রস-সাগর কবি কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ীর সমস্যা পূরণ কবিতা



.                        *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ব্রাহ্মণের পদধূলি একমাত্র সার
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন শ্রীশচন্দ্র রসসাগর মহাশয়কে এই সমস্যাটি পূরণ করতে দিলেন, “ব্রাহ্মণের পদধূলি
একমাত্র সার।” তিনি আরও আদেশ দিলেন যে, “ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বন করেই  
আপনাকে এই সমস্যাটি পূরণ করতে হবে।” রসসাগর শ্রীশচন্দ্রের মনের কথা বুঝতে পেরে
এভাবে সমস্যাটি পূরণ করে দিলেন . . .

সমস্যা ---
“ব্রাহ্মণের পদধূলি একমাত্র সার।”
সমস্যা পূরণ ---

নন্দ-কুমারের পূর্ব্ব পুরুষ সকল
সামাজিক মর্য্যাদায় ছিলেন দুর্ব্বল |
মর্য্যাদা-বৃদ্ধির হেতু তন্ময় হইয়া
করিলেন ক্রিয়া এক আনন্দে মাতিয়া |
হেন ক্রিয়া করিলেন গৃহে তিনি আজ,
যাহা করে নাই কভু কোন মহারাজ |
এক লক্ষ ব্রাহ্মণের হ’ল নিমন্ত্রণ,
ধূমধাম হ’ল যত, কে করে গণন |
বেছে বেছে আনিলেন ভাদুর-ভবনে
কৃষ্ণচন্দ্র দয়ারাম, এই দুই জনে |
কৃষ্ণচন্দ্র রহিলেন ব্রাহ্মণ-সেবায়,
দয়ারাম রহিলেন ভাণ্ডারে সহায়
এক লক্ষ পিঁড়া হ’ল বসিবার তরে,
মহারাজ সাজাইয়া দিলা থরে থরে |
একে একে এক লক্ষ ব্রাহ্মণ বসিয়া
আহার করিলা সুখে সন্তুষ্ট হইয়া |
লক্ষ ব্রাহ্মণের পদধূলি-কণা ল’য়ে
যতনে রাখেন রাজা ভাদুর-আলয়ে |
তুমিই বুঝিয়া ছিলে শ্রীনন্দ কুমার !
“ব্রাহ্মণের পদধূলি একমাত্র সার |”
                                  


.                                   *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ব্রাহ্মণের বাটী নাহি করি পদার্পণ
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

শান্তিপুরে কোন এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে রসসাগর নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
গৃহস্বামী রসসাগরকে বললেন, আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ যা জোগার করতে পেরেছি, দয়া করে
তাই সেবা করুন। রসসাগর তখন হাসতে হাসতে বললেন, “ব্রাহ্মণের প্রতি চিরকালই
লক্ষ্মীর বিৃষদৃষ্টি।” গৃহস্বামী বললেন, “ব্রাহ্মণের বাটী নাহি করি পদার্পণ।” রসসাগর তার
মনের কথা বুঝতে পেরে সমস্যাটি এভাবে পূরণ করে দিলেন  . . .

সমস্যা ---
“ব্রাহ্মণের বাটী নাহি করি পদার্পণ।”
.            (নারায়ণের প্রতি লক্ষ্মীর আক্ষেপোক্তি )
সমস্যা পূরণ ---

পিতা মোর রত্নাকর,                  পিতা মোর রত্নাকর,
.          অগস্ত্য পূরিল তাঁরে পেটের ভিতর |
তুমি পতি চির সাথি                   তুমি পতি চির সাথি
.          ভৃগু-মুনি বুকে তব মেরে দিল লাথি |
মোর ভারতী সতীন                    মোর ভারতী সতীন
.           ব্রাহ্মণেরা তার গুণ গায় প্রতিদিন |
পূজিবারে উমাপতি                     পূজিবারে উমাপতি
.           পদ্মবন ছিঁড়ি মোর বাড়ায় দুর্গতি
মনে কষ্ট অহর্নিশ                         মনে কষ্ট অহর্নিশ
.            ব্রাহ্মণ সকল মোর দু-চক্ষের বিষ
তাই ওহে নারায়ণ !                    তাই ওহে নারায়ণ!
.           ‘ব্রাহ্মণের বাড়ী নাহি করি পদার্পণ |’
                                                


.                             *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ভগবান্ শাস্তি দেন বেইমান্ জনে
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

যুবরাজ শ্রীশচন্দ্রের এক ভৃত্য নানা ভাবে প্রভুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। একদিন
তিনি বললেন “রসসাগর মহাশয়! বিশ্বাস-ঘাতক লোককে আমি শাস্তি দিতে পারি কি না?”
এই কথা শুনেই রসসাগর হাসতে হাসতে বললেন, “ভগবান শাস্তি দেন বেইমান্ জনে!” তখন
শ্রীশচন্দ্র বললেন, “আপনার সমস্যাটী আপনিই পূরণ করুন।” এই কথা শুনে রসসাগর
সমস্যাটি এভাবে পূরণ করলেন . . .

সমস্যা ---
“ভগবান্ শাস্তি দেন বেইমান্ জনে!”
সমস্যা পূরণ ---
                                             


.                      *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ভক্তি-তরি দাও হরি! পার হ’য়ে যাই
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন কৃষ্ণানগরাধিপতি মহারাজ গিরীশচন্দ্র রস-সাগরকে এই সমস্যাটি পূরণ করতে
দিয়েছিলেন --- “ভক্তি-তরি দাও হরি! পার হ’য়ে যাই।” রসসাগর তখনি সমস্যাটি এভাবে
পূরণ করে দিয়েছিলেন . . .

সমস্যা ---
“ভক্তি-তরি দাও হরি! পার হ’য়ে যাই!”
সমস্যা পূরণ ---

অতি ভয়ঙ্কর এই সংসার-সাগর,---
বিষয়-বাসনা-জল তথা নিরন্তর ;
বহিতেছে সর্ব্বক্ষণ মদন-পবন,
সর্ব্বদা উঠিছে মোহ-তরঙ্গ ভীষণ ;
গৃহীণী-আবর্ত্ত পাক দিতেছে কেবল,
ভাসিছে দুরন্ত পুত্র-কুন্তীর সকল ;
মধ্যে মধ্যে দেয় কন্যা-হাঙ্গর দর্শন ;
ভীষণ জামাতৃ-সর্প করিছে গর্জ্জন ;
জ্ঞাতি-বাড়বাগ্নি কিবা দিতেছে উত্তাপ,
ধক্ ধক্ জ্বলিতেছে বাপ রে বাপ !
সমস্ত ভয়ের বস্তু রয়েছে তথায়,
রস-সাগরের রস বুঝি বা শুকায় ;
এ হেন সাগরে মগ্ন আছি হে সদাই,
‘ভক্তি-তরি দাও হরি ! পার হ’য়ে যাই !’
                                               


.                      *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ভক্তি থাকিলেই তুষ্ট হন্ নারায়ণ
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন মহারাজ গিরীশচন্দ্র বাড়ির ভিতরে নারায়ণ-পূজা করে সভায় এসে সামনেই
রসসাগরকে দেখতে পেয়ে তাহাকে এই সমস্যাটি পূরণ করতে দিলেন, “ভক্তি থাকিলেই
তুষ্ট, হন্ নারায়ণ!” রসসাগর মহারাজের মনের কথা বুঝতে পেরে সমস্যাটি এভাবে পূরণ
করে দিলেন . . .

সমস্যা ---
“ভক্তি থাকিলেই তুষ্ট হন্ নারায়ণ!”
সমস্যা পূরণ ---

ব্যাধ ভুলাইল কোন্ শিষ্ট আচরণে !
ধ্রুবের বয়স্ কিবা ভেবে দেখ মনে !
গজ-মূর্খ যে গজেন্দ্র, বিদ্যা কিবা তার !
কুজার কি রূপ ছিল, --- ভাব একবার !
দরিদ্র সুদাম হায় কি করিল দান !
দাসী-পুত্র বিদুরের কিবা কুল মান !
কি পৌরুষ ছিল উগ্র-সেনের শরীরে !
সকলেই গেলা কিন্তু শেষে স্বর্গ-পুরে |
এ রস-সাগর তাই বুঝেছে এখন,---
‘ভক্তি থাকিলেই তুষ্ট হন্ নারায়ণ !’
                                            


.                      *******************

ব্যাখ্যা - কোন কারণ-বশতঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার রাজধানী মুর্শিদাবাদে একবার
একটি সভা করে বাঙলা প্রদেশের সকল রাজা ও মহারাজাদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। সে
কারণে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রও গিয়েছিলেন। গোপাল ভাঁড়ও নবাব বাড়ি দেখবার জন্য
মহারাজের সাথে মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলেন। সভা শেষে যখন রাজা ও মহারাজ-গণ বাড়িতে
ফিরছিলেন, তখন নবাবের বেগমরা কৌতুহল-বশতঃ উপরে দাঁড়িয়ে নীচের দিকে তাদের
দেখছিলেন। গোপাল রগড় ছাড়ার লোক নন। সে রাজার পেছন পেছন আসছিল,
কিন্তু মাঝে মাঝে আড়্ চোখে বেগমদের দেখছিল। কিছু পরে এই বিষয় নবাবের কানে
এলে তিনি ভীষণ রেগে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে লোক পাঠালেন। তখন মহারাজ ভয়
পেয়ে গোপালকে বললেন “এ তোমারই কাণ্ড?” গোপাল নির্ভয়ে উত্তর দিল “ধর্ম্মাবতার! এত
বড় মহৎ কাজ আর কে করতে পারে? ঠাকুর! আপনি এজন্য একদম চিন্তা করবেন না।”
এই কথা বলে গোপাল নবাবের পাঠান লোকের সাথে চলে গেল। নবদ্বীপের রাজার লোক
নবাবের বেগমদের প্রতি কটাক্ষ-পাত করেছে, এবং তাকে প্রাণদন্ড দেবার জন্য নবাবের
লোক তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এই জনরব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

গোপালকে নবাবের কাছে আনা হলে সভার লোকেদের মধ্যে যারা গোপালকে চিনতেন,
তারা বলতে শুরু করলেন, “এইবার ভাঁড় ভাঙ্গিল।” নবাব গোপালের দিকে রাগতভাবে
দেখামাত্র গোপালও প্রথমে নবাবের দিকে তীব্র কটাক্ষ পাত করল, এবং তারপর সভার
সকল লোকেদের প্রতি সেরকম করতে লাগল। নবাব তার তীব্র কটাক্ষ-পাত স্বাভাবিক
বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জিত হলেন এবং সামান্য হেসে তাকে বিদায় দিলেন। ]

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ভাঙ্ লো এইবার
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একবার মহারাজ গিরীশচন্দ্র প্রশ্ন করিলেন, “ভাঙ্ লো এইবার।” রসসাগর মহারাজের
মনের ভাব বুঝতে পেরে তখনি এভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন . . .

সমস্যা ---
“ভাঙ্ লো এইবার।”
সমস্যা পূরণ ---
                                         


.                   *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ভোজন সার্থক, যদি অন্ন জীর্ণ হয়
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন রাতে রস-সাগর মহশয় মহারাজ গিরীশচন্দ্রের বাড়িতে আকন্ঠ খেয়ে পরদিন
সকালে অসুস্থ শরীরে রাজ-সভায় এসে উপস্থিত হলেন। তখন রাজবৈদ্যও রাজসভায়
উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাকে দেখে বললেন, “রসসাগর মহাশয়!’ গতকাল রাতে আকন্ঠ
খেয়ে আজ সকালবেলায় কেমন আছেন?” রসসাগর বললেন, “কবিরাজ মহাশয়! ‘জীর্ণমন্নং
প্রশংসীয়াৎ’।”  তখন মহারাজ রসসাগরকে বললেন, “ভোজন সার্থক, যদি অন্ন জীর্ণ হয়।”
রসসাগর হাসতে হাসতে এভাবে এই সমস্যাটি তখনি পূর্ণ করে দিলেন।

সমস্যা ---
“ভোজন সার্থক, যদি অন্ন জীর্ণ হয়।”
সমস্যা পূরণ ---

জনম সার্থক, যদি ধর্ম্মে মন মজে,
করম সার্থক, যদি কৃষ্ণ-পদ ভজে |
শরীর সার্থক, যদি ব্যাধি-শূন্য হয়,
বিদ্যাও সার্থক, যদি রহিল বিনয় |
গৃগিণী সার্থক, যদি গৃহকর্ম্ম করে,
রূপসী সার্থক, যদি গুণে মন হরে |
বিষয় সার্থক, যদি দান তাহে রয়,
‘ভোজন সার্থক, যদি অন্ন জীর্ণ হয় |’
                                              


.                   *******************

[ ব্যাখ্যা - মা শ্রীমতী যশোদার কোলে শ্রীকৃষ্ণ মাথা রেখে শুয়ে আছেন, এমন সময় একটী
মাছি এসে শ্রীকৃষ্ণের মুখের উপর বসল। তাতে শ্রীকৃষ্ণ সামান্য কেঁপে উঠলে তাঁর মুখের
ভিতর ত্রিভুবনও সেই সঙ্গে  কেঁপে উঠল। ]

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মক্ষিকার পদাঘাতে কাঁপে ত্রিভুবন
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একবার যুবরাজ শ্রীশচন্দ্রের এক জন বয়স্ক বন্ধু প্রশ্ন করলেন, “মক্ষিকার পদাঘাতে কাঁপে
ত্রিভুবন।” রসসাগর অবলীলাক্রমে তখনই এই জটীল প্রশ্নটির উত্তর দিলেন . . .

সমস্যা --- “মক্ষিকার পদাঘাতে কাঁপে ত্রিভুবন।”
সমস্যা পূরণ ---

যশোদার কোলে কৃষ্ণ তুলিলা জৃন্তন,
লীলাচ্ছলে মুখমধ্যে দেখান্ ত্রিভুবন |
পতঙ্গ-পরশে ব্যস্ত-মস্তক-হেলন,
‘মক্ষিকার পদাঘাতে কাঁপে ত্রিভুবন |’
                                           


.                   *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মদনের মত নাহি আছে ধনুর্দ্ধর
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

রসসাগরের এক বন্ধু তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, “মদনের মত কিন্তু নাই ধনুর্দ্ধর।” রসসাগরের
রসের ভাণ্ডার সবসময় পরিপূর্ণ। তিনিও সরস-ভাবে এই সমস্যাটি পূরণ করে দিলেন।

সমস্যা ---
“মদনের মত নাহি আছে ধনুর্দ্ধর!”
সমস্যা পূরণ ---

পাইয়া পিনাক-ধনুঃ ওহে ত্রিলোচন !
পেরেছ পিনাকী নাম, --- জানে ত্রিভুবন |
ধরিয়া গাণ্ডীব-ধনুঃ হে অর্জ্জুন ! বীর
ধরেছ গাণ্ডীবী নাম, --- বুঝিয়াছি স্থির |
তোমাদের ধনুর্ব্বান ভারী অতিশয়,
সহজে তুলিবে তাহা, --- শক্তি কার রয় ?
এক খানা বস্তু কেটে করে দুই খানা,----
এই ত বাণের গুণ, --- আছে বেশ জানা !
মদনের ফুল-ধনু, ফুল-বাণ তার,
অতিশয় লঘু, --- গন্ধে মাতে ত্রিসংসার |
মদন-বাণের গুণ মনে বেশ জানি,---
দুই খানি কাটা বস্তু করে এক খানি |
তাই বলে কুতুহলে এ রস-সাগর,---
‘মদনের মত নাহি আছে ধনুর্দ্ধর |’
                                        


.                   *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মর্কট বুঝিবে কিসে কর্কটের রস
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

মহারাজ গিরীশচন্দ্র জানতেন যে, রসসাগর মহাশয় সাত্ত্বিক ব্রাহ্মণ বলে কাঁক্ ড়ার প্রতি
তাঁর ঘোরতর বিদ্বেষ ছিল। এজন্য মহারাজ একদিন ঠাট্টা করে হাসতে হাসতে রসসাগরকে
লক্ষ্য করে বললেন, “মর্কট বুঝিবে কিসে কর্কটের রস!” তিনি রসসাগরকে আরও বলে
দিলেন যে, আপনাকেই নিন্দা করে এই সমস্যাটী পূরণ করতে হবে। চতুর-চূড়ামণি রসিক-
রাজ রসসাগর মহাশয় সাথে সাথেই এভাবে পূরণ করে দিলেন . . .

সমস্যা --- “
মর্কট বুঝিবে কিসে কর্কটের রস!”
সমস্যা পূরণ ---

কাঁক্ ড়ার মত কিবা আছে ভুমণ্ডলে,
বলকর বায়ুহর পিত্তহর খেলে |
পরম প্রণয় তার অলাবুর সনে,
রসনায় আসে রস নাম তার শুনে |
প্রাণ ভরে শাঁস খাও ফেলে দিয়ে খোসা,
দাড়া কিবা সুমধুর যদি যায় চোষা
খাসা নাহি বলে ইহা যেই জন চাষা,
ভালবাসা কত তার যদি খায় মাসা |
কর্কট খাইলে লোক আনন্দে অবশ,
‘মর্কট বুঝিবে কিসে কর্কটের রস !’