কবি শিল্পী শিলাজিৎ এর গান
*
বাজল ছুটির ঘন্টা
কবি শিলাজিৎ

বাজল ছুটির ঘন্টা
হে হে মন ভেসে ভেসে
উড়ে যায় নিরুদ্দেশে
হে  এ মন নিরুদ্দেশে উড়ে যায় ভেসে ভেসে
বাদলে মাদল বাজে
তা ধিন ধিন তা ধিন তা
বাজল ছুটির ঘন্টা |
ওলো লো লো মা মা তা লা লা
মাতিনি মামাইয়া মিতে
কেমন করে মনটা |
তাল সুপারি খেজুর সারি
ধানের ক্ষেত আর মাটির বাড়ি
আমের মুকুল শিমূল তুলো
কলকে ফুল আর রাঙা ধূলো
উতল করে মনটা---
বাজল ছুটির ঘন্টা |
জ্বলে আমার প্রাণটা |
আগুন রাঙা কৃষ্ণচূড়ায় মন রাঙিয়ে
ঘর ফেরা এক পাখির ঝাঁকে যাই হারিয়ে
ছুটির মেজাজে ছুটি দুহাত বাড়িয়ে ছুটি
ছুটি---
ছুটির মেজাজে ছুটি দুহাত বাড়িয়ে ছুটি
যাই হারিয়ে সব ছাড়িয়ে নেই রে কোনো চিন্তা ||
বাজল ছুটির ঘন্টা |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমরাও বেঁচে আছি
কবি শিলাজিৎ

মাঝে মাঝে হাত দুটো নিশপিশ করে ( ২ )
সাধ হয় এ দুহাতে চকচকে চোখ থেকে স্বপ্ন ছিনিয়ে এনে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিই এখানে সেখানে
এখানে সেখানে ভায়া এখানে সেখানে
শ্মশানে কফিনে বা মুদির দোকানে
যেখানে স্বপ্ন দেখা লাগাতার বন্ ধ
সুর নেই তাল নেই শুধু হরতাল
সোনালী সকালটাকে অকালে ভেজাবে বলে
শ্যামলা মেঘের দল হামলা করবে আস্তিন গুটিয়েছে
আস্তিন গুটিয়েছে ওরা বেঁধেছে যে জোট |
বলে ফোট ফোট ফোট ,
বল আয়---
যা মেঘেদের দেশে গিয়ে বলে দে দেখে নেব কত রংবাজকে
বল আয়---
শোন আমরাও বেঁচে আছি
চাঁদা তুলে বর্ষাতি কিনে দেব সূর্যকে
দেখব ভেজায় শৌর্যকে কে ?
সুরের ব্যাপারী সবজান্তার দল
বসেছে গুছিয়ে সব সাজিয়ে দোকান
চোলিকে পিছে ছুটে ছুটে হয়রান
নতুন সংযোজন জীবনের গান

এ ভোলা আমাদের নাকি কিছু হবে না ( ৩ )
সারেগামাগারেসা  সারেসানি
এ ভাবে গান আমি শিখিনি
তাই আমার বাঁধা গান কখনও পাবে না প্রাণ
বেকার এ গান কেউ শুনবে না
এ ভোলা --- ( কী হল কী হল ? )
আমাদের নাকি কিছু হবে না

মাঝে মাঝে মন খুব মনমরা মন
চুপি চুপি পড়ে থাকে লাশকাটা ঘরে
ময়না তদন্ত কেউ করে না কখনও
মরে যাওয়া মনটাকে ছিঁড়ে কেটে খুঁড়ে
মরা এ মনের খোঁজ কে করবে বল
শকুনের দল

কাজ চাই কাজ বলে কাজ চাই কাজ
শকুনের দল
অপেক্ষা করে থাকি কখন সকাল
আসবে বুলিয়ে দেবে সোনার পরশ
গোমড়া মেঘের মুখ হবেই হতাশ
পালাবার পথ খুঁজে পাবে না তখন
দেওয়ালে ঠেকেছে পিঠ বাঁধ রে কোমর
চিত্কার করে বল---
বল আয়—
যা মেঘেদের দেশে গিয়ে
বলে দে
দেখে নেব কত রংবাজকে
বল আয়—
শোন আমরাও বেঁচে আছি
চাঁদা তুলে বর্ষাতি কিনে দেবে সূর্যকে
দেখব ভেজায় শৌর্যকে কে ?
সুরের ব্যাপারী ---
এ ভোলা---

এ বিষ্ণু ---

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নিরালা দুপুর
কবি শিলাজিৎ

এই নিরালা দুপুর
টিপ টিপ টাপুর টুপুর
যেন প্রেমিকা নূপুর পরে হঠাৎ এসেছে মোর গাঁয়
থাকে না বেশিক্ষণ, ক্ষণিকের শিহরণ
যেন রনন লাগিয়ে চলে যায়
এই নিরালা দুপুর

ছাদের ওপর বৃষ্টি পড়ে অদ্ভুত সোদা গন্ধ ছড়ায়
মন চলে যায় চোখকে ফেলে দূরে ( দূরে )
মাকে খুঁজছে দুষ্টু বাছুর টিপটিপটিপ টাপুর টাপুর
পাখনা ভেজা পায়রা আস্তানা খোঁজে
দূরে হাইওয়ের হাতছানি
ছোটো হতে হতে উধাও লোকাল বাস

চোখ চলে যায় আলের ধারে
মাথালি মাথায় বাদামী শরীর
কাঁধে জোয়াল কে করছে চাষ ?
এই নিরালা দুপুর --- |
ঘুম ঘুম ভাত ঘুম ঘুমোয় গোটা গ্রাম
এদিকে বৃষ্টিকে পেয়ে সোহাগী জামগাছ
জল টলটল তেতুলবোনায় অলস দুপুরে একটা কোনায়
হাতে ছিপ কে ধরছে মাছ

এই নিরালা দুপুর ----

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভূমিকা
কবি শিলাজিৎ

শোনো ঠিক শুরুর আগে ভূমিকাটা ছোট্ট করে জমিয়ে বলি
যদিও অনেক বলার তবুও খানেক কমিয়ে বলি
চারিদিকে চলছে যা তা---
চারিদিকে চলছে যা তা বুঝলে পরে বুঝবে এসব
সবাইকে তুষ্ট করা স্পষ্ট কথায় নয় সম্ভব

ভালোবেসে কেউ বা ঘাসে খালি পায়ে পথ চলতে
কেউ আবার সাবাড় করে পথের কাঁটা
অনেকেই জ্বলতে শুধু জ্বলতে যে চায়
কেউ আবার সলতে খোঁজে আগুন হাতে
এ সবই ভালোবাসা মনের মতো
যে যা চায় তার পেছনে তুরন্ত ছোটে
ভালোবাসা কারোর শুধুই ভালোবাসায়
কারও বা ভালোবাসা কোর্টেও ওঠে

অনেকে ভালোবাসে অমুক তমুক এটা সেটা
অনেকে ভালোবাসে সোনা রঙের রোদের ছটা
অনেকে ভালোবাসে তোমার আমার মা-বোনেদের
অনেকে ভালোবাসে নকল সাজা তানসেনেদের
এসবই ভালোবাসা মনের মতো
এসবই হয় বাঁচে বা হয় নিহত---
এতসব ভেবেই তো ভাই গান বেঁধেছি
বাধা গান বাঁধ ভেঙেছে বান এসেছে
কারও কারও বেলায় এ গান বাণ হয়ে যায়
বিঁধলেও বিঁধতে পারে বুকে পেটে
তবে এ হলফ করে বলতে পারি
গান আমার বিঁধবে নাকো খিদের পেটে
যে পেট আজও রয়েছে বেঁচে দারুণ খেটে
যদিও চাই না আমি গান হোক বাণ
তার চেয়ে এ গান উঠুক তোমার আমার সবার ঠোঁটে
তবেই তো ভরবে এ বুক দুকূল ছেপে
যেমন ওঠে ভরা নদী ভরজোয়ারে |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভগবান
কবি শিলাজিৎ

বহুদিন আগে নাকি ছিল ভগবান
ধনুকেতে টান দিয়ে ছুঁড়ে দিত বান
কথা নাকি শুনে তার সব হনুমান
যুদ্ধের ক্ষেত্রে দিয়ে দিত প্রাণ
দাতা ছিল ত্রাতা ছিল করে দিত দান
প্রজারা তাকে কত করে সম্মান
তাই সীতা সতী কিনা করতে প্রমাণ
প্রজাদের অনুরোধে আগুন জ্বালান
এ বেচারা, এ বেচারা ভাবে বসে বসে ভেবে সারা |

