কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস-এর কবিতা
*
তুমি জাগাবে তাই
কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস

তুমি জাগাবে তাই ,
ঘুমিয়ে ছিলাম অঘোর ঘুমে ।
নিশুতি অন্ধকার ,
ঝিঝিপোকার কান্না ;
কেউ আমাকে করেনি ডিসটার্ব ।
কেন জানিনা পাড়ার কুকুর গুলো-
কি ভীষণ শান্ত ছিল !
শেষ রাতের মালবাহী ট্রেনটাও -
নিঃশব্দে পার হয়েছে ।
পাছে আমার ঘুম ভেঙে যায় ।
শুধু জাগাবে তাই -
ঘুমিয়ে ছিলাম অঘোর ঘুমে।
যেন সহস্র রাতের ক্লান্তি;
ভিড় করেছিল চোখে।
কালরাতে পাশের চৌধুরী বাড়িতে;
একদল ডাকাত দিয়েছিল হানা ।
শুনলাম সর্বোস্ব লুট করে নিয়েগেছে
পাড়াময় হইচ এত্তো চেচামেচি;
তবু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি ।
ক্লাবের ছেলেরা -
কত্তো ডাকাডাকি করেছে !
কেউ নাকি নাম ধরে;
অলস কুড়ে বলে -
গালাগালিও করেছে ।
ডাকাতের দল যাওয়ার সময়,
বোমা ফাটিয়েছে অনেক ।
ভীষণ শব্দে -
আমার পড়ার টেবিলের -
হ্যারিকেনের কাঁচ ফেঁটে চৌচির ।
তবুও ঘুম ভাঙেনি আমার ।
কর্ণকূহরের সেনসারি নার্ভ,
অচল ছিল বোধহয় !
চোখের পাতা-
ছিল ডেনড্রাইটে আটা ।
আর আমাদের ভুলমেনিটা ;
তীর্থে গিয়েছে বোধহয় ।
সেই আনন্দে সংবাদপত্র নিয়ে;
নেংটি ইঁদুরের দল,
মহানন্দে চড়ুইভাতি করেছে ।
তবে সেলফের বই গুলি কাটেনি,
পাছে কুটুস শব্দে ;
আমার ঘুম ভেঙে যায় ।
আমাদের পালটি ঘরের -
বীরেন ঠাকুর প্রত্যহ ভোরে ;
কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম
জপ করে পূর্ব দিক ফিরে ।
ওমনি উঠে পড়েন মা ।
বলেন -এমন কাক ভোরে
কৃষ্ণনাম শতশত প্রনাম ।
এতসব হয়েছে নিয়ম মতো ।
তবু আমার ঘুম ভাঙেনি !
এঘুম ভাঙবে -
শুধু তোমার ডাকে ;
যদি তুমি জাগাও তবে জাগবে ।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পিরামিড
কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস

প্রিয় তোমাকে কালরাতে
স্বপ্নে খুব কাছে পেয়েছিলাম
সবেমাত্র পূর্ণ চাঁদ মাঝ আকাশে
দেওয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দ
ঝিঝিপোকার কান্না
মশাদের গুঞ্জন তখন স্পস্ট
দুষ্কৃতকারী নিশাচর দলের
পায়ের শব্দে রাস্তার কুকুর গুলি
কেবলই ঘেউ ঘেউ করছিল
তুমি তখন বিদিশা - শ্রাবস্তীর বেশে
আমার শিহরে এক নিঃশ্বাস দূরে
কাঠবিড়ালীর লেজের মতো
নরম হাত রেখেছিলে কপালে
তৃষিত মন লতার মতো
জড়াতে চেয়েছিল তোমাকে
তবু কী ভীষণ শান্ত ছিলে তুমি
পাছে টিকটিকি ঠিকঠিক দেয়
স্বপ্নে তবু এত ভয়
সকাল নাহতেই চলে গেলে
তবে যাওয়ার আগে ধাক্কা দিয়েছিলে
যেন ভূমিকম্প হওয়ার পর
পরতে পরতে কাপন
দরজা জানালার পর্দা
মাথা দোলায়
কেন এতো আলোড়ন
কেন এতো বিষ্ফোরণ
সংগঠিত কর
মমতাজ ' কে ঈর্শা করে
তুমিও কি সহমরণ চাও
যদি তাই হয়
আমি তবে পিরামিডের মমি হয়ে
শুয়ে থাকব অনন্তকাল
আর হাজারও মশা মাছির গান শুনব ।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
খাবারের সন্ধানে পাখি
কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস

সেই কবে থেকে -
সকাল দুপুর কিম্বা বিকাল;
কি চঞ্চল -
উৎকণ্ঠা বুকে নিয়ে !
সংকীর্ণ সরু গলি
ময়লা আবর্জনা ঘেটে চলি ,
উলটে পালটে দেখি আঁস্তাকুড় ।
কোন কীট-পতঙ্গ ,
অথবা খাবারের কণাটুকু
পাই যদি ।
শিশু আমার আছে অনাহারে !
কেউ কেউ বলে ছোট 'ছানা'
পাখি হলে উড়ে যাবে ,
আর ফিরে আসবে না -
আমার কোলে আমার নীড়ে ।
তাইবা হলে -
কী যায় আসে ?
সরকার পাড়ার শান বাঁধানো ঘাটে -
তোমাদের উঠানের পাইদোরে -
কত ঘোরা ঘুরি কতদিন করি ।
তোমাদের দুষ্টু সোনার আধ খাওয়া ;
বিষ্কুটের গন্ধে উড়ে উড়ে আসি ।
আবার উড়ে যাই এক নিমেষে ;
আবার ফিরে আসি অতি সন্তর্পনে ,
চাল ঝাড়া খুদকুঁড়ো
হাঁড়ি কুড়ানো ভাত পাই যদি ;
মহানন্দে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ লাফাই ।
ঘুম নেই দুচোখে -
ডানাগুলি ক্লান্তি হিম !
রাশি রাশি নলেন গুড়ের মোয়া ;
প্লাষ্টিকে ঢাকা ।
নেব কি করে ?
পেনসিলের মতো সরু ঠোঁট ।
শকুনের সজাগ পাহারা ;
মুহুর্মুহু টিনের আওয়াজ -
হৃৎপিণ্ড ভয়ে চৌচির ।
তোমাদের ছোট ছেলে মেয়ে খেলে -
হাসি আর উল্লাসে ।
তবু হাতে কেন ইঁট পাটকেল ?
সাবধানে হোক কিম্বা অজান্তে -
যদি ছোড়ে ?
লাগে গায়ে ।
পালকের নিচে খত ;
পড়ে থাকে চিরকাল ।
কোন হাতের নরম ছোঁয়া ;
লাগবে না বুকে ।
মাছরাঙা-বক-শঙ্খচিল ;
শালিখ-ঘুঘু-পেঁচা-চিল
ছোট পাখি বড় পাখি
চলসব ওই দ্যাখো -
শীত আসছে -
এখনই শুকিয়ে যাবে খালবিল ।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জীবনকে উপভোগ করতে হলে
কবি পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস

জীবনকে উপভোগ করতে হলে দৌঁড়াও ;
দৃষ্টি রাখো স্থির এবং শুধুই সামনে ।
মাঝে মাঝে ডাইনে বায়েও তাকাতে পারো ;
তবে ভুলেও পিছন ফিরে দেখোনা ।
চলার পথ চড়াই উতরায়ে ভরা ,
একবার পা পিছলে গেলে -
হাত ধরে টেনে তুলবেনা কেউ !
বরং সুযোগ পেলে মিরজাফরের দল ঠেসে ধরবে ।
যাতে তুমি তলিয়ে যাও অতল গভীরে !
যদি জীবনকে উপভোগ করতে চাও ; তবে -
তোমার অভিধানের পাতা থেকে ,
ভালোলাগা - ভালোবাসা শব্দ গুলিতে ,
কালো রঙের সেলুটেপ লাগিয়ে দাও ।
ওই শব্দ গুলি আগুনের চেয়ে শক্তিশালি !
আগুন তবু দাহ্য বস্তুকে ছাই করে ;
কিন্তু এরা জীবনের অস্তিত্ব একেবারে শেষ করে ছাড়ে ।
যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় ;
গড়ের মাঠে হনুমান দখলে -
তাকে দশ টাকার বাদাম কিনে দিয়ো ;
আর রামায়ণের গল্প শুনতে চেয়ো ।
দেখো সে বুক চিরে দেখিয়ে দেবে -
ভালোবাসা কী আর কোথায় থাকে ।
রাম- সীতার জন্য হনুমানের মুখ পুড়লেও ;
কীভাবে বুকের মাঝে আগলে আছে ,
তার ভালোবাসা তার আরাধনা ।
মাঠে যেতে যেতে গঙ্গাফড়িং দেখেছো নিশ্চয় !
তোমাদের কী মনে হয় তারা সব ফসল খায় ?
আমার সেটা মনে হয় না কখনো ।
আসলে তারা ফসলের রক্ত চুষে খায় !
তাইতো ফসল নষ্ট হয় গোড়া থেকে ,
পড়ে থাকে অস্তি চর্ম সার খড় ।
ওই সব হনুমান ওইসব গঙ্গাফড়িং দেখে -
পা আটকে রেখোনা মাটিতে ।
দৌঁড়াও কেবলই দৌঁড়াও ;
দৃষ্টি রাখো স্থির এবং শুধুই সামনে ।
রাতের সামান্য অন্ধকারের মতো -
ব্যর্থতাকে ভুলে আরো দ্রুত পা চালাও ।
হাজার বছর পথ হাঁটার পরেও ;
'জীবনানন্দ দাশের ' বনলতা সেন ' জানতে চায় ,
এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন !
এরই নাম জীবন ।
সেই জীবনকে উপভোগ করতে হলে -
দৌঁড়াও আর দৌঁড়াও আরো দৌঁড়াও ।

.             ***************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর