কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত - জন্মগ্রহণ করেন বর্ধমান জেলার উখরা গ্রামে। পিতা ডাঃ চন্দ্রকান্ত
সেনগুপ্ত।
ছাত্র জীবনে, সাহিত্যে ও চিকিত্সায় তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দেন। কৈশোরে রাধাগোবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
কাছে মন্ত্রদীক্ষা ও ক্রিয়াদীক্ষা গ্রহণ করেন। কলেজে পড়ার সময় রসিকমোহন বিদ্যাভূষণের কাছে দশ বছর
বৈষ্ণব সাহিত্য, দর্শন ও বেদান্ত অধ্যয়ন করেন।
তিনি বি.এসসি, এম.এ, এম.বি.বি.এস. পাশ করে স্বগ্রামে চিকিত্সক হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সেইকানে
তিনি জাতীয় কংগ্রেসের শাখা কার্যালয় স্থাপন করেন। তাঁর সংগঠিত স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে তিনি স্বদেশী
আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৩০ সালে তিনি উখরা থেকে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন। কলকাতায় তিনি
চিকিত্সা, সাহিত্যচর্চা, সংগীতচর্চা, দেশসেবা, ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
তিনি সুচিকিত্সক হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিক্যাল সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি
ইণ্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কলকাতা শাখার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি
দিল্লীর কলেজ অফ জেনারেল প্র্যাক্টিশনার্স-এরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ক্যালকাটা মেডিক্যাল জার্নাল ও
মেড্ক্যাল রিভিউ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘকাল। তিনি দরিদ্র বান্ধব ভাণ্ডারের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি
হিসেবে তার সঙ্গে যুক্ত চারটি যক্ষা হাসপাতাল, মাতৃনিকেতন, শিশুকল্যাণকেন্দ্র ও পাঠাগার প্রায় ২৫ বছর
ধরে পরিচালনা করেন।
শিক্ষা সংস্থা শ্রীবিদ্যানিকেতনের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৪০ সালে কলিকাতা
সাহিত্যিকা নামে একটি সাহিত্যসভা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলা, ইংরেজী এবং সংস্কৃতে তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য
ছিল। তিনি অনেক ধর্মীয় মঠ, মিশন ও ধর্মসংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
তাঁর চেষ্টায় ২১ বছর পর লুপ্ত “বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন”, ১৯৬০ সালে পুনরুজ্জিবিত হয় এবং ১৫ বছর তিনি
তার সভাপতি ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত সাহিত্য সংস্থা “রবিবাসর”-এর সর্বাধ্যক্ষ, “সাহিত্য তীর্থ”-র তীর্থপতি,
“পূর্ণিমা মিলন”-এর পুরোধা, “বর্ধমান সম্মিলনী” ও “নিখিল ভারত বঙ্গভাষা প্রসার সমিতি”-র সভাপতি এবং
“বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ”-এর সহ-সভাপতি ছিলেন।
স্বাধীনতা ও হরিজন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মন্দিরের চাবী” ১৯৩১ সালে
প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার তা বাজেয়াপ্ত করে। স্বাধীনতার পরে ১৯৫৩ সালে, তিনি এই
কাব্যগ্রন্থের একটি পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত করেন। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সাঁঝের
প্রদীপ (১৯৩১), সপ্তপদী (১৯৫৪) প্রভৃতি। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “রবীন্দ্র বৈজয়ন্তী”, “শ্যাম
নটরাজ”, “মাতামহের দিনলিপি”, “চূড়াসা ও শিখিধ্বজ”, “Price of a Song”, “Cultural Heritage of Bengal” প্রভৃতি।
ভারতের জাতীয় সংহতির উপর তাঁর কাব্য সা-বি-দ, নিবন্ধ নিচয় ও ভাষণাবলী।
আমরা মিলনসাগরে কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্তর কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে
আমাদের এই প্রচেষ্টার সার্থকতা।
উত্স - অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, চথুর্থ সংস্করণ, ২০১৫।
কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্তর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতা প্রথম প্রকাশ - ২০.৬.২০১৬
...