কবি নিমাই মিত্রর কবিতা
*
ভ্রূণ
কবি নিমাই মিত্র

মাতৃ রূপিণী শক্তি দায়িনী
বিরাজে ভূমে চতুষ্কোণ
তবে কেন মিছে শুধু অছিলায়
নিধন হবে কন্যা ভ্রূণ?

মাতঙ্গিনী, লক্ষিবাঈ,
মাদার টেরিজা,নিবেদিতা
মাতৃক্রোড়ে জন্ম নিয়ে
বিশ্ব মানবে সমাদৃতা।

কি অহঙ্কারে নারী অযাচিত
অহেতুক ঘৃণা বিদ্বেষ?
আগামী প্রভাতে ফুটবে কুসুম
ঘুচবে গ্লানি দুঃখ ক্লেশ।

.     **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শ্রদ্ধাঞ্জলি
কবি নিমাই মিত্র

করি আহ্বান গাহি জয়গান
আজি বরিয়া কবিরে লব
বঙ্গ জননী সুধা স্নেহ ক্রোড়
হে মহান কবি তব-

লেখনী প্রসূত বর্ণ ছন্দ
রচিল গীতাঞ্জলি,
প্রতিভা প্রোথিত কবিগুরু তুমি
লহ পুষ্প অঞ্জলি।

চির দুর্দম ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণি
সুর সৈনিক নজরুল,
বর্ণে শিহরে তনু মন প্রাণ
প্রণমি হে তব পাদমূল।

চেতনা স্ফুরিত উজ্জ্বলতম
হে কবি জীবনানন্দ,
শত বর্ষে লভিও প্রণাম
অন্তর হৃদি স্পন্দ।

স্ফুটিত প্রভাতে লেখনি আঘাতে
ভাঙ্গি অমানিশি বৃন্ত
স্খলিয়া অকালে কাঁদালে সকলে
বিপ্লবী হে সুকান্ত।

আজি প্রাঞ্জল পুণ্য লগনে
সাজায়ে অর্ঘ্য ডালি,
বন্দিব তব জয় গান গাথা
অঞ্জলি দেব ঢালি।

.     **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমার স্বাধীনতা
কবি নিমাই মিত্র

স্বাধীনতা মানে নতুন ভোরে ভেসে যাই বহুদূর
অবহেলা করে ঝঞ্ঝা তুফান কখনো বা রোদ্দুর।

স্বাধীনতা মানে আমার আপস অন্যেরে নয় ভোলা
ন্যায় অন্যায় রুদ্ধ দুয়ার অবিরত রবে খোলা।

স্বাধীনতা মানে প্রতিষ্ঠিত নিশ্চিত অধিকার
জীর্ণ কায়া শীর্ণ বসন উঁচু নিচু সবাকার।

স্বাধীনতা মানে তাদের নিয়েই শুধুই লিখি যে কবিতা
শিল্প খামারে শ্রম বিলি করে অনু নিলু বিনু সবিতা।

স্বাধীনতা মানে ফুটপাথ ধরে হেঁটে চলে যাই সোজা
পড়বে না কোন দোকান পসরা কিংবা হাটের বোঝা।

স্বাধীনতা মানে সকাল সাঁঝে আমার নানান সুখ
ভুলে যেতে চাই বিরহ বেদনা দুঃখ দৈন্য শোক।

স্বাধীনতা মানে আপন খেয়ালে গান গাই সূর্যাস্ত
প্রান্তিক গাঁয়ে বাউলের ঠেকে সুর মূর্ছনা ব্যস্ত।

স্বাধীনতা মানে তোমাকে দেখে গাঁথি যে বকুল মালা
প্রণয় স্পর্শে তোমাকে ঘিরেই সাজবে বরণ ডালা।

স্বাধীনতা মানে তোমাকে পাওয়ার অন্ত বিহীন সুখ
শাড়ির আঁচলে প্রান্ত সীমায় আলতো লুকানো মুখ।

স্বাধীনতা মানে স্বপ্নের খোঁজে এখনই বেড়িয়ে পড়া
স্বাধীনতা মানে বিশ্ব সীমায় আমার স্বদেশ গড়া।

.             **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বৃষ্টি
কবি নিমাই মিত্র

ভোরের রাতে মুষলধারে
বৃষ্টি যখন নামল
ক'দিন ধরে তপ্ত হাওয়ার
দাপট তখন থামল।

আকাশ সমান তাল সুপারি
নগ্ন স্নানে ব্যস্ত
গরম শেষে বৃষ্টি ছোঁয়ায়
পাকল কাঁঠাল আস্ত।

চাষীরা সব হাসি মুখে
দাঁড়ায় গিয়ে খেতের আলে
জেলে পাড়ায় আনন্দ ধায়
টান পড়ল মাছের জালে।

গোয়াল ঘরে গাভী শাবক
করছে আশা সবুজ ঘাসের
বৃষ্টি জলে ভাসবে পুকুর
এমন আশা পাতি হাঁসের।

পাখিরা মুখ বেজার করে
গাছ পাতার ছাতার তলে
রইল বসে চুপটি করে
পেটের খিদে জ্বালা ভুলে।

আর একটি কাক ভেজা ডানায়
আকাশ চড়ে বৃষ্টি নেয়ে
শালিক চড়ুই হতাশ হয়ে
লিচুর ডালে বসল গিয়ে।

সারা আকাশ কালো মেঘে
সূর্যটাকে ফেলল ঢেকে
থাকব আমি সারা বেলাই
মাঝে মাঝেই বলল হেঁকে ।

ঘরের কাঠের কপাট খুলে
আমি তখন আপন মনে
কইছি কথা একলা বসে
বৃষ্টি সাথে সঙ্গোপনে।

.     *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নির্জনে
কবি নিমাই মিত্র

ঘরের কোণে একলা বসে সঙ্গোপনে
বিশ্ব আমি ভালবাসি মনে মনে।

ঝিরিঝিরি গাছের পাতায়,
প্রজাপতি,পাখির সাড়া কলতানে।
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে,
উদাস স্মৃতি প্রেক্ষাপটে দুই নয়নে।

কে বা জানে কখন এলে তৃষ্ণা নিয়ে,
আঁধার আলোর কোন সে ক্ষণে।
গহীন বনে,পাহাড় কোলে,সাগর পানে
স্বপ্ন খুঁজি রাত্রি দিনে।

ফিরে বাতায়নে মুগ্ধ হয়ে,
তোমায় দেখে হারিয়ে যাই আপন মনে ।

.          *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভগিনী নিবেদিতা
কবি নিমাই মিত্র

'সাগর পারের শ্বেত পদ্ম তুলিল বিবেকানন্দ'
ব্রহ্মময়ী সারদা মাতার মুখ নিঃসৃত ছন্দ।
ধর্মযাজক নোবল দুহিতা আইরিশ সন্তান
পরিব্রাজক বীর সন্ন্যাসী বক্ষে দিলেন স্থান।
তরুণ স্বামীর অন্তর কোণে জ্বলিল বহ্নি-শিখা
বিদেশী তরুণী ভারত ভূমে লভিল নতুন দিশা।
প্রতিমায় প্রাণ সঞ্চার করে পুনঃ জন্মদাতা
সারদা মণির প্রণয় স্পর্শে জন্মিল নিবেদিতা।

দেশ জননীর কল্যাণ তরে শুরু হল নারী-জাগরণ
স্ত্রীজাতি কল্পে কঠিন ব্রত শিক্ষা সত্য চিরন্তন।
জ্ঞানার্জনের প্রথম সোপানে বিদ্যালয়ের সূচনা
শিল্প কলা বিজ্ঞান হেতু জোগালে অঘোর প্রেরণা।
পরাধীনতার গ্লানি অপমানে অস্থির যবে প্রাণ
বিপ্লবী জনে দৃঢ় বন্ধনে গাঁথিলে মুক্তি-গান।
সুদূর পানের দীপ্ত বালিকা স্বামিজী সমাদৃতা
মমতা মেদুর তপস্বিনী,প্রণমি ভগিনী নিবেদিতা।

.              *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মেঘ
কবি নিমাই মিত্র

সকাল বেলায় মেঘের রাশি
জটলা করে আকাশে
করছিল গান ঝর্ণা ধারায়
মিশে গিয়ে বাতাসে।

রাত দুপুরে হঠাৎ করে
ঝমঝমিয়ে বর্ষণ
ক্ষান্ত হওয়ার বার্তা দিয়েও
করল যে তা বর্জন।

অঝোর ধারায় ভিজিয়ে দিয়ে
প্রবল বেগে বৃষ্টি
পথ ঘাট সব ভাসিয়ে দিয়ে
করল নদী সৃষ্টি।

আমের ডালে ফলগুলি সব
দুলছে হাওয়ায় এঁকেবেঁকে
বৃন্ত খসে পড়ছে জলে
লুটোপুটি কাদা মাখে।

শেয়াল ছানা দৌড়ে পালায়
গর্ত গেছে জলে ভরে
উঠল গিয়ে পাশের বাড়ির
ছাগল ছানার ছোট্ট ঘরে।

অল্প করে জানালা খুলে
বর্ষা দেখি নিঝুম রাতে
উপভোগে ক্লান্ত হয়ে
ক্ষান্ত দিলাম নতুন প্রাতে।

ছ'টার বাঁশি বাজল যখন
কর্মীরা সব দলে দলে
বৃষ্টি ভেজা শরীর নিয়ে
চলছে পথে কাজের স্থলে।

অবিরত জল ছিটিয়ে
বিকেল বেলায় অবশেষে
মুখটি কেমন কালো করে
বৃষ্টি গেল মেঘের দেশে।

.   *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হৃদয় চুরি
কবি নিমাই মিত্র

শহর থেকে যোজন দূরে
গাঁয়ের মেঠো পথের ধারে
ধান সিঁড়িতে বাতাস খেলে
সূর্য্য ডোবে আকাশ হেলে।
আলের সবুজ দূর্বা ঘাসে
লাল শালুকের দীঘির পাশে
আম কাঁঠালের আড়ে তারি
সেথায় শ্রীদাম দাসের বাড়ি।
একটি টিনের চালা ঘরে
ছাগল শিশু পালন করে।
কালো সাদায় মিশ্র রঙে
তিড়িং বিড়িং লাফায় ঢঙে।
সকাল হলেই তিনটি ছানা
উঠোন মেঝেয় আনাগোনা।
কখনো কেউ সামনে পেলে
তখনি নেয় কোলে তুলে।
কেউ কেউ দেয় শস্য দানা
ঢুকতে ঘরে নেই যে মানা।
বাড়ির সবার কেড়েছে মন
আদর করে সবাই ভীষণ।
এমনি করে কাটল ক'মাস
ক্ষেতের মাঠে খায় কচি ঘাস।
যাচ্ছে যে দিন এমন তর
তিনটি শিশু হচ্ছে বড়।

শ্রীদাম তখন দুর্গাপুরে
কারখানাতে চাকরি করে।
বাড়ির লোকে বলল ডেকে
বিয়ে দেব মাঘেই তোকে।
শ্রীদাম রাজি এক কথাতে
স্থির হল দিন আসছে শীতে।
যোগাড় হল পয়সা কড়ি
উঠল মেতে সারা বাড়ি।
পুরুত লেখা হিসাব মত
পড়ল জমা ফর্দ যত।
মাছ ডাল দই গোল্লা বোঁদে
সব হিসাবই মিলল সিধে।
মাংস দু'চার কেজির মত
গরমিল যে সেথায় যত।
বলল শ্রীদাম এমন কি আর
একটি দেব তিনটি ছানার।
বিয়ের দিনে সকাল হলে
বাজল সানাই ছাদনা তলে।
জুটল পাড়া পড়শি যত
দূরের কুটুম এল কত।
উঠল তেতে ভোজের উনুন
কাটল কেউ পেঁয়াজ রসুন।
গন্ধ ছড়ায় পাকল বাঁধা
রইল বাকি মাংস রাঁধা।

চালা ঘরের এক কোণেতে
ব্যস্ত ছাগল ঘাস চিবোতে।
ঢুকল শ্রীদাম সটান ঘরে
একটি ছানা আনল ধরে।
ভাবল ওরা কান্ড কি এ
করছে আদর আজকে দিনে।
কপাল ভাল এই বাড়িতে
জন্মেছিলাম ক্ষণ তিথিতে।
শ্রীদাম তখন ব্যস্ত ভীষণ
লগ্ন বাকি আর কিছু ক্ষণ।
স্নেহের ছাগল ছানাটিরে
ধরল চেপে দানব জোরে।
ত্রিপল ঘেরা কাঁঠাল তলে
কষাই হাতে দিল তুলে।
শান দায়ের এক কোপেতে
ছিন্ন মাথা দেহ হতে।
ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে
শ্রীদাম খুশি কষাই বটে!

অদূর কোণে চালা ঘরে
রইল যারা কান্না জোড়ে।
স্নেহ মায়ার রইল কি দাম
বুঝল না তা বিয়ের শ্রীদাম।
সামলাতে মান ভোজের চুরি
করল আপন হৃদয় চুরি।

.   *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শ্রীরামকৃষ্ণ
কবি নিমাই মিত্র

যুগশ্রেষ্ঠ পরমহংস, শ্রীরামকৃষ্ণ নাম
ভুবন ব্যাপিয়া মিশন মঠে পুণ্য প্রকৃতি ধাম।
অন্তরস্থলে বিরাজিছ মহান রহিয়া মধ্যমণি
কথামৃত পঠনে শ্রবণে বিশ্ব মানব ঋণী।

মুখ নিঃসৃত সাবলীল বাণী করেছে অমৃত দান
হৃদয়াকাশ করেছ পূর্ণ গাহিয়া মায়ের গান।
চতুষ্কোণে জগৎ জননী শুধু সম্মুখে আবরণ
অনায়াস এই দর্শন জ্ঞান করেছ উদ্ঘাটন।

কেহ নয় পর সকলে আপন ভগবতী সন্তান
বিমুখ জনেও আপন বক্ষে সস্নেহে দিলে স্থান।
প্রণমি চরণে যোগী জনক অবনত করে শির
তব কৃপা মোহে বিশ্ব জগৎ অশান্ত অধীর।

.             *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পিতার শুভেচ্ছা
কবি নিমাই মিত্র

আজকে তোমার জন্মদিন
আনন্দ তাই অন্তহীন।
তোমার সুরের মূর্ছনায়
বাজবে সানাই রঙ্গনায়।
ছুটবে তুমি দিগ্বিদিক
বিশ্ব তোমার গাইবে গীত
এখন সবে কুসুম কুঁড়ি
বয়স যখন হবে কুড়ি
বিকাশে মেধা বাড়িও মান।
শেষের আগে পর পর
বলছি শোন তারপর
পৌঁছে যেও শেষ শিখরে
এই অভিলাষ তোমার পরে।

.      *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর