পুতুল ও প্রতিমা
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার মাঘ ১৩৪৭ (জানুয়ারী ১৯৪১)
সংখ্যা থেকে।

সে ত গো মানবী নয়, নামটুকু তার
অরুণ আলোর মত ঘুচায় আঁধার!
ধরা নাহি যায়, যেন মলয়া পবন
চন্দন-বন-বাসে ভুলায় ভূবন!
জ্যাত্স্না ধরায় সে যে, ধরা নাহি যায়
আঁধারের বুক ভরে আলোর মায়ায়!

ননীর পুতুল সে যে---অবনী তারে
কোন্ তপোবলে লভে নবনীতারে!
ছবির মতন মুখ শেফালী-সম
মৃদুল সুবাস মাখা বালিকা মম!
আমারে ছুঁইয়া চলে ছায়ার মত
প্রতি প্রাতে প্রতি রাতে হেরি সতত!

.                ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্তর কবিতা
*
টিলার দেশের লীলাবতী ১
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
বঙ্কিমচন্দ্র সেন সম্পাদিত দেশ পত্রিকার ৫ই মাঘ ১৩৪৭ (জানুয়ারী ১৯৪১) সংখ্যা থেকে।

টিলার দেশের লীলাবতীর
.                                        কনকচাঁপার রঙ---
শিলার কোলে জল-উছলা
.                                         নির্ঝরিণীর ঢঙ্!
চায় না রতে রুদ্ধ স্রোতে
.                                        বদ্ধ গুহায় বাঁধা
নীল আকাশের নীল সায়রের
.                                        স্বপ্ন দেখে কাঁদা---
*

.                ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
টিলার দেশের লীলাবতী ২
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার চৈত্র ১৩৪৭ (মার্চ ১৯৪১)
সংখ্যা থেকে।

টিলার দেশের লীলাবতীর দীঘল কালো কেশ---
চাঁদের মতন মুখে কেবল নেইক হাসির লেশ!
আল্ তা-দুধের সঙ্গে সুধার তরঙ্গিণী ছোটে
সেই অপরূপ রূপের স্রোতে পদ্মকলি ফোটে!
উছলে পড়ে তনুর তটে কোন্ অতনুর দিঠি
চপল আঁখির আখর লেখে মিষ্টি ভাষার চিঠি!
ভঙ্গীটি এর রঙ্গময়ী, কুরঙ্গী এর পায়ে---
অশোক ফোটে এমনি মেয়ের চটুল চরণ ঘায়ে!
এমনি মেয়ে স্বর্গলোকে হয় পারিজাত ফুল!
টিলার দেশের লীলাবতী---দীঘল কালো চুল!

.                ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মাধুরী-বোধন
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার বৈশাখ ১৩৩৮ (এপ্রিল ১৯৩১)
সংখ্যা থেকে।

আমার জীবনে শান্তি এসেছে, এসেছে আনন্দ!
কুঞ্জ-কুটীরে বহুদিন পরে হেসেছে বসন্ত!
.        আজি নীলাকাশে তারায় তারায়
.        কি জ্যোতি চমকে আঁখি-ইসারায়,
কি নবীন সুখে কুসুমের বুকে জাগিছে সুগন্ধ!

ঊষর জীবনে নেমেছে আষাঢ়, ধূসর প্রান্তরে,
শ্যামল মাধুরী ভরেছে বাহির, ভরেছে অন্তরে!
.        মিটে গেছে যত তৃষ্ণার জ্বালা
.        আজি এ জীবনে সুধারস ঢালা,
স্বপন-পূরীর খুলে গেছে দ্বার গোপন মন্তরে!

.                ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সুষমা
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সুকুমার সেন সম্পাদিত বাংলা কবিতা সমুচ্চয় প্রথম খণ্ড, ১৯৯১, থেকে নেওয়া।

কত,        সুন্দর তব অঙ্গটি দেলে
.                        যত্ন ভরে।
মম,        অন্তর মন মধু তরঙ্গে তাহার গোপন
.                        সঙ্গ করে!

সুষমা যেথায় করে খেলা
আমার সে তট পরে মেলা।
বাসনার রূপে মাধুরী আমার
.        সেথা মধুময়
.        অঙ্গ ধরে!

প্রাতে,        অরুণ কিরণ ছুঁয়ে যায় এসে, রাঙিয়া হিরণ
.                        কপোল তল!
রাতে,        কালো চোখ নাচে চটুল লীলায়, সুষমা বিলায়
.                        চপল ছল।

হাসি মধু ভরা গাল দুটি
ফুলেলা আননে লাল বুটি!
ফুল্ল বসোরা-গোলাপের রাঙা
.        রূপের গরব
.        ভঙ্গ করে।

.              ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তোমার কবিতা
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৭ (অক্টোবর
১৯৪১) সংখ্যা থেকে।

তোমার কবিতা লিখিতে আমার ছন্দ খুঁজে না পাই!
এলোমেলো ভাষা জুটে যায় খাসা, কি ক’রে আরো গুছাই!
পুঁথি পড়া যত বিদ্যা সতত পদ্যে আসিয়া পড়ে
তোমার কবিতা লিখিতে বসিলে তাহারা পলায় ডরে!
অলঙ্কারের অহঙ্কারের বুক চিকে ঢিব্ ঢিব্
অনুপ্রাসের মহাত্রাসেই তালুতে শুকায় জিব!
পণ্ডিতী কথা গণ্ডী ডিঙ্গায়ে সটান্ সরিয়া পড়ে
সাদা-মাটা ভাষা সেথা বাঁধে বাসা, ভাবের রসেতে ভরে!
বুকের ভিতর কি যে ক’রে ওঠে বুকই সে কথা জানে
কলমের আগে গাঢ় অনুরাগে প্রাণের ভাষাটি টানে।
তোমার প্রণয় বাহিরের নয় বাহিরিতে নাহি চায়
পোষাকী ছন্দ প্রেম-নিবন্ধ তার না নাগাল পায়!
*

.                              ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
ল’ড়েই লহ ইন্দ্রপ্রস্থ
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৫৪ (অগাস্ট
১৯৪৭) সংখ্যা থেকে।

স্বর্ণ লঙ্কা বানিয়ে রাবণ চালিয়েছিল বেশ
যতদিন না হরণ করে ধরলো সীতার কেশ
অতিদর্পে হত লঙ্কা সাক্ষ্য রামায়ণ---
*

.                              ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
বড়দিন
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার পৌষ ১৩৫৩ (ডিসেম্বর ১৯৪৬)
সংখ্যা থেকে।

করিলাম বড়দিন---
হেরি দু’টি অনাহারক্ষীণ,
মুখে শুষ্ক মাতৃস্তন,
দিঠি সকরুণ, শিশু---নারায়ণ!
.        মিলিটারী ক্যাপ্টেন চলিয়াছে কবি
.        প্রবাস---বিদগ্ধ মনে আঁকি স্নিগ্ধ ছবি
.        নিজ কুটীরের---
.        নিজ শিশুদের
তরে ক্রীত ফল, মিষ্টান্ন কত না ;
হিন্দুগৃহে “বড়দিন” করিতে রচনা।
( পথে বা প্রবাসে নয় )
কিন্তু এ কি হয়
ভিখারী বালক, বালা ; অস্থি চর্ম্ম সার
ভীড় করে পথ মাঝে করে হাহাকার
ক্ষুধা শীতাতুর!
তাহাদের কিছুমাত্র কষ্ট হবে দূর
এই ভেবে বসে কবি পেটকাটি খুলে
কমলা লেবুর সাথে ‘নলেন’ পাটালী দিল হাতে-হাতে তুলে!
উল্লাসের খুলে গেল দ্বার!
হাস্যরোলে হারাইল আর্ত্ত হাহাকার---
হাল্কা হল ঝুড়ি
‘সের’ হ’ল পোয়াটেক্ ‘শত’ হ’ল কুড়ি।
আপনার ছোট করে ‘ছোট দিন’ হবে
রাজপথে বড়দিন স্মরণীয় র’বে।

.                    ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ভিখারী
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার আষাঢ় ১৩৫২ (জুলাই ১৯৪৫)
সংখ্যা থেকে।

বিকার-বিহীন ভোলানাথ সম
.                        ভিখারী চলিয়া যায়!
মোর দ্বার হ’তে গিয়া থামে মোর
.                        “পড়শীর” দরজায়।
মোর ছোট মেয়ে দু’মুঠো “আঁক্ড়ী”
.                        চাল দিতে গিয়ে বলে :---
বাবা, কি ফাইন আতপ রয়েছে
.                        ওর থলিটার তলে!
মনে মনে ভাবি, ধনী বণিকের
.                        দ্বার হ’তে ও যে এসে
আমার মতন দিন-মজুরের
.                        দুয়ারে দাঁড়ালো শেষে---
ওর তাহে কোনো নাহি ভ্রূক্ষেপ
.                        কেবা কোন চাল দিল---
মুষ্টি মুষ্টি তন্ডুলে ওর
.                        ঝুলিটি ভরিয়া নিল!
এক দ্বার হ’তে আর দ্বারে যায়,
.                        লাঠি ভর দিয়ে হাঁটে---
জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছে,
.                        আসেনি শেষের বাটে!
উদাস বিভোল “বোম্-ভোলানাথে”
.                        উহার মাঝারে দেখি ;
ধূলার ধূসর নন্দ-কিশোর-ও
.                        সাথে ফিরিতেছে এ কি!
*        *        *        *        *        *        *
কবে আমরাও হ’ব অবিকার ওই ভিখারীর মত,
হাসিমুখে ল’ব ঝুলিতে ভরিয়া ভালো ও মন্দ যত!
দ্বন্দ্ব র’বে না মন্দ-ভালোর, অন্ধকারে ও আলোয়,
“কন্টোল্-সপ”-এ বণ্টন করে যখন যেমনই চাল,
সিদ্ধ হউক, বজ্র হউক, বুট্ কি ড়াহের ডাল,
হোক্ না কালোর মুখোস লাগানো পথের বিজলী বাতি
জ্যো’স্না---নিশীথে “সাইরেন” শুনে অথবা কাঁপুক ছাতি,
আমাদের কবে রিবা---আসে---যাবে ওই ভিখারীর মত
প্রভু ভগবান্ কর বরদান সেইটুকু অন্ততঃ!

.                    ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবির দৃষ্টি
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার বৈশাখ ১৩৫১ (এপ্রিল ১৯৪৪) সংখ্যা
থেকে।

কবির আঁখির দৃষ্টি কেমনে
.                            গভীর মমতা হানে!
সুদূরে নিকট করিয়া পাষাণে
.                           মাধুরী ভরিয়া আনে!
সন্মোহনের মোহনীয়া যাদু
.                                এই নয়নের তলে
স্নেহপ্রেম মাখা পল্লব ছায়
.                                স্নিগ্ধ হইয়া জ্বলে!
*

.                    ******************               
.                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর