কবি রীনা তালুকদারের কবিতা
*
আগুন
কবি রীনা তালুকদার

ভেতরের ছাই চাপা আগুনে পুড়ে
নির্বাক পাথরও হারালো ভাষা
কী ভাবে খনি করেছো ধারণ এত উত্তাপ!
কোন্ মহাসংকটে গেছো ভুলে তৃষ্ণা
ভাবছো নিঃস্বরণ মহাপাপ ?
সুখ খোলশে ডুবলে মন
দুর্গতির দুঃখ জমে বরফ স্তুপ
এন্টারর্কটিকার বুকে সার্জারী করে দ্যাখো
পৃথিবীর ভূ-গোলের অশ্র“জল
নদীর বিসর্জনে সমুদ্র গর্ভবতী
ঝাঁকে ঝাঁকে প্রবল জোয়ারে;
নদী মোহনায় রূপালী ইলিশ
অমরাবতীর জরায়ু ছিঁড়ে
নেমে আসে ধরণীর বিছানায়
সুর তাল ছন্দ মিলিয়ে
কাংখিত কালিক মহাপ্লাবন।

.               ****************     

.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পরাশ্রয়ী যৌবন
কবি রীনা তালুকদার

পরাশ্রয়ী যৌবন এক অসুখ
দাওয়াই মিলে না মরণেও
চন্ডীদাস রজকীনি মিথ
চিরন্তন এ রোগে ভূগে
ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকার নামও জীবন
বিয়ারিং হওয়া অঢেল ভাল এর চেয়ে
নেই কারো কোন দায় দেনা
কোথায় কবে কোন সন্ধ্যায় ফুটেছে
ক্ষণিকের অতিথি মাত্রিক মাধবীলতা
কে মনে করে তাকে পোড়ায় ধূপ
ইচ্ছে অনিচ্ছার মূল্য কে দেবে ভেবে
কাঁদে না পাগল মন আয়তক্ষেত্রে
যায় দেখা যতদূর সুদূর নক্ষত্রলোকে
অনিশ্চিন্ত ভবিতব্যে ছানি পড়া চোখ
খুঁজে ফেরে সুখ কেবলই অসুখ অযথা
সুখের পরমাণু সোনার হরিণের তাসে
অতলান্তে মুখ গুঁজে থাকে পড়ে
মন তবু মহাকালের পুশব্যাক করুণ পথযাত্রী!

.               ****************     

.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কুমারী ঝর্ণার কথা
কবি রীনা তালুকদার

কুমারী ঝর্ণার জলে নিত্যস্নান
আসে ফিরে নব যৌবন
ভূ-গোলের ব্যাসে যায় মিলে
সৌর জগতের কৃষ্ণ বিবর
লাভা টিউবে উল্লাসের হা-হা-কার
কারো কারো প্রার্থনা একদম বেকার
খোঁজে কেউ নিভাঁজ নিতম্ব
কম বেশি হিসাবের ধুম্রজাল
সুডোল পর্বতের ডোরাকাটা দাগ দেখে
কন্দর্প বিরক্তিতে ভৌঁ দৌঁড়
মুখ ফিরিয়ে মানস ময়না
অভিমানে থাকে পাশ ফিরে
রসের হাড়িতে জল সাঁতার
কিশোর উচ্ছল উত্তাপের অভিদ্রবণ চাপ
নির্ঘুম রজনী যায় কেটে
কাংঙ্খিত মুখ তবুও অচল।  

.               ****************     


লাভা টিউব
- আগ্নেয়গিরি উদগীরনে উত্তপ্ত লাভা স্রোত বের হয় যে পথে।


.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অর্ধেক আপেল
কবি রীনা তালুকদার

অর্ধেক আপেলের প্রয়োজনে পৃথিবীময়
কৌশলী ছুটাছুটি লাঠালাঠি
বুভুক্ষ মন শ্রান্তি খোঁজে
ভ্রান্তির না বোঝা চালে
ঘনবস্তু খেয়ে খেয়ে ঘুরপাক
পৃথিবীকে প্রতি মুহূর্তে ভাঙে গড়ে
নতুন পাটাতন মেলে
পরিমল গন্ধে নষ্ট করে পবিত্রতা
ঘরে বাইরে-বাসে-ট্রামে
জাহাজ-লঞ্চ-নৌকায়
সাধু-সন্যাসী ভিড়ে
মেলায় মেলায় জ্বর তাপে ঘুরে
লোলুপ মন রক্ত শিরায়
অর্ধেক আপেল তবুও চায়
বৃত্তের ব্যাসার্ধে বেহায়া ইচ্ছার
সঙ্গোপণ সুরে বেসুরে
নাট বল্টু টারবাইন ঘুরিয়ে
সুড়ঙ্গ পথে হামাগুঁড়ি খেলে
মহুয়া মাতাল চোখ।

.             ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ইজাদার
কবি রীনা তালুকদার

মৌসুমী পাহাড়টা চাইনা বেচতে
বেচে যে বেচুক বেহুদা
নিজস্ব পাহাড়ের শস্যদানা হলে দরকার
দিবো বিলিয়ে ইচ্ছে যাকে তাকে
কারো কোনো খবরদারী চলবেনা এখানে
পাহাড়ের ঝর্ণাধারায় সবাই স্নানের নয় যোগ্য
যোগ্যতা রাখে যে অধিকার তারই সব
সামর্থে স্রোতের তোড়ে হয় ভাসতে
নয়তো বিগব্যাংয়ের অতলে তলায় সুখ
প্রয়োজনে এ হ্রদের জলে চাষ হোক তেলাপিয়া
ভাল লাগে যাকে সেই কেবল শর্তহীন ইজাদার।  

.            
       ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জিন তত্ত্ব
কবি রীনা তালুকদার

প্রয়োজন খুব একটা জিন
ঠিক তোমার চেহারা আঁকা
চাহিবা মাত্রই বাহককে
দেখা দিবে পিপাসু মনের দরজায়
ইনভিজিবল সত্তার বর্হিপ্রকাশ সঙ্গ
জোড়ায় জোড়ায় হোক সচল
চাওয়া পাওয়ার ইলেট্রো ইন্দ্রিয় উদ্দীপণ
গো গ্রাসে করবে দখল ঘর বাড়ি
হিমালয় চূড়া আরো আরো যা কিছু
জ্যোৎস্না জলে ভিজাবে তুমুল
আঁধারের নাক্ষত্রিক লুকোচুরি থাবায়
নিবে লুটে স্রোতস্বী নদীর পয়স্তি
দাপিয়ে বেড়াক খর চরের তীর ভূমিতে
দিক ভেঙ্গে পারলে সারি বাধা পাড়
ইচ্ছের ছায়ায় যখন তখন
ক্লান্তির নোনা জলে সাঁতরাক প্রমত্ত বিপ্লবী
মানুষ না বুঝুক কথা বার্তার মুন্ড মাথা
ভর বেগের পরিবর্তনে
উন্মাদী বুঝে যাক এখন জোয়ার।

.                   ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
একটি চুমুর জন্য
কবি রীনা তালুকদার

আজলে ডুবে থাকে জলজ চোখ
পানকৌড়ি চোখে তবুও জলের তৃষ্ণা
একটি চুমুর জন্য চব্বিশ ঘন্টা অপেক্ষার
তারা গোণা আকাশের ছাদে উঠে
সমস্ত রাত্রির চোখে কালো রুমাল বেধে
ভোরে সূর্য আলোর বিজ্ঞাপন
এমনতর দিনক্ষণ পাংশু রুচি মুখে
ষ্টেশনের পর ষ্টেশন পেরিয়ে
কাংখিত টার্মিনালে ফেরা
যায় উড়ে দূরে কোথাও মেঘের চাতক
ভালোবাসার ডাহুক সন্ধ্যার আয়েশী ভ্রমণ
লালিমার ঠোঁটে রেখে আদর
গোধূলি বেলা করে পার নিশুতি পাখি
আগাম সোহাগ ইচ্ছে ঘুড়ি
তার কাটা জালে যায় জড়িয়ে
জলমগ্ন আগ্নেয় লেহনে
হয় কখনো করতে একটি চুমুর জন্য
সৌরমন্ডলী ঘুরে আসা এক জীবন অপেক্ষা।

.                   ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অনুমতি নেই
কবি রীনা তালুকদার

অনুমতি না পেলে বাইরেই হয় থাকতে
নীতি নিয়মের বেড়াজাল সবখানে
প্রবেশ নিষেধ বাক্যে আঁধারের খেলা
একরোখা কবে শুনেছে এসব বিধি নিষেধ
দরজার বিলবোর্ড পড়বার সময় কোথায় ?
ব্যস্ত বাগিশের তাওয়ায় রুটি পোড়ে
দুধ উঁচলিয়ে উতপ্ত চুল্লি যাক নিভে
কে চায় : চেয়েছে কখনো কেউ ?
খাদ্য যত থাক সামনে; তাতে কী
চলতি পথে জল স্রোতে শঙ্খের
মাঝে মাঝে রাখতেই হয় মুখ বন্ধ
সব খাবার হয় না হজম
দেখে শুনে হয় খেতে
চলতে হয় দুঃসাহসী বঙ্কিম পথ চিনে
থাকতে হয় ক্ষেপনাস্ত্র উচিয়ে।

.               ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অন্তর গর্হণ
কবি রীনা তালুকদার

কাল কালো ছিল কালো রাত
তুমি একদম ভালো নেই
চারিদিক সন্দেহের ছুটাছুটি
ভালো থাকা যায় নাতো কিছুতেই

ঘুম আসেনি জলডুবি আঁখিপাতে
কাতর এ মন ভেবে ভেবে দিশেহারা
কী আর ক ?

.               ****************     
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর