কবি নিমাই মিত্রর কবিতা
*
বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

মেঘের কোলে যেমন খেলে আলোর নীরব ঝিলিক
নরেন্দ্রনাথ বিকশিত হয় শ্রীরামকৃষ্ণ মালিক।
প্রখর তেজের আধার বিলে মেধাবী পাঠানুরাগী
অদম্য তার ইচ্ছা শক্তি গভীর দর্শন অনুরাগী।
পরম স্নেহে পাগল ঠাকুর ডাকেন নরেন আয়
ভগবান তোকে দেখাতে পারি ধ্যান জ্ঞান সাধনায়।
দীক্ষা গ্রহণ দক্ষিণেশ্বরে গুরু শ্রীপরমহংসদেব
সারদা মায়ের চরণামৃতে দূর হল ক্লেদ ভেদ।
শ্রীরামকৃষ্ণ ধর্মপ্রানতার অতি বিদ্যুদ-দ্যুতি
দিগ দিগন্তে বিবেকানন্দ প্রজ্জ্বলিল জ্যোতি।
স্বজাতি আমার ভাই বোন তারাই আমার দেবতা
অজ্ঞানতার অন্ধকারে মলিন কোর না একতা।
বীর সন্ন্যাসী পরিব্রজে বললেন মহা কল্লোলে
নেই ভেদাভেদ মূর্খ মেথর ব্রাহ্মণ আর চন্ডালে।
দরিদ্র মুচি অজ্ঞ নীচ ধরায় নিয়েছে ঠাঁই
সকল শিরায় আমার রক্ত আমরা আপন ভাই।
বিপুল ভারত দীক্ষিত হল দেশ প্রীতির মন্ত্রে
বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত মঠ মিশনারী যন্ত্রে ।
জনসেবা আর শিক্ষা প্রসারে বিশ্বে মিশন স্থাপনা
যুব সমাজে চরিত্র দানে নিমগ্ন একাগ্র সাধনা।
শিকাগো শহরে ধর্ম সভায় আপ্লুত ভাষণ দানে
ভারতের শির উন্নত হল শ্রেষ্ঠর সম্মানে ।
জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
শিব জ্ঞানে জীব সেবার ধর্ম বিলায়েছে নিরন্তর।
তোমার কর্ম ধর্ম আদেশ সব সাধনার সম্বল
উজ্জল হোক পতিত ভুবন আসুক চিত্তে বল।
তমার মন্ত্র বিস্তৃত হোক সকল ভূলোক কাননে
বিশ্ব ব্যাপিয়া জ্বলুক শিখা বীর সন্ন্যাসী স্মরণে।

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমার গ্রাম
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

হাঁটু জলে নদী বয় তির তির স্বরে
মৃত্তিকা বাড়ে ঘন রস সঞ্চারে ।
উপরে বাঁশের সাঁকো আনে বিস্ময়
জেলেরা মাছ ধরে জালে গোটা কয়।
সবুজের গাছপালা ভরে ফুল ফলে
প্রকৃতি নেচে ওঠে সৌন্দর্য উথলে।
রোদ খেলে ঝিলমিল গাছের পাতায়
পাখিদের কলরব দিগন্তে যায়।
ঝরা পাতা ঢেকে দেয় গোটা তলদেশ
ছায়া ঘন প্রাঙ্গণ রৌদ্দুর শেষ।
মৌন মহান স্থির বট বনস্পতি
আকাশ ছুঁতে চায় প্রশাখায় অতি।
ঝুরির বিনুনি নামে সারা গা জুড়ে
সুষম ছন্দ যেন জাগে ভূমি ফুঁড়ে।
চেনা অজানা পাখি পাতার গোচরে
কাঠবেরালির ঘর শাখার কোটরে ।
দোয়েল কোয়েল মাতে কলকাকলিতে
সুমধুর স্বর তুলে নীরব প্রভাতে।
আর কোণে বাঁশ ঝাড় হেসে মাথা নাড়ে
হাওয়ার দোলায় ক্ষণে লাজে নুয়ে পড়ে।
পান্তার রস স্বাদে গৃহস্থ যায়
বধূরা সিনান সেরে আঁচল গুছায়।
সবুজ সীমানা ঘেরা গাঁয়ের এক প্রান্তে
পূজা পাঠ কোলাহল দিবসের অন্তে।
এই সেই গ্রাম আমার চির স্বপন পুরি
সব সুখ ভালবাসা সে করেছে চুরি।

.            **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দহন
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

