রস-সাগর কবি কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ীর সমস্যা পূরণ কবিতা

.                            *******************

[ ব্যাখ্যা – কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাত্সর্য্য, ---- এই ছয়টি রিপু ছয়টি সাপের
মত, এবং সংসার সর্পীর মতন। যিনি কাশীবাসী, তিনি সংসার বন্ধন ছিন্ন করে কমণ্ডলু,
কৌপীন ও দণ্ড ধারণ করেন। প্রকৃত সন্ন্যাস নেবার সময় একসময় তাকে কাম, ক্রোধ
প্রভৃতি ছয়টি রিপু জয় করতে ও সংসার বন্ধন ছিন্ন করতে হয়। তাহলেই তার “এক
নড়ীতে সাত সাপ মারা” হল ! ]

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
এক নড়ীতে সাত সাপ মারে
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন এক সন্ন্যাসী মহারাজ গিরীশচন্দ্রের সভায় এসে তার সাথে শাস্ত্রালাপ  করতে
করতে বললেন --- মহারাজ! এ সংসারে সন্ন্যাসী হবার অনেকগুলি অসুবিধা আছে। একটি
লাঠিতে সাতটি সাপ বধ করতে না পারলে সন্ন্যাস গ্রহণ করা গৃহীর পক্ষে সম্ভব নয়।
মহারাজ এটা শুনেই রস-সাগরকে বললেন “এক নড়ীতে সাত সাপ মারে।” রস-সাগর
সন্ন্যাসীর মনের ভাব বুঝতে পেরে সাথে সাথে এই সমস্যাটি পূরণ করে দিলেন।

সমস্যা ---
“এক নড়ীতে সাত সাপ মারে।”
সমস্যা পূরণ---  

কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ মাত্সর্য্য অতি
ছয় সর্প, আর এক সর্পী ও সংসৃতি।
কাশীবাসী করঙ্ক কৌপীন দণ্ড ধরে,
মায়া ছাড়িতে ‘এক নড়ীতে সাত সাপ মারে।’


.                           *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
এক নীলমণি বিনা তথা নন্দরাণী
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন রাজসভায় বসে মহারাজ গিরীশচন্দ্র বললেন “রস-সাগর মহাশয়, শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন
ছেড়ে  মথুরা যাবার সময় যশোদার কিরকম কষ্ট হয়েছিল, তা আপনাকে বর্ণনা করতে
হবে।” বলেই তিনি সমস্যাটি পূরণ করতে দিলেন, রসরাজ সাথেসাথেই তা পূরণ করে
দিলেন।

সমস্যা ---
“এক নীলমণি বিনা তথা নন্দরাণী!”
সমস্যা পূরণ ---
  

.                           *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
একমাত্র বিষ-বৈদ্য তুমি নারায়ণ!
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

মহারাজ গিরীশচন্দ্রের ভীষণভাবে অর্থকষ্ট হওয়াতে মাঝে মাঝে তিনি রস-সাগরের সাথে
নিজের সাংসারিক দুরবস্থার কথা বলতেন। একদিন তিনি রস-সাগরকে বললেন “একমাত্র
বিষবৈদ্য তুমি নারায়ণ!” তখন রস-সাগর সমস্যাটি এভাবে পূরণ করে ছিলেন . . .

সমস্যা ---
“একমাত্র বিষ-বৈদ্য তুমি নারায়ণ!”
সমস্যা পূরণ ---
    

.                                             *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
এক সঙ্গে সব গুণ কোথা রয় কবে?
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন রস-সাগর মহাশয় শান্তিপুরে কোন এক ব্যাক্তির বাড়িতে বিদায় আনতে
গিয়োছিলেন। গৃহস্বামী ভিষণ ধনী ও বিদ্বান লোক হলেও তিনি কিছুটা অহঙ্কারী ছিলেন।
তখন রস-সাগর কথায় কথায় গৃহস্বামীকে লক্ষ্য করে বলেন “এক সঙ্গে সব গুণ কোথা রয়
কবে?” এটা শুনে বিদায় অধ্যক্ষ মহাশয় বলেন এই সমস্যাটি আপনাকেই সমাধান করতে
হবে। তখন  রস-সাগর এই সমস্যাটি এভাবে সমাধান করেছিলেন।

সমস্যা ---
“এক সঙ্গে সব গুণ কোথা রয় কবে?”
সমস্যা পূরণ ---
 

.                                             *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
এ সংসারে খোসামুদে বিসর্গের মত
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

মহারাজ গিরীশচন্দ্রের সভায় একজন মোসাহেব ছিল। সে ব্যক্তি এতটাই খোসামুদে  ছিল
যে মহারাজ তার মুখে জল উঁচু, জল নীচু শুনে হাস্যকৌতুক করার জন্য তাকে বেতন দিয়ে
রেখেছিলেন। এই মোসাহেব রস-সাগরকে পছন্দ করত না। একদিন এই ব্যক্তি সভায় বসে
অসম্ভব খোসামোদ শুরু করলে মহারাজ হাসতে হাসতে রস-সাগরের দিকে ইঙ্গিত করে
বললেন “এ সংসারে খোসামুদে বিসর্গের মতো!” রস-সাগরও প্রাণ খুলে সমস্যাটি তখনি
সমাধান করে দিলেন।

সমস্যা ---
“এ সংসারে খোসামুদে বিসর্গের মত!”
সমস্যা পূরণ ---

.                          *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
এ সংসারে রমণীই সাক্ষাৎ রাক্ষসী
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন মহারাজ গিরীশচন্দ্রের কোন বেয়াই, মহারাজকে কটাক্ষ করে রস-সাগরকে এই
সমস্যাটি পূরণ করতে বললেন –“এ, সংসারে রমণীই সাক্ষাৎ রাক্ষসী!” রস-সাগর তাহার
উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে ইহা পূরণ করেছিলেন।

সমস্যা ---
“এ সংসারে রমণীই সাক্ষাৎ রাক্ষসী!”
সমস্যা পূরণ ---

.                          *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ওজনে কমায় ব্যাটা, দামেতে চড়ায়
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

রস-সাগর মহাশয় সংসার চালাবার জন্য কোন এক মুদির দোকান থেকে ধার করে কিছু
জিনিস কিনেছিলেন। রাজবাড়িতে যথাসময়ে বেতন না পাওয়াতে উক্ত মুদির দেনা শোধ
করতে পারেন নি। লজ্জায় তিনি মুদির দোকানের সামনে দিয়ে যেতেন না। কোন কারণে
একদিন খুব সকালে রস-সাগর রাজসভায় যাবার জন্য বাড়ি থেকে থেকে বের  হচ্ছেন,
এমন সময় মুদি এসে তাকে টাকার জন্য চাপ দিল। দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হল।
মুদি তাকে দু-চারটি কড়া কথা বলাতে তিনি ভীষণ অপমানিত বোধ করে রাজ-সভায়
গিয়ে বসলেন। তিনি কিছুটা রাগতভাবে বসে ছিলেন এমন সময় মহারাজ  গিরীশচন্দ্র
সভায় এলেন এবং রসসাগরকে মলিনমুখে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন “রস-সাগর
মহাশয়! আজ আপনার এরূপ ভাব কেন?” তখন রস-সাগর বলেন মহারাজ এক ব্যাটা
মুদির জ্বালায় অস্থির হয়েছি। তার কাছ থেকে ধার করে সংসারের জন্য কিছু জিনিসপত্র
কিনেছিলাম। টাকা দিতে না পারার জন্য আজ সকালে আমাকে সে দশ কথা শুনিয়ে গেল।
আপনার খাজাঞ্চি মজুমদারও টাকা দেবার নাম করছে না। এখন কি যে করি, মুদি ব্যাটা
তো পাগল করে ছাড়ল। তখন মহারাজ সামান্য হেসে বললেন, “ওজনে কমায় ব্যাটা,  
দামেতে চড়ায়!” এটা শুনে তখন রসসাগর মুদির গুণ বর্ণনা করে এই সমস্যাটি পূরণ করেন
এইভাবে . . .

সমস্যা ---
“ওজনে কমায় ব্যাটা, দামেতে চড়ায়!”
সমস্যা পূরণ ---
          

.                          *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ওমা সরস্বতী! তব অপূর্ব্ব ভাণ্ডার
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

শান্তিপুরে সরস্বতী নামে একজন বয়স্কা বিদুষী ব্রাহ্মণ মহিলা রস-সাগরকে ছেলের  মত
স্নেহ করতেন। তার বাড়িতে সরস্বতী পূজো উপলক্ষে রস-সাগরকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন।
মহিলা বলেন বাবা রস-সাগর! আমার ভাণ্ডার অতি সামান্য বিশেষ কিছু আয়োজন করতে
পারি নি। এটা শুনে রস-সাগর হাসতে হাসতে বলেন “ওমা সরস্বতী! তব অপূর্ব্ব ভাণ্ডার।”
এটা  শোনা  মাত্র  ব্রাহ্মণ মহিলা বলেন “বাবা তোমার সমস্যাটি তোমাকেই পূর্ণ করিতে
হবে।” রস-সাগর তখনি তা পূরণ করে দেন।

সমস্যা ---
“ওমা সরস্বতী! তব অপূর্ব্ব ভাণ্ডার!”
সমস্যা পূরণ ---
       

.                                *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ওরে আমার তুমি
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

মহারাজ গিরীশচন্দ্রের সময়ে বিশেষ ক্ষমতা-প্রাপ্ত এক কালেক্টর সাহেব গভর্ণমেন্টের
আদেশে নিস্কর জমির উপর দুঃসহ কর বসাতে শুরু করেন। এক জন বাঙালী ডেপুটী
কালেক্টর বাবু উক্ত সাহেবের প্রিয়পাত্র হবার জন্য এ বিষয়ে তাকে যথেষ্ট পরামর্শ  
দিয়েছিলেন। মহারাজ গিরীশচন্দ্র একথা জানতে পেরেই রস-সাগরকে বলেন কালেক্টর বাবু
এলে তাকে একটু শিক্ষা দিতে হবে। কালেক্টর বাবু এলেই কথায় কথায় আমি আপনাকে
প্রশ্ন করব এবং আপনি তাকে উদ্দেশ্য করে সমস্যা পূরণ করবেন। নির্দিষ্ট দিনে  ডেপুটী
বাবু মহারাজের সভায় এলেন। মহারাজের সাথে নিস্কর জমির বিষয়ে আলোচনা হলো।
রস-সাগর কাছে বসে সব শুনলেন। তখন ডেপুটী বাবু জিজ্ঞাসা করলেন “ইনি কে?”  
মহারাজ বললেন “ইনি একজন উপস্থিত কবি। কেহ কোন সমস্যা দিলে ইনি সাথে সাথেই
পূরণ করে দিতে পারেন।” তখন ডেপুটী বাবু প্রশ্ন করলেন, “ওরে আমার তুমি!” রস-সাগর
তখনি তাকে উদ্দেশ্য করে এই সমস্যাটি পূরণ করেন।

সমস্যা----
“ওরে আমার তুমি!”
সমস্যা পূরণ ১
    

তখন মহারাজ কৃত্রিম-ক্রোধ-ভরে রস-সাগরকে বললেন, “কাহাকে কি বলিতেছ?” গুণধর
রস-সাগর মহাশয়ও ছাড়বার পাত্র নন। তক্ষুনি তিনি অন্য প্রকারে উক্ত সমস্যাটি পূর্ণ করে
দিলেন . . .

সমস্যা পূরণ ২


.                                      *******************

.                                                                                
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
ওরে সর্ব্বনেশে
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।

একদিন প্রশ্ন করা হয়েছিল  “ওরে সর্ব্বনেশে”। রস-সাগর এভাবে পূরণ করেছিলেন।

সমস্যা ---
“ওরে সর্ব্বনেশে।”
সমস্যা পূরণ ---