অচেনা বাংলার মুখ কবি শশাঙ্ক শেখর রায় কবির “মেঘ ভাঙা রোদ” ( মহালয়া, ২০১৩ ) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া |
বাংলার মুখ--- রূপসী বাংলার কবি দেখেছিলো সৌম্য শান্ত রূপসী মরম-ময়ী তিলোত্তমা রপ তাঁরা ভালবেসেছিলো সোনার বাংলাকে ; যার ভাষা বাংলাভাষা, যেন মুক্তধারা মনমোহিনী অপরূপ সেই তো বাংলার মুখ |
এখন সে মুখ আর চোখেও পড়ে না আজ এ বাংলার মুখ নিতান্ত অচেনা কতনা সোনালী সূর্য উঠেছে ডুবেছে কত রং কত বর্ণ ছাড়ায়েছে সীমা বাংলার রূপের ছিলো অজস্র গরিমা |
আজ এ বাংলার মুখ নিতান্ত অচেনা রাখালিয়া বাঁশী তার হারায়েছে সুর মাঝি মল্লা ভুলে গেছে ভাটিয়ালি গান আজ এ বাংলার মুখ সন্তান হারানো কোন ক্রন্দসী মায়ের মুখ হাড় জিরজিরে দেহ দুঃখের সোপান |
গ্রামে গঞ্জে শহরে বন্দরে যেখানে গিয়েছি আমি খুঁজেছি বাংলার সেই তিলোত্তমা মুখ স্বপ্নে কিংবা কল্পনায় চেয়েছি সে মুখ দেখি খুঁজেছি খেপার মত কিন্তু হায় ! হতাশায় ভরে গেছে বুক এ মুখে অজস্র দুঃখ আঘাতের দগদগে ক্ষত বাংলার মুখ আজ বীভত্স ভয়াল আধপোড়া ঝলসানো বেগুনের মত এ মুখ দেখতে বড় ভয়, আতঙ্কে আঁতকে ওঠে প্রাণ এ মুখের চারিদিকে প্রেতাত্মারা কাঁদে শতমুখে আকাশে বাতাসে ভাসে শবযাত্রার অশ্রুভেজা গান |
আর নয় স্বপ্নবিলাস কবি শশাঙ্ক শেখর রায় মিলনসাগরে প্রকাশ ১৭.১.২০২১।
শুনেছি তোমার মুখে তুমি নাকি রাতভোর স্বপ্ন দেখো ঘুমের ভিতরে জানিনা কেমন তুমি, কোন যোগমায়া বলে দেখতে পাও চোখ বন্ধ করে ; তুমি দেখো চিত্রিত ছবি বিচিত্র ক্যানভাসে যা তোমার স্বপ্নের আবর্তে ভেসে আসে রূপকথার নায়ক-নায়িকা ঠাকুরমার গল্পভরা ঝুলি চাঁদের জোছনা মেখে রূপালী ডানায় উড়ে যায় নানা রংয়ে প্রজাপতি ছোট ছোট ফুলপরিগুলি চলে যায় দুস্তর আকাশ পারে কোনো অজানায় তুমি নাকি দেখেছো মৈনাক চূড়া, চাঁদের পাহাড়, কমল কাননে ভরা মানস সরোবর দলে দলে রাজহাঁস জল কেলি করে নিরন্তর তুমিই দেখেছো মন্দাকিনী কুলকুল বহে দেবলোকে সেখানে ঊর্বশী মেনকা আত্মগতা স্নানকতা স্বর্গগঙ্গা খরস্রোতে রূপবতী অজান্তেই হারিয়েছে অঙ্গবাস সমস্ত সম্ভার চঞ্চল তরঙ্গমালা চুমে যায় তন্বীতনু তার এলায়িত কেশদাম বক্ষদেশে করেছে আশ্রয় আনমনে সম্মুখের অঙ্গপাশ সংরক্ষণ করেছে যতনে এই চিত্ররূপগুলি তোমারই স্বপ্নের অনুগামী আপন অস্তিত্ব ভুলে আর তুমি থেকোনা ঘুমঘোরে রাত্রিশেষে সব কিছু বাধা পাবে তোমারই আবদ্ধ পরিসরে চোখ খোলা, জেখো ওই সম্মুখে বাস্তব স্বপ্ন আর বাস্তবের ফারাক অনেক তুমি নারী, দায়িত্ব ও বেড়াজালে দুর্গম জীবন যাত্রা অস্তিত্ব আর জীবনের মূল্য পেতে বিস্তর লড়াই প্রতিবাদী সংগ্রামই জীবন, এই যুদ্ধে জিততে হবে তাই।
সময়ের জিজ্ঞাসা কবি শশাঙ্ক শেখর রায় মিলনসাগরে প্রকাশ ১৭.১.২০২১।
অবসর জীবনের অলস সময় সময়ের ব্যস্ত যাতায়াত, দাঁড়াতে চায়না বেশীক্ষণ গড়ে দিয়ে চলে যায় স্পস্ট ব্যবধান কালক্রমে মাথাতোলে কাঁচের দেওয়াল এরপরে অতীত যায় ওপারে চলছে বর্তমান দৃশ্যগুলো ঝাপসা কিছু বড়ই জটিল বেমানান।
দিশাহারা শিক্ষিত বেকার, কর্মহীন উদভ্রান্ত যৌবন বৃত্তিচ্যুত বিপন্ন মানুষজন, ক্ষুধার্ত সংসার সমাজে লাঞ্ছিত নারী, নিরন্তর চলে ব্যভিচার মাতৃ জঠর থেকে সময়ের সাথে সাথে বড় অসহায় নারী চৈত্রশেষে দমকাঝড়ে, লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় জীবনের আশা হারায় অকালে সব হীন আশঙ্কায় হয়েছে ধর্ষিতা সব সত্য হারায় স্বীকৃতি, নির্বিকার বিচারের বানী বিবেক-চেতনাগুলো পসরা বাজারে-চলে বিকিকিনি নীতিহীন রাজনীতি অভিনয় করে চলে ভণ্ড দরবারে অদ্ভুত সমঝোতা চলে দৃশ্যের আড়ালে বিত্তমুখি দলতন্ত্র রাজ করে সমাজ সংসারে।
এ এক অচলায়তন, কারো কোনো হেলদোল নেই নেই কোন সত্য প্রতিবাদ, আছে শুধু ব্যর্থ আর্তনাদ ভয়ার্ত মানুষ, শ্মশাণের শান্তি পেতে চায় অস্তিত্ব হারায় অন্তরালে, ভুলে যায় আত্ম পরিচয় ; কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন ক্রমশই দীর্ঘতর --- উত্তরের প্রতিক্ষায় আজও ব্যগ্র অলস সময়।