কবি রজনীকান্ত সেন-এর "শেষ দান" কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
*
আমায় সকল রকমে কাঙাল করেছে
দয়ার বিচার / কাঙাল
কবি রজনীকান্ত সেন
আনন্দময়ী কাব্যগ্রন্থ থেকে।

কবিতাটি, কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাস্পাতালে, কবি তাঁর মৃত্যুশয্যায় রচনা
করেছিলেন ২৮ জৈষ্ঠ ১৩১৭ (১৯১০) তারিখে। কবিতাটি আমরা পেয়েছি, ১৯৯৬ সালে
প্রকাশিত, অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত, “বাংলা গীতিকবিতা উনিশ
শতক” সংকলন থেকে "কাঙাল" নামে।

গানটির স্বরলিপি আমরা পাই কল্যাণী কাজী কৃত "১০১টি সুনির্বাচিত রজনীকান্তের গানের
স্বরলিপি" গ্রন্থ থেকে। সেখানে রাগ ও তালের উল্লেখ না থাকায়, সেই স্বরলিপি থেকেই তা
আমাদের জানিয়েছেন সঙ্গীতজ্ঞ  
দেবাশিস রায়।     


॥ মিশ্র ইমন, দাদরা॥

আমায় সকল রকমে কাঙাল করেছে,
.                       গর্ব করিতে চুর ;
যশঃ ও অর্থ, মান ও সাস্থ্য,
.                       সকলি করেছে দূর |
ঐগুলো সব মায়াময় রূপে,
ফেলেছিল মোরে অহমিকা-কূপে,
তাই সব বাধা সরায়ে দয়াল
.                       করেছে দীন আতুর ;
আমায় সকল রকমে কাঙাল করিয়া,
.                       গর্ব করিছে চুর |
যায়নি এখনো দেহাত্মিকা মতি,
এখনো কি মায়া দেহটার প্রতি,
এই দেহটা যে আমি, সেই ধারণায় হয়ে
.                       আছি ভরপুর,
তাই, সকল রকমে কাঙ্গাল করিয়া,
.                         গর্ব করিছে চুর |
ভবিতাম, "আমি লিখি বুঝি বেশ,
আমার সংগীত ভালবাসে দেশ",
তাই, বুঝিয়া দয়াল ব্যাধি দিল মোরে,
.                         বেদনা দিল প্রচুর ;
আমায় কত না যতনে শিক্ষা দিতেছে,
.                         গর্ব করিতে চুর !

.                   *************************          


রজনীকান্তের শেষ দান কাব্যগ্রন্থের সূচিতে . . .      

রজনীকান্তের সদ্ভাব কুসুম কাব্যগ্রন্থের সূচিতে . . .     
রজনীকান্তের আনন্দময়ী কাব্যগ্রন্থের সূচিতে . . .      
রজনীকান্তের গানের সূচিতে . . .   
রজনীকান্তের বাণী কাব্যগ্রন্থের সূচিতে . . .   
রজনীকান্তের অভয়া কাব্যগ্রন্থের সূচিতে . . .   
রজনীকান্তের কল্যাণী কাব্যগ্রন্থের সূচিতে . . .   
রজনীকান্তের বিশ্রাম কাব্যগ্রন্থের সূচিতে . . .   
রজনীকান্তের অমৃত কাব্যগ্রন্থের সূচিতে . . .    
রজনীকান্তের অন্যান্য কবিতা ও গানের সূচিতে . . .   


মিলনসাগর   
*
তুমি কেমন দয়াল জানা যাবে
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
হাসপাতালের শয্যায় লেখা।

প্রাণের ডাক

তুমি কেমন দয়াল জানা যাবে,
.        তুমি কি আসবে না?
কাঙ্গাল ব’লে হেলা ক’রে
.        হৃদি-মাঝে এসে হাসবে না?
যে নিয়েছে তোমার শরণ
তারে দিলে অভয়-চরণ ;
আমি ডাকিতে জানিনে ব’লে
.        আমায় কি ভাল বাসবে না?
.                তুমি কি আসবে না?
*
আমি, রুদ্ধ দুয়ারে কত করাঘাত করিব?
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
১লা জুলাই ১৯১০, হাসপাতালের শয্যায় লেখা।

রুদ্ধ দুয়ার

আমি, রুদ্ধ দুয়ারে কত করাঘাত করিব?
“ওগো, খুলে দাও,” ব’লে আর কত পায়ে ধরিব?

আমি লুটিয়া কাঁদিয়া ডাকিয়া অধীর,
*
মুক্ত প্রাণের দৃপ্ত বাসনা
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
হাসপাতালের শয্যায় লেখা।

দম্ভ
॥ ভৈরবী মিশ্র, জলদ একতালা॥

মুক্ত প্রাণের দীপ্ত বাসনা |
.              তৃপ্ত করিবে কে ?
বদ্ধ বিহগে মুক্ত করিয়া
.              ঊর্দ্ধে ধরিবে কে ?
রক্ত বহিবে মর্ম ফাটিয়া,
তীক্ষ্ণ অসিতে বিঘ্ন কাটিয়া,
ধর্ম-পক্ষে শর্ম লক্ষ্যে,
.        মৃত্যু বরিবে কে ?
অক্ষয় নব কীর্ত্তি-কিরীট
.        মাথায় পরিবে কে ?

---বলিয়া সে দিন হুঙ্কার ছাড়ি
.        ছিন্ন করিনু পাশ,
(হায়) ধর্মের শিরে নিজেরে বসায়ে
.        করিনু সর্বনাশ!

চেয়ে দেখি, কেহ নাহি অনুচর,
মোর ডাকে কেহ ছাড়িবে না ঘর,
আমার ধ্বনির উত্তরে শুধু
.        মানবের পরিহাস ;
(আমি) ধর্মের শিরে নিজেরে বসায়ে
.        করেছি সর্বনাশ!

এই অন্ধ, মত্ত উদ্যমে আমি
.        বাড়াতে আপন মান,
সিদ্ধিদাতারে গণ্ডি-বাহিরে
.        করিনু আসন দান ;
তাই বিধাতার হইল বিরাগ,---
ভেঙে দিল মোর শিবহীন যাগ,

সকল দম্ভ ধূলোয় ফেলিয়া
.        আজ ডাকি, ভগবান্!
হে দয়াল, মোর ক্ষমি অপরাধ
.        কর তোমাগত প্রাণ।
*
ওগো, মা আমার আনন্দময়ী
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
৬ই আষাঢ় ১৩১৭, রাত্রি, হাসপাতালের শয্যায় লেখা।

চিরানন্দ

ওগো, মা আমার আনন্দময়ী,
.        পিতা চিদানন্দময় ;
সদানন্দে থাকেন যথা,
.        সে যে সদানন্দালয়।

সেথা, আনন্দ শিশির-পানে,
.        আনন্দ রবির করে,
আনন্দ-কুসুম ফুটি
.        আনন্দ-গন্ধ বিতরে।

আনন্দ-সমীর লুঠি’
*
(ওরে) ওয়াশীল কিছু দেখিনে জীবনে
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
হাসপাতালের শয্যায় লেখা।

হিসাব-নিকাশ

(ওরে)      ওয়াশীল কিছু দেখিনে জীবনে,
.                শুধু ভূরি ভূরি বাকি রে ;
.        সত্য সাধুতা সরলতা নাই,
.                যা আছে কেবলই ফাঁকি রে!

.        তোর অগোরচর পাপ নাই, মন,
.        যুক্তি ক’রে তা ক’রেছি দু’জন ;
*
এই দেহটা তো নই রে আমি
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা

ন্যায়ের ভবন

এই দেহটা তো নই রে আমি,
.        নইলে ‘আমার দেহ’ বলি কেমনে!
তবে দেহ ছাড়া কিছু তো আছে,
.        ও-যা যায় না পুড়ে, দেহ-নিধনে।

আমার আমিত্বটুকু, এই দেহের সনে ভাই,
*
সে ব’সল কি না ব’সল তোমার শিয়রে
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
হাসপাতালের শয্যায় লেখা।

বেলাশেষে

সে ব’সল কি না ব’সল তোমার শিয়রে,---
তুমি মাঝে মাঝে মাথা তুলে,
.        সেই খবরটা নিয়ে রে।
.                (ও সে বসল কি না)

সে তো তোমার সাথেই ছিল,
*
ও মন, এ দিন আগে কেমন যেত?
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
হাসপাতালের শয্যায় লেখা।

অবোধ

ও মন, এ দিন আগে কেমন যেত?
.        এখন কেমন যায় রে?

গদির উপর গভীর নিদ্রা,
.        টানা-পাখার হাওয়া রে!
আর ভোরে উঠেই নূতন টাকা,
.        আর তোরে কে পায় রে!

আমার সাধের ছেলে-মেয়ে
*
যেখানে সে দয়াল আমার
কবি রজনীকান্ত সেন
শেষ দান (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের গান ও কবিতা
৩০শে জৈষ্ঠ ১৩১৭, হাসপাতালের শয্যায় লেখা।

দয়াল আমার
॥ মিশ্র ঝিঁঝিট, জলদ একতালা॥

যেখানে সে দয়াল আমার
.        ব’সে আছে সিংহাসনে,
সেখানে ত হয় না যাওয়া
.        পাপ-কণিকা নিয়ে মনে।

আছে ভাল-মন্দ ছেলে,
কারুকে সে দেয় না ফেলে ;
শুধু প্রেমের আগুন জ্বেলে,
.        স্থান দেয় অভয়-শ্রীচরণে।

সেই আনন্দ-মন্দির-মাঝে,
আনন্দ-সঙ্গীত বাজে,
নাহি ব্যথা, অশ্রু, বিষাদ
.        (সে) সদানন্দ নিকেতনে।

দেখ কেমন তার ভালবাসা,
.        মিটায় আনন্দ-পিপাসা,
আগে, না পোড়ালে খাদ র’য়ে যায়,---
.        সে আনন্দ পাবে কেমনে?