কবি মুকুল ( দেবজ্যোতি ) পুরকায়স্থর কবিতা
*
যৌবনে মনে হত
কবি মুকুল পুরকায়স্থ

যৌবনে মনে হত
যদি পৃথিবীটা হত
আমার একার বাস,
চারিদিকে শুনশান, নিরালা নিস্তব্ধ
ফুরফুরে হাওয়ায়
আদিম পোশাকে, শুধু তুমি আর আমি
আর আমাদের সহবাস ||

কাক পক্ষী, সে থাকে থাক
ওদের নেই অত রাখঢাক
যেমন তুমি আর আমি ||

ভুল, সবই ভুল,
বেলা যায়, প্রখরের তেজ স্থিমিত হয়,
নরম আলোর পরে, রাত প্রহরের হাতছানি ||

তখন দুহাত বাড়িয়ে
মন কি যেন খুঁজতে চায়
শুধু তুমিতো আমার নয়
নির্জন মাটির ঘর হয় উথাল পাথাল
ঝড়ের বেগে ছুটতে থাকে মন |
আরো কিছু মন চায়
ভালবাসা চায়, স্নেহ চায়, প্রীতি চায়, বন্ধু চায়,
শুধু চাই, চাই, চাই, আরো  আরো |

আজ বুঝি আমি তো মানুষ
আমিতো মানুষ চাইনি,
আজ আমি তাকে চাই
মানুষ মানুষের জন্য |
সত্যি সত্যি সত্যি
আর কারো নয় ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
এ মন, কেমন যে মন
কবি মুকুল পুরকায়স্থ

এ মন, কেমন যে মন,
মনের ঘরে, মন না রাখো,
যে মনেতে নেইকো বাসা,
হৃদয় তারে কেন বলো ||

ও চোখ, কেমন ও চোখ,
চোখের তারায়, চোখ না রাখো,
যে চোখেতে নেই তো চাওয়া,
হরিণ চোখে কি লাভ বলো ||

যে হৃদয় দেবার তরে,
তাকে কেন, একলা করো,
বুকেও আঁকড়ে রেখে,
চোখের কোনায় কান্না ভরো ||

এখনো আছে সময়,
হৃদয়টাকে উজাড় করো,
ও মনে বাজবে বাঁশি
কান্না নহে চাঁদের আলো ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তোমার কথায় সুর্য্য ওঠে
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ২৭ / ৮ / ‘১৪, বুধবার, সকাল ৯:৩৮

তোমার কথায় সূর্য্য ওঠে
আবার ডুবে যায়
অস্তরাগের জীবনবেলায়
সেথায় আলো তায় ||

কখনো বাদল, দখিন হাওয়া
আঁধারে কখনো ছাও
গহীন এ পথে জোছনা প্লাবন
তুমি জীবন নাও ||

তুমি আমার জীবন এ পথ
তাতেই এ পথ চলা
থাকবে তুমি আঁধার রাতে
ভাসবে সুখের ভেলা ||

তোমায় ছুঁয়ে কাটে যেন
জীবনে দখিন বায়
মনের আবির তোমায় দিলাম
দিও আকাশটায় ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পুড়লো এমোন ধূপের মত
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ২১ / ১০ / ২০১৪, মঙ্গল বার, রাত ১১ :৫২

পুড়লো এমোন ধূপের মত,
স্বপ্ন হল ছাই,
এত ডাকি কেন মা তোর,
চরণ নাহি পাই ||

( আমার ) মনের কুসুম পেলাম মা,
তোর স্নেহ বারি বিন্দু,
তাই চোখের জলে এ বুক হল,
বেদন ভরা সিন্ধু ||

কৃপা করি আয় মা শ্যামা,
বক্ষ কমল মাঝে,
শুনিয়ে যা মা আলোর সে গান,
কালো ভ্রমর সেজে ||

ধন্য হবে এই এ জীবন
.     দেমা তিলেক ঠাঁই
তোর চরণে জবা হয়ে
.       ফুটতে যেন পাই ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আল্লা হরি একই তরী
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ৬  / ১ / ২০১৫, মঙ্গলবার রাত ১১ :৫৫

আল্লা  হরি একই তরী
ঘাটে ঘাটে নাম
পারের বেলা আজান, ভজন,
একই সুরে গান ||

কেউবা ডাকে দয়াল হরি
খোদা মেহেরবান,
কারো আকার কেউ নিরাকার
আসল এই পরাণ |

ভেবেছোকি কখনোকি
তুমি যে কোন জন
শূন্যে শূন্যে মিলাইবে
শূন্য ত্রিভূবন ||

একই দেহে কেউবা রহিম
কেউবা আবার রাম
তুমি যখন ডাক আল্লা
আমি দেখি শ্যাম ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কে এলে তুমি যাবার বেলা
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ২১ / ১ / ২০১৫, বুধবার রাত ১১ : ৫০

কে এলে তুমি যাবার বেলা
কুয়াশা ঘেরা সাঁঝে
অন্ধ নয়ন না পায় দিশা
দুহাত বাড়ায়ে খোঁজে ||

সেই যে বেলা কত হাসি খেলা
স্বপ্ন সোহাগে ভেসে যেত ভেলা
মনের গভীরে রামধনু রং
আকাশে পাখীর মেলা ||

ঝরা ফুলে কেন নিতে এলে ঘ্রাণ
পড়েনি ( কি ) আগে মনে
যত দাও খুলে দখিন দুয়ার
ভরিবেনা কুহু তানে ||

তীরে এসে কেউ হারায় যবে
তির তির সুরে বাজে
চুপি চুপি বলে আসবো ফিরে
পূর্ণ কোন চাঁদে ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সাধের গড়া ঘরে বলো
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ২৩ / ১ / ২০১৫, দুপুর ১টা

সাধের গড়া ঘরে বলো
কজন সুখে মরে
অসুখ ঘরে শেষের সেদিন
তোমায় মনে পড়ে ||

যে ঘর তুমি বাঁধলে সুখে
আপন সুখের তরে
রইবে পড়ি শীতল শরীর
একলা মাটির পরে ||

পিছন পানে দেখবে চেয়ে
হাজারো অশ্রু জল
ভালবাসার বিন্দু সে তো
নয়গো শুধুই ছল ||

ফুরায় যখন সকল চাওয়া
.     শুধু মায়া জড়ায়ে ধরে
ভুলে গেছি একলা চলা
.     তোমার খেলা ঘরে ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জয় ভোট বাবুদের জয়
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল--- ২ / ১২ / ‘১৩, সোমবার, বিকেল  ৩ : ৫০ মিঃ

জয় ভোট বাবুদের জয়
তোমাদের আশীষে ভাই
৮০ র পেয়াজ খাই
জয় ভোট বাবুদের জয় ||

আলুর বাবা গেছে মারা
হিমঘরেতে তাই
বাইরে এলে যাবে পচে
তাই যত্নে রাখা ভাই
জয় ভোট বাবুদের জয় ||

প্রতি মাসে বাড়তেছে তেল
বাড়ছে বাবুভাতা
ঐ দিকেতে চেয়োনা কো
চেয়োনা হতে নেতা ||

টানছো রিক্সা টেনে যাবে
কোরোনা খাই খাই
এত খিদে হয় কেনরে
জ্বালাস নেতো তাই ||

আলু গেল পিঁয়াজ গেল
আদা আধেক জলে
রসুন কেন থাকবে পড়ে
সে ও ভারী দলে ||

পিঁয়াজ রসুন দাম বেড়েছে
খাবার কি দরকার
বুঝে শুনে চলনা বাপু
ভাল্লাগেনা আর
এত খাবার কি দরকার ||

শেয়ার বাজার জন্মের মত
গেছে ঢুকে পাঁকে
কাজের বাজার ধুকু পুকু
ছাঁটাই ছাঁটাই ঢাকে ||

বললে বলে শেয়ার বাজার
দেখছিস গেছে পড়ে
তার জন্য একটু আধটু
দামটা গেছে চড়ে ||

ওসব নিয়ে টেনশন না
রাখবি মেজাজ নরম
এতে মোদের নেই কোন হাত
ওরাই সবের কারণ ||

এরা ওরা,  ওরা  এরা
চলছে ভালই খেল
বারে বারে যাচ্ছে ন্যাড়া
পড়ছে মাথায় বেল ||

ট্রাম পোড়েনা,  বাস পোড়েনা
যতই বাড়ুক ভাড়া
হজম শক্তি বেড়েছে ভাই
বাড়ছে দেশে ভেড়া ||

এরা বলে কি আর করবো
ওরাই নষ্টের গোড়া
এবার ভোটে জিতিয়ে দে
করবো ওদের খোঁড়া ||

বারে বারে ভোট পূজোতে
একই ঘুঘুর ধ্বনি
কানের বাবা গেছে মরে
ঢপের বাণী শুনি |

ঢপ বাবুদের বাজার ভালই
বাড়ছে ভাঁড়ার ভুঁড়ি
তুমি ন্যাকা আমি ন্যাকা
তাই ওরা চড়ে গাড়ী ||

দিনের বেলা কেউবা যে লাল
কেইবা সবুজ নীল
রাত্তিরেতে এক টেবিলে
একটাই হয় বিল ||

বারে বারে আসবে পূজো
সাজবে পূজোর ডালি
গামছা পেটে বাঁধি বাঁধবো
যেন মিছিল না যায় খালি ||

এর পরেতো আসবে ওরা
যুধিষ্ঠিরের ভাই
সেই আনন্দে প্রেমানন্দে
বাবা পীরের গান গাই ||

এর পরেতে এলো ওরা
ঢেঁড়শ কিলো আশি
এত দিন ভাই ছিলাম পাঁঠা
হলেম এবার খাশী ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হে মোর বঙ্গভূমি ( জননী )
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল--- ৪ / ১২ /  ২০১৩, বুধবার, ভোর ৫ : ১৩

হে মোর বঙ্গভূমি  ( জননী )
.      তুমিতো ছিলে সুন্দর
তোমার বক্ষ ফাঁড়ি
.      উঠছে বহুতল
চারিধারে বাজিছে ধ্বংসের দামামা
.      নাচছে দস্যুদল ||
সবুজের কিবা প্রয়োজন
.      শুধু অর্থের বিস্ফোরণ
.      নিয়নের আলেয়ায় ভেসে যাবে নগরী
.                 হইবে সুন্দর
.                       ভাবিছে মূর্খগন ||

হাসিছে মহাকাল
সর্বনাসের বাণী নিয়ে সাথে
.      ধ্বাবিছে মৃত্যুবলি,
.            আগামী পৃথিবীর তরে
.                 কে ধরিবে হাল ||

নতুনের কাছে কিবা রেখে যাবো
.      কিবা দেবো উপহার ?
ধূসর পৃথিবীর একতাল গোলা
.      সবুজহীন অট্টালিকার সম্ভার ||

তবুও স্বপ্নদেখা,
একবুক আশা নিয়ে, তবুও বাঁচা, বেঁচে থাকা
হোক চেতনার অন্বেষণ
যেন আগামী শিশুদের তরে
রেখে যেতে পারি সেই বাসযোগ্য পৃথিবী
হোক সবুজের আয়োজন ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তোমার প্রতি
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল--- ৬ / ১২ / ২০১৩, বৃহস্পতিবার, রাত ১১:৩৫

ছোট্ট জীবনকে
ভেতরের মন্ত্র গুলো
যদি হত আরো আরো বড়
তাহলে হয়ত কত ভাল হত ||

যদি হত বড় এই মনটা
যাকে বলে আকাশ ছোঁয়া
যদি অসীম হত দৃষ্টির সীমানা
সীমাহীন যদি হত দুটি হাত
তাদিয়ে পৃথিবীর সমস্ত
মন গুলোকে ছোঁয়া যেত
যা দিয়ে সরানো যেত
মনের কোনায় জমে থাকা
যত অন্ধকার ||

যেখানে তুমি গেছ
সেখানে কেমন আছো
যদি দেখা যেত
বড়ো ভাল হত |

সীমাহীন এই হাত
তোমার পদধুলি ছুঁয়ে
যদি বলতে পারত
আমি আছি, আমি ভাল আছি

আজ তোমার পৃথিবী
আমার থেকে অনেক দূরে
মনে পড়ে ইচ্ছে করে
খুব ইচ্ছে করে দেখতে
কেমন তোমার পৃথিবী,
তাকে কেমন করে সাজিয়েছো
একবারো কি মনে পড়ে ?
এখানে আমি কেমন আছি
মনে পড়ে হয়ত |

( আজ ) তোমার চোখের জল
হয়ত বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে
আমার বুকে,
তোমার ভালবাসা হয়ত
বাতাসের মত শীতল করে মন,
তোমার আশীর্বাদ
বিজলীর ঝলক দিয়ে
পথ দেখায় হয়ত

তোমার চলে যাওয়া
জীবন টা কি ?
জানান দিয়ে গেল হয়ত
তোমার চলে যাওয়া
আজো প্রতি রাতে বালিশ ভেজায়
গুমরে মরে প্রতিটি রাতের অন্ধকার

এটা  কি,  কেন ?
কেন তাতো জানিনা
তবে কি এটাই ফেলে যাওয়া ভালবাসা
তবে কি এটা ফেলে যাওয়া মমতা
তবে কি এটা ছেড়া তারের নীরব সুর

আমার চোখের জল ছাড়া
আজ দেবার কিছুই নেই
এটাই তোমার ফেলে যাওয়া ভালবাসার
শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য
হয়ত ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর