অসংগতি কবি শশাঙ্ক শেখর রায় এই কবিতাটি এখানেই প্রথম প্রকাশিত হলো।
গরিবি বিষম জ্বালা সামাজিক ন্যুব্জ অবস্থান দুঃখময় সারাপথ ইতস্ততঃ ছড়ানো বিপদ ধনিকের সাথে আছে সুখের সম্পদ গরিবের অধিকার শৃঙ্খলিত সীমাবদ্ধতায় সেখানে লক্ষ্ণণরেখা গন্ডিটানা আছে যেতে বাধা ওপাড়ার সীমানার কাছে নেই শিক্ষা নেই চিন্তা মুক্ত পরিসরে নেই অংশ কোনো অধিকারে সকলই আবদ্ধ যেন ছাউনিহীন ভাঙা কুঁড়েঘরে বিচার সম্পদ সংগী এ যুগের ধারা গরিবি সইবে যত নিত্য ব্যাভিচার নেই কোনো দুঃখের কিনারা ঘরেতে বেকার ছেলেমেয়ে রাজনীতি আকর্ষণ করে নিয়ে যায় অল্পমূল্যে ব্যক্তি সত্ত্বা সকলই বিলায় পিতা-মাতা অসহায় বড় নিরুপায় মাথার উপরে আছে ভারী কন্যাদায় সংসার চালাতে গিয়ে দিনে দিনে সমস্ত বিকায় সমাজে দাপিয়ে দাদাগিরি দম্ভ ব্যাভিচার গরীবের কন্যাগুলি দুর্বৃত্তের লোভের শিকার ওদিকে আর এক জ্বালা শরীরের রোগে শোকে পথ্য চিকিত্সায় খরচ মেটানো বড় দায় মৃত্যু হলে সত্কারও জোটে না শবদেহ নিয়ে শেষে কাড়াকাড়ি চলে “ও আমাদের লোক” এই দাবী করে আনাগোনা গরিবের জন্ম থেকে সাথী অভিশাপ মৃত্যুতেও নেইতো নিস্তার এই নাকি বিধির বিধান শুরু থেকে শেষ অবধি হারিয়ে সমস্ত সত্তা সহ্য করে যেতে হবে নিত্য অপমান |
কৃষক কবি শশাঙ্ক শেখর রায় কবির “মেঘ ভাঙা রোদ” ( মহালয়া, ২০১৩ ) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া | ( কবিতাটি কাস্তে কবি দীনেশ দাস দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। )
সেই কোন পৃথিবীর ঊষালগ্ন হতে সভ্যতার মূল ভিত্তি গড়েছ কৃষিতে তোমরা কৃষক তার অগ্রনী সৈনিক ধূসর ঊষর মাটি পতিত পর্বত সাথে নিত্যদিন যুদ্ধ করে তোমরা এনেছো বীর জীবনের জন্য সেই মূল রসায়ন সবুজ জমিন থেকে সোনালী ফসল কতদিন পড়ে থাকা রথের চাকাকে এনেছ সচল করে বাহির দুয়ারে অন্ধকার হ’তে আজ প্রদীপ্ত আলোতে সভ্যতার সেই তো সোপান লাঙলের ফলা দিয়ে লিখে গেছ জীবনের শ্রেষ্ঠ জয়গান অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিল্প মনিহার সবই তো কৃষিরই আশীর্বাদ তুমিই লিখেছ দেখি মাটির অক্ষরে সভ্যতার শুভবার্তা স্বর্ণদীপ্ত প্রভাতের বানী |
একুশে ফেব্রুয়ারী কবি শশাঙ্ক শেখর রায় কবির “মেঘ ভাঙা রোদ” ( মহালয়া, ২০১৩ ) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া |
একুশে ফেব্রুয়ারী শত শহীদের রক্তিম পথ বেয়ে বিশ্বসভায় বাংলাভাষার স্বীকৃতি হয়েছে জারি শহীদ হয়েছে সালাম রফিক বরকত্ জব্বর মরেছে অনেক তাজা তাজা প্রাণ ভেঙেছে অনেক ঘর অনেক ত্যাগ ও অনেক তিতিক্ষা অনেক দুঃখ অনেক বেদনা বিনিময়ে তারই অর্জিত হলো ভাষা দিবসের দাবী বাংলা আমার মাতৃভাষা যে এ ভাষা কেবল আমারই এ ভাষা আমার মনের ভাবনা আকাশে পাখিরা মেলে দেয় ডানা এ ভাষায় আমি গান গাই কথা বলি এ ভাষা এনেছে নোবেল প্রাইজ রবির গীতাঞ্জলি |
আ মরি বাংলাভাষা কবি শশাঙ্ক শেখর রায় কবির “মেঘ ভাঙা রোদ” ( মহালয়া, ২০১৩ ) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া |
বাংলা আমার মাতৃভাষা যে সত্ত্বার স্বাধীনতা বাংলা আমার মাতৃভাষা যে জীবনের সজীবতা ছোট্ট বেলায় “মা” ডাকে আমার প্রথম কথাটি বলা বাংলা আমার মাতৃভাষার ছোট্ট দোলনা দোলা আমার মাতৃভাষা যে আমার কৈশোরে খেলাঘর আমার মাতৃভাষার অঙনে নেইতো আপন-পর আমার মাতৃভাষা যে আমার শৈশব যৌবন এ ভাষা আমার কল্প কামনা স্বপ্নের মৌবন আমার মাতৃভাষায় আমার প্রথমাকে ভালবাসা এ ভাষার রাজপথে যে আমার নেচেগেয়ে যাওয়া-আসা |
আমার বাংলাভাষার কেবলই মা ডাকে আদরে বাবু-বাছা-বলে আমার মাতৃভাষার আদলে আকাশের পাখি ডাক দিয়ে যায় বৌ কথা কও বোলে এ ভাষায় শুনি ছোট্ট খুকি আর কাঠবেড়ালির আড়ি আড়ি আর খুনশুটি খেলা চলে আমার মাতৃভাষার দুপারে গঙ্গা-পদ্মা ছল ছল করে বয়ে যায় দিনে রাতে গান গেয়ে আর নেচে ঢেউ তুলে মিশে গেছে মোহনাতে | গঙ্গার পারে রাম যদি ডাকে পদ্মার পাড়ে রহিম দেয় যে সাড়া এপার ওপার একই বাংলার কত স্মৃতি দেয় নাড়া কোন জাতি আমি কোথায় নিবাস এপার ওপার কোন ভেদাভেদ নেই দুই বাংলাই একই ভাষা লিখি একই গান গাই বাংলা ভাষায় আমরা সবাই সকলের ভাই ভাই একই বাংলায় রবি-নজরুল লালনের গান গাই |
নাহং তুঁহু কবি শশাঙ্ক শেখর রায় কবির “মেঘ ভাঙা রোদ” ( মহালয়া, ২০১৩ ) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া |
আমি কবিতা লিখবো,--- লিখবো কিছু গল্প আর উপন্যাস | কল্পনার রাজকুমারী থেকে শুরু করে শ্রমিক-কৃষক-বেকার-চাকরিহারা আর খেটে খাওয়া মানুষের কথা লিখবো | কারণ আমি সকলের কথা লিখতে চাই ঠিক তাদের মত করে |
রবীন্দ্রনাথের ব্যাপ্ত পরিবেশকে অস্বীকার ক’রে একেবারে নতুন ভাবে লিখবো | এই আশা মনে নিয়ে বসি জানিনা সে কতদূর থাকবে প্রত্যয় | বাইরের জানালা বন্ধ করে লিখতে বসি, রবীন্দ্র হাওয়ায় যেন কাগজ যায় না উড়ে কালী যায় না শুকিয়ে তাই দরজাও বন্ধ করে আসি | কয়েকটা লাইন মাত্র লিখেছি কাগজে,--- ঘাড়ের কাছে তপ্ত নিঃশ্বাস অনুভব করি চেতনার চঞ্চলতা শিথিল হয়ে আসে পিছন ফিরে কাউকে দেখতে পাইনা, সামনে তাকিয়ে দেখি আমার ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে এক ছায়ামূর্ত্তি, দাঁরিয়ে আছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ | অবাক বিস্ময়ে চোখের পাতা পলক ফেলতে ভুলে যায়, তৃতীয় পাণ্ডবের মত আমি যেন বিশ্বরূপ দেখি | আবেশে চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে যায়, ভুলে যাই আমার নিজত্বকে, নিশার ডাকে সাড়া দেবার মত পথ ভুলে অনুসরণ করি রবীন্দ্রনাথকে কিছুক্ষণের জন্য মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি, সমস্ত প্রত্যয় উবে যায় কর্পুরের মত |
মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ কবি শশাঙ্ক শেখর রায় কবির “মেঘ ভাঙা রোদ” ( মহালয়া, ২০১৩ ) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া |
ঊনিশশো একাত্তরে সেদিনও বাংলা ছিল যুদ্ধের ভিতরে পশ্চিমের রাজশক্তি জাতিদ্বন্দ্বে জর্জরিত সুযোগের অশুভ আশ্রয়ে দেশদ্রোহী মৌলবাদী রাজাকার দল যুদ্ধ আনে বাংলাদেশে | কাতারে কাতারে মরে বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা হত্যালীলা, নারীর শ্লীলতাহানী চলে নির্বিচারে বিষবৃক্ষের চারা পুঁতে গেছে পথের দুধারে অবশেষে মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধা জয়ী হলো অত্যাচারী রাজশক্তি হ’ল পরাভূত শহীদের রক্তধারা পথে, এলো স্বাধীনতা জয়ী হলো বাঙালীর জাগ্রত চেতনা সূর্যময় পতাকা উডিয়ে জন্ম নিলো নব রাষ্ট্র সেই বাংলাদেশ |
আঁধারে আশ্রয় নিলো শয়তানের দল মুখ ঢেকে মুখোশ আড়ালে মিশে গেল জনতার মাঝে তলে তলে অপকাম চলে মৌলবাদী পিশাচেরা বিভেদের বেড়াজাল বোনে সংকীর্ণ ক্ষমতা লোভে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরে | রাজশক্তি চলে যায় দুবৃত্তের হাতে বিচার আবদ্ধ হলো বন্ধ কারাগারে মৌলবাদী ঘাতকেরা ফিরে এলো রক্তিম নখরে রাজনীতি জাতিদ্বন্দ্ব ফিরে এলো বাঁকাপথ ধরে তাদের মসনদ চাই ছলেবলে অথবা কৌশলে মানবতা সুসভ্যতা শব্দ হয়ে যায় সুস্থ্য চেতনাগুলো বড় অসহায় দেশদ্রোহী রাজাকার ঘাতকেরা অশুভ সে রাজশক্তি দুর্মদ ক্ষমতা পেয়ে যায় |
বিপন্ন নারী কবি শশাঙ্ক শেখর রায় কবির “মেঘ ভাঙা রোদ” ( মহালয়া, ২০১৩ ) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া |
একই সমাজে দুই জাতি --- পুরুষ প্রকৃতি একে ছাড়া অন্যটির নেই কোন স্থিতি তবু কেন নারী ভোগ্য, নারীর লাঞ্ছনা নারীর শ্লিলতাহানী যৌন ব্যাভিচার তবু কেন অদমিত পিশাচ পৌরুষ নারী হবে যত্রতত্র ঘৃণ্য বলাত্কার সমাজের বুকে কেন আজও চলে এই অনাচার |
কদিনের শিশুকন্যা – তাও হয় যৌন নির্য্যাতিতা ব্যাভিচারে বয়সের গণ্ডী নেই কোন ভেদাভেদ নেই কোন যৌন উপভোগে বাধা নেই লক্ষ্ণণ রেখার মত দণ্ডীটানা দাগে ছোট থেকে বড় হবে শিশুকন্যা চন্দ্রকলার মত পূর্ণ হবে দিনে দিনে কস্তুরিমৃগের মত ছড়াবে সুরভি এইতো প্রকৃতিকাম্য প্রকৃতিরই দান পৌরুষের বলবীর্য্য শক্তিমদে মত্ত হয়ে তাকেই করেছে অপমান ; এ যেন পুরুষতন্ত্রে ন্যায্য অধিকার নারী হবে পণ্যমাত্র নির্য্যাতিতা—ধর্ষিতা—বলাত্কার রাজশক্তি নাগপাশে মগজের সবকিছু বাঁধা বিচারের বাণী সব স্থবির-নীরব-নির্বিকার অপরাধী দাপিয়ে বেড়ায় চারিদিক ধর্ম্ম হয় পরাজিত মর্মাহত বিধ্বস্ত সৈনিক | প্রতিবাদী হলে কেউ যন্ত্রনার শেষ নেই তার বর্ত্তমান-ভবিষ্যৎ অসহায়, নিশ্চিত অন্ধকার এই বন্য জঘন্য অন্ধকারে নিস্তব্ধ চেতনা ভয়ে কাঁপে অসহায় সমস্ত শরীর বাজপাখীর তাড়া খাওয়া কপোতের মত | কি করে বাঁচাবে মাগো কিশোরী কন্যাকে চেতনায় সাড়া নেই বিদ্রোহেরও শিখা নেই দৃপ্ত কোন প্রতিবাদ নেই কারো মুখে ; জ্বালিয়ে মোমের আলো তাড়ানো যাবে না অন্ধকার বারুদে স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে করে দিতে হবে ছারখার |
কিছু লিখে যাই কবি শশাঙ্ক শেখর রায় এই কবিতাটি এখানেই প্রথম প্রকাশিত হলো।
এ নদী চলতে গিয়ে ভাঙছে মাটির পার এ পাহাড় তুলছে মাথা একের পরে এক তবু সে মাটির মায়া ছাড়তে পারে কই আকাশ ছুঁতে বাকি অনেক তবু উথাল সাগর নাচছে তালে তালে ঢেউয়ের পরে আবার কতো ঢেউ আছড়ে পড়ে সাগর বেলায় দাগ কেটে যায় দাগ মুছে যায় হিসেবটা তার রাখে না তো কেউ সাগর পাড়ে ছড়িয়ে ঝিনুক মেলা চলছে যেন ভাঙাগড়ার খেলা মুক্তোগুলো হারিয়ে গেছে কোথাও শঙ্খ ভাঙা ছড়িয়ে শত শত হৃদয় হারা ভালবাসার মত
আবেগ যত বাতাস হয়ে করছে আসা যাওয়া ঝড় হয়ে সে কখন বাজে বুকে কেউ কখনও বকুল তলায় ফুল কুড়িয়ে এক এক করে গাঁথে বকুল মালা আদুল গায়ে দাওয়ায় বসে গাঁয়ের কোনে বসত যে তার গাঁয়ের কোনো বালা | পাইন শাখায় শিষের আওয়াজ শব্দ করে বইছে কিসের তরে সে কি কোনো হতাশা নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ে দূরন্ত বাতাসে এমনি করেই সুখে দুঃখে জীবন পথিক চলে জানি না সে চলছে কিসের আশায় কবি কেবল লিখেই চলে একটু কিছু লেখার ভালবাসায় |