কবি সরোজ রঞ্জন চৌধুরীর কবিতা
|
কবির স্বপ্ন কবি সরোজরঞ্জন চৌধুরী সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বসু সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৮ (মে ১৯৪১) সংখ্যা থেকে।
সঙ্গী ছিল না কেউ, সামনে দুলিছে নীল-সাগরের ঢেউ অস্ত-সূর্য্য সোনালি আলোয় উজ্জ্বল ঝল-মল--- উদ্বেল চঞ্চল। বালুকা-বেলায় বসেছিনু আমি একা, দূর-দিগন্তে দেখা যায় যেন ঘন নীল বন-রেখা। আমি নহি সেথা একা , আরো কত জনা সাগর-বেলায় উল্লাস-ভরে করিতেছে আনাগোনা। যার আশা চেয়ে বসে ছিনু আমি পাইনি যে তার দেখা, তাই আমি ছিনু একা। সন্ধ্যাবেলায় সমুদ্র-স্নান-শেষে কবির স্বপ্ন থেকে যেন উঠে এল সাগরিকা-বেশে।
|
সনেট্
কবি সরোজরঞ্জন চৌধুরী
(ক্রিস্টিয়ানা রোসেটি-র (১৮৩০-১৮৯৪) Remember me when I am gone away সনেট-এর
অনুবাদ)। উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত বিচিত্রা পত্রিকার ভাদ্র ১৩৪২ (অগাস্ট
১৯৩৫) সংখ্যা থেকে পাওয়া।
আমারে স্মরিয়ো তুমি যবে আমি দূরে যাবো চ’লে,
চ’লে যাবো বহদূরে নীরব প্রদেশে ; বাহু-পাশে
যবে তুমি নারিবে বাঁধিতে মোরে ; ফিরিবার আশে
দাঁড়াবো না ফিরে তবু র’বো প্রতীক্ষিয়া। কোনো ছলে
আর তুমি কহিতে নারিবে যবে আমার সকাশে
আমাদের ভবিষ্য যাহা তুমি কল্পনার বলে
রচিয়াছ মনে, তখন স্মরিয়ো মোরে ; হৃদিতলে
বুঝিবে তখন, মোর সঙ্গ তব নিষ্ফল প্রয়াসে।
যদি তুমি ক্ষণতরে ভুলে যাও মোরে, তার পরে
মনে পড়ে, তথাপি তাহার লাগি’ করিয়ো না শোক।
অতীতের অন্ধকার বিশ্লেষিয়া পাবে কি আলোক?
তারা যদি রেখে যায় মোর স্মৃতি-ছায়া-চিহ্নখানি!
আমারে ভুলিয়া তুমি সুখ যদি পাও ক্ষণতরে ;
আমারে স্মরিয়া তব দুঃখ পাওয়া চেয়ে শ্রেয় মানি।
. ***************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
আকুতি
কবি সরোজরঞ্জন চৌধুরী
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বসু সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার ভাদ্র ১৩৪২ (আগস্ট
১৯৩৫) সংখ্যা থেকে পাওয়া।
আঁধারের এই ঘোমটাখানি খোলো,
আমার পানে নয়ন দুটি তোলো।
. মোর পরাণের সকল আলোর ভাসা
. তোমার মুখে বাঁধ্ লো যে তার বাসা।
. নয়নে মোর আননখানি তোলো,
. আঁধারের এই ঘোম্ টাখানি খোলো
মোর নয়নের সকল আলোর আশা
ঘোম্ টা-মাঝে হারালো তার ভাসা।
. আলো নিয়ে তোমার নয়ন থেকে
. অরুণ-রেখা দাও না তারে এঁকে।
. নয়নে মোর নয়ন দুট্ তোলো,
. আঁধারের এই ঘোম্ টাখানি খোলো।
. ***************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
শেষ সম্বল
কবি সরোজরঞ্জন চৌধুরী
সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বসু সম্পাদিত মাসিক বসুমতী পত্রিকার আশ্বিন ১৩৪২ (সেপ্টেম্বর
১৯৩৫) সংখ্যা থেকে পাওয়া।
সে-দিনের কথা এরি মাঝে ভুলে গেলে
. হৃদয়-বন্ধু মোর!
ভুলিবেই যদি কেন বা তখন এলে,
. এ-অভাগিনীরে পরালে পুষ্প-ডোর!
বন-মায়া
কবি সরোজরঞ্জন চৌধুরী
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত প্রবাসী পত্রিকার মাঘ ১৩৪৯ (জানুয়ারী ১৯৪৩) সংখ্যা
থেকে পাওয়া।
কে তুমি বনপথে চলিছ একাকিনী!
চরণে রণিতেছে নূপুর রিণি-ঝিনি।
. সে-ধ্বনি শুনি মোর পরাণ উন্মনা,
. কমল-পাতে যেন পড়িছে জল-কণা।
. স্বপন-পসারিণী, অচেনা মায়াবিনী!
. কে তুমি বন-পথে চলিছ একাকিনী॥
নূপুর-ধ্বনি শুনি শিহরে বন-ভূমি,
দখিনা কহে কেঁদে, ‘কে তুমি, কে গো তুমি!’
. ফুলেরা ঝরে গেল পুলকে দলে দলে,
. জ্যোছনা লুটাইছে শ্যামল-বনতলে।
. পাপিয়া পিউ-তানে গাহিছে উদাসিনী!
. কে তুমি বন-পথে চলিছ একাকিনী॥
. ***************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
বিদায়
কবি সরোজরঞ্জন চৌধুরী
রচনা ২৬ অগ্রহায়ণ ১৩৩৯, জানিপুর, নদীয়া
কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছেন কবিপুত্র সুপ্রিয় চৌধুরী।
এবার চলিনু, আসিব আবার ফিরে,
দেখা হবে পুন এই সাগরের তীরে,
তবু অকারণে ভাসি যে নয়ন-নীরে,
. শান্তি নাহি-যে মানি।
. আসিব আবার তোমার শোভন দেশে,
. খেলায়ো আবার স্নিগ্ধ মধুর হেসে,
. ভুলায়ো আবার তোমার মধুর বেশে
. আমার পরাণ খানি॥
চলিনু এবার, কর না আমারে মানা,
কেন-যে চ’লেছি আছে তব জানা,
রোধ কর তব করুণ-চাহনি-হানা
. বিদায়-ব্যথিত-পানে।
. বিরহের দিনে আমার ব্যথার ’পরে
. তোমার প্রেমের নিঝর পড়িবে ঝ’রে
. অমৃত-মূরতি তব নিশিদিন ধ’রে
. রবে জাগি মোর প্রাণে।
. ***************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
প্রতীক্ষা
কবি সরোজরঞ্জন চৌধুরী
অনিলকুমার দে সম্পাদিত উদয়ন পত্রিকার মাঘ ১৩৪০ ( জানুয়ারী ১৯৩৪) সংখ্যা থেকে
পাওয়া।
এমনি ক’রে রইবো ব’সে
. বন-বীথির পরে,
অচেনা-যে পালিয়ে বেড়ায়
. তারেই চেনার তরে।
. পাতায় ফুলে রঙ্ লাগিয়ে
. হয়তো বা সে এ পথ দিয়ে
. কোন্ লগনে যাবে চ’লে
. দখিন্-বায়ু-ভরে।
পাখীর গানে দিয়ে যাবে
. কোমল সুধা-স্বর।
চরণ-রেখা রেখে যাবে
. শ্যামল তৃণ প’র।
. আকাশ-পারে সন্ধ্যা-মেঘে
. অঙ্গ-বরণ রইবে লেগে,
. বিদায়-ব্যথা উঠ্ বে বেজে
. করুণ-মর্মরে।
. ***************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর