রস-সাগর কবি কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ীর সমস্যা পূরণ কবিতা

.                   *******************

(ক) - উদ্ভট-শ্লোক ---
অত্যন্তপ্রেমসম্বন্ধো ন সুখায় কদাচন।
পূর্ণং দ্রষ্টুং সমর্থৌ ন শিবাশিবৌ পরস্পরম॥

.                                                                                সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
অতি’ কথা ভাল নয়, ওহে যদুপতি
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

কৃষ্ণনগরের মহারাজ সুপ্রসিদ্ধ কৃষ্ণচন্দ্র রায় মহাশয়ের মত তার বংশধর-গণও পরম
বিদ্যোত্সাহী ছিলেন | তার প্রপৌত্র মহারাজ গিরীশচন্দ্র বিদ্যার এবং বিদ্বানের পরম
সমাদর করতেন | কবি রস-সাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয় তার নিজস্ব কবি প্রতিভায়
তার সভা উজ্জ্বল করে রেখেছিলেন | একদিন মহারাজ গিরীশচন্দ্রের সভায় বসে রস-সাগর
মহাশয়ের সাথে রসালাপ করছিলেন, এমন সময়ে মহারাজের বিশেষ পরিচিত একজন
ভদ্রলোক মহারাজের সাথে দেখা করতে এলেন | রস-সাগর মহাশয়ের সাথেও তার বিশেষ
পরিচয় ছিল | কথায় কথায় তিনি হাসতে হাসতে রস-সাগরকে এই সমস্যাটি পূরণ করতে
দিলেন –“অতি কথা ভাল নয়, ওহে যদুপতি !” রস-সাগর সাথে সাথেই এভাবে পূরণ করে
দিলেন :-----

সমস্যা -
“অতি’ কথা ভাল নয়, ওহে যদুপতি!”
সমস্যা পূরণ ---
 

.                   *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
অদ্যাপি মার্হাট্টা ডিচ্ রহে বিদ্যমান
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

ইংরেজরা, মারাঠা বর্গীদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কলকাতা শহরের পূর্ব ও দক্ষিণ
দিক ঘিরে একটি পরিখা থনন করেন, যার নাম হয় মার্হাট্টা ডিচ্। এই মার্হাট্টা ডিচ্ এর
খননকার্য সম্পন্ন করা হয় ১৭৪২ সালে। কিন্তু ১৭৫৭ সালে বাংলার নবাব
সিরাজুদ্দৌলা, এই  মার্হাট্টা ডীচ্ থাকা সত্তেও ইংরেজদের শহর, কলকাতাকে কব্জা করতে
সক্ষম হন। পরে ১৭৯৯ সালে এই পরিখার খানিটা ভরাট করা হয়। বাকিটা ১৮৯৩-৯৪
সালে ভরাট করে তৈরী হয় কলকাতার সার্কুলার রোড, যা আজও বিদ্যমান! বলাবাহুল্য
রসসাগরের জীবদ্দশায় এই মার্হাট্টা ডিচ্ পরিখার আকারেই বিদ্যমান ছিল।

একদিন রাজ-সভায় বর্গীর হামলার বিষয় নিয়ে ওঠা সমস্যা এভাবে সমাধান করলেন।

সমস্যা ---  
“অদ্যাপি মার্হাট্টা ডিচ্ রহে বিদ্যমান |”
সমস্যা পূরণ ---

.                   *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
অন্ন বিনা অন্য ধন্য বস্তু কিবা আর
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

১২৩০ বঙ্গাব্দের (১৮২৩ সালের) দামোদর নদের বন্যার কিছুদিন পরে রাজসভায় বসে  
মহারাজ গিরীশ চন্দ্র ও রস-সাগর বন্যা কবলিত লোকেদের অন্নকষ্টের বিষয়ে আলোচনা
করছিলেন। অন্নকষ্ট নিয়ে ওঠা সমস্যা এইভাবে সমাধান করলেন।

সমস্যা ---   “অন্ন বিনা অন্য ধন্য বস্তু কিবা আর!”
সমস্যা পূরণ ---


.                   *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
অমাবস্যা গেল, আবার পূর্ণিমা আসিল
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন মহারাজ গিরীশচন্দ্র রাজসভায় বসে রস-সাগরের সাথে রসালাপ করছিলেন। এমন
সময় একজন বাতের রুগী মহারাজের সাথে দেখা করতে এলেন, ইনি আবার মহারাজের
প্রিয়পাত্র ছিলেন এবং রস-সাগরের সাথেও বন্ধুত্ব ছিল। মহারাজ তাহাকে বসতে বলে
জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন আছেন আপনি ?” তিনি বললেন, “মহারাজ! ‘অমাবস্যা গেল,
আবার পূর্ণিমা আসিল’।”

সমস্যা ---   
“অমাবস্যা গেল, আবার পূর্ণিমা আসিল!”
সমস্যা পূরণ ---

.                   *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
অম্বুধি উদধি অন্ধি বনধি বারিধি
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন রাজসভায় ওঠা একটি সমস্যা এইভাবে সমাধান করেছিলেন।

সমস্যা ---
“অম্বুধি উদধি অন্ধি বনধি বারিধি।”
সমস্যা পূরণ ---
    

.                                 *******************

(ক) নিম্নলিখিত সংস্কৃত শ্লোকের ভাব নিয়েই বোধহয় রস-সাগর এই কবিতাটি রচনা
করেছিলেন।

জয়দ্রথবধে রাজন্ দুর্য্যোধনধনঞ্জয়ৌ।
সবিতারং নিরীক্ষেতে প্রৌঢ়া বালা বধুরিব॥

.                                                                                সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
অর্জ্জুন বালিকা বধূ, প্রৌঢ়া দুর্যোধন
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন মহারাজ গিরীশ চন্দ্র রস-সাগরকে বললেন - আজ আপনাকে একটা জটীল সমস্যা
দেবো। রস-সাগর বললেন দয়া করে দিন।

সমস্যা ---
“অর্জ্জুন বালিকা বধূ, প্রৌঢ়া দুর্যোধন।”
সমস্যা পূরণ ---
 

.                                 *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
অমাবস্যার চন্দ্র পিপীলিকায় খায়
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

মহারাজ গিরীশ চন্দ্র শিব-চতুর্দ্দশীর পরদিন সকালে রস-সাগরকে নিয়ে শিব-মন্দিরে গিয়ে
দেখলেন যে, শিবের মাথার উপর রাখা অর্দ্ধচন্দ্রের উপর যে পঞ্চামৃত দেওয়া হয়েছে তা
পিঁপড়ে খেয়ে নিচ্ছে। এই দেখে মহারাজ মন্দিরের বাইরে এসে বললেন, “অমাবস্যার চন্দ্র
পিপীলিকায় খায়”। মহারাজ আরও বললেন হিন্দী ভাষায় পূরণ করা চাই।

সমস্যা ---
“অমাবস্যার চন্দ্র পিপীলিকায় খায়”।

হিন্দীতে – আঁচ্ কো চাঁদ পিপীলা নে খাওয়ে।

সমস্যা পূরণ ---  
“আচ্ কো চাঁদ পিপীলা নে খাওয়ে |”
শিবরাত্রি ঘটাওয়ে ,             তিন লোক জানাওয়ে,
পঞ্চামৃত শশিচূড়ে চড়াওয়ে |
ভোরে সি অরুণা,                     মেরে হাঁকাওয়ে
আঁচ্ কো চাঁদ পিপীলা নে খাওয়ে ||”

.                       *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
আত্মীয়ও পর হয় বিপৎ-সময়
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

শান্তিপুরে কোন এক ধনী লোকের বাড়িতে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের বিদায় দেওয়া হচ্ছিল | রস-
সাগরও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। অধ্যক্ষ মহাশয় তাঁহাকে বললেন, যদি আপনি এই
সভায় বসে একটি করুণ-রসাত্মক সমস্যা সমাধান করে দিতে পারেন, তাহলে আপনাকে
আলাদাভাবে বিদায় দেয়া হবে। তিনি তক্ষুনি সমস্যা পূরণ করে বিদায় আদায় করে
নিয়েছিলেন।

সমস্যা ---
“আত্মীয়ও পর হয় বিপৎ-সময়!”
সমস্যা পূরণ ---

.                       *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
আর না, আর না
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

এক ‘ফলারে’ ব্রাহ্মণ, নিমন্ত্রিত না হয়েও যার তার বাড়িতে গিয়ে খেয়ে আসতেন।
খাওয়ার বিষয়ে তিনি কোন জাতিভেদ মানতেন না। একদিন তিনি মহারাজ গিরীশ চন্দ্রের
সভায় এলেন, সেখানে রস-সাগরও ছিলেন। ‘ফলার’ ঠাকুর তাকে দেখেই একটি  সমস্যা
পূরণ করতে বললেন।

সমস্যা ---
“আর না, আর না”।
সমস্যা পূরণ  ১ ---
       

[ ব্যাখ্যা – শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামাকে যে রকম ভালবাসতেন, সুদর্শণ-চক্র এবং গড়ুরকেও তিনি
সেরকম ভালবাসতেন। এই কারণে ওদের মনে মনে অত্যন্ত অহঙ্কার হয়েছিল। তখন
দর্পহারী শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে সত্যভামার অহঙ্কার চূর্ণ করার জন্য এক কৌশল কল্পনা করে নিজে
রামরূপ ধারণ করেন এবং সত্যভামাকে সীতারূপ ধারণ করতে বলেন। সত্যভামা এটা
করতে না পারায় তিনি প্রিয়তমা রুক্মিণীকে সীতারূপ ধারণ করতে আদেশ দিলেন।
সীতারূপ ধারণ করা কি দুঃখ, এটাই কবি এই কবিতায় রুক্মিণীর মুখে প্রকাশ করেছেন। ]

প্রশ্নকর্ত্তা ফলারে ব্রাহ্মণ ঠাকুর এই কবিতাটি শুনে প্রীতিলাভ করায় রস-সাগর তাকেই
লক্ষ্য করে দ্বিতীয় কবিতাটি রচনা করেছিলেন!

সমস্যা পূরণ  ২ ---
     

.                          *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
আর মেনে পারি নে
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সময় কৃষ্ণনগর-রাজবংশের যেরকম সুনাম সম্মান ও ঐশ্বর্য্য ছিল,
মহারাজ গিরীশ চন্দ্রের সময় সেরকম ছিল না। তার সময়ে রাজ-সংসারে দারুণ অর্থ সঙ্কট
দেখা দিয়েছিল। রামমোহন মজুমদার নামে এক ভদ্রলোক রাজবাড়ির সর্ব্বপ্রধান কর্ম্মচারী
ছিলেন। তিনি অত্যন্ত চালাক এবং বুদ্ধিমান ছিলেন বলে নানা কৌশলে  রাজার সংসার
খরচ মেটাতেন এবং পাওনাদারকে দেব, দিচ্ছি বলে নানা কৌশলে মিথ্যে আশ্বাস দিতেন।
এই সময়ে প্লাউডিন নামে এক সাহেব ইংরেজ-সরকারের কাছ থেকে বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে
গিরীশ চন্দ্রের যাবতীয় ব্রহ্মত্র ও দেবত্র ভূমি জোড় করে কেড়ে নেয় এবং তার উপর কর
বসায়। মহারাজের এই দুঃসময়ে রস-সাগরের তিন চার মাসের বেতন বাকী ছিল। তখন
তার বেতন ছিল ত্রিশ টাকা। বেতন মাসে মাসে পেলে সংসার ভাল মত চালাতে পারতেন।
সেই সময় ত্রিশ টাকা বেতন পেলে সংসার খুব ভাল ভাবে চলত। অর্থের অভাবে
ব্যতিব্যস্ত হয়ে একদিন মহারাজের সভায় উপস্থিত হন এবং সেখানে রামমোহন
মজুমদারকে দেখতে পান। রস-সাগর তাকে দেখে ভীষণ রেগে যান এবং বলেন “আমার
বেতন দিন”। তখন মজুমদার মহাশয় অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলেন “আর মেনে পারি নে”।
এটা শুনে মহারাজ রস-সাগরের দিকে ইঙ্গিত করে তাকে এ সমস্যাটি পূরণ করতে বললেন।

সমস্যা ---
“আর মেনে পারি নে”।
সমস্যা পূরণ ---