রস-সাগর কবি কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ীর সমস্যা পূরণ কবিতা


.                        *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মুকুন্দ মুরারে
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

কথিত আছে যে, একদিন মহারাজ গিরীশচন্দ্র, রসসাগর ও কয়েকজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এবং
আত্মীয়কে সাথে নিয়ে গঙ্গাস্নান করতে গিয়েছিলেন। যে ঘাটে তারা স্নান করতে  
গিয়েছিলেন সেই ঘাটে মুকুন্দ ও মুরারি নামে দুই ভাই খেয়া পার করত। মহারাজ,  
রসসাগর আর সকলেই স্নান করছিলেন, এমন সময় এক জন ডাক-হরকরা ( পোষ্ট  
অফিসের পিয়ন ) এক বস্তা চিঠি ঘাড়ে করে ঘাটে এসে দেখল নৌকায় মাঝি নেই। তাকে  
খুব তাড়াতাড়ি নদীর ওপাড়ে পোষ্ট-অফিসে চিঠিগুলি পৌঁছে দিতে হবে, তখন সেই ব্যক্তি  
উত্কন্ঠিত চিত্তে “মুকুন্দ মুকুন্দ ; মুরারি, মুরারি,” --- বলে চীত্কার করতে শুরু করল।  
মহারাজ আহ্নিক করতে করতে চিত্কার শোনা মাত্রই রসসাগরের দিকে তাকালেন।  
রসসাগর তখনই মহারাজের ও পিয়নের দিকে চেয়ে এই সমস্যাটী এইভাবে পূরণ করে  
দিলেন . . .

সমস্যা ---
“মুকুন্দ মুরারে”।
সমস্যা পূরণ ---

পাপের পুলিন্দা ব’য়ে ভগ্ন হ’ল পা রে!
নিরূপিত ঘন্টা-মধ্যে যেতে হবে পারে।
ঘাটে বুঝি মাঝি নাই, --- ডাক রসনা রে!
গোপাল গোবিন্দ কৃষ্ণ ‘মুকুন্দ মুরারে’।
                                           


.                        *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মুদ্রিত কনক-পদ্ম নীল-পদ্ম বিনে
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

কোন এক সময় সুপ্রসিদ্ধ স্বর্গত গোবিন্দ অধিকারী কৃষ্ণনগরে কৃষ্ণযাত্রা করতে গিয়েছিলেন
। রসসাগর তার গান শুনে এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তিনি পরদিন রাজসভায় এসে
মহারাজ গিরীশচন্দ্রের সামনে শতমুখে গোবিন্দের প্রশংসা করতে লাগলেন। তখন
গিরীশচন্দ্র স্মিত হেসে রসসাগরকে এই সমস্যাটী পূরণ করতে দিলেন, “মুদ্রিত কনক-পদ্ম
নীল-পদ্ম বিনে!” রসসাগর এভাবে তখনি সমস্যাটী পূরণ করে দিয়েছিলেন . . .

সমস্যা ---
“মুদ্রিত কনক-পদ্ম নীল-পদ্ম বিনে!”
.             ( শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বৃন্দার উক্তি )
সমস্যা পূরণ ---

নিবেদন করি আমি, ওহে যদুপতি !
তোমা বিনা ব্রজ-ধামে বিষম দুর্গতি |
তোমা বিনা গোপী সব হইয়াছে শব,
তোমা বিনা পক্ষি-গণ র’য়েছে নীরব |
তোমা বিনা তরু লতা নাহি ফুল ধরে,
তোমা বিনা অলি-কুল আর না গুঞ্জরে |
তোমা বিনা শ্রীরাধিকা না মেলে নয়নে,
‘মুদ্রিত কনক-পদ্ম নীল-পদ্ম বিনে !’
                                        


.                        *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মুন্সী গোলাম মুস্তাফা
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

মহারাজ গিরীশচন্দ্রের সময় ইজারদারেরা বরাতী চিঠি পেলেই আনন্দে অধির হয়ে উঠত।
কারণ ইজারদার-গণ পাওনাদারকে অনেক ডিস্ কাউন্ট বাদ দিয়ে টাকা দিত। এতে
ইজারদারদরা অনেক লাভ করত, কিন্তু পাওনাদার-গণের ভীষণ ক্ষতি হত। আগেই উল্লেখ
করা হয়েছিল যে, রাজীবলোচন সরকার নামে এক জন ইজারদারের হাতে পড়ে রসসাগর
মহাশয় উচিত শিক্ষালাভ করেছিলেন।  মুন্সী গোলাম মুস্তাফা নামে একজন ইজারদার
ছিলেন। তিনি জাতিতে মুসলমান হলেও হিন্দুদের বিশেষ সম্মান করতেন। একবার বরাতী
চিঠি নিয়ে তার কাছে রসসাগরকে যেতে হয়েছিল। তিনি রসসাগরকে একজন বিশিষ্ট
সুপণ্ডিত ব্রাহ্মণ জেনে এবং তাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে বরাতী চিঠির সম্পূর্ণ টাকা
দিয়েছিলেন। রসসাগর টাকা নিয়ে এসে মহারাজের কাছে মুন্সী গোলাম মুস্তাফার অনেক
প্রশংসা করতে লাগলেন। তখন মহারাজ কহিলেন, “মুন্সী গোলাম মুস্তাফা।” রসসাগর
মুস্তাফাকে লক্ষ্য করে সমস্যাটী সাথেসাথেই পূরণ করলেন . . .

সমস্যা ---
“মুন্সী গোলাম মুস্তাফা।”
সমস্যা পূরণ ---

সকল বাণিজ্য হতে ইজারদারী তোফা,
দয়া-ধর্ম্ম-চক্ষুঃ-লজ্জা ইস্তফা তিন দফা |
এ রস-সাগর জানে অনেক চৌ-গোঁফা,
মনুষ্যই দেখি ‘মুন্সী গোলাম মুস্তাফা |’
                                     


.                        *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মূর্খের সহিত স্বর্গে যেতে নাহি চাই
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

শোনা যায় মহারাজ গিরীশচন্দ্র কৌতুক ও পরিহাস করার জন্য এক জন ‘পেশাদার
খোসামুদে’ রেখেছিলেন। একদিন মহারাজ তার প্রতি ভীষণ রেগে রসসাগরের সামনেই
তাকে নানাভাবে অপমান করলেন। বললেন, “মূর্খের সহিত স্বর্গে যেতে নাহি চাই!” এই
খোসামুদের আবার রস-সাগরের প্রতি ভীষণ রাগ ছিল। রসসাগর এই সমস্যা-পূরণের
সুবিধা পেয়ে মূর্খের গুণ-বর্ণনা সহ সমস্যাটী পূরণ করে দিলেন।

সমস্যা ---
“মূর্খের সহিত স্বর্গে যেতে নাহি চাই!”
সমস্যা পূরণ ---

কথায় কথায় ক্রোধ করে মূর্খ জন,
মিলন মূর্খের সনে দুঃখের কারণ !
যার খায়, তারি মূর্খ করে সর্ব্বনাশ,
হৃষ্ট পুষ্ট বলিষ্ঠই রহে বারমাস |
রোগ শোক কারে বলে, মূর্খ নাহি জানে,
নিজে বড় বুদ্ধিমান, ---এই ভাবে মনে |
বুঝিতে না পারে মূর্খ কভু হিতাহিত,
হিত-কথা শুনিলেই মূর্খ বিপরীত |
কার কিসে মন্দ হবে, দ্বন্দ্ব কার সনে,---
এই চিন্তা করে মূর্খ সদা মনে মনে |
ফাটে বুক, যদি দেখে অপরের সুখ,
দেখিলে পরের কষ্ট, হৃষ্ট তার মুখ
এ রস-সাগর বড় দুঃখে কহে তাই,---
মূর্খের সহিত স্বর্গে যেতে নাহি চাই
                                  



.                    *******************

[ ব্যাখ্যা - শোনা যায়, রূপবতী, সঙ্গীতে পারদর্শী অথচ কৃশাঙ্গী রমণীই সিরাজ-উদ-দৌলা
ভীষণ পছন্দ করতেন। একদিন তার একজন মোসাহেব বলল, জাঁহাপনা! দিল্লীতে “ফৈজী-
নামে এক বাঈজী আছে। তার রূপ অতুলনীয়। সে রাতদিন নৃত্য-গীত নিয়েই মত্ত থাকে।
বিশেষতঃ তার মত লঘুদেহি রূপবতী নারী দেখতে পাওয়া যায় না।” এই কথা শোনামাত্র
সিরাজ তাকে দিল্লী পাঠিয়ে দিলেন এবং লক্ষ টাকা খরচ করে তাকে এনে নিজের প্রাসাদে
এনে রাখলেন। কিছুদিন পরে গোলাম হোসেন নামে সিরাজের এক ভগ্নীপতির সাথে ফৈজীর
অবৈধ প্রণয় হয়। এটা শোনামাত্র সিরাজ রেগে আগুন। ফৈজীকে এ কথা জিজ্ঞেস করতে
সে বলল, “আমি সামান্য গণিকা মাত্র ; এটাই আমার ব্যবসা।”  এ কথা শুনে ভীষণ রেগে
তাকে একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিলেন, এবং সেই ঘরের জানালা দরজা এভাবে গেঁথে
দিলেন যে, একটিও ছিদ্র বা বায়ু প্রবেশের জায়গাও রহিল না। কিছুদিন পর সিরাজ সেই
ঘর খুলে দেখেন যে ফৈজীর দেহখানি কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। এই প্রবাদ বা ঘটনা
অবলম্বন করেই রসসাগর এই সমস্যাটী পূরণ করেছিলেন। ]

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মৃগনাভি-প্রায়
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

শান্তিপুরে  বসবাসকারী কোনও এক ভদ্রলোক রস-সাগরকে প্রশ্ন করেছিলেন, “মৃগনাভি-
প্রায়"। রসসাগর মহাশয় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন . . .

সমস্যা ---
“মৃগনাভি-প্রায়।”
সমস্যা পূরণ ---

যে নারী ওজনে লঘু, রূপ-গুণ-বতী,
সেই নারী সিরাজের প্রিয় ছিল অতি |
একদিন সিরাজের মোসাহেব-গণ
তাঁহার নিকটে গিয়া করে নিবেদন,---
“ফইজী বাইজী আছে দিল্লী সহরেতে,
তার মত গুণবতী না দেখি জগতে |
ওজনে বাইস সের, পরম রূপসী,
নৃত্য গীত লইয়াই থাকে দিবানিশি |
তার রূপ গুণ কভু না হয় বর্ণনা,
হুকুম হইলে তারে আনি জাঁহাপনা |”
ইহা শুনি’ সিরাজের চিত্ত চমকিল,
লক্ষ টাকা দিয়া তারে ধরিয়া আনিল |
কুচরিত্র শুনি তার কিছুদিন পরে
সিরাজের ক্রোধানল জ্বলিল অন্তরে
ছিদ্রশূন্য গৃহে এক পূরিয়া তাহারে
নবাব রাখিয়া দিলা জনমের তরে |
কিছুদিন পরে দেখা যায় দেহ তার,
কেবল কঙ্কাল খানি হইয়াছে সার |
কস্তূরী-মৃগের নাভি মহামূল্য ধন,
কিন্তু তাই হয় তার মৃত্যুর কারণ
ফৈজী বাইজীর রূপ গুণ-সমুদায়,
তাই বলি, হায় হায় ‘মৃগনাভি-প্রায় |’
                               


.                    *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মেকী হ’লো সাচ্চা, আর সাচ্চা হ’লো মেকী
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন মহারাজ গিরীশচন্দ্র সভায় বসে কলিকাল সম্বন্ধে গল্প করতে করতে রস-সাগরের
দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “মেকী হ’লো সাচ্চা, আর সাচ্চা হ’লো মেকী।” রসসাগরও
মহারাজের মনের ভাব বুঝতে পেরে সমস্যাটী পূরণ করে দিলেন।

সমস্যা ---
“মেকী হ’লো সাচ্চা, আর সাচ্চা হ’লো মেকী।”
সমস্যা পূরণ ---

.            ( কলিকাল-বর্ণন )
এক মুটো অন্ন নাই পণ্ডিতের পেটে,
খাসা খাসা খাদ্য জোটে মূর্খের নিকটে |
শাস্ত্রালাপে নাহি যায় পণ্ডিতের মতি,
গীতায় বেদান্তে শূদ্র সুপণ্ডিত অতি |
স্ত্রীর ভাগ্যে নাহি জোটে এক খানা বাড়ী,
বেশ্যার বাড়ীতে সাচ্চা সাড়ী গাড়ি গাড়ি |
ঢুলির ভাগ্যে শাল-দোশালা, ছেলের ভাগ্যে কানি,
খ্যাম্ টা-ওয়ালীর ভাগ্যে হীরা-মুক্তা-মণি |
ঠাকুরের ঘোঙা মোণ্ডা, আর ঠোটে কলা ,
খাজা গজা মতিচুর ইয়ারের বেলা |
ধন্য কলি ! তোরে বলি, --- কি রাখিলি বাকী ,
‘মেকী হ’লো সাচ্চা, আর সাচ্চা হলো মেকী |’
                            


.                    *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      


.                                        *******************

ভিন্নমত - এই কবিতার সংকলক ও সম্পাদক শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে উদ্ভটসাগর লিখেছেন যে এও
শোনা যায় যে নবাব আলীবর্দ্দী খাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর দৌহিত্র নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা
হিন্দুদের মত ব্রাহণ-পণ্ডিতদের বিদায় দেবার ইচ্ছায় মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কে একটি সংস্কৃত
শ্লেক লিখে দিতে আদেশ করেছিলেন। মহারাজ তখন তাঁর সভা-পণ্ডিত বাণেশ্বর
বিদ্যালঙ্কারকে এই ফরমায়েশী শ্লোকটি লিখে দিতে বলেন। পণ্ডিত বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার
শ্লোকটি রচনাকালে একটু “রগড় করে” তা লিখেছিলেন। সেই শ্লোকটি ছিল . . .

খোদাপাদারবিন্দদ্বয়ভজনপরো মাতৃতাতো মদীয়
আলীবর্দ্দীনবাবো বিবিধগুণযুতোহল্লামুখঃ পশ্চিমাস্য।
মর্ত্ত্যং দেহং জহৌ স্বং মুনসুরমূলকঃ সীরাজদ্দৌলনামা
যাচেহহং মাং ভবত্তো গলধৃতবসনঃ শুদ্ধতাং সংনরদ্ভাম্॥


.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
মেরা জান্
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

রসসাগর মহাশয় হিন্দী ও পারসী ভাষাতেও সমস্যা পূরণ করতে পারেন শুনে কোন এক
সুশিক্ষিত ও সুধার্ম্মিক মৌলবী তার সাথে চিলাখালীর বাড়িতে আলাপ করতে গিয়েছিলেন।
কথায় কথায় তিনি এই সমস্যাটী পূরণ করতে দেন, --- “মেরা জান্।”  রসসাগর হাসতে
হাসতে এই সমস্যাটী পূরণ করে দিয়েছিলেন . . .

সমস্যা ---
“মেরা জান্।”
সমস্যা পূরণ ---

খোদা-তালা পয়্দা কিয়া কেয়া জমীন্, কেয়া আস্ মান্,
গাছ পাখল জীউ জন্তু, কেয়া হিন্দু কেয়া মুসলমান।
এসি ওয়াস্তে সেখ সৈয়দ মোগল পাঠান,
ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র, --- সব্ ভি ‘মেরা জান্।’
                         
মোরে শুদ্ধ করহ এখন
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

যুবরাজ শ্রীশচন্দ্রের কোন সুপণ্ডিত বন্ধু একদিন তার সভায় বসে রসসাগরকে প্রশ্ন
করলেন, “মোরে শুদ্ধ করহ এখন।” তিনি আরও বলে দিলেন যে, সিরাজ-উদ-দৌলার কোন
বিষয় নিয়ে আপনাকে এটা পূরণ করে দিতে হবে। রসসাগরও দমবার পাত্র নন, তিনি
সাথে সাথেই সমস্যাটী পূর্ণ করে দিলেন . . .

সমস্যা ---
“মোরে শুদ্ধ করহ এখন।”
সমস্যা পূরণ ---

আলিব্বর্দী মাতামহ                             আলিব্বর্দী মাতামহ
.               নবাব তাঁহার মত নাহি হিলা কেহ |
স্মরি’ খোদার চরণ                             স্মরি’ খোদার চরণ
.               দাদা এই মর্ত্ত্য-দেহ দিলা বিসর্জ্জন ||
আল্লা আল্লা বলি মুখে                       আল্লা আল্লা বলি মুখে
.                উপস্থিত হইলেন খোদার সম্মুখে |
মনসুর-মুলুক্ আমি                             মনসুর-মুলুক্ আমি
.              সিরাজ আমার নাম,  বাঙ্গালার স্বামী ||
তোমরা ত হিন্দুগণ                             তোমরা ত হিন্দুগণ
.               আমি মুসলমান, -- তবু করি নিমন্ত্রণ |
প্রজা সন্তানের মত                              প্রজা সন্তানের মত
.                ইহা ভাবি’ সভা-স্থলে হয়ো সমাগত ||
দিয়া গলায় বসন                                 দিয়া গলায় বসন
.             মাগি আমি, ----- ‘মোরে শুদ্ধ করহ এখন !’
                         


.                           *******************

[  ব্যাখ্যা - পুত্রবতী সীতা-দেবী সরোবরে স্নান করতে গিয়েছেন, এমন সময়ে বাল্মিকী মুনি
সীতাদেবীর কুটীরে প্রবেশ করে দেখলেন, লব সেখানে নেই। অনেক খোঁজ করেও তাকে
পাওয়া গেল না। তখন বাল্মিকী কুশ দিয়ে লবের প্রতিমূর্ত্তি তৈরী করে তাকে জীবন-দান
করেন।  বাল্মীকি কুশ দিয়ে যে মূর্ত্তি তৈরী করলেন, তার আকৃতি ঠিক লবের মত।
 এজন্য তিনি এর নাম লব রাখলেন।

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
যখন ছেলে জন্মাইল, মা ছিল না ঘরে
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন মহারাজের এক আত্মীয় প্রশ্ন করলেন, “যখন ছেলে জন্মাইল, মা ছিল না ঘরে।”
রসসাগর তখনই সেই সমস্যা এইভাবে পুরণ করে দিলেন . . .

সমস্যা ---
“যখন ছেলে জন্মাইল, মা ছিল না ঘরে।”
সমস্যা পূরণ ---

পুত্রবতী সতী সীতা যান সরোবরে,
ঋষি আসি’ প্রবেশিলা আশ্রম-কুটীরে
কুশময় কুমার স্থাপিলা শূন্য ঘরে,
কি জানি জানকী যদি মনস্তাপ করে
একে কৈল যুগল বাল্মিকী মুনিবরে,
‘যখন ছেলে জন্মাইল, মা ছিল না ঘরে ||’
                      


.                  *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
যখন যেমন হায় তখন তেমন
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একবার রাজসভায় সমস্যা উঠল, --- “যখন যেমন হায় তখন তেমন।” রসসাগর তখনি
এভাবে সেই সমস্যা পূরণ করে দিলেন . . .

সমস্যা ---
“যখন যেমন হায় তখন তেমন।”
সমস্যা পূরণ ---

অনন্ত-শয্যায় যিনি করেন শয়ন,
কমলা করেন যাঁর চরণ সেবন,
গোপ-রমণীর পদ ধরি সেই হরি
সমাদরে রাখিলেন মাথার উপরি |
একদিন যিনি বস্ত্র করিয়া অর্পণ
করিলেন দ্রৌপদীর লজ্জা-নিবারণ,
গোপীকার বস্ত্র চুরি করি সেই হরি
লুকাইয়া রক্ষা পান বৃক্ষের উপরি !
এ রস-সাগর তাই বুঝেছে এখন,
“যখন যেমন হায় তখন তেমন !”