আষাঢ় কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত ১লা আষাঢ় ১৩৩৮ (১৯৩১ সাল) তারিখে আকাশবাণী কলকাতা থেকে (রেডিওতে) এই কবিতাটির পাঠ প্রচারিত করা হয়। আকাশবাণী কলকাতা, বেতার তরঙ্গে প্রচার শুরু করে ২৬শে অগাস্ট ১৯২৭ তারিখ থেকে। কবিতাটি আমরা পেয়েছি সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার আষাঢ় ১৩৩৮ (জুন ১৯৩১) সংখ্যা থেকে।
দগ্ধ ধরণী করিয়া শীতল তপ্ত ধূলার ’পরে সজল মেঘের কাজল নয়নে তরুণ করুণা করে! ঝরে আঁখিজল লক্ষ আঁখির যক্ষের দুখে কাঁদে রামগির্ কাঁদে নীল নদে নীরদ অধীর, অলকার লিপি করে!
এসেছে আষাঢ়, এসেছে আবার, গুর-গুরু রব তুলে, জোলো হাওয়া এনে দিয়েছে আষাঢ় পূবের জানালা খুলে! দেহ শিহরয় শীত সমীরণে কে ফিরে ঘুরিয়া বেণু বনে বনে কে সেই উদাসী বাজাইছে বাঁশী আঁধারে আপনা ভুলে!
বিরহী বালিকা বাদলের সাঁঝে গেঁথেছে যূথীর মালা, শয়ন-শিয়রে নিভানো প্রদীপ, নয়ন-তারাটি জ্বালা! তারি ব্যথারাশি ঐ বুঝি ভাসে বাদলের হু হু বাতাসের শ্বাসে তাহারি প্রাণের আকুতি বুঝি বা বরষা-ধারায় ঢালা!
নীরব নিশীথে মন্থিয়া ওঠে নিখিল বুকের ব্যথা তমালের বুকে লুকাইয়া মুখ কাঁদিছে মাধুরী-লতা! দূরে দূরে যারা রয়েছে একেলা কি করিয়া কাটে তাহাদের বেলা কাছে কাছে যারা রয়েছে তাদের কি করিয়া ফুটে কথা!
আজিকে আষাঢ়, সজল আষাঢ়, মেঘদূত চলে যায় কে তোরা পাঠাবি প্রেয়সীরে লিপি, ছুটে আয়, ছুটে আয়! ঝরিতেছে বারি ঝর-ঝর ধারে বিজলী চমকে মেঘের ওপারে! হেন দুর্দ্দিনে সে রবে কেমনে যদি লিপি নাহি পায়! (ওরে) এসে আষাঢ়, সজল আষাঢ়, মেঘদূত চ’লে যায়!
. ****************** . সূচিতে . . .
মিলনসাগর
|
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্তর কবিতা
|
অপরিণীতা বধূ কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৩৮ (জুলাই ১৯৩১) সংখ্যা থেকে।
আয়ত তরল নয়নে তোমার শত কাব্যের মাধুরী ফোটে, মন্থর তব গতি-ভঙ্গীতে কত সঙ্গীত ছন্দি’ ওঠে! এ হিয়া ভরিয়া মধু করঙ্গে করিছে অমিয়া সকল অঙ্গে! মানস-ভৃঙ্গ তোমার ও দুটি রাঙা শ্রীচরণ-পদ্মে লোটে।
কত শত কথা সুখ দুখ ব্যথা বুকের গুহায় গুমরি মরে। ভালবাসা-মাখা কত আশা সদা মোহন রঙীন মূরতি ধরে!
|
ধরার মেয়ে
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার আষাঢ় ১৩৩৯ (জুন ১৯৩২)
সংখ্যা থেকে।
তুমি অতুলন, তুমি অনুপম, রূপসী তোমারে বরণ করি!
তুমি র’য়ো মোর হৃদি আলোকিয়া সারাটি জীবন-মরণ ভরি’!
. নয়ন তোমার কত মধুময়
. অমিয়া নিঝর মম মনে লয়,
অলকার মত রূপসী বালার মাধুরী আনিলে হরণ করি’!
আমি কি ছিলাম পিয়াসী যক্ষ? কেমনে সে কথা স্মরণ করি!
সুন্দরী বালা, আজিকে নিরালা কি ভাবিছ ব’সে অন্যমনে?
বুঝি গো বিগত জনমের কথা অথবা কি কোন ধন্য-জনে?
. চাহনি তোমার ত্রিভূবন হ’তে
. ভেসে গেছে কোন ভাবনার স্রোতে---
কেহ বুঝি মিনতি করেছে তোমার ও দুটি চরণ ধরি’?
তাই বুঝি তুমি আনমনা হ’লে ভিখারীর মুখ স্মরণ করি’?
ঘরে ফিরে যাও রাত হয়ে এল, সোপান-শিলায় থেকো না আর,
মনে যদি কেহ দিয়ে থাকে ব্যথা, কোন কথা মনে রেখো না তার।
. রাঙা পদতলে অথৈ শীতল
. কালো জলরাশি করে টলমল,
এখনো তোমার নয়নের জলে ভেজে নি বুকের নীলাম্বরী,
জল-ছলছল সরসী তোমারে সাধিতেছে কেন চরণে পড়ি’?
বিম্বিত তব বিম্ব-অধর ; সরোবর জলে ভাসিছ তুমি!
ছায়া পেয়ে বুঝি নহে সে তুষ্ট, কায়াটিরে চায় লইতে চুমি।
. আকাশের চাঁদ হয়ে আনমনা
. ছড়ায়ে ফেলেছে কত না জ্যোছনা!
ওপারে তাহার হ’ল নাক যাওয়া, মাঝ-পথে এসে বাঁধিল তরী!
তবি অনুপম তনু শোভা রম হেরিছে সে দুটি নয়ন ভরি’!
জ্যোছনার ডালি নিয়ে চলেছিল গগনের পারে প্রিয়ার কাছে---
হায় সুধাকর জানিত কি এই ধরায়ও সুধার আকর আছে?
. হেরিয়া তোমারে সোপান-শিলায়
. তাহার প্রিয়ার স্বপন মিলায়!
গগন পারের তীর্থ তাহার গগনেরি পারে বহিল পড়ি’
তোমারে দেখিয়া ভুলে গেল সব, মাঝ-পথে এসে বাঁধিল তরী।
ওঠো সুন্দরী, রাত বেড়ে যায়, কাননে পাখীরা কূজে না আর,
আনমনা হেরি অভিমান করি শুকালো গলার বকুল হার ;
. তব পথ চেয়ে যারা ধরণীতে
. ঝেগে আছে এই গভীর নিশীথে
তাদের কুটীরে এস ধীরে ধীরে, লইতে এসেছি সঙ্গে করি’
এ মাটীর পানে মুখ তুলে চাও, স্বর্গ রহুক স্বর্গে পড়ি’!
. ******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
তোমারে ফুটায়ে তুলেছি কুসুম! কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৩৩৯ (নভেম্বর ১৯৩২) সংখ্যা থেকে।
তোমারে ফুটায়ে তুলেছি কুসুম, এ মোর অহঙ্কার! বুকে ঢেলে মধু পরায়েছি বধূ ফুলের অলঙ্কার!
সঙ্কোচভরা, কুঞ্চিত দল, কোথা সৌরভ, কোথা পরিমল! ক্রীড়নক হয়ে ছিলে ত কেবল আশা ও আশঙ্কার! সেই সন্দেহ করেছি মোচন--- এ মোর অহঙ্কার!
আজি যেন তুমি জানিতে পেরেছ মলয়া কোথায় বয়, চন্দন-বন- গন্ধ এসেছে সারা মালঞ্চময়!
ঊষার সোনালী আলোক লাগিয়া পাপড়ী তোমার উঠেছে রাঙিয়া, কালিকার লীলা ফুরালো বালিকা, জীবনের হোলো জয়,--- এ যে গো আমার তৃপ্তি পরম শুধু আনন্দ নয়!
. ****************** . সূচিতে . . .
মিলনসাগর
|
সে কোথায়! কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার মাঘ ১৩৩৯ (জানুয়ারী ১৯৩৩) সংখ্যা থেকে।
কুসুম ঝরিয়া পড়ে তারকা খসিয়া ঝরে জ্যোত্স্নার হাসিটি মিলায়! সে কোথায়, সে কোথায়!
আঁখি করে ছলছল আশা করে টলমল ঝঞ্ঝায় দীপ নিভে যায়! সে কোথায়, সে কোথায়!
জীবন বহিয়া চলে সুখে ও নয়ন-জলে দিগন্তে আঁধার ঘনায় সে কোথায়, সে কোথায়!
|
জীবনের গতি
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার ফাল্গুন ১৩৩৯ (ফেব্রুয়ারী
১৯৩৩) সংখ্যা থেকে।
কেমনে জীবন কাটিয়া যাবে
. কেমন করিয়া বলি?
স্রোতো-মুখে ভেসে এসেছি আজি
. দূরে---বহু দূরে চলি’!
কোথা প’ড়ে র’ল কূলের দিশা,
. কোথা আত্মীয়-জন---
কোথা যাবো ব’লে করিনু আশা,
. কোথায় রহিল পণ!
ঘূর্ণীর জলে ঘুরায়ে তরী
. কোন্ পথে এল নিয়া---
এ কোন বিধাতা আড়ালে রহি’
. চলেছে বিড়ম্বিয়া!
বিদেশী নায়ে
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৪২ (জুলাই ১৯৩৫)
সংখ্যা থেকে।
বাদল বাতাসে উড়ে এসে ফুল পড়িল আদুল গায়ে,---
সোনার প্রতিমা সমুখে ভাসিছে ময়ূর-পঙ্খী নায়ে!
হাল্লা করিয়া মাঝি-মাল্লারা সরিয়া যাইতে বলে---
ধীর জলে তীর ঘেঁসিয়া তকণী ঝির্ ঝির্ বেয়ে চলে!
ঢেউয়েরা চরণে চরণ মিলায়ে ছন্দ রচিতে চায়---
রূপসীরে বুকে রাখিয়া তরণী কবিতা লিখিয়া যায়!
চপলা খেলিছে চপল দুচোখে,---অধরে বসোরা গুল্!
কুন্তলে নাম-না-জানা-কুসুম,
পরিত্রাণ
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৫ (অক্টোবর
১৯৩৮) সংখ্যা থেকে।
আর কি কখনো হবে দেখা?---
দস্যুর হাতে লুণ্ঠিত হয়ে মরুমাঝে এলে একা-একা!
ছিল না কো সেথা ছায়া তরু, জল লেশ-হীন ধূ ধূ মরু
ভেবেছিলে ভীতা কপোতী গো! হায়, ভালে কি বা আছে লেখা!
নীড়-ছাড়া পাখী উড়ে ঝড়ে---
তাতার দস্যু তস্কর-হাতে আকাশ হইতে পড়ে!
সে সুখে সোনার খাঁচা কেনে, নব-অঙ্কুর রাখে এনে,
তুমি নীড়-হারা পাখীটি গো! মন প’ড়ে রয় নিজ ঘরে!
তোমার শুখায় ভয়ে প্রাণ---
শীষ দিয়ে দিয়ে সে যবে তোমায় শিখাইতে চাহে কোনো গান,
তুমি ইতি-উতি চাহ আর ভগবানে স্মর অনিবার---
দস্যুর মন ভিজে যায়, দয়া করে তোমা ভগবান্!
তোমায় অভয় দেয় সে যে---
সমবেদনার করুণতা তার হৃদয়ের কোণে ওঠে বেজে।
বলে “ভীরু পাখী নাহি ভয়, হউক পূরবে রবি উদয়
ছেড়ে দিব আমি নিজ হাতে, চিরতরে যেয়ো মোরে ত্যেজে।”
প্রভাতে তপন রাঙা রাগে---
পূর্ব্ব-গগন উজলিয়া ওঠে, দস্যু তখনো নিশা জাগে!
ধীরে সযতনে কাছে এসে, খাঁচার দুয়ার খোলে হেসে,
পাখী উড়ে যায়,---আঁখিজলে, তখন আঁখির বাঁধ ভাঙ্গে!
. ******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
পুরীতে
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার মাঘ ১৩৪৫ (জানুয়ারী ১৯৩৯)
সংখ্যা থেকে।
অসীম পারাবার আজিও হাহা-স্বরে
বুকের নিধিটিরে হতাশে খুঁজে মরে
তাই কি অনিবার ঢেউয়ের পরে ঢেউ
আছাড়ি’ বেলাভূমে নিয়ত ভেঙ্গে পড়ে
নিয়ত ঝুরে আঁখি হৃদয় কাঁদে হায়
তাহারি স্মৃতি বহি’ বাতাস ব’য়ে যায়
উদার নীল নভে উদাস নীলজলে
গোপনে তা’রি কথা পরাণে মূরছায়!
জড়ায়ে সব ঠাঁই তাহারি স্মৃতি ভাসে
তাহারি কথা শুধু কেবলি মনে আসে
ফুল ও ছেলে
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার পৌষ ১৩৪৭ (ডিসেম্বর ১৯৪০)
সংখ্যা থেকে।
আমার বাড়ীর গাঁদাটাও ভালো, তোমার গোলাপ থাক্---
ওহে ধ্বনী, তব দীনতা আমায় করিয়াছে নির্ব্বাক্!
অফিসে তোমার সাহেব তুসিতে বাগান উজাড় কর!
মোর ছোট মেয়ে সে-দিন সকালে শিউলি করেছে জড়---
বন্ধ্যা তোমার গৃহিণী তাহারে ডাকিয়া বলেন, খুকী,