শ্রী পঞ্চমী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
নহে দিন দূর, দেবি, যবে ভূভারতে বিসর্জ্জিবে ভূভারত, বিস্মৃতির জলে, ও তব ধবল মূর্ত্তী সুদল কমলে ;---- কিন্তু চিরস্থায়ী পূজা তোমার জগতে! মনোরূপ-পদ্ম যিনি রোপিলা কৌশলে এ মানব-দেহ-সরে, তাঁর ইচ্ছামতে সে কুসুমে বাস তব, যথা মরকতে কিম্বা পদ্মরাগে জ্যোতিঃ নিত্য ঝলঝলে! কবির হৃদয়-বনে যে ফুল ফুটিবে, সে ফুল-অঞ্জলি লোক ও রাঙা চরণে পরম-ভকতি-ভাবে চিরকাল দিবে দশ দিশে, যত দিন এ মর ভবনে মনঃ-পদ্ম ফোটে, পূজা, তুমি, মা, পাইবে!— কি কাজ মাটীর দেহে তবে, সনাতনে?
কবিতা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
অন্ধ যে, কি রূপ কবে তার চক্ষে ধরে নলিনী ? রোধিলা বিধি কর্ণ-পথ যার, লভে কি সুখ কভু বীণার সুস্বরে ? কি কাক, কি পিকধ্বনি,--- সম-ভাব তার ! মনের উদ্যান-মাঝে, কুসুমের সার কবিতা-কুসুম-রত্ন ! ----দয়া করি নরে, কবি-মুখ-ব্রহ্ম-লোকে উরি অবতার বাণীরূপে বীণাপাণি এ নর-নগরে |--- দুর্ম্মতি সে জন, যার মনঃ নাহি মজে কবিতা-অমৃত-রসে ! হায়, সে দুর্ম্মতি, পুষ্পাঞ্জলি দিয়া সদা যে জন না ভজে ও চরণপদ্ম, পদ্মবাসিনি ভারতি ! কর পরিমলময় এ হিয়া-সরোজে— তু ষ যেন বিজ্ঞে, মা গো, এ মোর মিনতি |
সায়ংকালের তারা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
কার সাথে তুলনিবে, লো সুর-সুন্দরি, ও রূপের ছটা কবি এ ভব-মণ্ডলে ? আছে কি লো হেন খনি, যার গর্ভে ফলে রতন তোমার মত, কহ, সহচরি গোধূলির ? কি ফণিনী, যার সু-কবরী সাজায় সে তোমাসম মণির উজ্জ্বলে ?--- ক্ষণমাত্র দেখি তোমা নক্ষত্র-মণ্ডলে কি হেতু ? ভাল কি তোমা বাসে না শর্ব্বরী ? হেরি অপরূপ রূপ বুঝি ক্ষুণ্ণ মনে মানিনী রজনী রাণী, তেঁই অনাদরে না দেয় শোভিতে তোমা সখীদল-সনে, যবে কেলি করে তারা সুহাস-অম্বরে ? কিন্তু কি অভাব তব, ওলো বরাঙ্গনে,--- ক্ষণমাত্র দেখি মুখ, চির আঁখি স্মরে !