কবি রীনা তালুকদারের কবিতা
*
সুষম বণ্টন
কবি রীনা তালুকদার

হৃদপিন্ডের প্লটে প্রেম নিয়ন্ত্রণ না থাকলে
অসুবিধার কোনো নেই কারণ
বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় হাইব্রিড পদ্ধতি
নির্দ্ধিধায় করা হোক ব্যবহার
সুষম বন্টনে জন প্রেম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব
খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে নিন লম্বা শ্বাস
পাঁজরের প্রকোষ্ঠ করলে বড় ক্ষতি কী ?
বাড়ন্ত প্লট পুনঃ ডিমারগেশন করে নিবেন
সেখানে হাইরাইজ হৃদয়ের সুপরিকল্পিত খোপে
চায় যে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে
বরাদ্দ দিলেই সব ঝক্কি ঝামেলা শেষ।

.                   ****************     

.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
যেতে চায় না মন
কবি রীনা তালুকদার

চায় না যেতে বাউরি মন
ইট বালি পাথরে গেছে মিশে
খেরুয়া জীবনের গোলক
পলেস্তারার ফাঁটলে জাগে আদিত্য চাঁদ
এখানে শরতের মেঘগুচ্ছ থাকে অপেক্ষায়
সোনালী সময়ের হন্তারক কাল
চিক্ চিকে রোদেল উপবন
পারি না তাকাতে আইবল কণ্টাক্টে
মিউকাস পর্দা গুটায় রঞ্জকের তাড়ায়
শত শত কথার শব্দ কণিকা থাকে থমকে
বাতাসের বিটল বায়নায়
যাই না যাই ভাবনার মনুয়া পাখি ওঠে জেগে
হারিয়ে যাবার অতিশয় আশংকায়
হৃৎপিন্ডের সাইনো এট্রিয়ালার নোড
পাঠায় এলোমেলো সংকেত মস্তিস্কে।

.                   ****************     

সাইনো এট্রিয়ালার নোড - হৃদস্পন্দনের সূত্রপাত ঘটায় এবং হার্টের ক্রিয়া ও ছন্দময়তা
.                             নিয়ন্ত্রণ করে।

.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অলস শরৎ
কবি রীনা তালুকদার

সাইনোপসের সাইরেন রাখে সতেজ
ডবকা দিনের অ্যাসেটিলিন অ্যামপ্লিফায়ার
রূপালী মেঘ উড়ে উড়ে দেখা হবে
গুচ্ছ গুচ্ছ এই শরতের আকাশ জুড়ে
শীতল জলের খলবলে হাওয়ায়
অতলে পদ্ম পাতার শিকড়ে
সাপ সাপ খেলায় শাপলার লুকোচুরি
ফুটবে অজান্তে দু’ধারে দীঘির সজল স্বজন
বাবলার প্রলম্বিত ডালে জলস্থলে বিপ্রতীপ ফুল
যেই দিবে গভীর গহনে দুর্দান্ত পানকৌড়ি ডুব
থতমত কলমীর শাখা উপচাবে জলজ স্পার্ক
কানাকানি নলখাগড়ার ঢেউ ঢেউ নৃত্য
যায় বাঁক মিলিয়ে যাবার বেলায়
দেয় বিলিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঢেউয়ের উৎসব;
অপেক্ষার লণ্ঠন ধরা পরম্পরার মৌল রসায়নে
পিছু ফিরে বন্য বালিহাঁস যেতে যেতে যায় বলে
হলুদ খাম হাতে অলস শরৎ
না দেখার দুর্মদ আগুনে পঁই পঁই পুড়তে থাকো।

.                   ****************     

অ্যাসেটিলিন - বর্ণবিহীন গ্যাস, যা জ্বললে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে।
অ্যামপ্লিফায়ার - ধ্বনি বর্ধক যন্ত্র।


.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পরাধীন ভালোবাসা
কবি রীনা তালুকদার

ভালো যে বাসে সেই করে পরাধীন
ভালোবাসলে সীমাবদ্ধ হয় মুক্ত স্বপ্ন
ছক বাধা কেবলই জীবনের ফর্দ পাঠের হৈ চৈ
হয় বিরক্ত কালক্ষেপণ ভালোবাসাও
একঘেঁয়েমী করে ভর স্নায়ুতে
জিভে এক খাদ্য প্রতিদিন চর্বিত চর্বন
বিস্বাদ মুখে পানসে দৌরাত্ম
ধারিত জীবন বাধ্য বাধক উপকরণে বাধা
শৃংখল আহলাদিত জীবন যাপন
নুন থেকে খসলে নিয়মের চুন
প্রভু-ভৃত্য ভালোবাসার ছোট খাটো চোট্ পাট
সময় তবুও সমান্তরাল থাকা
চাপিয়ে দেয়া সমাজ অন্ধ অনুভূতি
মৌলিক সুখ যায় হারিয়ে নিত্যই
হা-অন্ন জীবন সংবিধানের মৌলিক অধ্যায়ের স্খলন
দায় কার কে খোঁজে; কে করে চিন্তার বিবর্তন
পথে পথে খায় গড়াগড়ি ভালোবাসার বস্তুবাদ
আবেগের নিরপেক্ষ নিউট্রন চার্জ
নিঃশব্দে পাঁজরে ফসফরাস পোড়ে
নিউরো ট্রান্সমিটার মিলের অংক কষে
শৃংখলিত ভালোবাসার ক্ষুধা মেটাতে
সংগ্রামে লিপ্ত অসুখী মানুষ অনন্তের পথে...।

.                   ****************     

নিউট্রন - পরমাণুর ভেতরকার কণিকা যাতে চার্জ বা বৈদ্যুতিক আধান নেই। প্রোটনের
.          সম ওজনের কণাই নিউট্রন।
নিউরো ট্রান্সমিটার - দুই নিউরণের মধ্যবর্তী ফাঁক সাইনপসেস এর মধ্যেকার রাসায়নিক
.                        নিঃসরণ।


.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অভিযান
কবি রীনা তালুকদার

নেমোনা মায়াবী বুক থেকে মাধবী ;
সেই থেকে পাঁজরের উত্তাপে লুকাই মর্মর শীত
হেমন্ত শেষে বাড়তি কোনো চিন্তার নেই আয়োজন
আসতে চাইলে আসুক দুরন্ত বেগে হিমেল হাওয়া
আছি নির্বিকার ধ্যানমগ্ন মনোমান মন্দিরে
মহাসেন ঝড়ের তলোয়ার শান দিয়ে নেই লাভ
মোয়েরাকি পাথর দেয়ালে আড়াল রেখেছি সব
নেই বীভৎস ভয় সামনে কণ্টকিত পথ চলার
সমুদ্র উচ্ছল ঢেউ দেখে ফিরবনা পিছু
যা থাকে থাক তিন ইঞ্চি ভাঁজ ভাঙ্গা কপালে
প্রয়োজনে নয় বিমান ;
চাই মনরকেট অভিযানে পাড়ি দিতে
ভয়ংকর স্পর্শকাতর সরু সংকীর্ণ পথ।

.                   ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অতৃপ্তি নেই
কবি রীনা তালুকদার

যাপিত জীবনের কোনো অতৃপ্তিতে
নেই হা-অন্ন হা-হা-কার
আজকাল মধ্যরাতেও কাক কোকিল ডাকে
অদ্ভূত এক উদাসী দিনমান
বর্ষা বসন্তের হাওয়া হয় না বুঝতে
বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও হবে যা হবার
মিছে ভাবনার কালক্ষেপণ অহেতুক
নাদান মানুষের ভিড়ে চাওয়া-পাওয়ার-
সমন্বয় করা দুরূহ একটা ব্যাপার
স্বাভাবিক বলা কথা প্রকৃতির রূপ সৌন্দর্য
নান্দনিক সবাক নির্বাক চিত্রপট
আকাংখার সফলতা বিফলতা চিরন্তন
অতৃপ্ততাও স্নায়ুতন্ত্রের ইলেকট্রন উচ্ছলতা
স্বপ্ন যা দেখায় অজানার পথ দিতে পাড়ি
ঘুরে বেড়ায় সাইনোপসের সাইকেলে চড়ে
সৃষ্টির নতুন গ্রহের সন্ধানে।

.                   ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
উল্টো রথের সোয়ারী
কবি রীনা তালুকদার

বোকা বটের পাতারা আজকাল
বড্ড উল্টোমুখি উচ্ছন্ন
ঘাড় বাঁকা ষাঁড়ের ভঙ্গি
পৃথিবীর প্রাণীকূল বৃক্ষরাজি
উল্টো রথের সোয়ারী
ভাল না লাগা রোগ বালাই ইদানিং
যেখানে যা দরকার নেই তা জুড়ে
দিব্যি সময়ের গাড়ি যাচ্ছে চলে
রাস্তায় জমা কাদা পানি ছিটিয়ে;
সফেদ স্ক্রিনে আর্বজনার থু থু ছিটানো
একটা মনোভঙ্গি চারিদিকে  
কে শোনে কার কথা কানে খাটো সব
যায় না চেনা পরিচিত জন মানব
ছায়া কায়া পাশ ফিরে শোয়
দেখেও না দেখার একরোখা ভাব ভাবনা
অবাক মগজ বিস্মিত রসের উদ্দীপণ
ব্ল্যাকহোল ব্যস্ততায় ভালোবাসার চোখ
পৃথিবীটা আজকাল উল্টোমুখী উদ্ভ্রান্ত
দেখে দেখে ক্লান্ত সময়ের বাতিকগ্রস্ত চোখ।

.                   ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
শূন্য মহারাজ
কবি রীনা তালুকদার

শূন্য, শূন্যের যত গোলমাল
যাত্রার শুরু শূন্যে  
নাসার বিজ্ঞানী ব্যস্ত ব্যাকুল
মহাশূন্যের শূন্যতায় হিজিভিজি
শূন্য শূন্য নয় আগুন ভরা কুন্ডলী
অন্তহীন গবেষণা মহাশূন্যের শূন্য  
আর্কিমিডিস এখনো কৃষ্ণ আঁধার রাতে
কালো ব্ল্যাক বোর্ড হাতড়ে হাতড়ে
চক ডাস্টারে কী সব আঁকিবুকি করে যায়
গণিতের শূন্য ডান বাম খেলায় মূল্যমান বদলায়
বর্ণিল বুকের শূন্যতায় ঘুরে উদাসী বাউল মন
প্রেমিক প্রবর গোগ্রাসে শূন্যের খোঁজে
দ্রাবিড় আর্য চরাচরে দিশাহীন ছুটে
শূন্য শূন্য হলেও আছে চাহিদা
আনন্দ-বেদনায় আলো আঁধারির আছে খেলা
শূন্য নয় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলয়
শূন্য মহারাজ বিপদসংকুল পথে থাকে বসে
আর্য জাতির আর্যভট্টের শূন্য সমাধান
শূন্যের এতসব কারুকাজেও লাগে ভীষণ শূন্য শূন্য!

.                   ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
তবুও ভালোবাসার গান গাই
কবি রীনা তালুকদার

রোদ পোড়া দুপুরকে ভেংচি কেটে
গেরুয়া বিকেল উদাসী হাওয়ায় খেলাধুলায় ব্যতিব্যস্ত
রাজ হাঁসের শান্ত চোখে নেমে আসে স্থির সন্ধ্যা
কত শত কথার কাকলী জড়িয়ে রাতের গর্ভে ডোবে
দিনান্তে দিনের রংধনু আলো
জংলী বট বয়েসী অশ্বত্থের পাতার ফাঁকে ঝিমায়
আপামর আমজনতা অলস আকাশে উদার দৃষ্টি মেলে
চির দূর নক্ষত্রের উদাসী গান গায়
স্বপ্লিল চোখে শনি, ইউরেনাস, প্লুটো, বৃহস্পতির
আলোর তীর্যকে নিজেদের মিলায়
যায় রঙ বদলে কেবল ক্ষুধার আগুনে ঝলসানো
হত দরিদ্র দ্রাবিড় দাঁড় কাকের পাকস্থলী
সাদা কাপে বাদামী চায়ের ঘোলা ঘূর্ণির দুর্বিপাকে
মুনিয়ার খইভাজা শব্দ ঝুপঝাপ
ডুবোডুবির অস্থির সময় শালিকের সাথে বিসর্জন

তীব্র মরুঝড় হাহাকারেও
হিম বাতাসের ভালোবাসা ছড়ায়
ছন্নছাড়া মহাবিশ্বের মহানস্রষ্টা
কাঙ্গাল ভালোবাসা যাক মিশে
জড়-জীবের অনু- পরমাণুতে।

.               ****************     

জংলী বট - এক ধরনের পাখি, মুনিয়া- এক ধরনের পাখি।

.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ব্যালেন্স শীট
কবি রীনা তালুকদার

প্রেমের শূন্য শ্লেটে
শিখছি নাবালক আঁকা আঁকি
বিন্দু বিন্দু বসে পাশাপাশি
এঁকে যায় আকথার পরাগায়ন কথা
বেতাল সিন্ধুসম কথার সমুদ্র
শাহবাগ চাঁদের হাটে যায় বসে
অফুরন্ত অবিনাশী ছবির বিকিকিনি
লাভ-ক্ষতির লোভে ঘোরপ্যাঁচ
শুভ্র ব্যালেন্স শীটে ফলাফল
রকেট গতি নগর বাড়ীর সদর রাস্তায়
করাঘাত করে বৃত্তের ব্যাসে পাগলা পবন মাঝি
ভীরু চঞ্চুতে এসে যায় ফিরে প্রণয়োল্লাস
লুটেরা চোখ হামাগুড়ি খায় দ্রাক্ষাবনে
লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে কৃষ্ণহাত
নীলদিঘির জলে সাঁতার কেটে কেটে
হয় শিখতে প্রেমের প্রথম পাঠ।

.               ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর