কবি প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের কবিতা
*
রবি প্রয়াণ
কবি প্রফুল্লচন্দ্র রায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণের পরে, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “মাসিক বসুমতী”
পত্রিকার ভাদ্র ১৩৪৮ (অগাস্ট ১৯৪১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল এই কবিতাটি। কবির
নাম ছাপা হয় “শ্রী প্রফুল্লচন্দ্র রায়”।


বাণীর আশিসে সোনার তুলিকা হাতে,
.                তুমি এঁকেছিলে সারদার মুখছবি ;
মন-ভোলা গান গেয়েছিলে বীণা লয়ে,
.                মরমের কোণে সুখ-দুখ দিয়ে কবি!
তোমার ‘সাধনা’ দেবীর চরণতলে,
সার্থক শুধু তোমার পূণ্যবলে।
গভীর আঁধার মোদের ভূবন ঘিরে
ছল্-ছল্ আঁখি, ভাসিছে অশ্রুনীরে
তোমার পূজারী, দীনতার বেশে

.                চয়ন করিয়া ব্যর্থ মুকুতামালা ;
দেউলের দ্বারে নিরাশ প্রাণের
.                স্মৃতি-মূর্চ্ছনা নিয়ে, রেখেছে সাজায়ে ডালা।

তুমি এনেছিলে মর্ত্ত্যভূমিতে স্বরগের সুধাধারা
আমাদের লাগি’, কল্যাণ মাগি’ স্নেহটুকু দিয়ে ঘেরা
তোমার পরশ, কবিতার মাঝে দিয়েছ,
আমাদের তুমি আপনার করে নিয়েছ।

গ্রাম্য ‘বধূর’ সকরুণ আঁখি দু’টি,
দিনের শেষে যে উঠিয়াচে আজ ফুটি’ ;
গোধূলির ছায়া হ’য়ে এল ঐ ম্লান,
কবিজীবনের আজি এই অবসান ;
সেই পুরাতন সুরে কারা ডাকে “জলকে চল্?”
নয়নের কোণে ঝর্-ঝর্ ঝ’রে অস্রুদল।

তোমার ‘স্বপ্ন’ স্মৃতি দিয়ে আজ ঘেরা
.                দিবসের শেষে মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে
সিপ্রানদীর কলতান ভেসে আসে
.                প্রিয়ার আনত মুখখানি পড়ে মনে।

তাজমহলের মর্ম্মরতলে একটি জোছনা-রাতে
প্রদীপের মালা দিয়েছিলে তুমি সাজায়ে আপন হাতে,
তুমি দিয়ে গেছ ‘শা-জাহানে’ সেই চির-অমরতা বর,
চিরদিন ভবে কীর্ত্তি তোমার রবে অবিনশ্বর।
আশা নিরাশায়, পথে ও বিপথে ধ্রুবজ্যোতি সম তুমি,
তোমার পরশে আমরা ধন্য, ধন্য জন্মভূমি।

শোকাকূল হ’য়ে আজি সারা দেশ মিলেছে আনত শিরে,
“এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।”

.               ***************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর