কবি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” (১৮৬৬) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
কে কবি--- কবে কে মোরে? ঘটকালি করি, শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন, সেই কি সে যম-দমী? তার শিরোপরি শোভে কি অক্ষয় শোভা যশের রতন? সেই কবি মোর মতে, কল্পনা সুন্দরী যার মনঃ-কমলেতে পাতেন আসন, অস্তগামি-ভানু-প্রভা-সদৃশ বিতরি ভাবের সংসারে তার সুবর্ণ-কিরণ। আনন্দ, আক্ষেপ ক্রোধ, যার আজ্ঞা মানে অরণ্যে কুসুম ফোটে যার ইচ্ছা-বলে; নন্দন-কানন হতে যে সুজন আনে পারিজাত কুসুমের রম্য পরিমলে; মরুভূমে--- তুষ্ট হয়ে যাহার ধেয়ানে বহে জলবতী নদী মৃদু কলকলে!
মিত্রাক্ষর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” (১৮৬৬) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
বড়ই নিষ্ঠুর আমি ভাবি তারে মনে, লো ভাষা, পীড়িতে তোমা গড়িল যে আগে মিত্রাক্ষররূপ বেড়ি ! কত ব্যথা লাগে পর' যবে এ নিগড় কোমল চরণে-- স্মরিলে হৃদয় মোর জ্বলি উঠে রাগে ছিল না কি ভাবধন, কহ, লো ললনে, মনের ভাণ্ডারে তার, যে মিথ্যা সোহাগে ভুলাতে তোমারে দিল এ তুচ্ছ ভূষণে ? কি কাজ রঞ্জনে রাঙি কমলের দলে ? নিজরূপে শশিকলা উজ্জ্বল আকাশে ! কি কাজ পবিত্রি' মন্ত্রে জাহ্নবীর জলে ? কি কাজ সুগন্ধ ঢালি পারিজাত-বাসে ? প্রকৃত কবিতা রূপী কবিতার বলে,-- চীন-নারী-সম পদ কেন লৌহ ফাঁসে ?
কপোতাক্ষ নদ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” (১৮৬৬) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
সতত, হে মদ, তুমি পড় মোর মনে | সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে ; সতত ( যেমতি লোক নিশার স্বপনে শোনে মায়া-যন্ত্রধ্বনি ) তব কলকলে জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!--- বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে, কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে? দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্ম-ভূমি-স্তনে! আর কি হে হবে দেখা?---যত দিন যাবে, প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে বারি-রূপ কর তুমি ; এ মিনতি, গাবে বঙ্গজ-জনের কানে, সখে, সখা-রীতে নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে লইছে যে তব নাম বঙ্গের সঙ্গীতে!