কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়ার গান ও কবিতা
*
ও আমার দেশের মাটি
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

ও আমার দেশের মাটি
পেট ভরা ভাতের খিদে
তবু দেখ অবাক হাঁটি |

এই নে সবুজ শিশির
এই হৃদ্ পিণ্ড আমার
এই দেখ বসন খুলি,
সারা গায়ে মাটির জামা |
ও আমার দেশের মাটি
এই দেখ পাঁজর ফাঁকে
সন্ধ্যার নীল তারাটি |

মাটি তুই গান না গেলে
আমি তোকে সুর শেখাব
মাটি তোর কান্না পেলে
কোলে নেব সুখ লেখাব |
ও আমার দেশের মাটি,
এই দেখ হাতের মুঠোয়
জীবনের জীয়ন-কাঠি |

ও মাটি তোর অপমান
এই দেখ রক্তে লিখি,
মাটি তোর ভুল ভাঙা গান
কন্ঠে আঁকতে শিখি |

এই নে কামরাঙা ভোর
এই নিঃশ্বাসের শপথ
এই দেখ খুলছি পাঁজর,
সেখানে নীল ছায়াপথ |
ও আমার দেশের মাটি,
ছায়াপথে সঙ্গে নেব
তোকে দেব নীল তারাটি |

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অপাপ রোদ আর অমল নীলে নীলে
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

অপাপ রোদ আর অমল নীলে নীলে
যখন আমি ছেলেবেলায় যাই
তোর বাগানের শিউলি খুঁটে আনি
একটু ঠোঁটে যেই ছুঁয়েছি ফুল,
কিশোর নদী সোনাই ভাঙে
বুকের উপকূল |

তোর তো আছে কালবোশেখী
তোর তো আছে আমকুড়োন রাত
আমার দু-পা জড়িয়ে ধরে
হাজার অবসাদ রে টুমা
হাজার অবসাদ |

ঠোঁটের চামচ ভরে পাখি
তোর দুচোখে রোদ ঢালে ভোরবেলা,
আমার পাখি আর ডাকে না
সকালবেলার খেলায়
জাগি নষ্ট অবেলায় রে টুমা
নষ্ট অবেলায় |

তোর বকুলে বন্যা আসে
তোর ছুটি তো খুশির অমলতাস,
আমার ডানার ক্লান্তিতে নেই
ছুটির পরবাস রে টুমা
একটু পরবাস |

তোর নূপুরে বৃষ্টি বাজে
বুকের চূড়োয় সাত পাহাড়ের গান |
আমি এখন নিষেধ মাপি
আমার এখন গার্হস্থ বিজ্ঞান রে টুমা
গেরস্থালির টান |

তবুও ভাবি মাঝে মধ্যে ---
আমিও বোধহয় অমল হতে পারি
নীলপাহাড়ের সঙ্গে বদল
সংসারী ঘরবাড়ি
তাই তো আসি তোর বাগানে
কিশোরী তোর দুধ সাদা পায়ে
অঞ্জলি দিই ফুল,
বদল হয় না বদল হয় না
বদল কিন্তু হয় না আমার,
এক জীবনের ভুল |

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
এখনও সকালবেলা রোদ্দুর হাত রাখে রাতের শিশিরে
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

এখনও সকালবেলা রোদ্দুর হাত রাখে রাতের শিশিরে
এখনও বেহালায় তোলে সুর ভালোবাসা বুকের গভীরে
এখনও মানুষের ওষ্ঠে লেগে আছে পরিচিত বিশ্বাস
এখনও বন্ধুর ভাবনায় হাতে থাকে কিছু অবকাশ
অবন্তী তোকে বাঁচতে হবে আরও কিছুকাল
জীবনের উত্সবে গান গাব আয় আবার সকাল |

অপেক্ষা করে তোর তানপুরা, অপেক্ষা করে সা-রে-গা-মা তোর
অপেক্ষা করে বন্ধুরা, অপেক্ষাতে সারারাত জাগে ভোর
অপেক্ষা কলেজের ক্যান্টিন, অপেক্ষা করে তোর ক্লাসরুম
অপেক্ষা করে বৃষ্টির দিন, ভালোবেসে ভেজানোর মরশুম
অবন্তী তোকে বাঁচতে হবে আরও কিছুকাল
জীবনের উত্সবে গান গাব আয় আবার সকাল |

এখনও কবিতার জন্য মানুষের বুকে আছে অনুভব
ও ভালোমানুষের কন্যে, কবিতাই জীবনের উত্সব
এই নে একমুঠো কবিতা, এই নে বেপরোয়া ছন্দ
এই যে বাড়ালাম দুটি হাত, ধরে দ্যাখ জীবনের গন্ধ
অবন্তী তোকে বাঁচতে হবে আরও কিছুকাল
জীবনের উত্সবে গান গাব আয় আবার সকাল |

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ফেরিওয়ালা গানের ডালি সাজিয়ে ঘুরি
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

ফেরিওয়ালা গানের ডালি সাজিয়ে ঘুরি
জীবন থেকে জীবন থেকে মৃত্যুপুরী
রৌদ্র জ্বলে পাড়ায় পাড়ায়
গান পুড়ে যায় গান পুড়ে যায়
সন্ধ্যেবেলা গানের ক্ষত সুরের সুতোয়
আবার জুড়ি

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
থমকে আছে মেঘ এবং থমকে গাছের পাতা
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

থমকে আছে মেঘ এবং থমকে গাছের পাতা
থমকে আছে মাটি নাকি বৃষ্টি লেখার খাতা

অপেক্ষা কার আজ বিকেলে থমকে নদীর জল
কলসি-সখী আজ বলেনি জলকে যাব চল
আঁচড়ায়নি আকাশটা চুল ঝাঁকড়া কালো মাথা
থমকে আছে মাটি নাকি বৃষ্টি লেখার খাতা

মেঘ সাজালো আকাশবাড়ি জলের রঙে ঢঙে
আসবে তুমি জলের ঘরে গোপন নিমন্ত্রণে

চোখের নীচে শুকিয়ে গেছে কান্নাজলের দাগ
দুচোখ জুড়ে আজ অবেলা মেঘলা দিয়ে যাক
প্রতীক্ষাতে সন্ধে নামে মেঘের আঁচল পাতা
থমকে আছে মাটি নাকি বৃষ্টি  লেখার খাতা

.     
            ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
খানিকটা কথা খানিকটা নাটক খানিকটা গান
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

কথা :    সি আর পি আর পুলিশের জুটি
.          গ্রেফতর করল আদিবীসী মেয়ে দুটিকে
.          মাওবাদী গেরিলাদের দলে
.          রাইফেল হাতে ওরা ঘুরত জঙ্গলে
.          বিমলা সর্দ্দার আর সুলেখা মাহাতো
.          ল্যাণ্ড মাইনে পুলিশ মারত অহেতুক
.          জানে না ওরা লেখা পড়া গান্ধিজি মার্কস লেনিন
.          স্বাধীনতা খায় মা মাথায় দেয়
.          কোন গেরামের লোক মে-দিন ?  
.          জানেনা ভারত-ভোট-গণতন্ত্র কিংবা সমাজবাদ
.          শুধু জানে ভাত !
                   
নাকট :  তোরা নাকি ভাত খাসনে খোঁজ
.          গাছের পাতা শেকড় আছে
.          পোকা আছে মাকড় আছে
.          কচু আছে ঘেঁচু আছে
.          কত কিছু মিছু আছে
.          তাই দিয়ে সার ভোজ
.          ভাত কি তোদের খেতেই হবে রোজ ?

গান :    রাজা আছে মন্ত্রী আছে
.          সিপাই আছে সান্ত্রী আছে
.          লাল নীল নেতা আছে
.          বচ্চন অভিনেতা আছে
.          ইস্কুল আছে কলেজ আছে
.          কম্পিউটার নলেজ আছে
.          সচিন সানিয়া মির্জা আছে
.          ক্যাডার ভুয়ো ভোটার আছে
.          মাফিয়া বা প্রোমোটার আছে
.          দিল আছে ধড়কন আছে
.          ব্যান্ডের গান আর ফ্যাশন আছে
.           আঁতেল আছে কবি আছে
.           কফিহাউস বিপ্লবী আছে
.           নেতার বড় বাণী আছে
.           সুস্মিতা সেন রানি আছে
.           নেতার বড় বাণী আছে |

নাটক :   এত কিছু আছে তবু ভাতের জন্য কাঁদিস
.           পুলিশ মারিস সন্ত্রাসী মাওবাদীস্ !

গান :     সুলেখা বিমলা তোরা ভোটের দলে আয়
.           লাল জামা গায় নীল জামা গায়
.           লাল জামা নীল জামা গেরুয়া জামা গায়
.           ভোটের দলে আয় আয় রে
.           ভোটের দলে আয়
.           লাল  জামা গায় নীল জামা গায়

.                 ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তোকে খুঁজি এই অবেলায়
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

তোকে খুঁজি এই অবেলায়
মুঠো মুঠো মুঠো ধুলো খেলায়
গাঢ় নিরালা নীল জামায়
ছায়া হেঁটে আসে দীর্ঘ পায়
গাছে গাছে শেষ আলোকণা
কোথায় তোর ঘর সোনামনা !

মাটিতে দৃষ্টি অবনত
যদি ফেলে যাস কোনো ক্ষত
সে ক্ষত চুম্বনে ঢেকে রাখি
আহারে ধুলো খেলা ধুলোমাটি !

সে খেলা তুই ছাড়া কে জানে আর
ধুলো কি তোর নাকি ধুলো আমার
বয়সী চুলে জমা অন্ধকার
নীরবে জমে বুকে সন্ধেটার
আমিও যদি হই যন্ত্রণা
ধুলোখেলায় নিবি সোনামনা ?

.              ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কতখানি নদী সেই মেয়ের চোখে
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

কতখানি নদী সেই মেয়ের চোখে
ছেলেটিতে ফসলের ঘ্রাণ
সে কি তুই জেনেছিস বলেছে তোকে
আমার দুয়ারে ডেকে আন |
কে বলেছে, ‘তারা নেই’ ?           
তাহলে তো ভোর
রাত্রির বুকে থেমে যাবে !
তাহাদের হাতে সেই পরশ পাথর
মৃত বাঁচা প্রাণেতে ভাসাবে |
যায় যদি যাক ভেসে সকল দুয়ার
একবার নদী হতে চাই
আমিও স্রোতের মত বলব আবার
ভালোবাসা আসলে লড়াই |

বলো বলো পেলে তুমি কতটা মাটি
মহেশ সে ছেলেটির নামে
সে মেয়েটি সরিতা বুকের বাটি
কত ঢালে মানুষের গ্রামে !
মাটি মানুষের কাছে কতটা গেলে
মাফিয়া ও নেতা ভয় পায়
কত ভয় মাফিয়ার বুলেটে মেলে
দুটি লাশে লেখা হয়ে যায় |
কত ভালোবাসলে লাশ হওয়া যায়
ক্ষত খুলে জেনে নিতে চাই
আমার দুয়ারে ক্ষতবিক্ষত আয়
আয় লাশ দুহাত বাড়াই

আয় লাশ দুহাত বাড়াই |

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বারান্দায় ঝুঁকে দেখে বয়স্ক রোদ
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

বারান্দায় ঝুঁকে দেখে বয়স্ক রোদ
( নীচে ) ফুটপাথে পড়ে এক রুপোলি পালক
পাশ দিয়ে মারুতি মসৃণ বয়ে যায়
ধুলোর আবির লাগে পালকের গায়
উঁচু ফ্ল্যাটে সুখ বড়ো উঁচু সুনয়নী
আমি নীচু দুঃখ নেব যাই মামণি

একহাতে কুড়োণ তার আধখাওয়া বিড়ি
অন্য হাত পালকে রাখে হাভাতে ভিখিরি
নিচু স্বরে বেজে ওঠে হারমোনিয়ম
সময়ের হাতে নেই সময় একদম
তোর হাতে থাক থাক সোনার খনি
ওইখানে আমি যাই, যাই মামণি |

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নক্ষত্রের থেকে জল
কবি পল্লব কীর্ত্তনীয়া

নক্ষত্রের থেকে জল
ঝরে যেতে দেখেছ তুমি
কোনো দূর সাগরের অচেনা মৌসুমী
বয়েছিল রাত জানালায়
তোমার ঘুমের পাতায় পাতায়
তোমার ঘুমের পাতায় |

জানালায় ভেসে যায় রাতের জাহাজ
ফিরবে না তবু কেন যায়
একই ঢেউ পার হয়ে সবাই খোঁজে
সোনামুখী বন্দর কে জানে কোথায়
ঝাউবনে লেগে থাকে বিষণ্ণ ভোঁ
হাওয়া সেই বাঁশি লিখে যায়
তোমার ঘুমের পাতায় পাতায়
তোমার ঘুমের পাতায় |

রাতপাখি উড়ে গেলে তাদের ডানায়
নাবিকের ঘুম থাকে লেগে
তারাও কি সোনামুখী বন্দরে যায়
জীবনের অসীম আবেগে
তাদের ডানায় ঝরে তারাদের জল
হাওয়া সেই জল লিখে যায়
তোমার ঘুমের পাতায় পাতায়
তোমার ঘুমের পাতায় |

.           ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর