কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
পড়েশুনে ভালো হওয়া---সে আমার নয়
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
১৮ই আষাঢ় ১৩৭১ (২ জুলাই ১৯৬৪) বৃহস্পতিবার, কবির ডায়েরির কবিতা। মাত্র ১৯
বছর বয়সে লেখা। স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে
নেওয়া।

পড়েশুনে ভালো হওয়া---সে আমার নয়,
লভিব আনন্দকণা আড্ডার আসরে
যদি বাধা দাও মোরে ; যুক্তির সুতীক্ষ্ণবাণে
খণ্ডন করিব তাহা---পড়িবে ফাঁপরে।
ধীরে ধীরে কাঁটা ঘুরে যায়,
এই মাঠে এই ঘাসে কারা যেন
গানেতে মাতায়---শুনেছ কি? যদি
নাহি শুনে থাকো---এসো বলি,
না, না, নামগোত্রে নাহি প্রয়োজন
নির্বিবাদে লইব তোমায়,
এখানে প্রাণের কথা বলি---
এসো চলি।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কিবা লাভ পড়াশুনা কো’রে?
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
১৮ই আষাঢ় ১৩৭১ (২ জুলাই ১৯৬৪) বৃহস্পতিবার, কবির ডায়েরির কবিতা। মাত্র ১৯
বছর বয়সে লেখা। স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী, ১৯৯৮ থেকে
নেওয়া।

কিবা লাভ পড়াশুনা কো’রে?
কত কথা তুবড়ী সম লাল হয়ে ঘেরে
শোন নি কি? রাজনীতি, কুনীতি, দুর্নীতি
চা-বিড়ি সিগারেট---ধোঁয়ায় ধোঁয়াটে মূর্তি
রাম, মতিস হোরে---
কিবা লাভ পড়াশুনা করে?
চকিত চঞ্চলা কত চরণের তালে
সিটি পড়ে মাঝে মাঝে---মনে হয়
কোকিল এসেছে যেন ডালে।
বসন্ত কন্যাকে নিয়ে ক...ত সম্বোধন
কোকিলের ভালোবাসা---মন।
কিছু লাজ, কিছুবা ভর্ৎসনা
অবজ্ঞা মিশ্রিত কিছু ঘৃণা---সব পাবে হেথা ;
এই তো জীবন।
গানে গানে প্রাণে প্রাণে হাত ধরাধরি
হৃদয়ের কত আলাপন---এই তো জীবন।
কিবা লাভ পড়াশুনা কোরে---
হৃদয়েরে ফাঁকি দিয়ে গোমড়ামুখ চাহি নি সে আমি
দেখ থরে থরে---
হাসিছে হাসির মূর্তি রাম, মতি, হোরে
কিবা লাভ পড়াশুনা করে।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঘড়ি চলে
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
“মুরারি স্মৃতিরক্ষা কমিটি”-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত অমল রায়ের সম্পাদনায় কাব্যসংকলন
“মৃত্যু নেই” ( ৭০ দশকের শেষ দিকে ) থেকে নেওয়া। কবিতাটির কোনো শিরোনাম ছিল
না। সম্পাদক এই নামকরণ করেন।


ঘড়ি চলে ঠিক্ ঠিক্ ঠিক্
সময় কে কোলে ক’রে নিয়ে
মানুষ চেয়ে থাকে ভবিষ্যতের দিকে
বাঁচার প্রত্যাশায়।
.                অনন্ত জিজ্ঞাসা শুধু
.                আর্তনাদ করে ওঠে বাঁচতে দাও,
.                বাঁচতে দাও নূতন জীবন নিয়ে
ঘড়ির কাঁটাতে কাঁটাতে ফেরে
শুধু একটি কথা ঠিক্ ঠিক্ ঠিক্।
সমাজ ব্যঙ্গ ক’রে হাসে ফিক্ ফিক্।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
২৫শে বৈশাখ
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
“মুরারি স্মৃতিরক্ষা কমিটি”-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত অমল রায়ের সম্পাদনায় কাব্যসংকলন
“মৃত্যু নেই” ( ৭০ দশকের শেষ দিকে ) থেকে নেওয়া।


.        আজকে আমার
স্বপ্ন দেখার দিন। শিল্পীর মূর্তিকে
সামনে রেখে আজকে আমি শিল্পী
হবার স্বপ্ন দেখলেম। এই স্বপ্নমায়ার
হাতছানিতেই পেলেম আমার কল্প লোকের
স্বর্গ পথ, আমার ভাসবাসার ঝর্ণাধারা
---সুর যেখানে ভাষা খুঁজছে, আলো
যেখানে বস্তুর প্রত্যাশায় চঞ্চল,
নূপুর যেখানে ছন্দের অন্বেষণে
দিশাহারা। এ আমারই জগৎ---নূতন
ভাবনায়, নূতন ভালোলাগায়
আর নূতন মনন চিন্তায় দোলায়িত
এ আমারই স্বর্গ।
এই স্বর্গ সাধনার আলোকে আলোকে
আলোকিত হব আমি। শিল্পীসত্তার
মধুরতম উদ্বোধনের ক্ষণে অবাক
হতে হতে মুগ্ধ হয়ে যাবো কখন।
এই চাওয়াই আমার পরম চাওয়া
আর এর সার্থকতাই হোক আমার
জীবনের পরম পাওয়া।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রতিবাদ
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
“মুরারি স্মৃতিরক্ষা কমিটি”-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত অমল রায়ের সম্পাদনায় কাব্যসংকলন
“মৃত্যু নেই” ( ৭০ দশকের শেষ দিকে ) থেকে নেওয়া।


যদিও মৃত্যু আছে পৃথিবীতে
লোনা জল সমুদ্রের গভীরতা নিয়ে
যদিও প্রতিটি রাত
কান্নার জোয়ারে যায় ভেসে,
তবু আমি বাঁচতে চাই।
দিনের প্রচুর আলো
ছোট হতে হতে অবলুপ্ত হয়ে যায়
কারখানার গাঢ় অন্ধকারে
তবু আমি বাঁচতে চাই।
অনেক কথার বোঝা
আটকে যায় বুকে
কোননা ঠোঁট রক্তহীন,
( ব্যথিত হৃদয় মোর
কেঁকে ওঠে চমকে চমকে )
তবু আমি বাঁচতে চাই।
হয়তো সফল হবো
.        কিংবা হবো না
নিঃসাড়ে পড়ে থাকবো
অন্ধকারে, রক্তঝরা মুখে,
তবু আমি বাঁচতে চাই
এই কটা দিন
সমাজের প্রতিবাদ হয়ে
আমি বাঁচতে চাই


এই কবিতাটির অন্য একটি পাঠও পাওয়া গেছে, যাতে ( ) বন্ধনাস্থিত লাইন দুটি নেই।
তবে এই পাঠই পরিমার্জিত ব’লে মনে হয়। সম্পাদক, “মুরারি স্মৃতিরক্ষা কমিটি” থেকে
প্রকাশিত কাব্যসংকলন।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
শিল্পী
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
“মুরারি স্মৃতিরক্ষা কমিটি”-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত অমল রায়ের সম্পাদনায় কাব্যসংকলন
“মৃত্যু নেই” ( ৭০ দশকের শেষ দিকে ) থেকে নেওয়া।

জগতের মহাশিল্পী তুমি
অজানার গর্ভে থাকি
বিশালেরে ভালবাসি
আঁকিতেছ কতশত ছবি
আরাদের বক্ষোপরি ঘন নীলিমায়
.        চাঁদের জ্যোত্স্না আর
.        সূর্যের সপ্তরঙে
.        আঁকিতেছ ছবি।
কারে শিখাইতে কারে দেখাইতে
রাখি না অন্ধকারে
সব স্মৃতি হয়ে যায় ম্লান
তবু তুমি সৃষ্টিসুখে
অনিবার আঁকিতেছ ছবি।
মেঘে ঢাকা আকাশের কোলে
তোমারই মনের শত ছবি।



কবিতাটি স্কুলে পড়ার সময়ে লেখা। এই কবিতাটির অন্য একটি পাঠও পাওয়া গেছে।
তবে মুদ্রিত পাঠটিই লেখকের স্বকৃত মার্জিত রূপ। সম্পাদক, “মুরারি স্মৃতিরক্ষা কমিটি”
থেকে প্রকাশিত কাব্যসংকলন।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মানুষের ছা
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
“মুরারি স্মৃতিরক্ষা কমিটি”-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত অমল রায়ের সম্পাদনায় কাব্যসংকলন
“মৃত্যু নেই” ( ৭০ দশকের শেষ দিকে ) থেকে নেওয়া। প্রথম প্রকাশ ---প্রতিবিম্ব পত্রিকার
২য় বর্ষের ২য় বুলেটিন, মে-আগস্ট ১৯৬৫ সাল।


ক্লেদাক্ত পাঁকের মধ্যে কিলবিল করতে দেখে
তোমাদের বলি যদি নরকের কী----
তা’হলে বিরক্ত হবে। এবং অনুকম্পা।
হয়তো বা আলবাট চুলে আরেকটা ঢেউ দিয়ে
জামার ভাঁজের প্রতি সচেতন হয়ে, পান খাওয়া ঠোঁটে
সিগ্রেটের ধোঁয়া নিয়ে বলবে---
ওটা পাগল, হতাশ কিংবা ভণ্ড।
অথচ তোমরাই প্তিদিন দিনান্তে
ফিরে আসে একই আঁধারে।
এবং নতুন কিছু যোগের অভাবে
বিয়োগেতে হাত রপ্ত করো।
এইভাবে মশারীতে রাত্রি নেমে আসে।
এবং অল্পদিনের আগে কেনা
একজোড়া ঝুলে যাওয়া স্তনে
তোমাদের দীর্ঘশ্বাস অস্পষ্ট থাকে না।
এসব যাবে না তবু বলা, কেননা পরের দিনই
তোমরা মানুষ হবে সকালের ট্রেনে---
মুখেতে সিগ্রেট জামা ধোপায় কাচা
চুলে মাখা শালিমার মানুষের ছা!

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হিরোসীমার জিজ্ঞাসা
কবি মুরারি মুখোপাধ্যায়
“মুরারি স্মৃতিরক্ষা কমিটি”-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত অমল রায়ের সম্পাদনায় কাব্যসংকলন
“মৃত্যু নেই” ( ৭০ দশকের শেষ দিকে ) থেকে নেওয়া। কবিতাটির কোনো শিরোনাম ছিল
না। সম্পাদক এই নামকরণ করেন।


যদি অবিন্যস্ত চুল, বেদনাদ্র
মূর্তি কোন ছেলে বই খাতা হাতে
আমার কাছে এসে বলে,
আমি প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলাম জীবনে,
তোমরা কেন আমাকে মারলে? যদি জিজ্ঞাসা করে
আমি তো তোমাদের কোনো ক্ষতি করি নি,
তোমরা কেন আমার ক্ষতি করলে।
আমার অস্থি দিয়ে কি তোমরা জীবন-বিরোধী
দানব আর অশান্তির শয়তানগুলোকে
পরাজিত করতে পেরেছো?
তবে কেন আমায় বাঁচতে দিলে না---
তখন আমি কি উত্তর দেবো।
আমি আমেরিকান,
হিরোসীমার ঐ ছাত্রটাকে তো
আমরাই মেরেছি বোমার আঘাতে
তার বিদ্যালয়ের পথে।

.             ***************  
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর