধরনা দিয়া
. যোড় করি দুটি পাণি
‘দেহি---দেহি’ রবে আকাশ ভরিয়া
. তুলি প্রার্থনা-বাণী,---
মেঘের দেবতা কণারও সলিল
. দিবে না করুণা করি---
বিমানে চড়িয়া বিজলী হানিলে
. বরষিবে ঝর্ঝরি।
উঠিবে তুমিও উঠিবে জাতিও
. মানব ধরিত্রীর---
আকাশ লক্ষি লোষ্ট্র ছুড়িও
. পঁহুছিবে তরুশির।
স্বাধীনতা-ধন মেলেনা, কখনো
. ভিক্ষার ঝুলি পেতে
নহে সে খেলেনা কাঁদিলে মেলেনা
. মেনেনা কন্দলেতে।
চাই বাহুবল বীর্য্যশুল্ক
. বিবেচিত বিক্রম---
বহুর সাধনা একযোগে বিনা
. সে শুধু মনের ভ্রম।
. ***********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
মিঞাজান সেখ
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
হুড়পা এসেছে দামোদর নদে
হুড়মুড় ক’রে পড়ে পদে পদে
গাছপালা আর বাড়ী সারে সার
. তীর হ’তে পড়ে নীরে---
হেবকালে ভেসে আসে খোড়ো চাল
তাহার উপরে ভয়ে আল-থাল
কাঁদে ছেলেমেয়ে, ---সামাল, ---সামাল,
. ভেসে চলে ঘুরে ফিরে।
ঘূর্ণির জলে চলে আর টলে
. গরজে বন্যাজল,---
যে দেখে সেথায় করে হায়-হায়!
. নদী হাসে খলখল!
চালের উপরে ভাসে নারীনর
কে আছ কোথায় হও সত্বর
দড়ি-দড়া আর লগি হাতিয়ার
. নিয়ে হও আগুয়ান,---
মাঝি ও মাল্লা কে আছ কোথায়
ঐ ভেসে গেল, ঐ বুঝি যায়,---
শিশু বুকে বাঁধি কাঁদিছে জননী
. বাঁচাও তাঁদের প্রাণ।
এল জমিদার শুনি সমাচার
. ধরিল টাকার থলি,---
“যে পারো বাঁচাও টাকা তুলে নাও
. কে আছো কোথায়” ---বলি।
মিয়াজান শেখ, দেখিল বারেক
কহে মৃদুস্বরে --- “খোদাই মালেক”
মাঝ-দরিয়ায় ভাসাইল না’য়
. বন্যায় নির্ভিক,---
সকলেই বলে,---“মূর্খ গোঙার
অভাবে স্বভাব নষ্ট ইহার
প্রাণ গেলে টাকা কে লইবে আর
. মরিবেই আজি ঠিক!”
তবু মিঞাজান দাঁড়ে মারে টান

মাতৃভাষা
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ছেলের মুখের মধুর বাণী মায়ের কানে প্রবেশ করে
‘মা’-ব’লে সে প্রথম ডাকে আবার ডাকে সুধায় ভ’রে।
সেই সে-ভাষা মাতৃভাষা, হে বাঙালি, বাংলা-ভাষী
হুজুর কেহ, মজুর কেহ, কাঙাল কেহ, শ্রমিক চাষী।
হে বাগ্ বাণী! ভাষার রাণী শ্রুতি স্মৃতির পুণ্য আশা
ধন্য হ’ল পূর্ণ হ’ল তোমার দানেই বাংলা ভাষা!
তিল্ গু তামিল পুস্তু সামিল ইংরিজী আর পর্ত্তুগীজে
ফরাসী আর ফার্সি জবান আরবী রোমান লও নি কি যে!
পূত পরিপ্লুত হল জাহ্নবী এই পুণ্যতোয়া
শব্দযোগের ঝর্ণা ধারার পূর্ণাহুতি যায়নি খোয়া।
সকল ভাষার সিন্ধুতীরে মোদের সাধের সৌধ গড়া
বিন্দুনাদের সুধাস্বাদের লোভেই পাগল বসুন্ধরা।
ছায়া-শ্যামল পল্লী মায়ের পল্বলে যে পদ্ম ফুটে
তা’রি পরেই পা-দু’খানি রাখলে তা’রই পর্ণপুটে।
শুভ্র মরাল-পৃষ্ঠে বসি, ---ক্ঠে মণি মুক্তা ঝলে---
যুগ্ম ভুরু নেত্র চারু ইন্দীবরে নিন্দে ছলে।
বক্ষে বীণার তন্ত্রী বাজে, কণ্ঠ কাঁপে মূর্চ্ছনাতে
সেই রাগিণী, কণ্ঠে তোমার, স্বর্গসুধা তুচ্ছ যা’তে!
ভাগ্য ভাগেন পরাঙ্মুখে সময় হাওয়া উল্টাবাহী
জিন্দাবাদ কি নিন্দাবাদেও শঙ্কা সরম কুণ্ঠা নাহি।
ঢক্কা-ঢোলের গণ্ডগোলে তোমার পূজায় বিঘ্ন কত
মাঙ্গলিকেই, মূঢ় কবির, সাঙ্গ বুঝি হয় মা ব্রত!
রাষ্ট্রভাষা সবাই বলে রাষ্ট্র করে রাষ্ট্র-কথা
বাংলা-ভাষা পল্লীমধুর চক্রে রতা মধুব্রতা।
. ***********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
ধৈর্য্য ও গৌরব কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
দীর্ঘপথ নয় দীর্ঘ চলিবার ধৈর্য্য আছে যা’র সমীক্ষিয়া পদক্ষেপ করে--- গৌরব দুর্লভ তবু নীরবে যে বহে কর্ম্মভার গৌরব সে লভিবেই পরে।
. *********************** . সূচিতে . . .
মিলনসাগর
|
কমলা ও ভারতী
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ছিন্ন পরিধেয় বাস, তীক্ষ্ণ আঁখি, ললাট ভাস্বর,
প্রতিভা উছলি পড়ে,---পুরাতন গ্রন্থ-বিপণীতে
ক্ষুধিত নয়ন দিয়া গ্রাস করে গ্রন্থ বহুতর
পণ্যার্থী ফিরায় তা’রে---যেহেতু না পারে সে কিনিতে।
‘কেন শুধু ঘাঁটে বৃথা,---করে মিথ্যা গ্রন্থ অপচয়’?
দরিদ্র তরুণ যুবা,---শূন্য দৃষ্টি, শুনে চেয়ে রয়।
হে ভারতি! হে কমলে! বাণী লক্ষ্মী দোঁহে পরস্পর
সন্তানেরে কর দয়া, গৃহদ্বন্দ্ব মিটাও সত্বর।
গ্রন্থাগার আছে যা’র, ইচ্ছা তা’র নাই পড়িবার
পড়িবার ইচ্ছা যা’র বস্ত্র নাই গ্রন্থ কোথা তা’র?
লক্ষ্মী, সরস্বতী-বিনা, পৃষ্ঠে বহে শর্করার ভার
সরস্বতী, লক্ষ্মী-বিনা দিনে দেখে নয়নে আঁধার!
কমলা ভারতি দোঁহে ভারতে সঞ্চার কর প্রাণ
মুখে হাসি, বুকে বল, ---সমুজ্জ্বল চক্ষু কর দান।
. ***********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
নীলকণ্ঠ
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়। কবিতাটি সুকুমার সেন
সম্পাদিত বাংলা কবিতা সমুচ্চয় সংকলনেও রাখা হয়েছিল।
আবার বারিধি মন্থি’---মন্থশেষে উঠিল গরল
সুখ-পদ্মমধু-ভৃঙ্গ দেববৃন্দ পলায় নিলাজ,
অগ্রে যা’ন দেবরাজ স্বর্গবধূ-বিরহে চঞ্চল
সোমাসব পান লাগি বাসবের তৃষ্ণা বড় আজ!
মন্দার-মন্থন-স্রুত বাসুকির বিশ্বনাশা বিষ
বিশ্ব বুঝি দগ্ধ হয় বিশ্বনাথ কোথা আছো বসি
দ্বন্দ্বহীন সদানন্দ স্বচ্ছন্দে নিমগ্ন অহর্নিশ
সৃষ্টি যা’র ত্রসরেণু কাল যার নিমেষ-বয়সী।
সৃষ্টি কভু নাশ হয়? ---সৃষ্টি তা’র, ---মৃত্যু যা’র দাস
বজ্রাগ্নি প্রলয়-বহ্নি তাহার ফুত্কারে হয় লয়,---
সত্য-শিব-সুন্দরের সমাধির স্মিত স্নিগ্ধ হাস
হলাহল কালানল নীলকণ্ঠ-কণ্ঠে সুধাময়।
বিশ্বের বৈধুর্য্য-ব্যথা বৈদূর্য্যের নীলাভায় নীল
নীলকণ্ঠ-শিরে চন্দ্র সুধাস্যন্দে ভাসায় নিখিল।
. ***********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
মেদিনীপুর বন্দনা
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
মেদিনীপুরের বীরসিংহের বীর সন্তানে কেবা না জানে
বিদ্যাসাগর দয়ার(ও) সাগর সবার দুঃখ যাঁহার প্রাণে ;
গলিত সমাজ বলি-পলিতের জড়তাড়ষ্ট পঙ্গু জাতি
বহুবিবাহে ও বালিকা-বিধবা কূলীনে মলিন যশের ভাতি।
. শিক্ষা নাহিক, সংস্কারে ধিক!
. বিদেশী শাসকে করিছে সেবা
. জাতিরে জাগাতে সেই কালে ঠিক
. তাঁহার অধিক করেছে কেবা?
মেদিনীপুরের মেদ মজ্জায় স্বাধীন ভারত উঠিল গড়ি



মুক্তির মৃল্য
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা এবং হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের
চাবী” দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৫৫)-এর কবিতা। কাব্যগ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়া মাত্র ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
“তুমি কি দিয়েছ বন্ধু, কী ব্যথা স’য়েছ,
দেশের মুক্তির লাগি হৃদয়ে ব’য়েছ
কোন্ অত্যাচার? --- কহ।”
. “কারাগারে মোরে,
নির্ব্বিচারে রুদ্ধ করি দশবর্ষ ধ’রে,
নিয্যাতিত দিনমান বিনিদ্র রজনী
উদ্বেগ যন্ত্রণা পূর্ণ উদ্বেল ধমনী
দিল যে দুঃসহ কষ্ট,---আমি দিনু তাঁরে,
নতশিরে নিবেদিয়া দেশ-মাতৃকারে
চুম্বি’ পদধূলি তাঁর।”
. “তুমি কিবা দিলে?”
“মৃত্যুদণ্ড বিনিময়ে মৃত্যু তিলে তিলে
দ্বাদশ বত্সর ভরি দিনরাত্রি ধরি
যা’ স’য়েছি দিনু তাই নিবেদন করি,
মাতারে ব্যাথার পূজা।”
. “কহ নারী তুমি---”
“পূর্ণ গৃহ শূন্য মোর আজি মরুভূমি,
সকল সুখের স্বপ্ন করি খান খান,
কারাগারে অত্যাচারে পতি দিল প্রাণ,
অনন্যসুলভ পথে পরিত্রাণ লভি,
অপঘাতে মৃত্যু বরি’।
. সেই যজ্ঞহবি
সে-ভস্মে তিলক পরি’ মলিন-ললাটে,
মুছিয়া সিন্দূর বিন্দু আয়ুষ্কাল কাটে
বক্ষে বহ্নিশিখা জ্বালি,---তাই দিনু ধরি
জননীর পদে মোর করপুট ভরি
উত্তপ্ত অশ্রুর অর্ঘ্য।”
. পরে পক্ককেশ
বৃদ্ধেরে শুধাই ডেকে সকলের শেষ
কি দিয়াছে জননীরে।
. বৃদ্ধ কহে ধীরে,---
সাগরের মত স্বর, জলদ-গম্ভীরে,---
কন্যা গেল জেলে, জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বীপান্তরে,
আগ্নেয়গিরির মত জ্বলন্ত অন্তরে,
কনিষ্ঠে বিদায় দিছি, সে দিয়াছে প্রাণ,
রক্তে রাঙাইয়া মাটি,---তাই মোর দান
জননীর পদতলে। রক্ত জবাফুল
দেশমাতৃকার পদে আরো সে রাতুল
করিল অলক্ত-রাগে। হাসিতে হাসিতে
প্রাণ দিল বাছা মোর দেশের মাটিতে
জাতীয় পতাকা ধরি’।
. নেতাজীর জয়!
মুক্তি কিম্বা মৃত্যু চাই! জয়-হিন্দ-জয়!
জিন্দাবাদ হিন্দ্ ফৌজ আজাদী ভারতে
এই মহানগরীর পরতে পরতে
মুখরিল জয়ধ্বনি। যুবকে বালকে
রামেশ্বর আদি বীর আঁখির পলকে
একসাথে দিল প্রাণ, একবিংশ দিনে,
নভেম্বর সন্ধ্যাকালে।
. হিংসালেশ-হীনে,
জিঘাংসার নরমেধ নৃসংশ নিষ্ঠুর
সশস্ত্র সান্ত্রীর দল বিক্রম প্রচুর
দেখালো নিরস্ত্র জনে!
. কিন্তু শোনো বলি,---
---‘কিন্তু’ কেন কহে বৃদ্ধ শুনি কৌতুহলী---
বদ্ধ কহে :---“তোমাদের স্মরণের মত,
আমি কিছু করি নাই,---করিয়াছি যত
পুঞ্জীভূত অভিমানে তুঙ্গ অহংকার
আপনার দেশভক্তি বলিয়া প্রচার
ক’রেছি নির্লজ্জ ভানে!
. আজি মনে হয়
এত বৃদ্ধ হইলাম তবু পরিচয়
হ’ল না নিজের সনে। লজ্জা বাসি তাই
সেই অভিমান বলি দিতে পারি নাই
“জয়তু জননী”, ---বলি। পূজিয়াছি হায়!
আত্মপ্রবঞ্চনা করি’, শুধু আপনায়
দেশের পূজার নামে। তাই বলি ভাই
কি সহেছ কি ক’রেছ, শুনিতে না চাই
সেকথা রেখোনা মনে। রেখো শুধু মনে
করিতে পারনি যাহা আত্ম-নিয়োজনে
রাখিও উত্কীর্ণ করিহৃদয়ের পটে
বোলো প্রতিজনে তাহা অতি অকপটে
দেশের মুক্তির তরে। অহমহমিকা
তাহাই সর্ব্বস্ব মানি, তাহারি ভূমিকা---
ক’রেছি সেবার নামে ; অনুতাপে তা’রি
আজি তোমাদের কহি :---এ-শিক্ষা শিখিও
জীবন-সর্ব্বস্ব-পণে সর্ব্বস্বই দিও,
স্বদেশ স্বাধীন হবে সেই প্রয়োজনে,---
নহে নাহি নাহি ফল অরণ্যে রোদনে?
হয় সব কিছু,---নয় নাহি চায় মাতা
কোনো কিছু,---হে সুবিধাবাদী পরিত্রাতা!
একথা রাখিও মনে,---গাঁথি আমরণ,---
কার্পণ্যে কখনো জয় নহে মুক্তিরণ।
. ***********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর