রসাল ও স্বর্ণ-লতিকা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রসাল কহিল উচ্চে স্বর্ণলতিকারে ;-- “শুন মোর কথা, ধনি, নিন্দ বিধাতারে ! নিদারূণ তিনি অতি ; নাহি দয়া তব প্রতি ; তেঁই ক্ষুদ্র-কায়া করি সৃজিলা তোমারে | মলয় বহিলে, হায়, নতশিরা তুমি তায়, মধুকর-ভরে তুমি পড় লো ঢলিয়া ; হিমাদ্রি সদৃশ আমি, বন-বৃক্ষ-কুল-স্বামী, মেঘলোকে উঠে শির আকাশ ভেদিয়া ! কালাগ্নির মত তপ্ত তপন তাপন,--- আমি কি লো ডরাই কখন ? দূরে রাখি গাভী-দলে, রাখাল আমার তলে বিরাম লভয়ে অনুক্ষণ,-- শুন, ধনি, রাজ-কাজ দরিদ্র পালন ! আমার প্রসাদ ভুঞ্জে পথ-গামী জন | কেহ অন্ন রাঁধি খায় কেহ পড়ি নিদ্রা যায় এ রাজ চরণে | শীতলিয়া মোর ডরে সদা আসি সেবা করে মোর অতিথির হেথা আপনি পবন ! মধু-মাখা ফল মোর বিখ্যাত ভুবনে ! তুমি কি তা জান না, ললনে ? দেখ মোর ডাল-রাশি, কত পাখী বাঁধে আসি বাসা এ আগারে ! ধন্য মোর জনম সংসারে ! কিন্তু তব দুখ দেখি নিত্য আমি দুখী ; নিন্দ বিধাতায় তুমি, নিন্দ, বিধুমুখি !” যুদ্ধার্থ গম্ঙীরতার বাণী তব পানে! সুধা-আশে আসে অলি, দিলে সুধা যায় চলি,--- কে কোথা কবে গো দুখী সখার মিলনে ? “ক্ষুদ্র-মতি তুমি অতি” রাগি কহে তরুপতি, “নাহি কিছু অভিমান ? ধিক্ চন্দ্রাননে !” নীরবিলা তরুরাজ ; উড়িল গগনে যমদূতাকৃতি মেঘ গম্ভীর স্বননে; আইলেন প্রভঞ্জন, সিংহনাদ করি ঘন, যথা ভীম ভীমসেন কৌরব-সমরে | আইল খাইতে মেঘ দৈত্যকুল রড়ে: ঐরাবত পিঠে চড়ি রাগে দাঁত কড়মড়ি, ছাড়িলেন বজ্র ইন্দ্র কড় কড় কড়ে ! ঊরু ভাঙ্গি কুরুরাজে বধিলা যেমতি ভীম যোধপতি ; মহাঘাতে মড়মড়ি রসাল ভূতলে পড়ি, হায়, বায়ুবলে হারাইলা আয়ু-সহ দর্প বনস্থলে ! ঊর্দ্দ্বশির যদি তুমি কুল মান ধনে ; করিও না ঘৃণা তবু নীচশির জনে ! এই উপদেশ কবি দিলা এ কৌশলে || . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
মাইকেল মধুসূদন দত্তর কবিতা |
লক্ষ্মণের প্রতি সূর্পণখা বীরাঙ্গনা কাব্য (পঞ্চম সর্গ) কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত |
মেঘনাদ ও বিভীষণ মেঘনাদ বধ কাব্য (ষষ্ঠ সর্গের অংশ বিশেষ) কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত |
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (চতুর্থ সর্গের শেষার্ধ) কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত |