শ্রাবণে
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৫০ (অগাস্ট
১৯৪৩) সংখ্যা থেকে।
গগনে কালো মেয়ে কাঁদিছে অবিরল---
বারণ-হারা বারি তা’রি ত আঁখিজল!
. তা’রি ত ভিজা চুলে
. চামেলী চাঁপা দুলে!
কাজল---কালো মেঘে বিজলী ঝলমল্!
গগনে কালো মেয়ে কি দুখে কাঁদে বল্?
শ্রাবণ বরিষায় পবন হু-হু করে
ধরণী জুড়ে তারি বেদন ঝুরে মরে
. চামেলী চম্পাতে
. কী অনু-কম্পাতে
সে কালো মেয়েটিরে বিতরে পরিমল!
কাতর তবু বালা, কাঁদে যে অবিরল!
. ******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্তর কবিতা
|
তোমার কবিতা ২
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৮ (মে ১৯৪১) সংখ্যা
থেকে।
মনের আগে মিশায়ে সদাই
. তোমার কবিতা লিখি---
ময়ূর মাতন জুড়ে সারাখণ
. নাচে যে ভবন-শিখি!
তোমার কবিতা নহে ত কেবল
. ছন্দে সাজানো কথা---
চরণে চরণে তব শ্রীচরণে
. নিবেদন ব্যাকুলতা!
দুরু দুরু আশা, হাসা, ভালবাসা
. সকলি মিলায়ে দিয়া
তোমার পূজার পূত উপচার
. পরিণত হয় প্রিয়া!
রূপ-সমুদ্র
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার চৈত্র ১৩৪৭ (মার্চ ১৯৪১) সংখ্যা
থেকে।
সাগরের জলে জেগেছে জোয়ার, রেগে যত ডেউ উঠিছে ফুলে
বেগে ছুটে তারা ভেভ্গে লুটে সারা রাঙ্গা দুটি তব চরণমূলে।
তুমি দেখিতেছ ক্ষুব্ধ সাগর, আমি অনিমিখ মুগ্ধ আঁখি---
তব দেহতটে যে জোয়ার লোটে, সেই দিক পানে চাহিয়া থাকি।
* * * * * * * * *
ধ্বসে বালু-বেলা, ঢেউয়ের উপরে ঢেউ এসে পড়ে ক্রমান্বয়ে---
তব দেহ-বেলা-নিলয়ে তেমনি বাঁধ-ভাঙ্গা রূপে জোয়ার বহে!
ধ্বসে বসনের ভঙ্গুর বাধা, রূপ-তরঙ্গ উছলি’ ওঠে
আভরণ তারে আবরণ দিবে? সরমে ভূষণ চরণে লোটে!
কাঁকন কাঁদিছে বালুর শয়নে, মেখলা ফেলিছে আঁখির লোর---
লবণ সলিলে সিননি করিয়া মুকুতার মালা কাঁদে অঝোর!
কাঞ্চী, কেয়ূর, সিঁথির ময়ূর, মণি, মরকত, পদ্মরাগ---
কনক, প্রবাল, চুনী ও পান্না, গোমেদ হীরার মন্দভাগ!
ও বারিধি ঢুঁড়ে কুবেরের পুরে মিলে যে অতুল বসু-নিচয়
এই বসুধার ধন-ভাণ্ডার তার কাছে হায় কিছুই নয়!
* * * * * * * * *
রতুধা হতে রত্নেশ্বরী, কমলার মত সুলক্ষণা---
বারি-মন্থনে দ্বিতীয়া লক্ষ্মী, ঊর্ম্মি নেহারী অন্যমনা!
এখনো এঙ্গে নীলতরঙ্গ, বীচি-বিভঙ্গে লীলায়মান!
গগন-সুরভী চুম্বন-লোভী মুক্ত পবন প্রবাহমান!
এখনো তোমার জাগর-অরুণ জাগর আঁখিতে সাগর-লীন
বাড়ব-বহ্নী জ্বলিছে তন্বী, তরল বিজলী তন্দ্রাহীন!
পূর্ণিমা চাঁদ আননের ছাঁদ---চূর্ণ অলক চুমিছে সুখে!
শীকর-কণায় যেন সুধাকর লভে সমাদর বারিধি বুকে!
* * * * * * * * *
উদাস চাহনি ভেসেছে সুদূরে---নহে ত শুধু এ নীলের মায়া---
তুমি তিলে তিলে গড়িয়া উঠিলে ; ---তিলোত্তমাটি লভিলে কায়া!
যেখানে যেটুকু সুষমা ধরে তা দিল যে বিধাতা অধীর হাতে
শেষে বর-তনু সাজালো অতনু আপনি সে কোন্ চাঁদিনী রাতে!
মধুমুখী দেব-সখীরা তখন সুধার ভাণ্ড হরিয়া আনে
চন্দন বনে লুকায়ে গোপনে তুষিল তোমারে অমিয়া-স্নানে!
না হ’লে অমন কমনীয় তনু, রমণীয় রূপ কোথায় পেলে?
অমরাবতীর দেব-আরতির হেম-দীপশিখা মরতে এলে!
মর-অমরার মিলন-মেলার প্রসাদী পুষ্প এনেছ বহি’
ও রূপ-নিলয়ে পশিব কি লয়ে? অহরহ তাই বিরহ সহি!
. ******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
শ্যামলা জননী
মার্চ্চ্ গীতি
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার মাঘ ১৩৪৭ (জানুয়ারী ১৯৪১)
সংখ্যায় প্রকাশিত হয় জগৎ ঘটকের করা স্বরলিপি সহ।
নীল নির্ম্মল সিন্ধু মথনে সুধার ভাণ্ড সম
কবে উঠেছিলে সুজলা, লুফলা, শ্যামলা জননী মম?
পিতা হিমালয় স্নেহধারা ঢালি’ সিক্ত করিল হিয়া,
সিন্ধু জননী কল-কল্লোলে উঠিল উল্লসিয়া!
অরুণ আসিয়া উজল হাসিয়া ঘুচাস গভীরতম,
উঠিলে যে দিন সুজলা সুফলা শ্যামলা জননী মম!
শীতল পবন করিল বাজন নামিল শ্রাবণ ধারা
পথের কাব্য
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার বৈশাখ ১৩৪৭ (এপ্রিল
১৯৪০) সংখ্যা থেকে।
কন্-কনে শীত, ব্যারোমিটারের কাঁটায় ‘ছেচল্লিস্’---
. ষোলো বছরের মধ্যে এমন হয়নি আর!
চেষ্টার-ফিল্ড্ পুল্-ওভারের সঙ্গে খায় না মিশ্
. তবুও গলাতে হয়েছে জড়াতে কম্ফার্টার!
এরোড্রোম্ হ’তে আমদানী-করা পোষাকে ঢাকিয়া তনু
. তথাপি বজায় হতেছে প্রভাতী টহল্ মোর
পথে ও বিপথে জল দিয়ে গেছে আক্কেল-হীন হনু
চক্রতীর্থের পথে
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার চৈত্র ১৩৪৫ (মার্চ ১৯৩৯) সংখ্যা
থেকে।
সাগরের এই হা-হা রব হ’তে দূর দূরান্তে চলেছি একা
ক্ষুব্ধ জলধি আজিও অবধি দয়িতের কি গো পায় নি দেখা?
সর্ব্বহারা সে আমারি মতন বুকের রতন হারায়ে ফেলে
বালু-বেলা পরে বৃথা খুঁজে মরে ব্যগ্র বাহুর লহরী মেলে?
রাতে ও প্রাতে
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার ফাল্গুন ১৩৪৩ (মার্চ ১৯৩৭) সংখ্যা
থেকে।
আকাশের চাঁদ কাঁদিছে আকাশে, নীচে কুমুদিনী হাসিছে সুখে
সরসীর জল করে টলমল দু’জনার ছবি ধরিয়া বুকে!
মৃদু মলয়া জলে দোলা দিয়া ঢেউ তোলে আর নাচায় ছবি
ফুটলো মউল দূর বনে, আর বাতাস বাউল গন্ধে তা’রি কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার বৈশাখ ১৩৪১ (এপ্রিল ১৯৩৪) সংখ্যা থেকে।
ফুটলো মউল ; বনের হাওয়া বাউল হ’ল গন্ধে তা’রি! সহর কোঠার কোটর-কোণে বিরস মনে রইতে নারি! আকাশ-মুখী আঁখির তারা হায়, এসহায়, পাখীর পারা! বাহির পানে সদাই টানে ; কে-ই বা তারে দেয় গো ছাড়া’! ফুটলো মউল দূর বনে, আর বাতাস বাউল গন্ধে তা’রি! এই ফাগুনের পূর্ণিমা চাঁদ আজ ফাগুয়ায় জ্যো’স্না ঢেলে ; পাতার ফাঁকে তরুর শাঁখে আলোর হোলী যাচ্ছে খেলে! খেলছে হাওয়া বনের বুকে গায় কোয়েলা মনের সুখে, পাহাড় বেয়ে ঝর্ণা মেয়ে নামছে জরীর আঁচল মেলে!
|
ভিক্ষুণী আজি কাঁদে সম্মুখে গৌতমের
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার ফাল্গুন ১৩৪০ (ফাল্গুন ১৯৩৩)
সংখ্যা থেকে।
সেদিন আমারে কী আবেগ-ভরে
. প্রদোষ-গগনে কিরণ-পথে
ডাকি চলি’ গেলে ছুটায় তোমার
. সপ্ত-অশ্ব-হিরণ-রথে!
. গোধূলি তখন ধূসর করেছে ধরণীতল,
. হাসায়ে তুলেছে গভীর শীতল দীঘির জল,
রঙে সুষমায় মোহ-মায়াময় জলস্থল
. আমায় চাহিছে টানিয়া ল’তে,
মরীচিকা-মায়া ধরিয়াছে কায়া কী উজ্জ্বল!
. মুগ্ধ মরমে পুলক-স্রোতে!
সেদিন গগনে তব আহ্বান
ওহে সুন্দর
কবি ক্যাপ্টেন রামেন্দু দত্ত
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার আষাঢ় ১৩৪০ (জুলাই ১৯৩৩)
সংখ্যা থেকে।
কত মন্দির-দ্বার খুলেছে তোমার
. সুন্দর কর-পরশে!
কত মঞ্জুল ফুল হয়েছে বাউল
. মুঞ্জরি’ নব হরষে!
. ওহে সুন্দর!
কত দীর্ঘ যামিনী প্রভাত হয়েছে
. তোমারি কিরণে নাহিয়া---