দীপ্তি প্রখর সূর্যের আলো
ম্লান হয়ে যায় সন্ধ্যা তারায়,
দূরের কোণে এক ফালি চাঁদ
হাত ছানিতে কাছে পেতে গিয়ে
ফিরে ফিরে তারে দেখি -
ঢাকা পড়ে যায় অন্তরালের
ছড়ানো ছিটানো মেঘে।
গলি পথে বাজে শাঁখ মঙ্গল
আকাশ ধ্বনিত মুখরিত বন
একলা আধাঁর স্বপ্ন সুখে
চেনা অবয়ব ছন্দ নূপুর
রিনিঝিনি পায়ে আসে।
সারাটি ক্ষণে দৃষ্টি উদাস
তীব্র বেদনা জ্বালা হা-হুতাশ
কিছুক্ষণের আধো ঘুম ঘোরে
চোখ মেলে চেয়ে জাগি।
দু হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে তখন
চুমি কাঙ্খিত মুখখানি।
তৃপ্ত পরাণে স্নিগ্ধ ঊষায় ভীষণ ভাললাগে
রূপসী তোমার লাগি ।

.            **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
রোমাঞ্চ
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

জেনো স্নেহ প্রীতি মম
বক্ষরন্ধ্রে এক আত্মা সম          
গহীন মনের দুয়ারে
সাজিয়ে রেখেছি তোমারে।
নিশিদিন শুধু কল্পনায়
মুখচ্ছবি আঁকি আল্পনায়।
সুন্দরী ওগো ললনা
মরীচিকা জাল ছলনা
নিবিড় প্রেমের বন্ধনে
পুলকিত মন স্পন্দনে
রোমাঞ্চে জাগে শিহরণ
থরথর কাঁপে তনু মন।
অঞ্চল প্রসারিত বসনা
ছিলে যে তুমিই রচনা।
মধু আহরণে কত শৃঙ্গার
রচিল রত্ন অলঙ্কার।
কঠিন তৃষ্ণা হাহাকার
জল ধারা কণা নেই আর।
তোমারও গোপন অন্তরে
এক ফালি খানা খন্দরে
তুমিও বা ভাব প্রতিনিয়ত
অর্ঘ সাজিয়ে শিল্পীর মত।
আকুল পরাণে সেও জানি
ভালো থেকো সুন্দরী রাণী।

.        *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শপথ
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

দীপ্ত কর্মের পূর্ণ যৌবন
আর কিছুক্ষণে যখন হবে সমাপন
তখন যদিও হব না ক্লান্ত
শুধু চঞ্চল মন হবে সাময়িক উদ্‌ভ্রান্ত।
আবার ভাবি, যখন যেতেই হবে
তখন করছি কেন মিছে দেরি?
সবার মাঝেই রইবো আমি ,
সবার ঘরেই করবো ফেরি।
পরে ঘনালো যখন অন্ধকার
ভয়ে বুক কাঁপে দুরুদুরু,
জনহীন পথ, ঘন নিস্তব্ধ চারিধার
কোথা কলরব সমুখে শুধু গিরি মরু।
আঁধারের কোণে কোণে মিশে
নিশাচর ভাবে আলো বুঝি এলো ঐ,
আমি নিরালায় বসে ক্ষণে ক্ষণে দেখি
নতুন আলোয় ফোটে শেফালি জুঁই ।

.        *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
গল্প শোনার গল্প
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

সন্ধ্যা রাতে শেয়াল ডাকে সবাই ভয়ে কুপোকাত
মামা দাদু এমন সময় মাছের তেলে খাচ্ছে ভাত।
মা ডেকে কন আয় সোনারা তোরাও সবে খেয়ে নে
হাড় কাঁপানো দারুণ শীতে মিছে বসে থাকিস নে।
আমরা বলি ঠিক আছে মা ঝালটা দেবে অল্প
খাওয়ার পালা সাঙ্গ করে শুনব দাদুর গল্প ।
বাইরে তখন ঠান্ডা জমে হুতোম পেঁচা কোণঠাসা
লেপের তলায় হাত পা ছুঁড়ে আমরা করি তামাশা।
একটু পরেই পান চিবিয়ে দাদু এলেন বিছানায়
সময় কাটে উৎকণ্ঠায় গল্প শোনার তাড়নায়।
বললে দাদু , গল্প কেমন রাক্ষস না ইতিহাস ,
কিংবা বলি ভূত প্রেতিনীর ঝগড়া বিবাদ বারমাস?
আমরা ছাড়ি দাদুর উপর তোমার যেমন ইচ্ছে
উকিল সেজে কেরামতি নয় হাকিমের চিকিৎসে।
দাদু তখন বিড়বিড়িয়ে পড়ল ভূতের মন্ত্র
ভয়ে কেঁপে সচল হল গায়ে কাঁটার যন্ত্র ।
গল্প যখন জমল ভীষণ ভূতটা গেল মর্গে
শাঁকিনীর কলজেটাকে পাঠিয়ে দিল স্বর্গে ।
পেত্নী যখন শুনতে পেল ভূতের এমন কারবার
ভীষণ নাকি ইচ্ছে হল শহীদ হয়ে মরবার।
আমরা বলি সে কী দাদু পেত্নী কেন শহীদ হয়?
বললে দাদু মিথ্যে ওসব ভূতটা শুনে পাবে ভয়।
এমন সময় দারুণ জোরে টিনের চালে কড়-কড়াত
ভয়ে সবাই মমি হল মামা দাদুর মাথায় হাত ।

.               *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্বাগত পঁচিশ
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

তুমি সুন্দরী, রূপসী লাবণি স্বাগত রূপালি বর্ষে ,
শিশির স্নাত বসন্ত প্রাতে চঞ্চল চিত হর্ষে ।
পঁচিশ বছর পরে এখনো কি মনে পড়ে
পুণ্য তিথির উলুধ্বনি আর জয় শঙ্খ ?
প্রথম রজনী নিবেদিত প্রেম অনুরিত তনু কম্প ?
কত কাল গেছে জোছনার সাথে
মধুরেণু মেখে এলোমেলো কেশে ,
আলিঙ্গনের তৃপ্ত জোয়ার ক্লান্ত কায়ায় স্বপনের রাত ,
বন্ধ দুয়ার কলকাকলিতে শিয়রে জেগেছে সুপ্রভাত ।
অমা-তমসার ঘন কালো ছায়ে কাঙ্ক্ষিত বাহু বন্ধনে
হয়েছ তৃপ্ত কল্পনাহীন অন্ত বিহীন স্পর্শনে ।

চেয়ে দেখো আজ উঠেছে আবার
এক ফালি চাঁদ পূর্ণিমায়
তারার আকাশে ঝিলমিল খেলে
দীর্ঘ পঁচিশের আঙিনায় ।

ভালো থেকো তুমি মনোরমা ।
সার্থক হোক আয়োজন , সুখ উচ্ছল ছাড়িয়ে
স্মৃতির আড়ালে এই স্মৃতিটুকু
রেখো তুলে অতি যতনে, ফেলোনা কখনো হারিয়ে ।

.               *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সুজন
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

পূবের আকাশ আলো করে সূর্য জাগে ধীরে ধীরে
স্নিগ্ধ শীতল শিশির কণা খেলা করে ঘাসের শিরে।

দূষণ হীনা মলয় বাতাস বয়ে বেড়ায় কানে কানে
আনন্দ ঢেউ উছলে পড়ে ভৈরবী তান মধুর গানে।

হিমেল হাওয়ায় সাতসকালে নতুন করে উদাস মনে
হন্যে হয়ে পান্থ খোঁজে অনেক দূরের এক সুজনে।

রোদের ঝিলিক আছড়ে পড়ে মাঠের ঘাসে তীব্র হয়ে
ক্লান্ত পথিক কোথায় যে যায় মনে অসীম জ্বালা সয়ে।

.               *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
রেখে দিও
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

স্মৃতিগুলো তুলে রেখে
স্নেহ প্রীতিটুকু জানিও।
ভালোবাসাটুকু তুলে রেখে
সযতনে ভালোবাসিও।

ফুলগুলি তুলে নিয়ে
ফুলদানি ভরে সাজিও।
ভুলগুলো ভুলে গিয়ে
ভুল বোঝাবুঝি ভাঙিও।

কান্নাটা ভুলে যেও
শত বেদনাতে কাঁদিও।
শত্রুতা ভুলে যেও
শত্রুকে ক্ষমা করিও।

হিংসাটা ছেড়ে দিয়ে
যত বিদ্বেষ বিনাশিও।
মনটাকে ধরে রেখে
মনের মানুষ চিনিও।

.     *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তুমি আস নি বলে
কবি নিমাই মিত্র
মিলনসাগরে প্রকাশকাল ১৮.০৮.২০১৫

তুমি আসনি বলে সকালবেলায়
পাখিরা জাগেনি ঘুমে ,
তুমি আসনি বলে দিশা হীন চলা
সবুজ কানন ভূমে ।
তুমি আসনি বলে নতুন সাথীরা
পায় নি তোমায় খুঁজে ,
তুমি আসনি বলে সূর্যমুখীর
পাপড়ি গিয়েছে বুজে।
তুমি আসনি বলে থেমে গেছে জলে
পানকৌড়ির মাছ-ডুব ,
তুমি আসনি বলে কদমের ফুলে
পরাগ ঝরেছে খু-উ-ব।
তুমি আসনি বলে সেগুনের ঝারি
দোলেনি স্নিগ্ধ সমীরে ,
তুমি আসনি বলে কলরব ধ্বনি
মিলিয়েছে কোন সুদূরে ।
তুমি আসনি বলে পিপাসু দুচোখ
খুঁজেছে তোমায় বারংবার ,
তুমি আসনি বলে প্রশ্ন জেগেছে
আসবে না কি তুমি আর ?

.     *************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর