কবি রমণীমোহন ঘোষের কবিতা |
মানসী কবি রমণীমোহন ঘোষ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে (১৮৯৯খৃষ্টাব্দ) প্রকাশিত কবির “মুকুর” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। বানান যথা দৃষ্টং তথা লিখিতং! মিলনসাগরে প্রকাশ - ৮.৮.২০২০। আর কত বল ভূলাবে আমারে মানসকুঞ্জবাসিনি ! নবীন শোভায় নিত্য বিকশি' চিত্তগগনে পূর্ণিমা-শশী, একিগো রঙ্গে খেলা কর বসি' সুন্দর-শুভহাসিনি ! নব নব সাধ জাগাও পরাণে নীরব মঞ্জুভাষিণি ! হেরি রূপ তব নিত্য নূতন অয়ি নির্ম্মলবরণে। মনে নাই কবে কোন্ সুলগনে কোথা আমাদের দেখা দুই জনে ; কি মূরতি ধরি' অয়ি বরাননে নূপুর-মুখর চরণে পাশেছিলে আসি' হৃদয়ে আমার আজ নাই তাহা স্মরণে। সংসার নিতি আসে মোর পাশে হাতে লয়ে মায়া-শিকলি, প্রকৃতি আমায় করে আবাহন দেখায়ে তাহার শোভা অগণন ; পারে না বাঁধিতে কেহ মোর মন--- তুচ্ছ নেহারি সকলি। উজ্জ্বল তব রূপ অতুলন জেগে থাকে হৃদে কেবলি। তাই হেথা বসি' বিজন বিপিনে বনমর্ম্মরপবনে, মানসে শ্রীমুথ করি' দরশন, শুনি' শুধু তব অমিয় বচন, ভুলে' আছি আমি জীবন মরণ কঠিন মলিন ভুবনে। দ্রিবব রজনী রেখেছ ভুলায়ে স্বর্গের নব স্বপনে। কত নব নব ছলনার পাশে রেখেছ হৃদয় বাঁধিয়া ! কভু মুখ ঢাক' টানি' আবরণ, কখনো মুক্ত অবগুণ্ঠন, কভু হাসি, কভু আন অকারণ--- কখনো বা উঠ কাঁদিয়া ! কখন মৌন, কখনো সোহাগে সান্ত্বনা কর সাধিয়া। কাছে থাকি' তবু থাকিবে কি দূর ;--- কখনও চির জীবনে, অয়ি মায়াবিনী অরুণ-অধরা, আকুল-অলকা, নীল-অন্বরা, বাহুবন্ধনে দিবে না কি ধরা মর্ত্ত্য বাসর-শয়নে ! বাহিরিয়া আসি' অন্তর হ'তে থাকিবে নয়নে নয়নে ! এই কবিতাটিই ২০১০ সালে পরিবর্ধিত ও পুনর্মুদ্রিত, অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় সংকলিত ও সম্পাদিত “বাংলা গীতিকবিতা : উনিশ শতক” কবিতার সঙ্কলন থেকে নেওয়া। ১৩০৬ বঙ্গাব্দে (১৮৯৯ খৃষ্টাব্দ) প্রকাশিত কবির “মুকুর” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। মিলনসাগরে প্রকাশ - ৯.১.২০১৬। আর কত বল ভুলাবে আমারে, . মানসকুঞ্জবাসিনী ! নবীন শোভায় নিত্য বিকশি’ চিত্তগগনে পূর্ণিমা-শশী, একি গো রঙ্গে খেলা কর বসি’ . সুন্দর শুভহাসিনি ! নব নব সাধ জাগাও পরাণে . নীরব মঞ্জুভাষিণি ! হেরি রূপ তব নিত্য নূতন, . অয়ি নির্মলবরণে ! মনে নাই কবে কোন্ সুলগনে কোথা আমাদের দেখা দুইজনে ; কি মুরতি ধরি’ অয়ি বরাননে . নূপুর-মুখর চরণে পশেছিলে আসি’ হৃদয়ে আমার . আজ নাই তাহা স্মরণে | সংসার নিতি আসে মোর পাশে . হাতে লয়ে মায়া-শিকলি, প্রকৃতি আমায় করে আবাহন দেখা’য়ে তাহার শোভা অগণন, পারে না বাঁধিতে কেহ মোর মন, . তুচ্ছ নেহারি সকলি |--- উজ্জ্বল তব রূপ অতুলন . জেগে থাকে হৃদে কেবলি ! তাই হেথা বসি’ বিজন বিপনে, . বনমর্মর পবনে, মানসে ও মুখ করি দরশন, শুনি’ শুধু তব অমিয় বচন, ভুলে আছি আমি জীবন-মরণ . কঠিন মলিন ভুবনে | দিবস রজনী রেখেছ ভুলায়ে স্বর্গের নব স্বপনে | কত নব নব ছলনার পাশে . রেখেছ হৃদয় বাঁধিয়া ! কভু মুখ ঢাক টানি’ আবরণ,---- কখনো মুক্ত অবগুন্ঠন, কভু হাসি,---- কভু মান অকারণ, . কখনো বা উঠ কাঁদিয়া ! কখনো মৌন, কখনো সোহাগে . সান্ত্বনা করে সাধিয়া | কাছে থাকি তবু থাকিবে কি দূর,---- . কখনো চির-জীবনে, অয়ি মায়াবিনি, অরুণ-অধরা, আকুল-অলকা, নীল-অম্বরা, বাহুবন্ধনে দিবে নাকি ধরা . মর্ত্য বাসর-শয়নে !--- বাহিরিয়া আসি’ অন্তর হ’তে . থাকিবে নয়নে নয়নে ! . *************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
বিকাশ কবি রমণীমোহন ঘোষ ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে (১৯৩১ খৃষ্টাব্দ) প্রকাশিত, রাধারাণী দেবী ও নরেন্দ্র দেব সম্পাদিত “কাব্য-দীপালি” সংকলনের ২য় সংস্করণ থেকে নেওয়া। ১৩০৬ বঙ্গাব্দে (১৮৯৯খৃষ্টাব্দ) প্রকাশিত কবির “মুকুর” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। মিলনসাগরে প্রকাশ - ৯.১.২০১৬। ওহে সুন্দর মম অন্তরে একি উচ্ছ্বাস নব, একি আকুল পুলক হিল্লোল প্রিয় নব সঙ্গীত রব ! আজি মধুময় ধরা শোভা সৌরভে ভরা নিভৃত আমার কুঞ্জ কুটীরে আজি কি মহোত্সব ! বিকশিত আজি নব গৌরবে হৃদয় কমল মম, তাই উচ্ছ্বসি যেন উঠিছে প্রাণের লাবণ্য নিরুপম | নবীন ভাবনা কত ফুটে উঠে অবিরত চেয়ে আছে তব প্রেমালোক তরে সূর্য্যমুখীর সম | কতদিন হায় জেগেছো রজনী কতনা বিষাদভরে, তবু পারনি বুঝিতে মোরে কতশত ব্যগ্র প্রশ্ন করে’ | কত নব ভালবাসা আবেগ পূর্ণ ভাষা লজ্জা কাতরা বালিকার কাছে বিফলে গিয়াছে মরে | আজি ফেলে দিব তুচ্ছ জীর্ণ হীন লাজ আচরণ, তুমি এস, হৃদয়েশ, হৃদি মন্দিরে হৃদি-মন্থন ধন ! গোপন মরম মম দেখ অন্তরতম ! দেখ, কোন্ পদে সঁপিয়াছি আমি তরুণ জীবন মন ! মৌন মূঢ় সে বালিকা চিত্তে দেখ, কি মত্ত আশা ! আজি মিটাতে চাহে সে প্রেমতৃষা তব ঢালি চির ভালবাসা ! চাহেসে পরাণ খুলে কহিতে শ্রবণ মূলে যুগে যুগে যত প্রণয়িণীগণ করিয়াছে প্রেমভাষা ! ওহে বাঞ্ছিত ! দেখ্ আজি মোর একি ব্যাকুলতা নব ! চাহে ক্ষুদ্র হৃদয় পুরাইতে তব আশা আকাঙ্খা সব ! রেখেছি বক্ষ ভ’রে সান্ত্বনা তব তরে, ওগো অতৃপ্ত আছে এ হৃদয়ে সর্ব্ব তৃপ্তি তব | . *************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
সুখ-দুখ বিজড়িত এই নর জনমের মৃত্যুই কি মহাপরিণাম ? যত আশা ভালবাসা অতৃপ্ত বাসনারাশি তারি কোলে লভিবে বিরাম! অনন্ত সাগরতীরে বালুকার খেলাঘর যদি এই মানবজীবন, তবে কেন তার তরে এ বিশাল বসুন্ধরা |
বর্ষা-আবাহন কবি রমণীমোহন ঘোষ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত “ভারতী” পত্রিকার আষাঢ় ১৩১০ ( জুলাই ১৯০৪ ) সংখ্যা থেকে নেওয়া। মিলনসাগরে প্রকাশ - ৯.১.২০১৬। এস এস নব বরষা, তাপিত-ভুবন-ভরসা। সেগো সজলা স্নিগ্ধ শ্যামলা নবযৌবনা সরসা। আন মেঘভার গগণে গুরুগর্জনে সঘনে আকাশের দ্বার খুলিয়া আবার এস নামি’শুভলগনে। এসগো রঙ্গে শোভনে, উতলা আর্দ্র পবনে আন হিল্লোল কলকল্লোল অলস তটিনী জীবনে। আন নব সাধ বাসনা জাগাও নূতন বেদনা। আন দূরস্মৃতি মল্লার গীতি দিবস বিবস চেতনা। . *************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |