কবি মুকুল ( দেবজ্যোতি ) পুরকায়স্থর কবিতা
*
শ্যামলদাকে
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ৭  /  ১২ /  ২০১৩, শনিবার, রাত ১১ : ৪৯মিঃ
শিল্পী শ্রী শ্যামল সেনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে

আমার ভালবাসার সিঁড়ির
আর একটা ধাপ খসে পড়ল
সেদিন ছিল পাঁচই অক্টোবর বিকেল ৫:৩০
পড়ন্ত বিকেলের শেষ রোদ গায় মেখে
তুমি পাড়ি দিলে
তুমি চলে গেলে সব খেলা ফেলে |

যতবার তোমার কাছে গেছি
কখনো দেখিনি তোমাকে হেরে যেতে
বার্ধক্য ছুঁতে পারেনি তোমার মনকে
বার্ধক্য ছুঁতে পারেনি তোমার হাসিকে,
তুমি ছিলে শ্যামল চির শ্যামল |

আমার কাজ নিয়ে যখন
তুমি লোককে বলতে
ও কাজটা করে বেশ
তখন লজ্জায় চোখ দুটো কেঁপে ওঠে
চোখের কোল বেয়ে বেরিয়ে আসে
ফোঁটা ফোঁটা জল,
আজ শুনতে ইচ্ছা করলেও শুনতে পাব না
তুমি হাসতে হাসতে আর বলবেনা সেকথা
কখনো |

সাদা পোষাকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে
আর তুমি বলবেনা ভালভাবে যেও
আর তুমি বলবেনা আবার এসো |

তোমার ছোঁয়া পাবেনা ঐ গেলাসটা
যাকে রোজ সন্ধ্যায় ভালবেসে চুমু দিতে
তোমার ছোঁয়া পাবেনা তুলি গুলো
সারাদিন যারা তোমার হাত ধরে
চলাচল করত সাদা কাগজের উপর
তারা আজ বড়ো একা
একে বারে একা, নিঃসঙ্গ ||

গ্যালারী 79 এর বোর্ডটা
আর নতুন রঙে সেজে উঠবেনা হয়ত
খালি বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে
তুমি আর হাত নাড়বেনা
শ্যামল হীন বারান্দাটা
কি নিঃসঙ্গতায় গেছে ছেয়ে
দিনের আলোতেও কেমন যেন অন্ধকার লাগে |

তুমি আজ শুধু স্মৃতি
তুমি শ্যামল ছিলে
তুমি শ্যামল থাকবে আমাদের মাঝে
শ্যামল কখনো মরতে পারেনা
শ্যামল কখনো ধূসর হয়না
কালের নিয়মে শুধু
তুমি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছ |

তুমি ভাল থেকো
দুফোঁটা চোখের জল
ভালবাসার ঋণ শোধ করতে পারেনা

শুধু একটাই আক্ষেপ
চলে যাবার আগে
হলনা শেষ সাক্ষাৎ
তোমার আশীর্বাদের হাতটা
ছুঁতে পারলনা আমার মস্তক
এখন থেকে আর তুমি আমায় খুঁজবেনা
আমি তোমায় খুঁজে যাবো
সময়ের অঙ্কে আমিও আসছি
তোমার পরে
দুঃখ কোরোনা, ভালো থেকো
বিদায় বন্ধু বিদায় ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আজ শিমুল পলাশের যত রং
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল--২০ / ৪ /২০১২, শুক্রুবার

আজ শিমুল পলাশের যত রং
আকাশের গায়ে ঢেলে দিয়েছে কেউ
অপরূপ মায়াময় আজ গোধূলি ||

সূর্য্য যত পশ্চিমে ঢলে পড়ে
তত গাঢ় থেকে আরো
গাড় হতে থাকে
ক্ষীণ হতে থাকে আলো |

তারপার তারপর সারা পৃথিবী
ধীরে ধীরে মুড়ে যায় কালো চাদরে |
এমন সময় তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে বড়ো
কিন্তু দেখবো কেমন করে
আমার পৃথিবী তো অন্ধকারে আবৃত
তোমার কাছে যেতে চাইলে কি হবে
আমার যাবার পথ সেতো অন্ধকারে ছাওয়া |

তোমাকে ভালবাসতে ইচ্ছে করলে উপায় কি ?
আমার পৃথিবীতো আজ
বাতাস হীন গন্ধ হীন |

চামেলী, জুঁই, নিমের গন্ধে
সেই তো মাতাল করে দিত
সেইতো পাগল করে দিত
হাসনুহেনা, বেল, জুঁই কামিনীর গন্ধে
এমন কি রজনীগন্ধা তাও না

সেইতো মাতিয়ে ছিল আমার বাসর
তারা বাসি হয়ে আজ ঝরে পড়েছে
আমার পৃথিবীর বুকে
আমার পৃথিবী আজ অন্ধকার
কেবলই অন্ধকার ||

আবার যদি আসে কোন নতুন ভোর
আবার যদি আলো ফোটে
সেই নরম আলোর স্নিগ্ধ প্রলেপে
আলিঙ্গনে ভরিয়ে দেবো
তোমার সারা অঙ্গ

দুপুরের প্রখর তাপে
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেব
তোমার বুকের ভিতর |
তারপর ?
তারপর বাকি সময়টুকু
খেলাঘরের খেলনা বাটি খেলা |

ঢলে পড়া পশ্চিমের আলো
জানান দিয়ে যায়
বেলা যে গেল
গোধূলীর আলো ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর
স্মৃতির পাতা খসে পড়ে
এক, দুই, তিন, চার
ঝাপসা আরো ঝাপসা হয়ে আসে
আমার স্বপ্নের পৃথিবী |

বুঝে গেলাম এবার বুঝি
ছুটির ঘন্টা বাজতে চলেছে
দূর আরো দূর, আরো দূরে সরে যাচ্ছি
আলোর পৃথিবী থেকে |

তাই যাবার বেলা শেষ কথা
তোমাকে বলে যেতে চাই
আজ আমার পৃথিবীটা
তোমাকে দিয়ে গেলাম |
সে পৃথিবী তোমার করে নিও
ফুলে ফুলে সবুজে, পাখির কূজনে ভরিয়ে দিও
আর তোমার বুকের রক্তিম ভালবাসা
উজাড় করে দিও
শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার ডালে
যত্নে রেখো, রেখে যাওয়া পৃথিবীকে |

যাবার বেলা শুধু এটুকুই চাওয়া
আমার শিয়রে জ্বলা প্রদীপের সলতেটা
আর একটু পরেই নিভে যাবে হয়ত
দুঃখ কোরোনা

তোমার জন্য রেখে গেলাম অনেক বসন্ত
শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার সাথে
তোমার মনের রং মিশিয়ে
নতুন করে রাঙিয়ে নিও
আগামী পৃথিবী,
আবারো দেখা হবে
কোন জন্মের পারে

রেখে গেলাম অনেক অনেক ভালবাসা
বিদায় বিদায় প্রিয়তমাষু ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রতি বসন্তে, ঋতু বসন্ত
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
শনিবার,  ৫  / ৪ / ২০১৪, সকাল ১০ : ০৫


প্রতি বসন্তে, ঋতু বসন্ত
.    আসেগো, ফিরে ফিরে,
.       জীবন বসন্ত, তিলে তিলে যায়,
.           এ ধর হতে দূরে ||

এবার বসন্তে ফুটছে পলাশ,
.   ভেতর ভরেনি ফাগে,
.      ভেতরে ফোটেনি কৃষ্ণচূড়া
.         বাহিরে বরেছে দাগে ||

এভাবেই বুঝি ফেরে বসন্ত,
.    এ জীবন খেলা ঘরে--- [  ফেলে রেখে ]
.        কখনো বোশেখ, কখনো শ্রাবণ,
.              জীবনে খেলা করে
.               জীবনে খেলা করে ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
একলা যেতে ভয়ে মরি
কবি মুকুল পুরকায়স্থ

ওরে একলা যেতে ভয়ে মরি
সঙ্গে কেউকি যাবি আয়
বেলা শেষে শেষের তরী
পারে ভেসে যায়
.      পারে ভেসে যায় ||

চোক্ষে আঁধার মনে আঁধার
আঁধার দেখি ঐ পারাবার
একি হতাশ অনল বুকের মাঝে
ফিরে যেতে মন চায়
.        পারে ভেসে যায় ||

সুখ ভেবে যা করা চয়ন
খেল ভুতে খেল স্বজন
যাবার বেলা ফুটো কড়ি
খালি আমার এ পরাণ
ওরে ওরো ও মন ||

স্মৃতির কিনার রইলো পড়ে
তোমরা থেকো সুখে তায়
সঙ্গী হীনে দাও হে সঙ্গ
চাইনা কিছু এই বেলায়
.           পারে ভেসে যায় ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শূন্য হবে শূন্য হবে
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ২৬ / ৪ / ২০১৫, বুধবার, রাত ১১: ৫১

শূন্য শূন্য হবে চর
পাখি যখন ভাঁঙবে বুকের ঘর,
কাঁচা দেওয়াল পড়বে খসে
এই যে মাটির পর
পাখি যখন ভাঁঙবে বুকের ঘর ||

চোখ দুখানি আষাঢ় শ্রাবণ
বুকের মাঝে ঝড়,
শুধু ভোরের পাখি জানবে না তো
কে যে হল পর ||

নিমেষ ঘরে সকাল বেলা
.    রাতের অন্ধকার
স্বপন আঁখি পুড়বে চিতায়
.     এই তো চরাচর ||

তবু খেলার ছলে চলবে খেলা
সাঁঝ গড়িয়ে ভোর
সরবে আঁখি, আঁখি হতে
এই তো নিরন্তর ||
শূন্য হবে শূন্য হবে চর ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পোলাগুলা বিদেশ পলায়
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল -- ২৭ / ৩ / ২০১৪, বৃহস্পতিবার, বেলা ১১ : ২২

পোলা গুলা বিদেশ পলায়
কান্দে বাপে মায়
দুধ মাখা ভাত রয়গো পড়ে
কাগে খাইয়া যায় ||

কিলের মাসি কিসের পিসি
নেইতো বৃন্দাবন
বুকের পরে পাষাণ চাপা
.     নিজে বাঁচার পন ||

আয়রে পাখি ডাকে মায়ে
দেয়না সাড়া ভয়ে
পাখি ছাড়া খাঁচার কি দাম
কিবা পরিচয় ||

কেন বলো পাখি গুলা
আকাশ পানে ধায়
জানেনা তো পাখি আমার
সুখ যে কারে কয় ||

দুধ মাখা ভাত রয়গো পড়ে
কাগে খাইয়া যায় ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বসন্ত সে যে আসে ফিরে ফিরে
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল---  ২৯ / ৩ / ২০১৪, শনিবার দুপুর ১ :২২


বসন্ত সে যে আসে ফিরে ফিরে
জীবনে অনেক বারই
যৌবন সে তো আসে না ফিরে
একবারই হাতছানি ||

যে মালা গাঁথা সকাল বেলা
বিকেলে ঝরে যায়
চাইলে সেতো আর ফেরে না
আগের বিথীকায় ||

কালের নিয়মে ফিরে আসে ঋতু
জীবনের সাথে আড়ি
প্রতি বসন্তে ফুটিবে মুকুল
আসবে ফিরে অলি ||

সময়ের কাঁটা পিছনে ফেরেনা
চলে প্রতিপল গুনি
জীবন বসন্ত যে ফিরে গেছে
আসবে না ফিরি ফিরি
যৌবন সেতো আসেনা ফিরে
একবারই হাতছানি ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভোরের আজানে ভাঙে যে ঘুম
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ১৫ / ১ / ২০১৪, বুধবার, বেলা ১২ : ২৫

ভোরের আজানে ভাঙে যে ঘুম
শুনি কুহুর কলতান,
আজান ভজন সবই তো তুমি
তুমিই হরি নাম ||

কালের রাত্রি ঘোচাও তুমি
তুমি আলোর গান
.    অন্ধে তুমি দাও গো আলো
.          কলেবরে তুমি প্রাণ ||

মনের কলুষ করো গো হরণ
কহ্লারে তুমি ঘ্রাণ
প্রলয় কালে তুমি তরনী
তুমি কামোদার গান ||

কলিকা দলে সঞ্চার তুমি
তুমি ওলির তান
এ কায়া শুধু সঁপেছি তোমায়
কামীরে করো ত্রাণ ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ডাকছে আকাশ ডাকছে বাতাস
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল--  ১৬ / ১ / ২০১৪, বৃহস্পতিবার, বেলা ১১ : ২০

ডাকছে আকাশ ডাকছে বাতাস
ডাকছে সোনার গাঁ
হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা
এক্কা দোক্কা পা ||

হারিয়ে গেছে বৌ বাসন্তি
মিছে ধুলো মাটি
বিশ্ব গ্রাসে হারিয়েছে
আমার সোনা গাঁ টি ||

হারিয়ে গেছে পক্ষীরাজ
আবোল তাবোল ছড়া
নেই সুকুমার রাজার কুমার
রবির কুমোর পাড়া ||

ঘুমের মাঝে আসেনা আজ
ঘুমের মাসি পিসি
টুকরো টুকরো ঘরেতে নেই
সাধের মাসি পিসি ||

মনের বোঝা বেড়েছে আজ
হারিয়ে গেছে পা
এসো ফিরে ছেলেবেলা
ফিরবে সোনার গাঁ ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কে এলে মোর যাবার বেলা
কবি মুকুল পুরকায়স্থ
রচনাকাল-- ২০ / ১ / ২০১৪,  সোমবার, ২ : ৪২

কে এলে মোর যাবার বেলা
   কি বলতে চাও ,
এখন, তিমির ছাইল গগন
.      কি আলোর গান গাও |

যে পথিক গেছে এ পথ ছাড়ি
.        ধূলায় কি কি খুঁজে পাও
ফিরিবেনা যে এ পথে কভু
.        যেতে দাও, যেতে দাও ||

তানপুরাটা কাঁদবে যখন
.       আকাশ কালো চায়
ঘুমের পাখিরে জাগিওনা আর
.        বাঁধন ছিঁড়িয়া দাও ||

কে এলে মোর যাবার বেলা
.            কি বলিতে চাও ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর