কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
ভালোবেসে চাঁদ হয়ো নাকো
কথা - কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
সুর -
কবি পরেশ ধর     
কবি সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া।

ভালবেসে চাঁদ হয়ো নাকো
পারো যদি সূর্য হয়ে এসো
আমি তার উত্তাপ নিয়ে নিয়ে
আঁধার অরণ্য জ্বেলে দেবো।

ভালোবেসে নদী হয়ো নাকো
পার যদি বন্যা হয়ে এসো
আমি তার আবেগ বয়ে নিয়ে
হতাশার যত বাঁধ ভেঙে দেবো।

ভালোবেসে ফুল হয়ো নাকো
পারো যদি বজ্র হয়ে এসো
আমি তার শব্দ বুকে ধরে
লড়াইয়ের বার্তা দিকে দিকে ছুঁড়ে দেবো।

ভালবেসে পাখি হয়ো নাকো
পারো যদি ঝঞ্ঝা হয়ে এসো
আমি তার শক্তির ছোঁয়া পেয়ে
পাপের প্রাসাদটা ভেঙে দেবো।

চাঁদ নদী ফুল তারা পাখি
দেখা যাবে কিছুকাল পরে
কেননা এ-অন্ধকারে শেষ যুদ্ধ এখনো বাকি
এখন আগুন চাই আমাদের ভাঙা কুঁড়ে ঘরে।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভারতে চীন পন্থী আছে
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া।

ভারতে চীন পন্থী আছে
চীনে ভারত পন্থী নেই
সুতরাং চীন খারাপ |
চীনেরা ব্যাঙ আরশোলা খায়
সুতরাং তারা মন্দ এবং অসভ্য
চীন অসভ্য সুতরাং ভালো নয় |
আমেরিকা রাশিয়া ফ্রান্স এটমবম করেছে
এবং তারা রাষ্ট্রসংঘের সদস্য |
চীনও এটমবম তৈরী করেছে
এবং সে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য নয়
অতএব সে মানুষের শত্রু |
যারা মানুষের শত্রু তারাই খারাপ
সুতরাং চীন খারাপ |

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ওখানে অনেক তারা
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া

ওখানে অনেক তারা
মেঘের দেশেতে খেলা করে
ওখানে অনেক গান
জ্যোত্স্নার ধারা আনে ঘরে
অনেক মধুর হাসি
পৃথিবীকে বলে ভালবাসি |
এখানেতে শুধু ব্যথাভরা
পুঞ্জ পুঞ্জ শুধু অন্ধকার
নিঃঝুম এদেশেতে
পথ চেনা হয়ে ওঠে ভার |

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রতীক্ষা
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া।
স্কুলে পড়ার সময় লেখা কবিতা।

তোমারে খুঁজেছি আমি
জনারণ্য রাজধানী পথে
হয়তো বা স্পর্শ স্বাদে
ভেসে গেছি বহুদূরে চলমান স্রোতে
জানি না কবে, কোন শুভ মুহূর্ত্তে
এসেছিলে হৃদয়ের কোণে
নিভৃতে প্রদীপ হাতে
এসেছিলে অতি সংগোপনে
সেদিনের সে পরশ
সেই সুর ফিরিতেছে মনের কোঠায়
আজিও প্রতিটি রাত
জ্যোত্স্নাভরা প্রতিটি সন্ধ্যায়
মন মোর কেঁদে ওঠে---
কেঁদে ওঠে কোমল প্রত্যাশায় |
জানি আর দেখা নাহি পাব
চায়ের টেবিলে আর
শুনিব না চুড়ির নিক্কণ
জানালার পাশটিতে হাসিবে না কেহ
তবুও আজ হৃদয়ের অনুরাগ ভরে
গাহিতেছি গীত
তোমারি পরশে আজ
হৃদয়কে করিব যে ধন্য
তাই তব আগমণ পথে
জ্বেলেছি প্রদীপ |

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভোট এসেছে
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া

ভোট এসেছে, ভোট এসেছে
ভোট এসেছে ভাই !
দল গজালো, নেতাও এলো
দাদাও পাকায় ঘোঁট
প্রলেটারিয়েট জোট |
প্রাসাদ থেকে নেমে আসে
হঠাৎ হাওয়া নেতা
দুর্নীতি দূর হবেই এবার
যায় যদি ভাই জেতা !
.     শান্তি শান্তি ওঁ শান্তি
.     অপার শান্তি ভাই
.     বসিরহাটে রক্ত ঝরে
.     মন্ত্রী তোলে হাই |
দেবই তো ভোট, ভোট দেব না
দিয়েছো কাঁচকলা
মাইলো নাচে পেটের ভেতর
হাড়িকাঠে গলা |
দেবই তো ভোট, ভোট দেব না
.      ইঁদুরে সরার চাল
মধ্যরাতে ডিভ্যালুয়েশন
[ শুধু ] নিন্দুকে দেয় গাল
সমৃদ্ধির সমান বৃদ্ধি
টাটা বিড়লার ঘরে
গম মাইলোয় পেট ভরে যায়
দেশোন্নতির ঝড়ে ||

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পালাবদলের পালা
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ তে কবিতাটি প্রকাশিত হয় “নিশান” পত্রিকায়।  “সৈন্য”  
পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে।
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া


মরে গেল রামু চালের লাইনে, হয়েছে ফিট,
দাশু কেঁদে ফেলে পেটে পিলে নিয়ে কী অদ্ভুত !
লক্ষ টাকার মন্দির মেঘ ছুঁয়েছে ঠিক,
ভোগের থালায় পুরুত মশাই দেখছে খুঁত |

ন্যাড়া-পেঁচো-ভোঁদা সিনেমা লাইনে ---- উঠছে হাই,
পরীক্ষা হলে হরি-মতি-শ্যাম টেবিল ছোঁড়ে |
চায়ের ধোঁয়ায় রাজা উজিরেরা হয় জবাই,
কঙ্গো-সুয়েজ-কিউবা-চিন্তা মাথায় ঘোরে |

পূজার তোরনে সিনেমা-মার্কা মাইক দিনে ও রাতে
দেবের মন্ত্র রক ওণ্ড রোলেতে ম্লান ;
শান্তিরক্ষী আলোকে আঁধারে পেছনেতে হাত পাতে
ড্রেনপাইপেতে যৌবন খোঁজে প্রাণ !

মনে হ’লো আজ এসেছে সময় গান শোনাই
পেটে ব্যথা ওঠে-- মন্দির চূড়া অর্থহীন
ক্ষয়ে-যাওয়া বুকে জীবনের ডাক শুনেছি ভাই
সকল হতাশা দূর করে পাওয়া রঙিন দিন |

আমরা দাঁড়াবো চোখে জল মুছে, বুকে আগুন
অভুক্ত পেট জল খেয়ে আর ভরাবো না |
আমরা এসেছি তারকাবুড়ীর চাই যে খুন,
মোদের স্বপ্নে নতুন যুগের জালবোনা |

আগুনের তাপে উত্তাপ নেবো মোরা
স্খলিত যুগের চিতায় আগুন জ্বালা ;
শীতের ভাবনা কেঁপে হবে দিশাহারা
উঠবে শপথ পালাবদলের পালা |

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মৃত্যু নেই
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
মরণোত্তর প্রকাশ, নিশান পত্রিকায় নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৭১। আড়িয়াদহ অঞ্চলে একটি
বিন্ধ্যবাসিনী বালিকা বিদ্যালয়ের শতবার্শিকী উত্সবের মণ্ডপ ভাড়াটে গুণ্ডারা
পুড়িয়ে দিলে মুরারি এই কবিতাটি লেখেন। স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ
লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে এই কবিতাটি আমরা পেয়েছি।


দগ্ধ প্যাণ্ডেলের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছি আজ আমি
দগ্ধ মানবতা নিয়ে ঘৃণায় বিক্ষুব্ধ হয় চোখ
দগ্ধ রাতে, অন্ধকারে, লজ্জা আসে নামি
এবং এ শুভ লগ্নে প্রতিজ্ঞার নবজন্ম হোক |
অত্যাচার জমে জমে বিক্ষোভের ইতিহাস হয়,
ইতিহাস বিধাতার আরো কিছু বাকী আছে বুঝি,
তবু জানি শেষ যুদ্ধে আনবোই জয়
তাইতো আগুন দেখে আগুনেরই কাছে পথ খুঁজি |
শ্মশানের ভষ্মস্তুপে জাগাবোই নতুন জীবন,
এরই জন্যে অশ্রু মুছে একতার জয়গান গাই ;
প্রতিজ্ঞার ইতিহাসে ক্ষোভ ঘৃণা অপূর্ব মিলন
এবং বেদনা নিয়ে কথা বলে যেতে চাই----
বিশ্বাস অমৃত পুত্র মারলে মরে না,
আগুনে প্যাণ্ডেল পোড়ে, মন তো পোড়ে না |

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিরহী
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
কবির প্রথম দিকের কবিতা।
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া।

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
মনের দুয়ার খোলা
( তবু ) তুমি এলে না এই
মিঠে সকাল বেলা।
এমনি মধুর দিনের তরে
বসে আছি অন্যমনা
তবুও কি পাবোনা তোমার
অগাধ প্রেমের একটু কণা?

সূর্য ওঠে আকাশ পরে
মেঘের দেশে দেশে
রাঙিয়ে দিল দিগ্বিদিক সে
মধুর হেসে হেসে।
আজ হৃদয় আকাশ রাঙিয়ে দিয়ে
আসবে কি মোর মনে,
আসবে কি মোর অগাধ প্রেমের
নিবিড় আলিঙ্গনে?

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্মৃতি
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
কবির প্রথম দিকের, স্কুল জীবনের কবিতা।
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া।

ভুলে গেছি কোন সে শুভক্ষণে
এসেছিলে তুমি
আমার এই হৃদয়ের কোণে।
অপরাহ্নে পরিশ্রান্ত মনে
শুধু বসে থাকা একান্ত নির্জনে
তোমার প্রত্যাশায়।
পশ্চিম দিগন্তে শেষ ভালোবাসা দিয়ে
সূর্য পড়ে ঢলে,
মেয়েরা একাকী শুধু রুগ্ন মনে
শূন্যতায় ভেসে ভেসে চলে।
পৃথিবীর বিরহ বেদনায়
কেঁপে ওঠে প্রেমিকের শেষ রশ্মি শিখা
আকুল কান্নায়।
বেদনা ব্যথিত চিত্ত দিনান্তের অস্মিত রবি,
মনে হয় আমি যেন তারই বিরহের
মৌন প্রতিচ্ছবি।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
তুমি কৃষক
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
কবির প্রথম দিকের, স্কুল জীবনের কবিতা
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া

. . . গ্রামে তুমি শ্রম কর।
ফল যাহা নিয়ে যায়
ধনিকেরা সহরেতে
গদিটি বাড়ায়
তুমি পড়ে থাক নিরন্ন নিঃসহায়
হয়ে, গ্রামের পাতায় বাসায়।
হে কৃষক বিদ্রোহ কর
ঘোরতর বিদ্রোহ
তা না হলে ঘুচিবে না
তোমাদের এই দুর্গ্রহ।
. . . আমি বলি হে অভুক্ত পরান
ভয় নাই ভয় নাই স্মর ভগবান
আসিতেছে তোমাদের “বিধাতা মহান”।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর