ঘুম ভাঙলেই চোখ মেলে প্রথম তোমাকে দেখব বলে একটা আস্ত রাত- এক নিমেষে হেঁটে পার হলাম । দুপুরে তোমার নিজের হাতে রান্না কলমিশাক আর কড়াই শুটির ডাল খাব বলে অকারণে ছুটি দিয়েছি বাবুর্চিকে । বিকালে শুধু তোমাকে নিয়ে দিগন্ত পারে- সূর্য ডোবা দেখব বলে কাক-কোকিলদেল নিঃশব্দে বাসায় ফিরতে বলেছিলাম । সেই কাক ভোর থেকে ভর দুপুর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা এল কখন আসবে তুমি ?
একটা ঘুরঘুটে অন্ধকার নিঝুম রাত ফেলে রেখে যাচ্ছি স্বপ্ন দেখো নদী- জল - বাঁকা নৌকো চলকানো ঢেউ একটা খাঁ খাঁ দুপুর একমালা ভাদ্রুরে রোদ রেখে যাচ্ছি সিদ্ধ ধান ভিজে মশাল শুকিয়ে নিও শুধু তোমার জন্য একটা কবিতা লিখে যাচ্ছি তাতে সাত সুর বেঁধে তোমার নিজের গলায় একটিবার অন্তত গেয়ো দেওয়াল আলমারিতে কয়েকটি বই রেখে যাচ্ছি শোবার সময় অন্তত একটি বই মাথার বালিশের পাশে রেখো মহাকাশের মতো ফাঁকা একটা ক্যানভাস রেখে যাচ্ছি সঙ্গে কিছু রং তুলি অকারণে আচড় কেঁটো।
আমাকে ছুঁয়ো না , আমি সদ্যোজাত শিশুর মুখে - দুধের বতল ধরে ছিলাম । না না ছুঁয়োনা আমাকে , আমি আতুর ঘরে আবিষ্ট ছিলাম । আমি ফুটানো জল নিয়ে - নিরাকার সমুদ্রে ভেসেছিলাম । আমাকে ছুঁয়োনা তুমি , তোমার মল মাড়িয়েছি আমি । ছুঁয়োনা আমাকে , শব দাহ করে আসছি আমি ; এখনো চিতাভস্ম লেগে আছে গায়ে। আমার কাছে কিছু চেয়ো না ; কিছু দিতে পারবনা আমি , হাত কড়া আমার হাতে । আমাকে চলতে বলো না , শিকল বাঁধা আমার পায়ে । আমাকে দেখতে বলো না ; চোখের পাতা ডেনড্রাইটে আঁটা । আমাকে গাইতে বলোনা , গলা ফাটা- ফাটা গলা আমার । আমাকে বলতে বলোনা ; মুখে আমার কুলুপ আটা । আমাকে শুনতে বলো না , বদ্ধ কালা আমি ; আমি শুনতে পারবো না । আমাকে আর ভালোবাসতে বলো না , সকল ভালোবাসা আমার - দিয়েছি তোমাদের সেই জন্মলগ্নে ; আমি আর ভালোবাসতে পারবনা ।
সিগারেট জ্বলিও না নিজের মৃত্যুপথে অন্যকে সতীর্থ করোনা থুতু ফেলনা যেখানে সেখানে মশা-মাছি মহানন্দে চড়ুইভাতি করবে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলনা রোগ জীবানু সর্বক্ষণ কৃষিক্ষেত্র খোঁজে মহিলার দিকে আর চোখে চেয়োনা সেণ্ট্রাল পার্ক সাধারণের জন্য নয় ভরপেট আহার ভালো নয় একবার ভুড়ি বাড়লে আর কমে না অন্যের অর্থে ইর্ষা করোনা তৃতীয় বিশ্বে কীট-পতঙ্গ আর দারিদ্রের অনুপাত প্রায়-সমান ভুলেও উচ্ছিষ্ট খেয়ো না না হয় এক আদবেলা হরিমটর খেয়ো অশুখ হলে ডাক্টারের পরামর্শ নাও নইলে হাসপাতালে যাও জান বাড়ি কিম্বা ঠাকুর বাড়ি যেও না ঠগি আর ঠগবাজদের হাতে পড়ে একটা জাতি আজ ধ্বংসের মুখে ভোরের হাওয়া মেখে পথ হাঁটো দিনে একটা সময় বার করে সংবাদ পত্র পড়ো রাজনীতির ধান্দাবাজি বুঝতে চেষ্টা করো ধর্ষকের বিরুদ্ধে তোমার কণ্ঠ সোচ্চার হোক দিল্লী-কামদুনি-খরজুনা-রানিতলা মধ্যমগ্রাম ---, আর শুনতে চাইনা মানি-পার্সে কাগুজে নোটের বদলে ব্লাঙ্ক চেকের কি দরকার ? নিজের পেশা ঠিক করো মদের লাইসেন্স না নিয়ে শিক্ষানিকেতন গড়তে পারো এখন দেশে-দেশে অশিক্ষা-কুসংস্কার জীবনের গতিপথ আটকে আছে সব কথা গীতা-ভাগবত-পুরান বাইবেল কিম্বা মহাকাব্যে পাবে না এমনকি মন্দির-মসজিদ-গির্জা শ্মশানেও নয় মহান যীশু বলেছেন-অন্ধকার থেকে উঠে এসো স্মামীজি বলেছেন-রক্তদান করো শুধু বাঁচার জন্য-বেঁচে থাকা নয় কর্মে নিবিষ্ট থাক কবি সুকান্তে সহমত হয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে বলো "যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপনে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল"
'সুনন্দা'-তুমি কেবলই আমারই ছিলে একথা আমি কাউকে বলিনি কাল রাতে; স্বপ্নে- অবচেতন মনে বাতাসকে বলেছি আমি জানতুম না আমার প্রতি সে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করবে রাত না পোহাতেই সূর্যের প্রথম রস্মিকে বলেছে সে আবার আকাশকে বলেছে আকাশ বলেছে পৃথিবীকে পৃথিবী তার দাদা ভাই ছেলেকে বলেছে এরা আবার মহাবিশ্বের সকল নক্ষত্রকে জানিয়েছে বলোতো আমি লজ্জায় মুখ দেখাই কি করে ঘরের বাইরে পা বাড়াই কি করে ?
রাত্রি তৃতীয় প্রহর নিঝুম অচল অন্ধকার ছিলিং ফ্যানটি কী ভীষণ পরিশ্রমী ঘুরছে তো ঘুরছেই চোখে মুখে ক্লান্তির রেখা চিহ্ন নেই একদিকে টিকটিকির কিটির কিটির শব্দ অন্য দিকে সুলতানি যুগের বাদশাহী দেওয়াল ঘড়িটি চলেছে টিক এ টিক টিক এ টিক তড়াস ঘুমে আচ্ছন্ন আমি হঠাৎ কে যেন টানছে মাথার বালিশ তন্দ্রালু চোখে অস্ফুটে বলি কে তুমি এত রাতে এখানে আমি - আমি আশা - বলো কি চাও আমি নিতে নয় দিতে এসেছি কি কী আবার দেবে এক আকাশ স্বপ্ন ওঠো জাগো পায়ের উপর দাঁড়াও ওই শোনো বাতাসের আনাগোনা ওই শোনো ঝেঝিপোকার কান্না শুনতে পাচ্ছোনা সমুদ্রের ঢেউ কী বলতে চায় দেখ রাত শেষ হয়ে এলো তবু সিলিং ফ্যানের ক্লান্তির লেশমাত্র নেই টিকটিকি কীট পতঙ্গ খেয়েই চলেছে আর বেড়েই চলেছে লেজ কেটে পড়ে গেছে খন্ডে খন্ডে বাদশাহী ঘড়িটি চলেছে তো চলেছে টিক এ টিক টিক এ টিক ।
নীল আকাশ মাঝে মাঝে মেঘ ; মলিন ছেড়া কালো গামছা ভাসছে । ভাবিনি সেদিন আমারও চোখের বাইরে - ছিলো এমন রাত ; চাঁদ তারা আজ - সূর্য্য থেকে অনেক দূ'রে ! এমন জমাট রজনী মুখচোখহীন ? ঐ বিদগ্ধ দেহে জীবন মৃত্যুর সংলাপ । কেন তুমি একা এসেছিলে ? কেনই বা একা একা যাও চলে ? আমি যে এ বিশ্বে অনিমন্ত্রিত অতিথি ।
অন্তত একটি চিঠি দিও না হয় অসংখ্য কটু কথা লিখো তবু একটা চিঠি দিয়ো কতদিন কতকাল ভেবেছি সন্ধ্যা সকাল তুমি একটা চিঠি দেবে তোমার নিজের হাতে বোনা টেবিল ক্লথের মতো একটি চিঠি হাতের লেখার কথা ভাবছো দ্যাখো সকলের হাতের লেখা দুধের মতো সাদা নয় বানান ভুলের কথা ভাবছো ভয় নেই বাংলা অভিধানে বানান বিধির রীতি বদলাচ্ছে যদি মনের কথা লিখতে কষ্ট হয় শুধু তোমার চোখটা এঁকে দিয়ো যদি সত্যিই খুব ব্যস্ত থাকো শুধু লিখো কেমন আছো যদি খাম-ইংল্যান্ড লেটার না থাকে খালি পোষ্ট কার্ডেই লিখ জানি আমার উপর তোমার রাগ হয়েছে খুব পারলে কোন পাথর কিম্বা আদলা ইঁট ছুঁড়ে মেরো পারলে ক্ষত বিক্ষত করো তবু একটা চিঠি দিয়ো ।