কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলালের কবিতা
*
কখনো বা দ্রুত,  কখনো বিলম্বিতে
কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল
উত্তম দাশ, মৃত্যুঞ্জয় সেন ও পরেশ মণ্ডল সম্পাদিত কবিতা : ষাট সত্তর থেকে নেওয়া।

রাঙা মেঘ যায় বহুদিন বাদে হয়তো বিকালে, হয়তো বারান্দায়
যেন ভ্রমণের স্পর্শ সে রাখে নিজের গভীরে নিজেরই শূন্যতায়
চোখ রাখি তাই আপন চোখের দৃষ্টিকে ফিরে নিতে
দৃষ্টি এল না, কেবল স্পর্শ এসেছে অতর্কিতে

স্পর্শের মতো আয়ু চলে যায়, কখনো বা দ্রুত, কখনো বিলম্বিতে |

প্রতীক্ষা ছিল, এখন আমার সারা ঘরে শ্বেত আলো
স্পন্দনশেষে স্থির ও কম্পমান
রহস্য আনে, সে কি রাত্রির শেষ মৃত পাখি, যার স্মৃতি আচড়াল
মৃত্যুর ঘন ছায়ায় দেবযান
ভয়ের মতন মৃদুসঞ্চারী স্বপ্নের পিছু নিতে ?

স্বপ্নের মতো আয়ু চলে যায়, কখনো বা দ্রুত, কখনো বিলম্বিতে |

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বেকারি, পোস্টমর্ডান
কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল
অনুপকুমার মহাপাত্র সম্পাদিত ‘সহজ পাঠের কবিতা’ থেকে নেওয়া।

চাকরিটা চলে গেছে | তারপর ঘন ঘন টাকা
আসছে---- আসছে কর্ডলেস---- টিভিসেট পালটানো হল---
এবার কালার---
কোথ্বেকে এসব হচ্ছে ? চাকরিটা নেই----
এ বয়েসে ও জিনিস আর জুটবে না, ফোনে এই কথা বলতেই
দু-তিনটে চেক চলে এলো | কি সুবাদে ? লেখা ?
আমি তো লিখি না কিছু, কোনও দশকেরই
প্রধান লেখক নই--- তবু, লেখারই সুবাদে কি ?  তা তো নয়!
ছেড়ে-আসা আপিসের বড়বাবুদের একজন
রাস্তায় দেখা হতে বললেন, চাকরিটা আপনি যেভাবে
ডিকন্ স্ট্রাক্ট করলেন, তুলনাহীন ! একটা গিফট
আমিও দিতেই চাই আপনাকে --- প্লিজ, অ্যাক্ সেপ্ট ইট অ্যাণ্ড
রিমেমবার মি বাই--- অথচ উনিই
আমার চাকরিটার বৃহদংশ পেয়েছিলেন, পরিস্কার বলা যায় |
চাকরিতে, কোনওভাবে, নিম্নবিত্ত থেকে আর একটু এগিয়ে ছিলাম,
এখনকার ঠাটবাট প্রায় উচ্চবিত্ত --- অথচ কিছুই করছি না,
চাকরি নেই, মনে প্রভূত উদ্বেগ আর প্রত্যেকদিন
চাকরি পাবার জন্যে ঘোরাঘুরি করতেই
আটশো-হাজার টাকা ট্যাক্সিভাড়া বেশ স্বচ্ছন্দেই দিচ্ছি
একটা ফ্ল্যাট দেখাশোনা কথাবার্তা --- এসব চলছে
চাকরি নেই, কাজ নেই---- অথচ বিস্তর আয় আছে
চাকরি নেই বলতেই লোকজন হাঁ হাঁ করে উঠে বলছেন
সে তো বটেই সে আর বলতে একথা কি বলতে আছে
তারপর হু হু করে ছুটে আসছে টাকা---- এর মধ্যে কাগজে কাগজে
এই মর্মে চিঠিও দিয়েছি যেমন নেত্রদান হয় আজকাল
অনুরূপ পদ্ধতিতে আমাকেও চাকরি দেওয়া হোক ----
সরকার বিরোধীপক্ষ উগ্রপন্থী রাষ্ট্রপুঞ্জ সকলেই বিষয়টি দেখছেন |

.                 **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বলি
কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল
অনুপকুমার মহাপাত্র সম্পাদিত, ‘সহজ পাঠের কবিতা’ থেকে নেওয়া।

প্রবল বৃষ্টির ভিতর খোঁচাদাড়ি, লুঙ্গিপরা সেই লোকটি একবার আকাশের
দিকে তাকাইয়া পরক্ষণে নীচু হইয়া নদীতে একটা পোঁটলা ফেলিল,
প্রকাশ থাক, উহা তাহারই মৃত কন্যা, সাত কি আট বছরের নূরজাহান |

.                   কয়েক ঘাট ঘুরিবার পর পোঁটলা যে ঘাটে আসিল
সেখানে তান্ত্রিক, বৃষ্টি থামিয়াছে ; শকুন যে হারে তা দেয় তাহা তিনি
সংগ্রহ করিয়াছেন, কুমারীর শব দেখিয়া তিনি আরও উত্ফুল্ল, দ্রুত জল
হইতে দেহ তুলিয়া সাধনকক্ষে লইয়া গেলেন | ইহা সহজ সাধনা, মন্ত্রপাঠ
ও সঙ্গমক্রিয়ার পর যখনি প্রাণলক্ষর পরিস্ফুট হইবে তখন খড়্গে শিরচ্ছেদ
করিতে হইবে, কুমারীর ঐ মাথা গোপনে থাকিবে ও সবকিছু জানাইবে |
কথামতো সকলই হইল, মন্ত্র, সঙ্গম, চৈতন্য ও বলি---- কিন্তু কুমারীর মাথা
কেবল বলিতে থাকিল, বাপজান, ভাত খাব, বাপজান আমারে নাস্তা দাও |
ততক্ষণে, পূর্ণচন্দ্রোদয় হইয়াছিল |

.              
        **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
গতযৌবন
কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল
উত্তম দাশ, মৃত্যুঞ্জয় সেন ও পরেশ মণ্ডল সম্পাদিত কবিতা : ষাট সত্তর থেকে নেওয়া।

কে উন্মাদ পলাশফুল--- রক্তছবি--- কেন  গন্ধহীন

যখন স্রোতার্বত ছিলো তখন কি স্বচ্ছতা আসেনি |

এখন, শুধু বহন করা--- সর্পিল  ধূপ ঘুরছে,  পুড়ছে

দাঁড়িয়ে রয়েছে নম্র আমার পিতলপ্রদীপ, ধাতব |

.                      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পুতুল নাচের ইতিকথা
কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল
উত্তম দাশ, মৃত্যুঞ্জয় সেন ও পরেশ মণ্ডল সম্পাদিত কবিতা : ষাট সত্তর থেকে নেওয়া।

কোমল, বৃক্ষের কাছে              প্রচ্ছায়ায়
কেন যে রয়েছো আজ            নশ্বর ;
দেখো, ওই বৃক্ষশীর্ষ               নমিত |

সূর্যদিন শেষ হলো |               অচেনা
দিগন্তের কাছে কেউ              থাকেনা ;
কোনো পাষাণ, ওখানে           রমিত |

হে সুন্দর, এসেছো দীর্ঘ          বিনাশে |
এ অবগাঢ় তৃপ্তি আর            পাবো কি ?
কাম জ্বলে, শোক-ও, অল্প        পাবকে |

কোমল, বৃক্ষের কাছে            নমিত
কেন যে রইলে আজ             প্রচ্ছায়ায় ;
হৃদয় যায়, হৃদয় হয়              সমিত |

.                      **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পঞ্চান্ন বছরে
কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল
আন্তর্জাতিক বাংলা কবিতা উত্সব ২০০৭, উপলক্ষে সংকলিত, আশিস সান্যাল ও মৃণাল
বসুচৌধুরী সম্পাদিত “বাংলার কবিতার ভুবন” থেকে নেওয়া।

শরীর অনেকদিন ভালো নেই,
মনও অনেকদিন ভালো নয়,
পঞ্চান্ন সম্পূর্ণ করে আজ তাই
আত্মাকে বড়ো বেশি চোখে পড়ে |
দেখি, তাতে গলন ধরেছে ; এসে গেছে
প্রক্কতা যা বোঁটা ছিঁড়ে পতনে উন্মুখ ;
পঁচিশ বছর
কেরানির ---- বাঙালির ----চাকরির পর |
অর্থাৎ, কবিতার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে ;
কবিতামক্ষিকা
ফুলে বসে, পচা ফলেতেও |
দপ্তরে ঢুকলে কিন্তু এ মাছি তাড়াতে হয়
তাই মাঝে মাঝে
দপ্তরে না গিয়ে স্রেফ বাসাতেই থাকি ;
মাছি কিন্তু তখন আসে না |

শরীর খারাপ হবে আরো,
মন তো নিঃসাড় হয়ে যাবে
হাত আর লিখতে চাইবে না
মাছিরা তখন এলে পরে
আর কোন প্রাণরেণু পাবে ?

প্রাণকে এখনো চোখে পড়েনি আমার |

.                  **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর