কবি রতনতনু ঘাটীর কবিতা ও ছড়া
|
মাধবী রঙের মেয়ে
কবি রতনতনু ঘাটী
পোর্টব্লেয়ার থেকে প্রকাশিত পত্রিকা “দ্বীপবাণী” থেকে।
ওদিকে যে কামিনী গাছটা বৃষ্টিতে ভিজছিল
আজ তার ফুল-ফোটানোর দিন।
গাছটার গোড়ায় জলে-কাদায়
শঙ্খ লেগেছে খরিশ সাপ-সাপিনীর।
গাঁ-সুদ্ধ সবাই অবাক। ফুল ফওটানোর সঙ্গে
শঙ্খ লাগার সম্পর্ক খুঁজছে গাঁয়ের মোড়ল।
গাঁয়ের মাধবী রঙের য়ে মেয়েটা
আজই চোদ্দ পেরোচ্ছে
সে জানে ফুল ফুটলে গাছের আনন্দ হয়।
তাই এই ভরা বর্ষার রাতে শঙ্খ লাগার শব্দ
ছড়িয়ে পড়ুক। কামিনী আজই প্রথম
ফুল ফোটানোর আনন্দ খুঁজে পাক।
আর শঙ্খ লাগুক, গোটা পৃথিবী জুড়ে শঙ্খ লাগুক।
মাধবী রঙের মেয়েটি আজ বড় শীত কাতুরে।
. ***************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
আলোক অভিসারী
কবি রতনতনু ঘাটী
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী পোর্টব্লেয়ার থেকে প্রকাশিত পত্রিকা “শারদীয়
দ্বীপবাণী” ১৪১১ সংখ্যা (২০০৪) থেকে।
আকাশ যখন কাছে তখন চাঁদের মায়া ভুলে
অস্তপারের আঁধার মানিক দরজা দিল খুলে।
জন্মান্ধ
কবি রতনতনু ঘাটী
“শারদীয় দেশ” পত্রিকা ১৪২০ সংখ্যা (২০১৩) থেকে।
আমার জন্মান্ধ মাকে বাবা ভালবেসে বিয়ে করেছিল।
লোকে বলত, “অবিনাশটা বড্ড ভাল।”
সকালবেলা আমাদের বাগান থেকে
গ্রামীণ সংবাদ
কবি রতনতনু ঘাটী
কবি উত্তম দাশ ও কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত “আধুনিক প্রজন্মের কবিতা” কাব্য
সংকলন (১৯৯১) থেকে নেওয়া।
সাত দিন সাত রাত্রি মেজবউ ঘুমোতে পারেনি।
ফুলশষ্যা থেকে একবছর পরের বিয়ের দিন পর্যন্ত
কখনো এমন হয়নি তার।
এই দুপায়ে আলতা পরছে তো এই সাবান দিচ্ছে মাথায়,
এই নখরঞ্জনি না আনার জন্যে বরকে গঞ্জনা দিচ্ছে
তো এই শাখা পরিষ্কার করছে,
এই পাশের বাড়ির টুকি বউকে বলতে যাচ্ছে হাঁস-মুরগি দেখার কথা।
বিশ বছরে দুবার শাঁখা ভেঙেছে বলে কী লজ্জা!
পাওয়া
কবি রতনতনু ঘাটী
কবি উত্তম দাশ ও কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত “আধুনিক প্রজন্মের কবিতা” কাব্য সংকলন
(১৯৯১) থেকে নেওয়া।
একজন অপমান এসে বললেন, আপনার বসার ঘরে আমি একটু বসতে পারি কি?
তোমার জন্মদিনে
কবি রতনতনু ঘাটী
কবি উত্তম দাশ ও কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদিত “আধুনিক প্রজন্মের কবিতা” কাব্য
সংকলন (১৯৯১) থেকে নেওয়া।
নানারকম মানুষ থেকে
বেছে নিলাম পুরুষ যেটি
নদীর জলে নৌকো ভাসে
সঙ্গে আমি সেই মেয়েটি।
সেই যে দূরের হলদি নদী
পেরিয়ে ছোট একটি গ্রামে
দাঁড়িয়ে থাকা যে মেয়েটির
মুখশ্রীতে সন্ধ্যা নামে।
কতরকম কদম পাতা
হৃদয় দুটির মধ্যিখানে
আমরা ছোট বোন দুটিও
বিরাম চিহ্নে খামতে জানে।
আমিও জানি তবু কেবল
যাচ্ছি ডুবে অঢেল ঋণে
চাও যদি তো সঙ্গে থাকি
আজকে তোমার জন্মদিনে।
. ***************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
প্রণয় সংবাদ
কবি রতনতনু ঘাটী
কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও কবি দিপক রায় সম্পাদিত “এই শতাব্দীর প্রেমের কবিতা”
কাব্য সংকলন (১৯৮৭) থেকে নেওয়া।
একদিন হলদিয়ার দিক থেকে নীল আকাশ ভেঙে
রাজহংসীর মতো উড়তে উড়তে মহিষাদলে এলে তুমি,
ক্ষত
কবি রতনতনু ঘাটী
কবি আশিস সান্যাল ও কবি মৃণাল বসুচৌধুরী সম্পাদিত “বাংলা কবিতার ভূবন” কাব্য
সংকলন (২০০৭) থেকে নেওয়া।
সেদিনের সেই গল্পটার কথা যদি বলো
আমি বলব---আমার কিচ্ছু মনে নেই।
অতশত কিছু মনে থাকে না বলেই
সেই যেদিন ছোট্ট নদীর ধারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে,
তার কোনো ক্ষত আজ নেই।
পূজোর কবিতা
কবি রতনতনু ঘাটী
অনুপকুমার মহাপাত্র সম্পাদিত “সহজ পাঠের কবিতা” কাব্য সংকলন (২০০৩) থেকে
নেওয়া।
ইচ্ছে করেই তোমাকে রাত্রি এবং রাত্রিকে বিভাবরী বলে ডাকতুম।
তোমরা দুজন ইউনিভার্সিটির ক্লাসের ফাঁকে
লনে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করতে খুব!
জলবন্দনার শব্দে
কবি রতনতনু ঘাটী
কবি উত্তম দাশ, কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন ও কবি পরেশ মণ্ডল সম্পাদিত “কবিতা : ষাট সত্তর”
কাব্য সংকলন, (১৯৮২) থেকে নেওয়া।
পটের রাধাকৃষ্ণের মত এখন
হীরকখণ্ডের ন্যায় ঈষৎ মগ্ন চাঁদটির দিকে চেয়ে থাকা যাক।
এই দিকে পথ, অই দিকে বিপথের কুহক থেকে
ভেসে আসছে বেদগান, জলবিম্বের বিভোরতা