হারিয়ে যেতে চাই কবি মায়া মন্ডল শিশির মন্ডল প্রকাশিত “অনুভবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
দূর দিগন্ত বিস্তৃত গগনে . অসীম নীলিমার মধ্যে হারিয়ে যেতে চাই আমি | যেখানে গেলে আমার আর কোন . অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না কেউ সেই বিরাটত্বের মধ্যে, সেই উদার গগনে . হারিয়ে যেতে চাই আমি | যেখানে থাকবে না কোনো স্বার্থপরতা থাকবে না কোনো মনের সঙ্কীর্ণতা থাকবে না কোনো দ্বেষ-বিদ্বেষ-ঝগড়া লড়াই . জাত-পাত-জীবন-যন্ত্রণা থাকবে না কোনো মন্দির, মসজিদ, গীর্জাঘর নিয়ে লড়াই সেই বিরাটের মধ্যে হারিয়ে যেতে চাই আমি ||
একটা সংবেদনশীল মন কবি মায়া মন্ডল শিশির মন্ডল প্রকাশিত “অনুভবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
নূতন প্রজন্মদের ভীড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি একটা সংবেদনশীল মন | কিন্তু কোথায় খুঁজে পাব একটা সংবেদনশীল মন ? এরা তো আত্মকেন্দ্রিকতার ভীড়ে হারিয়ে গেছে | এদের শৈশব, এদের কৈশোর, এদের মন কেমন করা দুপুর, এদের রোমান্টিকতা, এদের অবাক হওয়া সব হারিয়ে গেছে “আত্মকেন্দ্রিকতার ভীড়ে, প্রতিযোগিতার ভীড়ে” | এরা পুরাতন বস্তাপচা সেন্টিমেন্টকে উখড়ে ফেলতে চায় | এরা বড় রূঢ় বাস্তববাদী আমরা পুরাতন প্রজন্মরা নতুনদের কাছ থেকে চাইছি একটু উষ্ণ ভালোবাসা---- একটা সংবেদনশীল মন |
অবাঞ্ছিত কবি মায়া মন্ডল শিশির মন্ডল প্রকাশিত “অনুভবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
ঐ যে ওরা রাস্তার ফুটপাতে, গাড়ীবারান্দার নীচে শুয়ে হে ঈশ্বর, তোমার মহান সৃষ্টি দিয়ে . তুমি ওদের সৃষ্টি করেছো | কিন্তু তোমার এ-কি বিচার | . সব সৃষ্টির মধ্যে, মানব সৃষ্টি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ . তুমি তাদের কি দিয়েছো ? দু-মুঠো ভাত-কাপড়ের সংস্থান কি করে দিয়েছো ? . আজ ওরা ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণের জন্যে . পচা শবের দুর্গন্ধ ঘাঁটে ; কিন্তু তাদের কি অপরাধ ? তাদের মধ্যেও তো ছিল প্রতিভা ? . ওদের কি কেউ ভালবাসা দিয়ে কাছে টেনে নেয় ? না – ওরা পায় বঞ্চনা, তিরস্কার, ছলনা-কপটতা | . আর তাই ওরা চুরি ডাকাতি করতেও দ্বিধা করে না--- . সমাজের চোখে আজ তাই ওরা ঘৃণ্য, অবহেলিত | তাই, হে মহান সৃষ্টির স্রষ্টা, . তোমার কাছে প্রার্থনা আমাদের, আজকের দিনে সমাজের কাছে, মনুষ্যত্বের কাছে বিবেকের কাছে . এই মহান ব্রত নিতে দাও, . ওদের বুঝিয়ে দিতে দাও--- . ওরাও অবাঞ্ছিত নয় . ওরাও আমাদের সাথের সাথী | . সমাজের কাছে ওদেরও কিছু দেবার আছে | তাই, ওদের মনের অজ্ঞানতা, কুলষতা দূর করে দিয়ে . আমরা যেন . ভালোবাসার আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে তুলতে পারি ||
স্বপ্ন কবি মায়া মন্ডল শিশির মন্ডল প্রকাশিত “অনুভবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
মাঝে মাঝে অনেক দূরে হারিয়ে যাই যেখানে শুধুই নিবিড়-নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে || . মাঝে মাঝে আমি স্বপ্ন দেখি আমি যেন কোনো এক স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে গেছি যেখানে শুধু সমুদ্র-পর্বত, জঙ্গল যেখানে শুধু বরফ আর বরফ বরফে ঢেকে রয়েছে পর্বত কুলুকুল স্বরে বয়ে চলেছে ঝর্ণার জল . জানিনা তার উত্স | কখনও দেখি তুষারে আবৃত মন্দিরের চূড়া, যীশুখ্রীষ্টের ক্রুশ, আবার কখনও দেখি সেই পাহাড়, পর্বত, সীমাহীন নীলাকাশ, সমুদ্র . সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে | মনে হয়, এ কোন স্বর্গরাজ্যে পৌঁছেছি আমি ? . তারপর, স্বপ্ন ভেঙে যায় ফিরে আসি আবার কঠিন বাস্তবে ইট-কাঠে ভরা কঠিন বাস্তবে তখনও, কিন্তু স্বপ্নের ঘোর লেগে থাকে মনে হয়, সত্যি কি আমি কোনো স্বর্গরাজ্যে গিয়েছিলাম ?
নীলাম কবি মায়া মন্ডল শিশির মন্ডল প্রকাশিত “অনুভবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
কত কি লিখতে চাই আমি কিন্তু অব্যক্ত এক যন্ত্রণায় লিখতে ভুলে গিয়েছি চারদিকে তাকালেই দেখতে পাই . শুধু স্বার্থপর মানুষের ভীড় . এই ভীড়ের চাপে আমি পিষ্ট | এখনও যে আমি সহজ, সরল আছি সেটা ভাবতেও অবাক লাগে | . কোনোওদিন হয়তো দেখবো, . এই স্বার্থপরের দলে আমিও মিশে গেছি | . কোথায় আমার নৈতিকতা, . কোথায় আমার সেই নিঃস্বার্থপরতা . কোথায় আমার সেই সব সংস্কার কাটিয়ে ওঠা মন . সব এক নিমিষের মধ্যে বন্যার জলের মত ভেসে গেছে | . তখন দেখবো আমি বেঁচে আছি . জীবন্মৃত অবস্থায় | নিজেকে বেচে দিয়েছি স্বার্থপরতার বাজারে নীলামে দর কষাকষি হচ্ছে কত দামে কেনা যায় মনুষ্যত্ব, দয়া, মায়া, ভালবাসা লোভ ছেয়ে ফেলেছে দুনিয়ার বাজার আর আমি ? অসহায়ের মত নিস্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি ভাবছি, আরও কত বছর বেঁচে থাকতে হবে আমাকে . এই দয়ামায়াহীন স্বার্থপরতার জঙ্গলে ||
আমি কবি মায়া মন্ডল শিশির মন্ডল প্রকাশিত “অনুভবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
ভিনদেশের অতিথি আমি— . আমায় চেনো কি ? আমি হলাম নীহারিকা, আমি হলাম চন্দ্রমা অসংখ্য অগন্য নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে আমি হলাম এক জ্যোতি--- . আমায় চেনো কি ? আমি আছি আমার মধ্যে আমি আছি তোমার মধ্যে . আমায় চেনো কি ? আমি হলাম ‘আকাশ’ আমি হলাম ‘বাতাস’ আমি হলাম সকালের ‘আলো’ বিকালের ‘তুহিনা’ . শ্রাবণের ‘কেকা’, বৈশাখের ‘রাজসী’ আমি হলাম শরতের ‘শেফালি’ হেমন্তের ‘শশি’ . বসন্তের ‘মলয়া’ . আমায় চেনো কি ? . আমি হলাম সাকারা, নিরাকারা . আমার মধ্যেই তোমার প্রকাশ | আমি হলাম প্রেরণা--- . আমিই সেই ওঁ | আমিই সেই তেজ, দ্বেষ, অভিমান . আমি ভালোবাসা . আমিই সেই ‘এক’ ‘আমি’ . আমায় চেনো কি ?
একটি সাধারণ মেয়ে কবি মায়া মন্ডল শিশির মন্ডল প্রকাশিত “অনুভবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
একটি সহজ, সরল সাধারণ মেয়ে . নিরবে নিভৃতে বসে . ভাবতো, কাঁদতো . অসাধারণ হওয়ার জন্য | একদিন সেই মেয়েটিকে . একজন গুপ্তধনের সন্ধান দিল . গুপ্তধনের সান্নিধ্যে এসে . মেয়েটির জীবনটাই গেল পাল্টে, . মুছে গেল তার— . মোহ-বাসনা, দ্বেষ-লালসা, অহংকার, তার বদলে সুরু হলো মেয়েটির অতৃপ্তি, আরও কিছু পাওয়ার আশা, . আরও ধন-রত্নের সন্ধান | অবশেষে, সেই ধনরত্নের . মালিকের দর্শন পেল মেয়েটি | মেয়েটি আনন্দে আত্মহারা--- . সে আর অসাধারণ হতে চায় না | . আপন মনের মণিকোঠায় . সে ধনরত্নের মালিককে . ধরে রাখতে পেরেছে | মেয়েটি সাধারণ হয়েই, অতৃপ্তি নিয়ই . আরও কিছু রত্ন-ভাণ্ডার . পাওয়ার আশায় এগিয়ে যাচ্ছে |
আমার তুমি কবি মায়া মন্ডল শিশির মন্ডল প্রকাশিত “অনুভবের আকাশ” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
ডুবুরি যেমন সমুদ্রের গভীরে গিয়ে কত কি জিনিষ কুড়িয়ে আনে ঠিক তেমনি করেই বুঝি, তুমিআমার মনের গভীরে গিয়ে আমার যত আঘাত, যত অভিমান, দুঃখ-বেদনা . সব তুমি কুড়িয়ে আনো | তুমি ঠিক সমুদ্রের মত গভীর . পর্বতের মত অবিচল স্ফটিকের মত তোমার মন . আকাশের সব তারারা থাকে যেমন দিনের আলোর গভীরে ঠিক তেমনই তোমার ভালবাসা | . তোমার ভালবাসার প্রকাশ নেই . অযথা বাড়াবাড়ি নেই ভালোবাসায় কিন্তু, ভালবাসা আছে, . তাকে আমি উপলব্ধি করি আমার সব কিছুর মধ্যে, সব কিছু কাজের মধ্যে ||