স্বর্গে তখন ছিল দেবতার রাজ
মধ্যমনি তিনি গুণী দেবরাজ
যখন তখন তিনি ছুঁড়তেন বাজ
মর্ত্যে শান্তি রাখা ছিল তার কাজ
রূপসী উর্বশী আর সোমরস
স্বর্গটা ছিল নাকি তারই হাতে বশ
দেবগুণে গুণী তুমি কি করিলে কাজ
সারা দেহ লোচনে ভরে কাটে লাজ
এ বেচারা ভাবে, বসে বসে ভেবে সারা |

আগুন আজও জ্বলে ভীষণ জ্বলন
পিতৃ-আজ্ঞা আজও হচ্ছে পালন
বিভীষণ আজও আছে আছেন রাবণ
আজও বীরেরা মরে লড়ে মহারণ
আজও আছে ভগবান তাকত বহুত
উর্বশী সোমরস তাও মজুত
আগুন আজও জ্বলে জ্বলে ধুনোধূপ
বদলায় চেহারা বদলায় রূপ
এ বেচারা, এ বেচারা ভাবে বসে বসে ভেবে সারা |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
খবর
কবি শিলাজিৎ

হে শোনো খবর আজ কবর খোঁড়া বন্ধ আছে
তাই মরছি ভাই মরব না
লাশ হয়ে আর পচবো না
হে শোনো খবর আজ কবর খোড়া বন্ধ আছে |
হিমঘরে থরে থরে পড়ে থেকে লাভ নেই লোকশান
তার চেয়ে সজীব রোদেতে শানিয়ে ধারালো কর এ জান
সেই ধারে কাটি ধান কাটি পাপ
কাটি জিভ সব বিষধর সর্পদের
সব বিষধর সর্পদের
এ শোনো খবর---
এ শোনো খবর আজ ছন্দপতন বন্ধ আছে
তাই বেসুর গান গাইব না তাই বেতাল বেচাল চাইব না |
এ শোনো খবর-----
সুরহীন সব অসুর বংশ ধ্বংস করে দে আজ
ছন্দে ছন্দে ছলকিয়ে এসো ঝড়ের ঘোরেতে হানি বাজ
সেই বাজে পুড়ে যাক্ জ্বলে যাক্
টলে যাক সব অশুভর খানদান
সব অশুভর খানদান
সব অশুভর খানদান ||
এ শোনো খবর আজ কবর খোড়া বন্ধ আছে
এ শোনো খবর ভোরের বাতাসে আজ ঝড় উঠেছে
এ ঝড় ঝলমলতার চামচে না

তাই থামবে না আর থামছে না |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা
কবি শিলাজিৎ

ঢুলু ঢুলু চোখ        শালা     দেখি কত লোক    দিয়ে
তাকিয়াতে ঠেস     বলে      আহা বেশ বেশ    বেশ
বেশ বেশ বলে      আর     শুধু যায় ঢুলে        ঢুলে
চোখ হল লাল       লাল      লাল সে সকাল      আর
কবে লাল হবে      আর      কবে লাল হবে      আর
কবে লাল হবে

তোদের ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা
স্বপ্ন দেখ ঘুমের ফাঁকে

যাবি যাবি করলি তবু কেন গেলি না রে বাড়ি
চলে যা চলে যা চেপে বুলেট
PROOF গাড়ি
তোর ধা চকচকে জুতোর পালিশ
চোখ করে বড্ড নালিশ
চুনোট করা ধুতির কোঁচা
বুকে মারে বড্ড খোঁচা

ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা স্বপ্ন দেখ ঘুমের ফাঁকে ||

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
গুরু
কবি শিলাজিৎ

সুগন্ধি ধূপ ----চুপ
চুপ কেন ?
রেগে যাবে
মও কা পেলে
শাপ দেবে
বয়ে গেল
গা তবে---
সুগন্ধি ধূপ দিল চাল দিল কলা দিল
প্রসাদের থালা দিল চেটে পুটে খেলে গুরু কিছু পেলো না
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি
আর কেউ জানে না |
ছুপে ছুপে কত রূপে তুমি এসে ধরা দাও
সে রূপের বাহার আমি জানি কেউ জানে না
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি
আর কেউ জানে না |

এ শালারা চেল্লাবে কিছু পাবে না
কিছু পাবে না, কিছু পাবে না
চিল্লিয়ে গলা ফেটে যাবে তবু পাবে না
তুমি যা জিনিস গুরু---

দলবল নিয়ে এসে কিছু হবে না
কিছু হবে না, কিছু হবে না
কত মালই এল গেল
বাঁয়া খাতা চলে গেল
তোমার অতল তলে কূল পেল না
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি আর কেউ জানে না
তুমি যা জিনিস গুরু সত্যি বলছি আমিও চিনি না |

.                **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বেতাল বেচাল
কবি শিলাজিৎ

বেতাল বেচাল এ দিনকাল
ভেবে ভেবে নাজেহাল
তবুও না ছেড়ে হাল
ভাবনা ভুলতে পারছি না
ক্লান্ত বিকেল ব্যস্ত সকাল
নিয়ম করে হচ্ছি নাকাল
সু-সময়টা সত্যি পাঁকাল
পিছল নাগাল পাচ্ছি না
বেতাল বেচাল এ দিনকাল ||

V . I . P Road যত্নে মোড়া
আমার গলির রাস্তা খোঁড়া
V. I. P Road যত্নে মোড়া
তোমার গলির রাস্তা খোঁড়া
জীবন নামক গোদের ওপর
ধর্মঘটের বিষফোঁড়া
Fashion ব়্যাশন কাঁকড় চাল
রাজনীতিতে নোংরা চাল
ধুলো ধোঁয়া এ জঞ্জাল
তবুও হাল ছাড়ছি না
বেতাল বেচাল এ দিনকাল

স্কুল কলেজ অফিস পাড়ায়
বন্ধু পেলাম হাতে গোনা
কেউ বা শুধুই বন্ধু হলো
কেউ বা আবার খুব সেয়ানা
টুকলু বুবাই প্রবাল বুবুন
গুপী ছেকু দোস্তি দারুণ
দোস্তি দুধের এ পেয়ালায়
ছোট্ট চোনা চোর বরুন

জ্যান্ত ভূতের ক্লান্ত স্লোগান
মানছি না আর মানব না তান
জ্যান্ত ভূতের ক্লান্ত স্লোগান
মিছিল জনগণের যোগান
এই আঁধারে আলোর বান
নিত্য-নতুন টাটকা গান
তাই তো এ হাল ছাড়ছি না
তাই তো এ হাল ছাড়ব না
বেতাল বেচাল এ দিনকাল

ঠিক বেঠিক বেঠিক ঠিক
ডান বাম বিভিন্ন দিক
বড্ড জ্বালায় যত্রতত্র
পান পরাগের নোংরা পিক্
রবিতে ছুটি সনিতে সুখ
শেষ হলেই আবার সোম
পথ অবরোধ ধার শোধবোধ
ইলেক্ শনের দুচারটে বোম্
এমনি করেই কাটবে দিন
নিত্য নতুন নাগপাশে
পুলিশে ধরবে নিরীহ গরু
হঠাৎ কখন মাসের শেষে
বাংলা মদের দোকানগুলোয়
মাসের শেষেও ভীড় বেশি
এদিন বদল করতে গেলে
বদলি হবেন লোকাল
O.C
এত কিছু বদলায় আর দিনগুলো কি বদলাবে না
সুদিন আসার আশায় আছি ভাবনা ভুলতে পারছি না

বেতাল বেচাল এ দিনকাল

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঝুমুর গায়েন
কবি শিলাজিৎ

ওগো ঝুমুর গায়েন তোমার দিন কাটে না
তোমার রাত কাটে না
তবু ঢোল কাটে নেংটি ইদুঁরে
ভুখা পেটে তুই মাদল বাজা ( ৩ )
ও লাল পলাশের বনে বনে
মাতল রে প্রাণ কী আগুনে
মন জ্বলে সে আগুনে আখা জ্বলে না
ওগো ঝুমুর গায়েন তোমার দিন কাটে না
তোমার রাত কাটে না
তবু ঢোল কাটে নেংটি ইদুঁরে

গানে পাবে প্রাণের আরাম লাগে মনে ধন্দ
তোমারও সুরে গায়েন খালি পেটের গন্ধ  গায়েন
খালি পেটের গন্ধ

ও শুকনো ক্ষেতের আলে আলে
কাঁধে মাদল মাতাল তালে
নেচেই ভরে মন গায়েন পেট ভরে না

ওগো ঝুমুর গায়েন তোমার দিন কাটে না
তোমার রাত কাটে না |
তবু ঢোল কাটে নেংটি ইদুঁরে |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর