কবি মনোজিৎকুমার দাস-এর কবিতা
*
মেঘের বীজের মাঝে জলকন্যারা
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

খেলা করে-খেলা করে- খেলা করে।      
জলকন্যারা আসে আকাশ ঝাঁপিয়ে অবিশ্রান্ত ধারায়
আকাশ দূর থেকে কাছে চলে আসে এক রাশ মেঘ
বুকে নিয়ে- শুকনো গাঙে জলকন্যারা আসে একদিন;
মেঘের বীজের  মাঝে জলকন্যারা
খেলা করে-খেলা করে- খেলা করে।
গাঁয়ের মেয়েরা আসে জল ভরণে        
মেঘের বীজের ভিতর থেকে জলকন্যারা
শুকনো গাঙকে যৌবনবতী করে তোলে যেদিন ।

.             ***************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমিও নীলকণ্ঠ হতে চাই
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

চারিদিকে হলাহল;
অহর্নিশ পান করে চলেছি
সমুদ্র মন্থনকৃত গরল,
অমৃতের আশায় দেবতারা
হা করে আছেন সেই কবে থেকে।
মথিত সমুদ্র থেকে উঠত যদি অমৃত
হরির হাতে পৌঁছানোর আগেই
এ কালে হরিলুট হয়ে যেত,
ভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য
যেটাই বল না কেন
উঠেনি অমৃত, উঠেছে
মথিত সমুদ্র থেকে
ঘড়া ঘড়া গরল।

এখন আমি
অহর্নিশ পান করে চলেছি
সমুদ্র মন্থনকৃত গরল,
আমাকেই নির্দ্ধিাায়
পান করে যেতে হবে
সব টুকুই ;
                                   
এখন আমার একটাই বাসনা
      আমিও নীলকণ্ঠ হতে চাই ।

.             ***************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সে বাংলার এক মেয়ে  
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

অধর কামরাঙার রঙে রাঙা
ওষ্ঠ করমোচার রঙে লাল
সে  বাংলার  এক মেয়ে;
অলকগুচ্ছে শ্রাবণ মেঘের ঘটা
আঁখি পল্লব গোধূলির রঙে রাঙা
সে বাংলার এক মেয়ে;
দেহবল্লরী সুষমায় সুষমামন্ডিত
হাসিতে শরত মেঘের শুভ্রতা
সে বাংলার এক মেয়ে;

ছন্দের দোলায় হেমন্ত- জোসনা
লাস্যময় চলনবলনে গতিময়তা
সে বাংলার এক মেয়ে ।

.             ***************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পূর্ণিমার শীত সন্ধ্যা
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

শেষ মাঘের পূর্ণিমার শীত সন্ধ্যা
আকাশ গাঙে পূর্ণশশী
কিষানের উঠোনে সোনালী আলো
দাওয়ায় স্তন্যদাত্রী মাতা;
সুডোল বুকে নবজাতকের ওষ্ঠদ্বয়
হিমেল সন্ধ্যায় চাঁদের হাসি,
স্তন্যদাত্রীর মুখে স্বর্গের মাধুরী
হলুদ গাঁদার পাপড়িতে আলোর নাচন
ঘরের চালে সাদা ডানার লক্ষ্মীপেঁচা
হিম ভরা পূর্ণিমার শীত সন্ধ্যা।

.             ***************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
এখনো গ্রামেই আছি
( সুসাহিত্যক প্রয়াত তারাপদ রায়ের উদ্দেশ্য )
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

এখনো গ্রামেই আছি,
মনে আছে-- ভুলি নি,
এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যেতে
নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো,
খাল বিলে অঢেল মাছের সমারোহ।
               
এত বছর পড়েও মনে আছে
সেকালের সব কথা,
একালে বাঁশের সাঁকো নেই-
আছে কাঁচা মাটির রাস্তা
গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে.  
এ সব রাস্তায় এখন আর
গরু কিংবা ঘোড়ার গাড়ি
নেই, আছে নড়বড়ে যন্ত্রযান!
                            
ধুলো আর ধূয়ো উড়িয়ে
ওগুলো কষ্টেসৃষ্টে ধুঁকে ধুঁকে চলে
গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে--------
যাত্রা আর জারিশারি গানের আসর বসে না
গ্রামের দহলিজে আজ আর আগের মতো-
আজ আর সেদিনের সে গ্রাম নেই ----
প্রেম নেই ,প্রীতি নেই আজ আর সেকালের মতো;
                                
কাকের মুখে বটের লাল ফল দেখার জন্য
এখনো গ্রামেই পড়ে আছি।

.             ***************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শেকড়ের সন্ধানে
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

প্রচন্ড ঝড় উঠলে
.                গাছটার মনে হয়,
.                         তার বুঝি কোন শেকড় নেই।
মনটা আতিপাতি করে
.                প্রচন্ড ঝড় উঠলেই
.                          মনে হয়, তার কোন শেকড় নেই।
তখন তার মনটা বলে,
.                          সে কি আলোকলতা !
.                                    প্রচন্ড ঝড় উঠলেই এমনটা হয়।

মনটা তাকে ধমক লাগায়
.                     আলোকলতা হতে যাবে কোন দু:খে !
.                             বটবৃক্ষের মতো তার শেকড় নাইবা থাকলো।
ধমক শোনার পর
.              গাছটা  শিরদাঁড়া খাড়া করে ভাবে
.                       কাঁঠাল গাছের মতো তার মূল শেকড়
.                                            অবশ্যই একটা আছে।

.                                          ***************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সুখ স্মৃতি
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

সন্ধ্যায় ছোট হিজল গাছের নিচেয় জ্বলছে
জিপসিদের কাঠের আগুন --একদৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছি সেদিকে।
রৌদ্র ঝলসানো জিপসি মেয়েটির প্রতি
আমার
নীরব চাহনি;
ছিন্নবস্ত্রের আড়ালে নগ্ন দেহবল্লরী ।
পিঠে খড়ের আঁটি---
ওষ্ঠদ্বয়ে ম্লান হাসি,মাথাটায় অবিন্যস্ত আবরণ;
পিঠের বোঝায় সে ভারাক্রান্ত;
মনে হয়,
তার ওই ছোট্ট পিঠটা ভারবহনে  অক্ষম।

.      ***************************    
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নদী ও নারী
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

নদী ও নারীর মাঝে মিল খুঁজে পাই
যৌবনবতী নদী ও এক সময় বিশুষ্ক বালুচরে
হারিয়ে দগ্ধ হৃদয়ে মুখ থুবরে পড়ে থাকে;

স্তন্যদাত্রী মাতা শুকনো গাঙের মতোই
দেহ মনে বিশুষ্ক হৃদয়ে একদা হয়ে পড়ে
বালুচরের বিশুষ্ক নদী;

এই সব নদী, এই সব নারীর
জন্ম বিশুষ্ক প্রায় ঝর্ণার ক্ষীণ ধারায়
কিংবা দারিদ্র বিদীর্ণ পর্ণ কুটিরের জন্ম আঁধারে।

.             ***************************    
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কর্ষিত ক্ষেত্র
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

কোন এক প্রহরে সুফলা হয় জমিন
কৃষকের লাঙ্গলের শাণিত ফলায় কর্ষিত হয়ে হয়ে
উন্মন্থনে উন্মন্থনে কর্ষিত ভূমি রস সিঞ্চিত হয় প্রতিক্ষণে;

কর্ষিত ক্ষেত্র প্রতিক্ষায় থাকে-----
কখন না জানি উপ্ত হবে সুফলা বীজ কর্ষিত জমিনে

কৃষক সুফলা বীজ বোনে তারই লাঙ্গলের ফলায় কর্ষিত ক্ষেত্রে
রসসিঞ্চনে সিক্ত জমিনের ওমে নিষিক্ত হয় কৃষকের সুফলা বীজ
সময়  আসে  সেই বীজ অঙ্কুরিত হবার;

অঙ্কুরিত বীজ থেকে একদিন জন্ম নেয় সুফলা সন্তান
মাতৃস্তনের রসধারায় দিনে দিনে সন্তান বড় হয়ে
সুফলা ক্ষেত্রের কর্ষিত হবার কামনা পূরণ করে।

.             ***************************    
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পৃথিবীর বয়স বেড়ে গেছে অনেক অনেক
কবি মনোজিৎ কুমার দাস

পৃথিবীর বয়স বেড়ে গেছে অনেক অনেক
আদিম সৌন্দর্য হারিয়েছে সেই কবে !
বয়সী পৃথিবীর নির্মোক হয়েছে অনেক পুরনো
খোলস খুলে গিয়ে সৌন্দর্য হারিয়েছে সে;
আদিম সৌন্দর্যের রুপোলী আলোর গায়ে পড়েছে
কালো কালো ছোপ ।
ক্লান্ত পৃথিবীর আঁখি পল্লবে মৃত্যুর ছায়া
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর আজ-----
প্রেমপ্রীতি, স্নেহ মমতা দীর্ঘতর ছায়ায় আচ্ছন্ন।

পৃথিবীর বয়স বেড়ে গেছে অনেক অনেক
আদিম সৌন্দর্য হারিয়েছে সেই কবে !

লোক বেড়েছে,কিন্তু মানুষ বাড়ে নি
লোক বেড়েছে বহু গুণে দিনে দিনে,
বড়ে নি মানুষ এই বয়সী পৃথিবীতে
আজও কিন্তু;
পৃথিবীর লোকালয়ে দিকভ্রান্ত লাখো কোটি লোক
ছুটেছে নিরন্তর - - -
অনেক অনেক বিত্ত বৈভব আছে তাদেরও;

পৃথিবীর আদিম সৌন্দর্য লক্ষ কোটি লোকের হাতে
নিষ্পেষিত হতে হতে হারিয়েছে দিশা- -
গভীর থেকে গভীরতর ক্ষত পৃথিবীর লোকদের
দেহ মনে, অস্থিমজ্জায় অন্তরে অন্তরে----
বয়সী পৃথিবীর আনাচে কানাচেয় গড়ে উঠেছে
লোকালয়--- গড়ে উঠেনি মনুষ্যালয়,
মানুষের সংখ্যা বাড়ে নি
মানুষের  বড়ই অভাব যাদের মাঝে আছে মনুষ্যত্ব;
হিংসা , বিদ্বেষ, শঠতা, প্রবঞ্চনা, চৌর্যবৃত্তির
প্রাবল্যের মাঝে মানুষ হওয়া কি সম্ভব!

.             ***************************    
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর