শ্যামলদাকে কবি মুকুল পুরকায়স্থ রচনাকাল-- ৭ / ১২ / ২০১৩, শনিবার, রাত ১১ : ৪৯মিঃ শিল্পী শ্রী শ্যামল সেনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে
আমার ভালবাসার সিঁড়ির আর একটা ধাপ খসে পড়ল সেদিন ছিল পাঁচই অক্টোবর বিকেল ৫:৩০ পড়ন্ত বিকেলের শেষ রোদ গায় মেখে তুমি পাড়ি দিলে তুমি চলে গেলে সব খেলা ফেলে |
যতবার তোমার কাছে গেছি কখনো দেখিনি তোমাকে হেরে যেতে বার্ধক্য ছুঁতে পারেনি তোমার মনকে বার্ধক্য ছুঁতে পারেনি তোমার হাসিকে, তুমি ছিলে শ্যামল চির শ্যামল |
আমার কাজ নিয়ে যখন তুমি লোককে বলতে ও কাজটা করে বেশ তখন লজ্জায় চোখ দুটো কেঁপে ওঠে চোখের কোল বেয়ে বেরিয়ে আসে ফোঁটা ফোঁটা জল, আজ শুনতে ইচ্ছা করলেও শুনতে পাব না তুমি হাসতে হাসতে আর বলবেনা সেকথা কখনো |
সাদা পোষাকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আর তুমি বলবেনা ভালভাবে যেও আর তুমি বলবেনা আবার এসো |
তোমার ছোঁয়া পাবেনা ঐ গেলাসটা যাকে রোজ সন্ধ্যায় ভালবেসে চুমু দিতে তোমার ছোঁয়া পাবেনা তুলি গুলো সারাদিন যারা তোমার হাত ধরে চলাচল করত সাদা কাগজের উপর তারা আজ বড়ো একা একে বারে একা, নিঃসঙ্গ ||
গ্যালারী 79 এর বোর্ডটা আর নতুন রঙে সেজে উঠবেনা হয়ত খালি বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে তুমি আর হাত নাড়বেনা শ্যামল হীন বারান্দাটা কি নিঃসঙ্গতায় গেছে ছেয়ে দিনের আলোতেও কেমন যেন অন্ধকার লাগে |
তুমি আজ শুধু স্মৃতি তুমি শ্যামল ছিলে তুমি শ্যামল থাকবে আমাদের মাঝে শ্যামল কখনো মরতে পারেনা শ্যামল কখনো ধূসর হয়না কালের নিয়মে শুধু তুমি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছ |
শুধু একটাই আক্ষেপ চলে যাবার আগে হলনা শেষ সাক্ষাৎ তোমার আশীর্বাদের হাতটা ছুঁতে পারলনা আমার মস্তক এখন থেকে আর তুমি আমায় খুঁজবেনা আমি তোমায় খুঁজে যাবো সময়ের অঙ্কে আমিও আসছি তোমার পরে দুঃখ কোরোনা, ভালো থেকো বিদায় বন্ধু বিদায় ||
সূর্য্য যত পশ্চিমে ঢলে পড়ে তত গাঢ় থেকে আরো গাড় হতে থাকে ক্ষীণ হতে থাকে আলো |
তারপার তারপর সারা পৃথিবী ধীরে ধীরে মুড়ে যায় কালো চাদরে | এমন সময় তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে বড়ো কিন্তু দেখবো কেমন করে আমার পৃথিবী তো অন্ধকারে আবৃত তোমার কাছে যেতে চাইলে কি হবে আমার যাবার পথ সেতো অন্ধকারে ছাওয়া |
তোমাকে ভালবাসতে ইচ্ছে করলে উপায় কি ? আমার পৃথিবীতো আজ বাতাস হীন গন্ধ হীন |
চামেলী, জুঁই, নিমের গন্ধে সেই তো মাতাল করে দিত সেইতো পাগল করে দিত হাসনুহেনা, বেল, জুঁই কামিনীর গন্ধে এমন কি রজনীগন্ধা তাও না
সেইতো মাতিয়ে ছিল আমার বাসর তারা বাসি হয়ে আজ ঝরে পড়েছে আমার পৃথিবীর বুকে আমার পৃথিবী আজ অন্ধকার কেবলই অন্ধকার ||
আবার যদি আসে কোন নতুন ভোর আবার যদি আলো ফোটে সেই নরম আলোর স্নিগ্ধ প্রলেপে আলিঙ্গনে ভরিয়ে দেবো তোমার সারা অঙ্গ
দুপুরের প্রখর তাপে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেব তোমার বুকের ভিতর | তারপর ? তারপর বাকি সময়টুকু খেলাঘরের খেলনা বাটি খেলা |
ঢলে পড়া পশ্চিমের আলো জানান দিয়ে যায় বেলা যে গেল গোধূলীর আলো ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর স্মৃতির পাতা খসে পড়ে এক, দুই, তিন, চার ঝাপসা আরো ঝাপসা হয়ে আসে আমার স্বপ্নের পৃথিবী |
বুঝে গেলাম এবার বুঝি ছুটির ঘন্টা বাজতে চলেছে দূর আরো দূর, আরো দূরে সরে যাচ্ছি আলোর পৃথিবী থেকে |
তাই যাবার বেলা শেষ কথা তোমাকে বলে যেতে চাই আজ আমার পৃথিবীটা তোমাকে দিয়ে গেলাম | সে পৃথিবী তোমার করে নিও ফুলে ফুলে সবুজে, পাখির কূজনে ভরিয়ে দিও আর তোমার বুকের রক্তিম ভালবাসা উজাড় করে দিও শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার ডালে যত্নে রেখো, রেখে যাওয়া পৃথিবীকে |
যাবার বেলা শুধু এটুকুই চাওয়া আমার শিয়রে জ্বলা প্রদীপের সলতেটা আর একটু পরেই নিভে যাবে হয়ত দুঃখ কোরোনা
তোমার জন্য রেখে গেলাম অনেক বসন্ত শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার সাথে তোমার মনের রং মিশিয়ে নতুন করে রাঙিয়ে নিও আগামী পৃথিবী, আবারো দেখা হবে কোন জন্মের পারে
রেখে গেলাম অনেক অনেক ভালবাসা বিদায় বিদায় প্রিয়তমাষু ||