রস-সাগর কবি কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ীর সমস্যা পূরণ কবিতা
|
গৌরীকে অর্দ্ধাঙ্গে ধরি’ রেখেছেন হর
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
একদিন মহারাজ গিরীশচন্দ্র হাসতে হাসতে রস-সাগরকে এই সমস্যাটি পূরণ করতেদিলেন
“গৌরীকে অর্দ্ধাঙ্গে ধরি’ রেখেছেন হর!” রস-সাগর তা এভাবে পূরণ করে দিলেন . . .
সমস্যা --- “গৌরীকে অর্দ্ধাঙ্গে ধরি’ রেখেছেন হর!”
সমস্যা পূরণ ১ ---
সাংসারিক কষ্ট যদি হয় অতিশয়,
বাটীর কর্ত্তার ইচ্ছা, ---ব্যয় অল্প হয় |
দুটী পেট্ এক হ’লে মন্দ নাহি হবে,
সাংসারিক কষ্ট হায় অনেক কমিবে |
এ বিষয় মনে মনে ভাবি’ নিরন্তর
‘গৌরীকে অর্দ্ধাঙ্গে ধরি’ রেখেছেন হর !’
মহারাজ এ পূরণ শুনে হাসতে হাসতে বললেন, “আপনি রস-সাগর! আপনার নামের
সার্থকতা রেখে সমস্যাটি পূরণ করে দিন।” তখন রস-সাগর মহারাজের প্রকৃত উদ্দেশ্য
বুঝতে পেরে সমস্যাটি পুনরায় এভাবে পূরণ করে দিলেন . . .
সমস্যা পূরণ ২ ---
সকলি অসার, হায় এ পোড়া সংসারে,
নিতম্বিনী নারী হ’লে সার বলি ভাতারে
এ বিষয় মনে মনে ভাবি’ নিরন্তর
‘গৌরীকে অর্দ্ধাঙ্গে ধরি রেখেছেন হর !’
. *******************
[ ব্যাখ্যা –
“ঘোল খাবে হরিদাস, কড়ি দিবে নিধি,” --- মহারাজ রস-সাগরের কবিত্বে মুগ্ধ হয়ে আনন্দ
অনুভব করবেন, কিন্তু আমি নিজে রস-সাগরকে টাকা দিব।
“কে তুমি তা ভুলে গেলে রাজীবলোচন” ---হে রাজীব-লোচন! তোমার একবার মনে করে
দেখা উচিত, তোমার অবস্থা পূর্বে কি ছিল আর এখন কি হয়েছে।
ভগ্ন দশানন --- এক একটি টাকার উপরি-ভাগে এক একটি রাজা বা রাণীর মুখ
আঁকা থাকে ; আনন শব্দের অর্থ টাকা! সুতরাং দশানন শব্দের অর্থ দশ টাকা।
তাহাও “ভগ্ন” হবে। মানে দশ টাকা আমার পাওনা, তাও তুমি কমাতে চাও।
“কাটা গেল সেনাপতি” --- “সেনাপতি” শব্দের অর্থ সেনানী অর্থাৎ ষড়ানন কার্ত্তিক। সুতরাং
ষড়ানন অর্থাৎ ছয় টাকা বাদ গেল।
“দেখা দিল বিধি” --- বিধি অর্থাৎ ব্রহ্মা। ব্রহ্মা চতুরানন অর্থাৎ চারি টাকা। এখন ছয় টাকা
বাদ দেয়াতে বাকী থাকে মাত্র চার টাকা। ]
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
ঘোল খাবে হরিদাস, কড়ি দেবে নিধি
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
মহারাজ গিরীশচন্দ্রের সময় রাজীব-লোচন নামে একজন ইজারদার ছিলেন। প্রথমে তিনি
অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন, কিন্তু মহারাজের কাছ থেকে ইজারদারী নিয়ে ক্রমে ক্রমে নানা ভাবে
তিনি অর্থ উপার্জ্জন করেছিলেন। একদিন রস-সাগর রাজবাড়ি থেকে দশ টাকার একটি
বরাতি চিঠি নিয়ে রাজীব-লোচনের কাছে গেলেন। রাজীব-লোচন সুবিধা পেয়ে রস-
সাগরকে দশ টাকার বদলে ছয় টাকা বাদ দিয়ে ও রসিদ নিয়ে বাকী চার টাকা দিতে
চাইলেন। দশ টাকার বদলে চার টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হবে, এটা ভেবে তিনি
মনকষ্টে ম্লান হয়ে গেলেন। তখন রাজীব-লোচন মহারাজকে লক্ষ্য করে রস-সাগরকে
বললেন, “ঘোল খাবে হরিদাস, কড়ি দেবে নিধি।” রস-সাগরও রাজীব-লোচনকে কটাক্ষ
করে এভাবে সমস্যাটি পূরণ করে দিলেন . . .
সমস্যা --- “ঘোল খাবে হরিদাস, কড়ি দেবে নিধি।”
সমস্যা পূরণ ---
কে তুমি তা ভুলে গেলে রাজীব-লোচন !
এ রস-সাগর দেখে ভগ্ন দশানন |
কাটা গেল সেনাপতি, দেখা দিল বিধি,
‘ঘোল খাবে হরিদাস, কড়ি দেবে নিধি |’
চক্রবাকী বাঞ্ছা করে চন্দ্রের উদয়
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
একদিন মহারাজ গিরীশচন্দ্র রস-সাগরকে বললেন, আপনাকে একটা জটীল সমস্যা পূরণ
করতে দেব। এটা বলেই তিনি সমস্যা দিলেন, --- “চক্রবাকী বাঞ্ছা করে চন্দ্রের উদয়।” রস-
সাগর তখনি তা এভাবে পূরণ করে দিলেন . . .
সমস্যা --- “চক্রবাকী বাঞ্ছা করে চন্দ্রের উদয়।”
সমস্যা পূরণ ---
বিষম দুরন্ত শত্রু হলে পরাজিত,
কার মনে মহা হর্ষ না হয় আগত
বিরহে যে দুঃখ হয় চন্দ্রের উদয়ে,
চকী তাহা জানে ভাল নিজের হৃদয়ে
শুন হে গিরীশ-চন্দ্র ! সুষশে তোমার
চন্দ্রোদয় তিরস্কৃত হোগ্ অনিবার |
বিরহ-বেদনে তাই ব্যথিত-হৃদয়
‘চক্রবাকী বাঞ্ছা করে চন্দ্রের উদয় |’
চক্রবাকী বাঞ্ছা করে চন্দ্রের উদয়
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
একদিন শ্রীশচন্দ্রের এক বন্ধু রস-সাগরকে বললেন, মহাশয়! আপনি ত ‘রসের সাগর’।
আপনাকে আমার একটি রসের সমস্যা পূরণ করে দিতে হবে। এটা বলে তিনি সমস্যাটি
পূরণ করতে দিলেন, --- “চপলা না হলে তাঁর কিবা আর গতি!” রস-সাগরও এই রসাত্মক
কবিতাটী এভাবে পূরণ করে দিলেন . . .
সমস্যা --- “চপলা না হ’লে তাঁর কিবা আর গতি!”
সমস্যা পূরণ ---
লক্ষ্মীরে চপলা বলি দুর্নাম রটায়,
সাগরেরি দোষ তাহে, লক্ষ্মীর কি তার?
পুরাণ পুরুষ এক --- বয়ক্রম যার
গণনা করিতে পারে, সাধ্য হেন কার?
এ হেন বুড়ার হস্তে লক্ষ্মীরে ধরিয়া
সাগর সঁপিয়া দিল, কিছু না ভাবিয়া !
হায় রে বুড়ার হাতে পড়িলে যুবতী
চপলা না হলে তাঁর কিবা আছে গতি!
চি-প্রত্যয় বলে তারে হয় অনুমান
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
শ্রীশচন্দ্রের এক বন্ধু একবার রস-সাগরকে এই সমস্যাটি পূরণ করতে দিয়েছিলেন, --- “চি-
প্রত্যয় বলে তারে হয় অনুমান।” তিনি আরও বলেছিলেন যে, একটি মাত্র চরণ দিয়েই
এটা পূরণ করতে হবে। রস-সাগর এভাবে পূরণ করে দিয়েছিলেন . . .
সমস্যা --- “চি-প্রত্যয় বলে তারে হয় অনুমান।”
সমস্যা পূরণ ---
ধনবান্ নিঃস্ব হয়, নিঃস্ব ধনবান্ ,
‘চি-প্রত্যয় বলে তারে হয় অনুমান।’
চারি বর্ণ এক ক’রে দিও এই দেশ
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পিতা রাজা রঘুরাম মৃত্যুর কিছু আগে তার পুত্র কৃষ্ণচন্দ্রকে সমস্ত
সম্পত্তির উত্তরাধিকারী না করে তার সৎ ভাই রামগোপালকে উত্তরাধিকারী করার জন্য
নবাব আলিবর্দ্দী খাঁর অনুমতি চেয়েছিলেন। রঘুরামের মৃত্যুর কিছু পরেই রামগোপালও
নবাবের কাছে রাজ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন। কৃষ্ণচন্দ্র কাকার চেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য
নবাবের প্রধান প্রধান অমাত্য, কর্ম্মাধ্যক্ষ ও জগৎশেঠ প্রভৃতি সম্ভ্রান্ত ও পদস্থ ব্যক্তি-
গণের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। রামগোপালের কিছুমাত্র বিদ্যা-বুদ্ধি ছিল না। তিনি এত
ধূমপান করতেন যে ধূমপানই তার জীবনের একমাত্র ব্রত হয়ে উঠেছিল। একদিন কৃষ্ণচন্দ্র
ও রামগোপাল দুজনেই নবাব আলিবর্দ্দী খাঁর সাথে পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার সম্বন্ধে
মীমাংসা করতে যাচ্ছিলেন। কৃষ্ণচন্দ্রের পরামর্শ মত মুর্শিদাবাদের রাজপথের চকের
দুদিকেই কিছু লোক অতি উত্কৃষ্ট তামাক সেবন করছিলেন। রামগোপাল সেই জায়গায়
এসেই তামাকের সুগন্ধে মহিত হয়ে গেলেন। নবাবের কাছে অনেকক্ষণ খাওয়া হবে না,
এটা ভেবেই তিনি বাহকদের পালকী নামাতে বললেন। তার চাকরকে বললেন “ওরা যে
তামাক খাচ্ছে তার এক ছিলিম সাজিয়ে দে। ”ধূমপায়িগণ পরিকল্পনামত চাকরকে ছলে ও
কৌশলে তামাক দিতে দেরী করল। এদিকে তার জন্য তামাক সাজার ব্যবস্থা হচ্ছে আর
ওদিকে নবাব সাহেব যথাসময়ে সভায় এসে দরবার করতে বসলেন। কৃষ্ণচন্দ্র আগেই
নবাবের সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন, কিন্ত ধূমপানরত রামগোপাল যথাসময়ে সভায় যেতে
পারলেন না। তখন কৃষ্ণচন্দ্র বিনীতভাবে নবাবকে নিজের প্রার্থনার কথা জানালেন। নবাব
সভাসদ্ গণকে জিজ্ঞাসা করলেন, রঘুরাম এরকম বিজ্ঞ ও গুণবান পুত্রকে রাজ্য না দিয়ে
কেন সৎ ভাইকে রাজ্য দিতে চেয়েছিলেন। উত্তরে সভাসদ্-গণ বললেন, “জাহাপনা! মনে
হয় পুত্রের কম বয়সের জন্য রঘুনাথ তাকে রাজ্য দিতে চান নি। ”তখন নবাব জানতে
চাইলেন, “রামগোপাল কোথায়?” কৃষ্ণচন্দ্র বললেন “তিনি মুর্শিদাবাদে চকের পথে বসে
তামাক খাচ্ছেন।” নবাব আলিবর্দ্দী খাঁ তাকে আনার জন্য একজন দূত পাঠালেন। ঐ দূত
এসে বলল “জাঁহাপনা যাহা শুনেছেন তা সম্পূর্ণ সত্যি।” এটা শোনা মাত্রই নবাব তাকে
নিতান্ত অসার ও অপদার্থ ভেবে কৃষ্ণচন্দ্রকেই রঘুরামের উত্তরাধিকারী হবার আদেশ
প্রদান করলেন। মহারাজ গিরীশচন্দ্র পূর্ব্ব-পুরুষের এই সব ঘটনা সভায় বসে বর্ণনা
করছিলেন, এমন সময় তিনি রস-সাগরের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন, “চারি বর্ণ
এক করে দিও এই দেশ?” রস-সাগর মহারাজের মনের ভাব বুঝতে পেরে এই প্রশ্নের
উত্তর সাথে সাথেই দিয়েছিলেন।
সমস্যা --- “চারি বর্ণ এক ক’রে দিও এই দেশ।”
সমস্যা পূরণ ---
চারি বর্ণ এক করে দিও এই দেশ |”
“তামাক” আমার নাম, ব্যাপ্ত চরাচর,
প্রবল কলির আমি প্রবল কিঙ্কর |
সুবিশাল ব্রহ্মাণ্ডের মঙ্গল-সাধনে
ভাবিয়া চিন্তিয়া পূর্ব্বে ব্রহ্মা মনে মনে
ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য আর শূদ্র জন,---
এই চারি-বর্ণ-ভেদ করেন তখন |
পরম প্রভাবশালী কলি মহাশয়
একথা শুনিবামাত্র ক্রুদ্ধ অতিশয় ;
মোর প্রতি শেষে তাঁর হইল আদেশ,---
“চারি বর্ণ এক ক’রে দিও এই দেশ |”
চিরদুঃখী হ’লে তার মঙ্গল মরণ
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
একদিন সমস্যা উঠেছিল, “চিরদুঃখী হ’লে তার মঙ্গল মরণ” ! রস-সাগর এভাবে সমস্যাটি
পূরণ করেছিলেন।
সমস্যা --- “চিরদুঃখী হ’লে তার মঙ্গল মরণ!”
সমস্যা পূরণ ---
চোক্ গেল রে বাবা
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
একদিন এক জন প্রশ্ন করলেন, “চোক্ গেল রে বাবা।” রস-সাগর দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের
উক্তি দিয়ে তখনি এই সমস্যাটি পূরণ করেছিলেন।
সমস্যা --- “চোক্ গেল রে বাবা।”
সমস্যা পূরণ ---
( বলিরাজকে লক্ষ্য করিয়া শুক্রাচার্য্যের উক্তি )
মূর্খ ভিন্ন সর্ব্বস্ব খোয়ায় কোন্ জন ?
বার-বার বলিরাজে করেছি বারণ |
গুরু-বাক্য অবহেলে, --- এম্নি ব্যাটা হাবা !
গাড়ুর মধ্যে থেকে আমার ‘চোক্ গেল রে বাবা |’
. *******************
[ ব্যাখ্যা – অমৃত-পান করেছিলেন বলে দেবগণ অমর হয়ে রয়েছেন। কথিত আছে
কাশীধামে দেহত্যাগ করতে পারলে তারা দেবাধিদেব মহাদেব হয়ে আনন্দ-
কানন কাশীধামে বিরাজ করতে পারতেন। দেবগণ অমর হয়েছেন বলে এটা আর তাদের
ভাগ্যে ঘটছে না। এই কারণেই দেবগণ আক্ষেপ করে বলছেন, কেন না বুঝে আমরা অমৃত
পান করেছিলাম! … ]
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
ছি ছি ছি অমৃত-পান করেছিলাম কেনে?
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
যখন মহারাজ গিরীশচন্দ্রের কাকা দিগ্বিজয়চন্দ্র কাশীধামে বসবাস করছিলেন, তখন রস-
সাগরও বিশ্বেশ্বর দর্শনের জন্য কাশীধামে গিয়েছিলেন। রস-সাগর যখন তার সঙ্গে দেখা
করতে যান, তখন দিগ্বিজয়চন্দ্র প্রশ্ন করেন “ছি ছি ছি অমৃত-পান করেছিলাম কেনে?” রস-
সাগর কাশীধামের মহিমা বর্ণনা করে এভাবে সমস্যাটি পূরণ করেছিলেন . . .
সমস্যা --- “ছি ছি ছি অমৃত-পান করেছিলাম কেনে?”
সমস্যা পূরণ ---
জলে কিংবা স্থলে মৃত্যু, জ্ঞানে কি অজ্ঞানে,
মহামন্ত্র মহেশ আপনি দেন কাণে |
ম’লে জীব হয় শিব যত্ক্ষণে তত্ক্ষণে,
দেবতার আর্ত্ত-নাদ আত্ম-অভিমানে |
ক্ষিতি-মুক্ত-বারাণসী-মহিমা কে জানে,
অমর মরিতে চায় আসি’ কাশী-স্থানে |
ম’লে হ’তাম দেবের দেব আনন্দ-কাননে,
‘ছি ছি ছি অমৃত-পান করেছিলাম কেনে ?’
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর অতি ভয়ঙ্কর
কবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী
কবিভূষণ শ্রী পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভটসাগর সংগৃহিত ও সম্পাদিত, "রসসাগর কবি
কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মহাশয়ের বাঙ্গালা-সমস্যা-পূরণ" গ্রন্থ থেকে নেওয়া, (১৯২০)।
একদিন কৃষ্ণনগরের যুবরাজ শ্রীশচন্দ্র বন্ধুগণের সাথে নিজের বাড়িতে বসেছিলেন, এমন
সময় রস-সাগর সেখানে উপস্থিত হলেন। তখন যুবরাজ প্রশ্ন করেন, “ছিয়াত্তরের মন্বন্তর
অতি ভয়ঙ্কর।” রস-সাগর এই ভীষণ মন্বন্তরের স্বরূপ বর্ণনা করে এই সমস্যাটি পূরণ
করেন।
এখানে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এর মর্মান্তিক বিবরণ দিয়েছেন। উল্লেখ পাই রেজা খাঁ এবং
গভর্নর কার্টিয়ারের।
সমস্যা --- “ছিয়াত্তরের মন্বন্তর অতি ভয়ঙ্কর।”
সমস্যা পূরণ ---