কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা
*
সূর্যাস্তের দিকে
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
দেশ, ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ সংখ্যা থেকে।

ঠিকানা লেখায় কোন ভুল ছিল কি? ... না রে বাবা, ভুলভাল ছিল না।
তবু কেউ জায়গামতো পৌঁছতে পারে নি
রাতের রেলগাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে
সকলেই
যেখানে নামবার ছিল না তাদের,
সেইখানে নেমেছে।

তাতে তাদের কারও বড্ড বেশি অসুবিধা হয়েছে, এমনও


.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
কোঠাবাড়ি? চকমিলানো অট্টালিকা? ছোটবড় দু-চারটে মন্দির? ...
হ্যাঁ রে বাবা, তাও তারা তুলেছে।

সন্ধ্যায় পুকুর থেকে পাতিহাঁস ডাঙায় আশ্রয়ে
উঠে আসে
রক্তবর্ণ সূর্যদেব দিগন্তরেখার ঊর্ধ্বে লাফিয়ে উঠবেন।
গ্রীষ্ম গেলে বর্ষা আসবে, বর্ষা গেলে শরৎ হেমন্ত আর শীত
পালাক্রমে  আসতে থাকবে, আর
সর্বশেষে বসন্ত ফোটাবে ফুল অরণ্যে-উদ্যানে।
অর্থাৎ যেমন চলছে, তেমনি চিরকাল
সমস্ত-কিছুই চলবে,--- ফুল, শস্য, আলো, ছায়া, বৃষ্টি ও রোদ্দুর।
কোত্থাও কখনও
অর্বুদ কুসুমে গাথা এই মাল্যকানি
খণ্ডিত হবে না।

মাল্য তো খণ্ডিত হয় না, কিন্তু সে নিজেই
*
সমুদ্র তীরে
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
দেশ, ৫ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সংখ্যা থেকে।


বাতাসে-ভাসানো কাগজের মতো ঘুরপাক খেতে-খেতে
মাটিতে পড়ছে আকাশের সাদা পাখি।
সাদা বটে তবে টকটকে লাল বুক।
বেড়াতে এসেও কে যেন উঠেছে খুনের খেলায় মেতে---
প্রকৃতির ঘাড় ধরে লাগায় ঝাঁকি,
সমুদ্রতীরে তাই হাতে তার ঝলকায় বন্দুক।


চক্রতীর্থে গিয়ে দেখলুম যে,
শান্তি নেই।
ঠিক এক্ষুনি আমি মরব না।

জানালার পাল্লা থেকে
শূন্যে ঝাঁপ দিয়ে
বাতাসে তার কালে বিশাল ডানা ছড়িয়ে
মৃত্যু এখন ফিরে যাচ্ছে।

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
*
জঙ্গলে এক উন্মাদিনী
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
দেশ, ৮ আগস্ট ১৯৮৭ সংখ্যা থেকে।

অমলাংশু চট্টরাজকে আপনারা চেনেন না।
চিনবার কথাও নয়।
তিনি একজন পার্ট-টাইমের পদ্যকার ও
নিরীহ মেজাজের ভদ্রলোক
এখানে-ওখানে তাঁর দুটি-চারটি পদ্য ইতিমধ্যে
ছেপে বেরিয়েছে বটে, কিন্তু তার কোনোটাই কিছু
আহামরি ব্যাপার হয়ে ওঠেনি।
আপাদমস্তক কাব্যভাবনায় নিমগ্ন একজন মানুষ,
অথচ ঠিক এই সময়েই
আশ্বিনের ঝকঝকে নীল আকাশের তলায় এক
গুঙ্গা অবোধ উন্মাদিনী ও তার
সদ্যোজাত রক্তমাখা মাংসপিণ্ডটিকে নিয়ে
সুস্থ মস্তিষ্কের শহুরে বাবুরা
দুর্দান্ত এক মজার খেলায় মেতে উঠেছে।

অমলাংশুর আরও মনে পড়ে যায় যে,
জনতা যখন
হাসতে হাসতে এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ছে,
বিজনবাবুর বাড়ির ভিতর থেকে তখন
ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল তাঁদের
কাজের মানুষ পারুলবালা।
বারান্দায় যে রক্তপিণডটা মাঝে-মাঝে নড়ে উঠছিল, একটা
ন্যাকড়ায় জড়িয়ে সেটাকে কোলে তুলে নিয়ে
ভিড়ের দিকে একদলা থুথু ছুঁড়ে দিয়ে সে চেঁচিয়ে বলে উঠেছিল,
‘নিস্তার নেই গো বাবুমশাইরা,
এই তোমাদের বাঘ-সিঙ্গিতে ভরা এই জঙ্গলের মধ্যে
পাগলদেরও নিস্তার নেই!’

পাগলদেরও যে নিস্তার নেই,
মাছের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে, আড়াইশো গ্রাম
মৌরলা মাছ ওজন করাতে-করাতে
অমলাংশু সে কথা দ্বিতীয়বার শুনলেন। আর
তত্ক্ষণাৎ তাঁর মনে পড়ে গেল
পঁচিশ বছর আগেকার সেই শরৎ-সকালের দৃশ্য।
কিন্তু পার্ট-টাইমের কবিরা কীই বা করতে পারে?
তারা শুধুই লজ্জা পেতে পারে, আর
আত্মধিক্কারে দিনে-দিনে আরও কুঁকড়ে যেতে পারে।
তা ছাড়া আর কিছুই তারা পারে না।
আর তাই,
পঁচিশ বছর আগে যেভাবে ফিরেছিলেন,
বাজার থেকে অমলাংশু আজও
মাথা নিচু করে
ঠিক সেইভাবেই তাঁর বাড়ির পথে আবার পা বাড়িয়ে দেন।

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
*
গোলাপ যাত্রা
কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
কবি মেঘ বসু সম্পাদিত আবৃত্তির কবিতা কবিতার আবৃত্তি কাব্য-সংকলন থেকে, ২০০৯
থেকে।

রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে বলি
এই হয়ত শেষবার তোমার ধুলো উড়িয়ে
হেঁটে গেলুম,
আমাকে ভুলে যেও না
আগুনে হাত রেখে জ্বলতে জ্বলতে বলি
এই হয়ত আমার শেষ প্রার্থনা হে পাবক
আমাকে মনে রেখো |
সাত নম্বর বেডের সেই ছেলেটাকে আজ মনে পড়ছে
তার ফুস ফুস যখন
কিছুতেই আর
বাতাস পাচ্ছিল না
তখন আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলুম
বলেছিলুম
ভাই তুমি যেখানে যাচ্ছ যাও
আমি তোমাকে সারা জীবন মনে রাখব |
কিন্তু সারা জীবন বলতে আজ আর
দৃষ্টি আমার
যোজন যোজন ধাবিত হয় না |
চোখের নেহাৎ সামনে এসে ঠেকেছে
আমি দেখতে পাচ্ছি
সংকীর্ণ সেই পরিধির মধ্যেই
লাখো লাখো গোলাপ ফুলের মেলা বসেছে |
তাদের কারো বয়েস চোদ্দ কারও উনিশ কারো তেইশ
আমি বুঝতে পারছি,
তাদের মিছিলের মধ্যে অলক্ষ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে
মৃত্যু,
বৃন্ত থেকে যে-কোনো মুহূর্তে তারা ঝরে পড়তে পারে,
আমি আমার ঘর থেকে উঠোনে নেমে এসে বলি
ভাই
টাটকা এক মুঠো বাতাস আনতে
দিগন্তের ওই দেয়াল ভাঙতে এখন আমি যাত্রা করব
যাতে তোমরা মৃত্যুর নিঃশ্বাসে ঝরে না পড়ো,
কিন্তু অনন্ত জীবন পাও |
এই আমি আমার ঘরের চাবি
তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলুম
আমাকে তোমরা মনে রেখো |

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
*
তোমাকে বলেছিলাম
কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
কবি মেঘ বসু সম্পাদিত আবৃত্তির কবিতা কবিতার আবৃত্তি কাব্য-সংকলন থেকে, ২০০৯
থেকে।

তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরিই হোক,
আবার আমি ফিরে আসব |
ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথ্বগাছটাকে বাঁয়ে রেখে,
ঝালোডাঙার বিল পেরিয়ে,
হলুদ-ফুলের মাঠের উপর দিয়ে
আবার আমি ফিরে আসব |
আমি তোমাকে বলেছিলাম |

আমি তোমাকে বলেছিলাম, এই যাওয়াটা কিছু নয়,
আবার আমি ফিরে আসব |
ডগডগে লালের নেশায় আকাশটাকে মাতিয়ে দিয়ে
সূর্য যখন ডুবে যাবে,
নৌকার গলুইয়ে মাথা রেখে
নদীর ছল্ ছল্ জলের শব্দ শুনতে-শুনতে
আবার আমি ফিরে আসব |
আমি তোমাকে বলেছিলাম |

আজও আমার ফেরা হয়নি |
রক্তের সেই আবেগ এখন স্তিমিত হয়ে এসেছে |
তবু যেন আবছা-আবছা মনে পড়ে,

আমি তোমাকে বলেছিলাম |

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
*
দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে
কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
কবি মেঘ বসু সম্পাদিত আবৃত্তির কবিতা কবিতার আবৃত্তি কাব্য-সংকলন থেকে, ২০০৯
থেকে।

দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে ;
এই যে নদী, ওই অরণ্য, ওইটে পাহাড়
এবং ওইটে মরুভূমি |
দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারের মধ্যে তুমি,
বার করেছ নতুন খেলা |
শহর-গঞ্জ-খেত-খামারে
ঘুমিয়ে আছে দেশটা যখন, রাত্রিবেলা
খুলছে মানচিত্রখানি |
এইখানে ধান, চায়ের বাগান, এবং দূরে ওইখানেতে
কাপাস-তুলো, কফি, তামাক |
দম-লাগানো কলের মতন হাজার কথা শুনিয়ে যাচ্ছ
গুরুমশাই,
অন্ধকারের মধ্যে তুমি দেশ দেখাচ্ছ |

কিন্তু আমরা দেশ দেখি না অন্ধকারে |
নৈশ বিদ্যালয়ের থেকে চুপি-চুপি
পালিয়ে আসি জলের ধারে |
ঘাসের পারে চিত হয়ে শুই, আকাশে নক্ষত্র গুনি,
ছলাত-ছলাত ঢেউয়ের টানা শব্দ শুনি |
মাথার মধ্যে পাক খেয়ে যায় টুকরো-টুকরো হাজার ছবি ;
উঠোন জুড়ে আল্পনা, আল-পথের পাশে
হিজল গাছে সবুজ গোটা,
পুন্যিপুকুর, মাঘমণ্ডল, টিনের চালে হিমের ফোঁটা |
একটু-একটু বাতাস দিচ্ছে, বাতাস আনছে ফুলের গন্ধ ;
তার মানে তো আর-কিছু নয়,
ছেলেবেলার শিউলি গাছে
এই আঁধারেও ফুলের দারুণ সমারোহ |
গুরুমশাই ,
অন্ধকারে কে দেখাবে মানচিত্রখানা ?
মাথার মধ্যে দৃশ্য নানা,
স্মৃতির মধ্যে অজস্র ফুল,
তার সুবাসেই দেশকে পাচ্ছি বুকের কাছে |

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
*
শহীদ  রামেশ্বর    
কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী   
“প্রতিবাদী বাংলা কবিতার সংকলন”, ২০০৭ থেকে নেওয়া

হে অশ্বারোহি ! বাঁধ ভেঙে গেছে, শোনো প্লাবনের ডাক শোনো ;
শিরায় শিরায় মহাপ্রলয়ের ডাক শোনো !
এখনও অবশ আলো ভেসে আসে বাঁকা চাঁদের,
দুশো বছরের লাঞ্ছনা আর মায়া ফাঁদের
নেশায় ঘুমায় বন্ধুরা, ঘুম ভাঙো, তাদের |
মহাপ্রলয়ের শঙ্খ শুনেছ, তোমার শঙ্কা নাই কোনো,
হে-অশ্বারোহি ! বাঁধ ভেঙে গেছে, শোনো প্লাবনের ডাক শোনো !
হে-অশ্বারোহি ! জোয়ার এসেছে যৌবন-ঢালা তাজা প্রাণের ;
বহ্নি-দীপ্ত তাজা প্রাণের !
সুদৃঢ় চাবুকে কালোভেড়াদের হানো আঘাত,
হিমে আড়ষ্ট মূর্ছা-আতুর ঘুমের রাত ;
তারই মাঝে তুমি কেড়ে নিয়ে এসো কাঁচা প্রভাত,
তৃতীয় নয়নে পথ চিনে নাও, হুঙ্কার তোলো জয়গানের,
হে অশ্বারোহি ! জোয়ার এসেছে যৌবন-ঢালা তাজা প্রাণের !
হে অশ্বারোহি ! হে মহাতরুণ ! তোমার শপথ নিই লিখে ;
চিতার আগুনে তোমার শপথ নিই লিখে !
মৃত্যুকে তুমি উপহাস করে করেছ জয়,
রক্তস্নানের মধ্যে হয়েছে অরুণোদয়,
প্রাণ-সমুদ্রে এনেছ বন্যা কী দুর্জয় !
উর্বর জমি, ছড়িয়েছ বীজ, চেয়ে আছি মোরা অনিমিখে ;
হে অশ্বারোহি ! রক্তাক্ষরে তোমার শপথ নিই লিখে !

.                 *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
*
মাটির হাতে
কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী   
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত ‘বাংলা আধুনিক কবিতা ১ কাব্য
সংকলন, ১৯৯২ থেকে।  

এ কোন্ যন্ত্রণা দিবসে, আর
এ কোন্ যন্ত্রণা রাতে ;
আকাশী স্বপ্ন সে ছুঁয়েছে তার
মাটিতে গড়া দুই হাতে |

বোঝে নি, রাত্রির ঝোড়ো হাওয়ায়
যখন চলে মাতামাতি,
জ্বলতে নেই কোনো আকাঙ্খায়
জ্বালাতে নেই মোমবাতি |

ভেবেছে, সবখানে খোলা দুয়ার,
দেখে নি দেয়ালের লেখা ;
এবং বোঝে নি যে, বারান্দার
ধারেই তার সীমারেখা |

তবু সে গিয়েছিল বারান্দায়,
কাঁপে নি তবু তার বুক ;
তবু সে মোমবাতি জ্বেলেছে, হায়
দেখেছে আকাশের মুখ |

এখন যন্ত্রণা দিবসে, আর
এখন যন্ত্রণা রাতে
আকাশী স্বপ্ন যে ছুঁয়েছে তার
মাটিতে গড়া দুই হাতে |

.         *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
*
চলন্ত ট্রেনের থেকে
কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী   
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত ‘বাংলা আধুনিক কবিতা ১ কাব্য
সংকলন, ১৯৯২ থেকে।  

চলন্ত ট্রেনের থেকে ধুধু মাঠ, ঘরবাড়ি এবং
গাছপালা, পুকুর, পাখি, করবীর ফুলন্ত শাখায়
প্রাণের উচ্ছ্বাস দেখে যতটুকু তৃপ্তি পাওয়া যায়,
সেইটুকুই পাওয়া | তার অতিরিক্ত কে দেবে তোমাকে |

দুই চক্ষু ভরে তবে দেখ ওই সূর্যাস্তের রঙ
পশ্চিম আকাশে ; দেখ পুঞ্জিত মেঘের গাঢ় লাল
রক্ত-সমারোহ ; দেখ, উন্মত্ত উল্লাসে ঝাঁকে-ঝাঁকে
সবুজ ভুট্টার খেতে উড্ডীন অসংখ্য হরিয়াল |

চলন্ত ট্রেনের থেকে ধুধু মাঠ, ঘরবাড়ি অথবা
ঘরোয়া স্টেশনে আঁকা চিত্রপটে করবীর ঝাড়,
গাছপালা, পুকুর, পাখি, গৃহস্থের সচ্ছল সংসার,
কর্মের আনন্দ, দুঃখ দেখে নাও ;  আকাশের গায়ে
লগ্ন হয়ে আছে দেখ প্রাণের প্রকান্ড লাল জবা |

সমস্ত পৃথিবী এসে দাঁড়িয়েছে ট্রেনের জানলায় |

.               *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর   
*
তার চেয়ে
কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী   
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক রায় সম্পাদিত ‘বাংলা আধুনিক কবিতা ১ কাব্য
সংকলন, ১৯৯২ থেকে।  

সকলকে জ্বালিয়ে কোনো লাভ নেই |
তার চেয়ে বরং
আজন্ম যেমন জ্বলছ ধিকিধিকি, একা
দিনরাত্রি
তেমনি করে জ্বলতে থাকো,
জ্বলতে জ্বলতে ক্ষয়ে যেতে থাকো,
দিনরাত্রি
অর্থাৎ মুখের
কশ বেয়ে যতদিন রক্ত না গড়ায় |
একদিন মুখের কশ বেয়ে
রক্ত ঠিক গড়িয়ে পড়বে |
ততদিন তুমি কী করবে ?
পালিয়ে পালিয়ে ফিরবে নাকি ?

পালিয়ে পালিয়ে কোনো লাভ নেই |
তার চেয়ে বরং
আজন্ম যেমন আছ, একা
পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে
দিনরাত্রি
অর্থাৎ নিয়তি
যতদিন ঘোমটা না সরায় |

নিয়তির ঘোমটা একদিন
হঠাৎ সরবে |
সরে গেলে তুমি কি করবে ?
মুখে রক্ত, চোখে অন্ধকার
নিয়ে তাকে বলবে নাকি “আর যেন না-জ্বলি ?”

না না, তা বোলো না |
তার চেয়ে বরং
বোলো, “আমি দ্বিতীয় কাউকে
না-জ্বালিয়ে একা-একা জ্বলতে পেরেছি,
সেই ভালো ;
আগুনে হাত রেখে তবু বলতে পেরেছি,
‘সবকিছু সুন্দর’----
সেই ভালো |”
বোলো যে, এ ছাড়া কিছু বলবার ছিল না |

.               *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর