কবি চিত্রশিল্পী প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় - জন্মগ্রহণ করেন হাওড়া জেলার ভাণ্ডারগাছা
গ্রামে। তিনি বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী ছিলেন। পিতা ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা কবি
সাহিত্যিক সুরূপা (ইন্দিরা) দেবী। মাসিমা কবি সাহিত্যিক অনুরূপা দেবী।
১৯২১ সালে তিনি কলকাতার হিন্দুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে, কিছুদিন প্রেসিজেন্সি কলেজে আই.এসসি
পড়েন। ১৯২৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে পড়তে যান ভাষা ও সাহিত্য এবং চিত্রাঙ্কন নিয়ে। ১৯২৬ সালে
পিতার মৃত্যুর পর তিনি ছবি এঁকে কিছু কিছু অর্থ উপার্জন করতে হয়। শিক্ষার ব্যয়ভার বহনের জন্য তিনি
এসময়ে একান্তভাবে চিত্রাঙ্কন শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন।
তিনি শিল্পাচার্য্য এবং কবি নন্দলাল বসুর শিষ্য ছিলেন। শান্তিনিকেতনে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু ও তাঁর
অন্যান্য ছাত্রদের নিয়ে, প্রধানত শিল্পী প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে “কারু-সঙ্ঘ” স্থাপিত করা হয়।
শিল্পী রামকীঙ্কর বেইজও তার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
১৯৩০ সালে গান্ধীজির আহ্বানে তিনি দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এই সময়ে তিনি ছবি এঁকে মাসে
৫০০ টাকারও বেশী উপার্জন করতেন। তিনি সতীশচন্দ্র দাশগুপ্তর নেতৃত্বে চব্বিশ পরগণা জেলার
মহিষবাথানে লবণ আইন অমান্য করে কারাবরণ করেন। কারামুক্তির পরে তিনি ওই অঞ্চলে থেকেই
কংগ্রেসের কাজ করতে থাকেন এবং কৃষ্ণপুর গ্রামে “পল্লীভারতী” নামে একটি জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন করে
তার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তাঁর ছবি আঁকার উপার্জন দিয়েই সেই স্কুলটির ব্যয়
নির্বাহ হতো। এসময়ে তিনি আরও চারবার কারাবরণ করেন।
১৯৪১ সালে তাঁর স্ত্রী ইন্দিরা ঘোষালও স্বামীর সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকতার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধকালে পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বিদ্যালয়টিকে বন্ধ করে দিতে হয়।
এরপর বিশ্বভারতীর আহ্বানে সেখানে গিয়ে প্রথমে গ্রন্থন বিভাগে এবং পরে লোকশিক্ষা সংসদের কাজে
যোগদান করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৬৩ সালে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে ছাত্রবিক্ষোভ দমন করার পদ্ধতি গ্রহণ
করলে তিনি প্রতিবাদে বিশ্বভারতীর চাকরি ছেড়ে শান্তিনিকেতনের কাছেই সুরুল গ্রামে চলে যান। এখানে
তিনি সাহিত্যচর্চা ও চিত্রকলানুশীলনের কাজের সঙ্গে সঙ্গে নানাবিধ দেশসেবার কাজ করতে থাকেন।
বাল্যকাল থেকেই আর্তসেবায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ১৯২৩ সালের উত্তরবঙ্গ বন্যায়, ১৯৩৪ সালের
মজঃফরপুর ভূমিকম্পে ও ১৯৩৫ সালের বর্ধমানে দামোদর নদের বন্যায় তাঁর ত্রাণকার্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
শৈশবে মা সুরূপা দেবী ও মাসিমা অনুরূপা দেবীর প্রেরণায় তাঁর সাহিত্য সাধনা শুরু হয়। আইন অমান্য
আন্দোলনের সময়ে রচিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ “মুক্তিপথে” (১৯৩০) ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করে দেয়। তাঁর
অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে ছোটদের জন্য অসংখ্য ছড়া ও কবিতা বিশেষভাবে সমাদৃত হয় ও জনপ্রিয়তা
লাভ করে। তাঁর অন্যান্য প্রকাশিতের মধ্যে রয়েছে অচিরা, গৃহসন্ধানে, তিন্তিড়ি, ব্রতী প্রভৃতি।
তাঁর বহু চিত্রকর্মের মধ্যে ১৯৬৬-৬৭ সময়কালের মধ্যে অঙ্কিত প্রাচীন ভারতের চব্বিশখানি ঐতিহাসিক
চিত্র বিশেষ উল্লেখযোগ্য যা আনন্দ পাবলিশারের “চিত্রে প্রাচীন ভারত” নামে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি
ইনটারনেটে কিনতে এখানে ক্লিক্ করুন।
আমরা মিলনসাগরে এই দেশপ্রেমী চিত্রশিল্পী কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা তুলে আগামী
প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এই প্রচেষ্টার সার্থকতা।
উত্স - ডঃ শিশিরকুমার দাশ, সংসদ বাংলা সাহিত্য সঙ্গী, ২০০৩।
. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান, ১৯৮৮।
. কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও কবি সরল দে সম্পাদিত “পাঁচশো বছরের কিশোর কবিতা” কাব্য
. সংকলন।
কবি প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ৫.১.২০১৬
পরিবর্ধিত সংস্করণ - ৭.১.২০১৬
...