আরো কিছুটা পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া তোমার সঙ্গে আমার, একটানা ঝড়ের আভাসে এলোমেলো হওয়া সারাদিনটা যেন আরও একবার যাচাই করে নিতে চায় আমাকে | তবুও তোমাকে মনে রেখে আরো একবার আমার পথ চলা, একটা ক্লান্তিহীন শব্দের মতো ঝড়ের প্রত্যাশায় থাকা মন ক্ষণিকের শান্তি তো চায় |
তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা মনে হয় বহুদিনের আষাঢ়ে হাওয়ায় হারিয়ে যাওয়া ভেসে ভেসে | শুক্ নো বাতাসের আঁচকে উপেক্ষা করে তোমার উপস্থিতি জাগায় আমাকে | ছিল না তোমার চোখে কোনো প্রতারণা ছিল শুধু একটা বিশাল বাগান আর সুন্দর বিকেল, পাশাপাশি হাঁটা আর মৃদু মৃদু ভাষা ; একটা প্রত্যাশা চিনিয়েছিল তোমাকে, আগামীকালের আমাকে, আর আমার স্বপ্ন আমার বাস্তবকে |
তবুও কয়েকটা বছর তো গড়িয়ে গড়িয়ে কোনো এক শরতের পড়ন্ত বিকেলে মনে পড়ে তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখার সঙ্গী ছিল সে | কয়েকটা মাত্র কথা সেদিনের তবুও বছরের পর বছর তো কাটিয়ে দিল | মাঝের দিনে কিছু অঙ্গীকার নিয়ে হাজির ছিলে সেদিনের তুমি সে ছিল এক পরম বিস্ময় ! শত কলাপের ঝুন্ ঝুন্ শব্দ গুঞ্জরিত করে তোমাকে আমাকে ! পড়ন্ত রোদের লাল আলো তোমার চিবুক স্পর্শ করেছে ! তার ছায়া আমার কন্ঠে দূরে আরো দূরে কোনো এক স্বপ্নপূরীতে শ্বেত কমলের পাশে এসে বসে বলাকা নিয়ে যায় অতীতের পুরীতে | আজও হয় তোমার সঙ্গে আমার দেখা, আজও বিকেলকে নিয়ে হাঁটো তুমি আমারই সঙ্গে তবু যেন বসন্ত গেছে হারিয়ে || . ************************* . সূচিতে . . .
অনির্বাণ শান্তি লোকের পারাবারের মাঝে আমাকে চিনেছিলে কে তুমি ! জ্যোতি সেখানে অনির্বাণ শান্তি ------ চিরন্তন | নীল তমসায় আচ্ছন্ন পৃথিবী সেদিন সাদরে বরণ করেছিলো তোমাকে, আমাকে ; ক্লান্ত ------- সুনীল বনারণ্যমাঝে . আমাকে দিয়েছিলে শতবর্ষের সীমাহীন আশার আলোক, . শান্তি ---- পারাবার | ধানি রঙের শাড়িতে তুমি ছিলে . শান্ত --- স্নিগ্ধ ----সুশীতল সেই ধানি রঙের শাড়িটা আজ তার . মলিন ছিন্ন বেশে প্রশ্ন করে তাকে আমরা জেনেছি কতটুকু এই বলে | শিশু চায় না এখন আর শৈশবকে চায় নিঃসঙ্গ আঁধারে ডুবে যেতে, কে পারে বাঁচাতে তাকে ? অনির্বাণ জ্যোতিপথ আজ ধূসরতায় ম্লান, সেই ম্লান আলোর মাঝেই এখানে সন্ধ্যা নামে ------- সকাল হয় যন্ত্রের কোলাহলকে সঙ্গে নিয়ে . পাখিরা এখন বলে না শিশুকে তার কানে কানে . ‘এসো জেগে ওঠো’ | তবুও আরো একবার জাগতে হবে তাকে . শান্তি লোকের পারাবারের মাঝে মুক্তি যেখানে স্নিগ্ধ, জ্যোতি যেখানে অনির্বাণ . শান্তি চিরন্তন || . ************************* . সূচিতে . . .
তখন তার বয়স ছিল ছয় কি সাত গায়ে জামা নেই হার জির্ জিরে চেহারাটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত রেলস্টেশনে | গ্যালপ্ ট্রেনগুলো একের পর এক চলে যেত ওর গা ধূলোয় ভরিয়ে | দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামত ও ফিরত | আজও এতদিন পরে ওকে দেখলাম ----- অবাক হলাম এতটুকুও বদলায়নি, আজও আগের মতো সময় ধরে দাঁড়িয়ে রেলস্টেশনে, চোখে বিস্ময়ের বদলে শুধু বিষন্নতা | . ************************* . সূচিতে . . .
তার ভালোবাসা কতখানি সত্য জানি না, জানি, তাকেই ভালোবেসেছিলাম সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রতিদানের আশা না রেখে | জানি না আমার এ ভালোবাসা সে বুঝে ছিলো কিনা তবুও তাকে ভালোবেসেছিলাম গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপে বর্ষার কদমের গন্ধে হেমন্তের হিমেল ভোরে শীতের শীতঘুম মাখা দিনে বসন্তের মেদুরতায় আমাকে তৃপ্ত করেছিল ; তার চুম্বনের প্রথম পরশ স্বপ্নের সিঁড়ি ভেঙে আমার হৃদয় নিয়ে তপ্ত ললাটে এঁকেছিল তার চাওয়া পাওয়া | . ********************** . সূচিতে . . .
তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা সিঁড়িতে তারপর--- খাওয়ার টেবিলে | এরপর ‘হাজার জনতার’ মিছিলেও দেখা হতো আমাদের | বহু গ্রাম মাঠ পথ পেরিয়ে আমার চিঠি পৌঁছে দিত গ্রামের রানার, তবুও সঠিক ঠিকানা পাইনি এখনও ঘুরেছি অনেক স্থানে জালিয়ানওয়ালা --- পথের শেষে --- স্টিমারের কাছে ! পেয়েছি তাকে ঝড়ের দেশে ছোট দেশলাই কাঠিটা হাতে নিয়ে আজও চলেছি আমি | . ********************** . সূচিতে . . .
এখনও কি সময় হয়নি ? ওই তো সেতারে বাজছে হিন্দোল ! সন্ধ্যাতারারা যখন মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে তখনও চাঁদ ওঠেনি কেন ? ওরা পথিক ----- তার স্নিগ্ধ আলোয় যেতে চায় দূর থেকে দূরতম সীমান্তে, যে আলোর স্পর্শে হিল্লোলের মতো ফিরে আসবে পূরবী, শেফালীরাও মুখ তুলে আজও তারই অপেক্ষায় | কিন্তু আজ চাঁদও কি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সবার আগে ? আর তো সময় নেই ! তাদের যে মুখ দেখেছিলাম রবির তপ্ততায় আবার তাদের দেখতে চাই বসন্ত মেদুর চাঁদের স্নিগ্ধতায় | তারপর কোনো এক সময়ে তার স্নিগ্ধ আলোর চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ব এই শান্ত শীতল মাটিতে, চামেলীর সুরভি মায়ায় | আমি আবার তাদের দেখতে চাই স্বপ্নে নয়, জাগরণে | . ********************** . সূচিতে . . .
রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে কিন্তু চোখে তার ঘুম নেই একটা ঝড়ের প্রত্যাশা ---- দু-চোখের ঘুমকে টেনে নেয়, যখন ক্লান্ত চাঁদের চোখেও ঘুম নেমে আসে তখনও তার চোখে ঘুম নেই | অবুঝ মনের হাত ধরে এগিয়ে চলে সে রুক্ষ দিন শেষে | একটা ঝড়ের প্রত্যাশা তার হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে | আরো ভালো হতো, যদি আমি আর সে সব ফেলে রেখে ---- হারিয়ে যেতাম ঝড়ের দেশে, মাঝে থমকে দাঁড়াতাম ক্লান্ত চাঁদের সামনে ; তার নিবিড় শিথিল ছায়া হয়তো ঘুম পাড়াতে চাইত তাকে | কিন্তু তখন তো তার গতি অসীম তাকে বাঁধার শক্তি আছে কার ? আজকের এই রাতও চেনা তার কাছে, সেদিনও একটা ঘূর্ণিঝড় ছিনিয়ে নিয়েছিল তার দু-চোখের ঘুমকে আজও তেমনি একটা ঝড়ের প্রত্যাশা ছিনিয়ে নিয়েছে তার ঘুম শুধু কাছে গেলে শোনা যায় তার বাঁশীর ভৈরবী সুর আর দেখা যায় চোখে তার দিগন্তের রাঙা আলোর প্রত্যাশা | . ********************** . সূচিতে . . .
আমি চাই তাদের, তারা আমার আরো কাছে আসুক এটাই---- মনে হয় ওরা কিছু যেন আমাকে বলতে চায় | আসলে ওরা সমুদ্রের ঢেউ আকাশের ঘন নীল চোখের মতো চোখ তুলে ওরা প্রশ্ন করছে | কালের প্রদীপ এখন ওদেরই হাতে আমার আর ওদের মধ্যে শুধু সময়ের ব্যবধান, আমি ওদের দু চোখ ভরে দেখেছিলাম হারান অতীত বারবার ফিরে ফিরে আসছিল ! আমি ফেরার পথ ধরলাম | দূরে কোথায় মঙ্গলশঙ্খ বাঝছে, ঘন নীল আকাশ বরণ ডালা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছে রাঙা সূর্যোদয়ের | . ********************** . সূচিতে . . .
দূরে কোথায় সন্ধ্যা নেমে আসে পাখিরা যে যার বাসায় ফিরে গেছে, আকাশে পড়েছে বাদল মেঘের ছায়া শোনা যায় দিগ্ বধূদের নূপুরনিক্কন ‘অম্বরে ডম্বরু’ বাজাতে বাজাতে ছুটে আসে মন উদাসী করা মাতাল বাতাস | এ মেঘের কোনো দিশা নেই রামগিরি না হিমালয় কোন্ দিকে সে জানে না | শুধু জানে তার বাতাসে জেগে ওঠে নীড়ে ফেরা তন্দ্রালু পাখিরা | ঘুমভাঙা পাখিরা তার সঙ্গে গেয়ে ওঠে বাদলের গান মেঘকে দেখে মনও বলে ওঠে---- দাঁড়াও, বারেকের তরে পথে যেতে যেতে শুনব’ তোমার মাতাল বাঁশীর সেই রাগিণী | . ********************** . সূচিতে . . .