কবি রজনীকান্ত সেন-এর "আনন্দময়ী" কাব্যগ্রন্থের কবিতা
|
লক্ষরূপে লক্ষ পূজা
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের আগমনী-রঅন্তর্ভুক্ত
নাগরিকগণের মহাষ্টমী পূজা
॥ ভৈরবী, কাওয়ালী॥
লক্ষরূপে লক্ষ পূজা
. গ্রহণ করি ঘরে ঘরে,
লক্ষ বাঞ্ছা পূর্ণ করেন
. তারিণী, অমোঘ বরে।
যিনি কাল-সীমন্তিনী,
আজ্ঞা না করিলে তিনি,
সাধ্য কি অষ্টমী তিথি
. এক অণুপল নড়ে?
বন্ধ্যার সন্তান হবে,
ওমা উমা, এ আনন্দ কোথা রাখি বল্
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের আগমনী-রঅন্তর্ভুক্ত
রানীর আনন্দ
॥ ভৈরবী, ঝাঁপতাল॥
ওমা উমা, এ আনন্দ কোথা রাখি বল্।
নগরে উঠেছে কি আনন্দ কোলাহল!
সবাই বলে “ও রানীমা! নাইক উমার গুণের সীমা,
(ও যে) পায়ের ধূলো দিয়ে, হেসে নাশে অমঙ্গল।
ও নয় মা, সামান্য মেয়ে, (তুই) ধন্য হলি ওরে পেয়ে,
তুমি মোর কামনা, তুমি আরাধনা
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের বিজয়া-রঅন্তর্ভুক্ত
নবমীর সন্ধ্যা
॥ ঝিঁঝিট, একতালা॥
তুমি মোর কামনা, তুমি আরাধনা
. অন্য বাঞ্ছা নাহি করি, মা।
তুমি পূজা, ধ্যান, তুমি চিন্তা, জ্ঞান,
. তুমি প্রাণের অধীশ্বরী, মা।
মীনের জীবন যেমন সুগভীর জলে,
বায়ুজীবীর জীবন সমীর-মণ্ডলে,
দেখিয়া পিয়াস না মিটিতে, উমা
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের বিজয়া-রঅন্তর্ভুক্ত
নবমীর সন্ধ্যা
॥ বেহাগ, একতালা॥
দেখিয়া পিয়াস না মিটিতে, উমা
. বছরের মত হও অদর্শন ;
‘মা’ ডাক শুনিয়া না জুড়াতে হিয়া,
. নিস্তব্ধ হয়, মা, অভাগীর ভবন।
কোলে নিয়ে আমার না জুড়াতে বুক,
কেড়ে নিয়ে যায়, মা, বিধাতা বিমুখ,
(আমার) বছরের আগুনে, ঘৃতাহুতি দিয়ে,
. পাষাণ হয়ে, কর কৈলাসে গমন।
তোমার আগমনে চাঁদ হাতে পাই,
নবমীনিশায় নগর নীরব
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের বিজয়া-রঅন্তর্ভুক্ত
নবমী-নিশীথ
॥ খাম্বাজ, একতালা॥
নবমীনিশায় নগর নীরব,
আনন্দ-সঙ্গীত থেমে গেছে সব,
একটি পতাকা উড়ে না আকাশে,
. বাজে না মঙ্গল-শঙ্খ।
কঠোর-কর্তব্য-পালন-নিরত,
তুই তো মা আমারি মেয়ে
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের বিজয়া-রঅন্তর্ভুক্ত
নবমী-নিশীথ
॥ পিলু, যৎ॥
তুই তো মা আমারি মেয়ে,
. জন্ম নিলি এই জঠরে,
(তবু) মনে হয়, কেউ ন্যাসের মত
. রেখেছে তিনি দিনের তরে।
. সে তিনটি দিন যেই ফুরাবে,
. যার জিনিস সে নিয়ে যাবে,
আজি নিশা অবসানে, উমা মোর কৈলাসে যাবে
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের বিজয়া-রঅন্তর্ভুক্ত
নবমী-নিশীথ
॥ ললিত, আড়াঠেকা॥
আজি নিশা অবসানে, উমা মোর কৈলাসে যাবে ;
নরনারী, পশুপাখি, তরুলতা মা হারাবে।
. কে খণ্ডায়ে বিধির বিধি,
. কাল রাখিবে উমা নিধি?
নীরব অবনী, রানীর উমা কোলে
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের বিজয়া-রঅন্তর্ভুক্ত
নবমী-নিশার শেষ যাম
॥ বেহাগ, আড়াঠেকা॥
. নীরব অবনী, রানীর উমা কোলে ;
. একান্ত বিবশা, ভাসে নয়নজলে।
. কাল হবে গৌরীহারা,
. কেঁদে কেঁদে হ’ল সারা,
আজি নিশা, হয়ো না প্রভাত
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের বিজয়া-রঅন্তর্ভুক্ত
নবমী-নিশার শেষ যাম
॥ বারোয়াঁ, ঠুংরি॥
আজি নিশা, হয়ো না প্রভাত ;
পীড়িত মরমে আর দিও না আঘাত।
একবার বোঝ ব্যাথা, একবার রাখ কথা,
নিতান্ত শোকার্ত, কর কৃপাদৃষ্টি-পাত।
জাগ রে দাসদাসি
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের বিজয়া-রঅন্তর্ভুক্ত
নবমী-নিশার শেষ যাম
জাগ রে দাসদাসি!
জাগ রে প্রতিবাসী!
দেখ রে কাছে আসি’,
. ফেটে যে গেল বুক।