কবি মাহমুদ টোকন-এর কবিতা
*
স্মৃতিগ্রাম
কবি মাহমুদ টোকন

এখানে এলেই ঠিক মনে পড়ে
থলে আর আধুলি দ্বন্দ্বে জনকের বিষণ্ন আকাশ।
এই গ্রাম, পাতাছন্দ মাটি আর বুনো গাবগাছ
ধুলো উড়ে ফিরছে খুরেরা। নৃত্যরত যেন রাস্তাটি-
আধভাঙা সাঁকো। বিষণ্ণ হয়ে ওঠা গোধুলির হিজল কোটরে
ও তক্ষক, ঈশ্বরের মতো কাকে ডাকো?
পোড়া-শুটি, কালিমুখ দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায়; দূরে লালবাত
ট্রিং ট্রিং কিনতে পারিনি, দু’চাকার বাই-সাইকেল।
সন্ধ্যা জুড়ে মা’র  হাহাকার-
শেয়াল নিয়েছে তার ডিমপাড়া হাঁস।
এখানে দাঁড়ালে, এই রাস্তা, বরুন শাখায়
বুনোঘাস, শূন্যলতা আর  
নিস্তরঙ্গ জল... শীত শীত লাগে।

হাওয়ায়  হাওয়ায় অগুণতি  হাঁসের হাহাকার...

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দেশভাগ
কবি মাহমুদ টোকন

কাঁটাতার ঠেলে, ঢুকে পড়ছে সকাল
নতুনবীজ থেকে জন্মানো লতা আর দীর্ঘশ্বাস।
সম্পর্ক পড়েছে ঢুকে আলোকবর্ষ পিছে ফেলে
ভিসাহীন কাক।
রাজস্ব নিয়মেÑ রাষ্ট্র পেতে রাখে প্রযুক্তি ফাঁদ
সব অস্বীকার করে নক্ষত্র ঢেলে দিচ্ছে আলো
অক্ষ বরাবর।
নদীপাড়ে কাঁদছে মা, দুই সন্তানÑ
এপার ওপার...

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হে অভিন্ন
কবি মাহমুদ টোকন

যেভাবে অবুঝ ছোটে মার্বেলের দিকে
যেভাবে পাতার মায়া ঢেকে রাখে পরিপক্ব ফল
যেভাবে ধার্মীক যায় কল্পনা স্বর্গবিহারে
যেভাবে মীনের স্বস্তি উজানের জল। যেভাবে-
লতাটি ধীর পদক্ষেপে জড়ায় প্রশাখা
যেভাবে তীরন্দাজ বিষমাখে সুক্ষ্ম অগ্রভাগে
যেভাবে ক্ষুধার্তমুখ স্বপ্নদ্যাখে খাদ্য উপাদান
যেভাবে ভবিষ্যৎ কাঁপে মিছিলের সম্মূখভাগে।
যেভাবে বীজের বুক বিদীর্ণ ভ্রুণের উদগম
যেভাবে রক্তমূল্যে আঁকা হয় স্বাধীন পতাকা
যেভাবে মরুতে জল দৃষ্টি দিগভ্রম  
যেভাবে  ফোঁটামধু জমা রাখে পোকার ভবিষ্যৎ
যেভাবে মুকুল এলে ঢলে পড়ে পোয়াতী গাছেরা
যেভাবে আগলে রাখে মোহর যক্ষেরা
যেভাবে রাতের বুকে আচ্ছদিত দিনের সংরাগ
যেভাবে লুকোনো অশ্রু: উদ্বাস্তু নিঠুর দেশভাগ।
যেভাবে নির্বান জুড়ে ত্যাগের নির্ভরতা; ঋণ
যেভাবে বিপন্নপ্রায় স্বপ্নের মধ্যে কল্পনা
যেভাবে ধর্মের ব্যাধ ট্যাবু ও টোটেমে অন্তীম
যেভাবে পথের দূর পদক্ষেপে বিমূর্ত আল্পনা
যেভাবে প্রদীপ চেনে উলম্বদেবতা, তীর্থশিখা
যেভাবে পৃথিবী ঘোরে ধ্যানমগ্ন নিজঅক্ষরেখা
যেভাবে মস্তিষ্ক রাখে নিউরনে স্মৃতির ইতিহাস
যেভাবে পাহাড় মিথ গুল্ম তার সরিসৃপ বিহার
যেভাবে সন্যাসিনী মন্ত্রের জানে ভূসংকেত
যেভাবে বিশ্বাস চেনে বিস্ময়ে কী অনভিপ্রেত
যেভাবে জীবন আর মৃত্যু ঠিক গভীর আলিঙ্গন
পাতার জালিকাজুড়ে আলোখেলা করে খাদ্যরঙ

সেভাবে সত্যি আমি সেভাবে হে চির অন্ধকার
সেভাবে সত্যি আমি সেভাবে হে আলোগহ্বর
সেভাবে নদী হে নদী সেভাবেই সীমার অসীম
সেভাবে মৃত্তিকা সত্যি সেভাবে অক্ষর পেনসিল
সেভাবে বিশ্বাস সত্যি সেভাবে হস্তরেখালিপি
দেহকোষ প্রতিজন্মে সেভাবে সত্যি জিনরীতি

সেভাবে সত্যি আমি সেভাবে হে চির অন্ধকার
সেভাবে যাত্রাপথ সেভাবে ফসল, ও ফসল
যেভাবে অবুঝ ছোটে মার্বেলের দিকে
যেভাবে পাতার মায়া ঢেকে রাখে পরিপক্ব ফল...

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পত্রলেখা
কবি মাহমুদ টোকন

একটি নতুন বই- কেনা হলো,  চেনা হলো শব্দের ঘ্রাণ
তোমাকে পত্রলেখা, তোমাকে আমার অভিমান...

তোমায় কতো পত্র লিখি এবং ছিঁড়ি। হাতের লেখা-
কী বিচ্ছিরি। আবার লিখি...
দেই মিশিয়ে ফুলপাঁপড়ি, চুম্বনদাগ আবার ছিঁড়ি
জলে ভাসাই, জলফোঁটা দেই আবার লিখি।

ঘাসের কাছে পাতার কাছে নতুন কত্তো শব্দ শিখি
তোমার জন্য সবই লিখি...

যত্নে আবার খাতা খুলেই, শুকনো ফুলের ধুপ মেখে যেই
লিখতে বসি- বৃষ্টি নামে, মেঘ ডাকে খুউব
পথ ডুবে যায়, দিক ভুলে যায় ছোট্ট সারস
তার কথাটি তোমায় লিখি। চোখের তারায় খানিকটা মেঘ
মেঘ উড়ে যায় দূর পরবাস, তোমায় ডাকি...

মায়ের অসুখ, বোনের ছোট্ট আবির মাখা কপোল জুড়ে আশির্বাণী;
হঠাৎ দেখা- সড়ক জুড়ে এক বনফুল ধুলোয় হাসে আর ভাসমান
এক তরুণীর কান্নার দাগ মুছিয়ে দিচ্ছে আরেকটি হাত
বৃক্ষ যেমন রোদের ছায়া সে মূর্তিমান। তোমায় লিখি...

কান্না লিখি, ঘেন্না লিখি, বনপলাশের স্বপ্ন লিখি
রাত্র লিখি। জানলা জুড়ে তৃষ্ণারেখা শব্দ সবই

তোমায় কত্তো জীবন লিখি এবং ছিঁড়ি। হাতের লেখা-
কী বিচ্ছিরি...

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দখল
কবি মাহমুদ টোকন

যতটুকু খালি পড়ে আছে,যতটুকু সীমান্তের হাত
সর্বস্ব দিয়ে রক্ষা করো, সবটৃকু আমার সম্পদ। যতটুকু-
দরিদ্র মানুষ, আগলে আছে জীবন বেঁচেনি, সেটুকুও-
দলিল-পর্চা আর চৌকাঠখানি।
দখল নাও দখল নাও দখল নাও। পারো যদি-
মৃত্যুকেও সীমানায় আটকাও
অবশিষ্ট আছে যা, আত্মাও, সমস্ত আমাকে বেঁচে দাও।

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মুখোস
কবি মাহমুদ টোকন

শুধু নারী জানে ভালোমানুষ পুরুষের কথা!
সাপ থাকে, শ্বাপদও তো থাকে
মায়ার আড়ালে রঙ জলের বিস্তৃতি। মায়ার আড়ালে-
রক্তক্ষত, ঝলসানো নীল শব্দরেখা।
সবুজ গাছের নীচে বেড়ে ওঠে বিধ্বংসী কুহক
করমর্দন আর আলিঙ্গনের ফাঁকে চতুর হাইফেন।
অদৃশ্য বিন্দুর খেলা, তীর তীরন্দাজ
বিদ্রুপের সাপচক্ষু, রুমালের ঘ্রাণ। নারী জানে-
প্রভাব কাটিয়ে ওঠা পাথরে কী মায়া।
নারী জানে, শুধু নারী জানে- উজ্জ্বলতার পাশে নিযূত ধূসর
ঘুড়ি আর প্রজাপতি, বিমূর্ত আকাশ...

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর