কবি শিল্পী শিলাজিৎ এর গান
*
জানি না এ পথ
কবি শিলাজিৎ

জানি না এ পথ কবে হল ঠিক শুরু
জানি না এ পথ কবে হবে ঠিক শেষ
জানি না কবে যে ফুরোবে বেচাকেনা
জানি না কবে যে ফুরোবে স্বপ্নরেশ

জানি আমি জানি শুধু জানি আমি জানি
তুমি ছিলে তাই সবই ছিল
এলোমেলো তবুও তো কেটে গেল দিনগুলো

জানি আমি জানি শুধু জানি আমি জানি
তুমি ছিলে তাই সবই ছিল
এলোমেলো তবুও তো কেটে গেল দিনগুলো
এ জীবন পথ চলা কাঁধ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
পেরিয়েছি কত কিছু অসময় সময় ফেলে
পথ চলা তবু হয় না তো পুরোনো |

জানি না সীমানা পেরোতে পারবে কি না
আর সীমানা পেরিয়ে যাবেই বা কোথায়
দাঁড়িয়ে রয়েছি মৃত্যুর মুখোমুখি
আজ বা কাল নিতেই হবে বিদায় |

জানি আমি জানি শুধু জানি আমি জানি
তুমি ছিলে তাই আজও আছি
বেপরোয়া এ জীবনে খেলেছি যে কানামাছি

এ জীবন পথ চলা কাঁধ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
পেরিয়েছি কত কিছু অসময় সময় ফেলে
পথ চলা তবু হয়নি তো পুরোনো |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
চলো মামা
কবি শিলাজিৎ

কী হবে নিখোঁজ শান্তিতে খুঁজে তার চেয়ে নিজেই যাই হারিয়ে
অলি গলি ঘর গেরস্থালি ফেলে সব সীমা ছাড়িয়ে
Concrete জঙ্গলে শিকার না হয়ে চলো যাই জঙ্গলে
চলো চলে যাই সেখানে যেখানে নিভৃতে সব নিঝুম
সবুজে সবুজে শালের দঙ্গলে ফুল ফোটার যেথা ধুম
চলো মামা পালিয়ে ( ৩ )
ও মামা রে ( ২ )

কে জিতবে ভোটে বাজেটে কী জোটে
শহরে এ ভীড়ে হিরে থেকে জিরে
না ভেবে
ও মামা রে ( ২ )

কী আফশোস কী আক্ষেপ
দিনরাত কী ফোঁসফোঁস
এটা হল না ওটা পেল না
কেউ সময়ে পটল তোলে না
কেউ ভালোবাসাতেও গলে না
কেউ ঠিক সেরকম কালো না
কেউ ঠিক সেরকম লালও না
কেউ সুবিধে বুঝে গোলাপী
কেউ সারাদিন কিছু খেলো না
কেউ রবিবার ভেবে জিলিপি
খায় খায় আর শুধু দাঁত দেখায়
এ ভালো লাগে না
( সত্যি ভালো লাগে না )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )
ও মামা রে ( ২ )

বিগ্রেডে বিক্ষোভে বি-গ্রেড নেতার ঘ্যানঘ্যান বুকনি
ডালহৌসিতে পচা ছানার সন্দেশ হাফ বয়েলড্ ঘুগ্ নি
ভিক্ টোরিয়াতে খাকি পোশাকে ছেলেধরাদের রাজ
প্রতি মাসে একবার একই
contractor –এর একই রাস্তা সারাই কাজ
সস্তা shuttle-এ রোজ রোজ এই মধ্যবিত্ত ভীড়ে
কে যাবে আগে আগে কে যাবে নিজের বাড়ি ফিরে
ও মামা রে ( ২ )
কে জিতবে ভোটে বাজেটে কী জোটে
শহুরে এ ভীড়ে হিরে থেকে জিরে
না ভেবে
ও মামা রে ( ২ )
যায় ছুটে যায় এ পরান চায় লাল মাটির সরানে
সাঁঝের বেলায় শাঁখ বাজে
প্রদীপ জ্বালায় ধানের গোলায়
ঘোমটা পরা গেঁয়ো বউ
সাঁওতালি পাড়ায় চল মন মেশাই
মহুয়ার নেশায় মাদলের তালে মাতাল
চলো নাচি ভাদু ছৌ

না-হয় একদিন ভাঙলই ঘুম অচিন পাখির ডাকে
না-হয় একদিন ১০টা ৬টার কাজ রইল তোলা তাকে
না-হয় একদিন নিয়ম না দেখে জোনাক জ্বালা রাতে
খানিকটা সময় কাটিয়ে দিলাম একা চাঁদের সাথে
ও মামা রে ( ২ )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )

কেউ বদলায় না কেউ বদলায়
কেউ অতলের পথ বাতলায়
কেউ বিউলির ডাল সাতলায়
কারও লালা ঝরা জিভ হ্যাংলা
কারও কলেবর বুড়ো আংলা
কেউ জল ছাড়া খায় বাংলা
ও মামারে ( ২ )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান
কবি শিলাজিৎ

নেই সংশয় নেই বিস্ময়, একই খুনের ধারা সব দেহে বয়
মিষ্টি মধুর হোক ভেদাভেদ দুর
সবার প্রাণেতে বেজে যাক সুর

মোদের সুরে বাঁধা হোক বেদ ও কোরান
কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান ( ২ )
কেউ পড়ে মন্ত্র কেউ আজান ( ২ )
কেই করে মুশকিল আসান
কেউ ধরে যজমান
কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান
একই বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান ( ২ )
ওরে বলে নজরুল হোক এ জান কবুল
যেন করি নির্ভুল এর অর্থ প্রমাণ

মোদের সুরে বাঁধা হোক বেদ ও কোরান
কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান ( ২ )
কেউ ডাকে আল্লা কেউ ভগবান ( ২ )
সবারই পেটেতে খিদে বুকে প্রাণ ওরে— ( ২ )
কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান---
বৌদ্ধ ভিখারি হোক নির্ভিক শিখ ( ২ )
অসমী বন্ধু ---- গোর্খা সৈনিক ( ২ )
মন্দির মসজিদ গুরুদোয়ার
ভক্তি শক্তি রূপের বাহার

মোদের সুরে বাঁধা হোক বেদ ও কোরান
জাতের দোহাই দিয়ে যারা নিতে চায় জান ( ২ )
ওরে সেই তো অসুর সেই শয়তান
যায় যদি যাক তবে আগে যাক তার প্রাণ

মোদের সুরে বাঁধা হোক বেদ ও কোরান

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
চাপান উতোর
কবি শিলাজিৎ

শোনো হে শোনো, শোনো হে শোনো
শোনো সুধীজন, গেয়ো না গান না শিখে ব্যাকরণ
যতই থাকুক গান টগবগে প্রাণে
অনুচিত গান গাওয়া যে না গান জানে
ভোর হলে গলা খুলে শেখো সারেগামা
ভাঙলে ভাঙুক প্রতিবেশীদের ঘুম
ভাঙুক গলা অতিরিক্ত রেওয়াজে
দেখো যেন শেখার এ নিয়ম না ভাঙে
চাপান উতোর দুর দুত্তোর
ভালো লাগে না প্লিজ বাতেলা থামান
চাপান উতোর দুর দুত্তোর
করব যা খুশি চায় মোর মন প্রাণ

তালিম তালিম নাও শেখো সুর-তাল
পাশ করো গুরুদের নামি দামি সুরে
পাখিদের ডাকে সুর খুঁজো না ভায়া
সুর খুঁজো সুর শেখো নামি-দামি বইয়ে
চাপান উতোর দুর দুত্তোর
ভালো লাগে না প্লিজ বাতেলা থামান
চাপান উতোর দুর দুত্তোর
করব যা খুশি চায় মোর মন প্রাণ

প্রথম পাঠেই শেখো --- আয় তবে সহচরী
হাতে হাতে ধরি ধরি
হাত ধরার ইচ্ছে যদিও না থাকে
হও করমেতে বীর, হও ধরমেতে ধীর
ধর্মে কর্মে যদি মনও না থাকে
শেখানো বুলি বলো শিখে তোতাপাখি
নিজের মনকে অহরহ দিয়ে ফাঁকি
গিটার নিও না কাঁধে জাত যাবে চলে
জিন্ স পোরো না মওকা পেলে নেবে খুলে
মাকুন্দ থেকো নেই নেই কোনো ক্ষতি
চোয়ালে গজালে দাড়ি যত দুর্গতি
সমালোচকেরা হেথা দেখে বেসবাস
গানেরও জাত খোঁজে বসে বারো মাস
চাপান উতোর দুর দুত্তোর (২)
ভালো লাগে না প্লিজ বাতেলা থামান
চাপান উতোর দুর দুত্তোর
করব যা খুশি চায় মোর মন প্রাণ ||

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হে আমার পরম পিতঃ
কবি শিলাজিৎ

হে আমার পরম পিতঃ
যদি ভুলেও আবার জন্ম নিই তো
তুমি যেন ভুল কোরো না
আমাকে আর স্কুলে পাঠিয়ো না |
স্কুলের এ শিক্ষা ভীষণ, ভুগোল ইতিহাস তারিখ বা সন
ভর, ভার, পরিমিতি বা ত্রিকোন মেপেও কোনো
লাভ হল না
পাঠাবার আর জায়গা পেলে না
গোল কৃমির জনন অঙ্গ
অনিচ্ছাতেও বঙ্গভঙ্গ
কুনো ব্যাঙের নার্ভতন্ত্রে
অঙ্ক শিখেও গণতন্ত্রে
কিছুতেই কোনো হিসাব মেলে না

আমাকে আর স্কুলে পাঠিয়ো না
হে আমার পরম পিতঃ
যদিও ভুলেও আবার জন্ম নিই তো
তুমি যেন ভুল কোরো না
আমাকে আর স্কুলে পাঠিয়ো না |

শিক্ষা মানেই এ পরীক্ষা
পরীক্ষা মানেই কত নম্বর
নম্বরের জন্য দুবেলা
শুধুই পড়া বন্ধ খেলা
নম্বরের জন্য অবেলায়
ট্রেনের চাকা পড়ছে গলায়
বুঝছ না কি আজ এ বেলায়
পাশ আর ফেলের ফালতু খেলায়
জিতেও কোনো লাভ হল না
হে আমার পরম পিতঃ
যদিও ভুলে আবার জন্ম নিই তো
তুমি যেন ভুল কোরো না
আমাকে আর স্কুলে পাঠিয়ো না

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বেরোতে গেলে কালবৈশাখী লাগে    
কবি শিলাজিৎ

এবার যখন কালবৈশাখী হবে তোদের বাড়ি যাব |
লাগোয়া বাগানের কালো পুরোনো পাঁচিল
তার ওপর বসতে পারে একটা দুটো কাক
ঘাসের ওপর লাল পিঁপড়েগুলোকে লক্ষ রেখে
বসে পড়ব |
ততক্ষণে আম গাছের প্রত্যেকটা পাতা
ধুলোর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে
লুটিয়ে পড়েছে ভিজে বাতাসের বুকে |
উতালপাতাল আদরে
বাতাসকেও করে ফেলেছে কচি সবুজ |
বাতাসের গায়ে তখন সবুজ সবুজ গন্ধ,
আমগাছের স্যাঁতসেঁতে কোমরে
পিঠ বিছিয়েই তোকে একটা দেশলাই চাইব |
তুই ছুটবি না--- হাসবি একগোছা ফুলের মতো,
তারপর ঘাস পেরিয়ে ঘাস পেরিয়ে
রান্নাঘর |
আমপাতাতে ধুলো নেই
গড়গড়ের সুবলডোমের চোখের কোলে কালি নেই
ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছে বৃষ্টি |
হাইস্কুলের সামনের সরানে কাদা হয়েছে
তেঁতুলবোনার জল উপচে পড়ে
বলাই মামাদের বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা ডোবা |
তার ওপর পাটকাঠির বাঁধ দিয়ে
কুঁচো মাছ ধরছে আবান,
ওর পায়ে কাদা ওর হাঁটু ছড়ে যাচ্ছে
ডাবু দিদিমা কি বেঁচে আছে ?
না থাকলে অন্য কেউ ধুনো জ্বেলেছে |
‘আবান আর জল ঘাঁটিস না--- বাড়ি আয়---’
তুই চলে এসেছিস, হাতে একটা মোম-দেশলাই |
তোদের বাগানের প্রত্যেকটা পাখিকে তুই চিনিস ?
তাদের আদর করে নাম দিয়েছিস ?
দিসনি ?
তা হলে আমাকে ডায়েরি দিয়েছিস কেন ?
ওই বেগুনি রঙা ফুলের ওপর
হলদে প্রজাপতির কম্বিনেশনে
একটা সালোয়ার বানাসনি কেন ?
সিগারেট ধরাব--- একরাশ ধোঁয়া
মিশে যাবে ডাবু-দিদার দেওয়া ধুনোর ধোঁয়ার সাথে |
যদি না মেশে
মেশাতে পারবি না---
তারও সাথে মেশাতে পারবি না ?
দয়াময় কাকুদের মন্দিরের আরতির ঝনাত্ঝম
পৃথিবীর সমস্ত ইলেকট্রিক তার কেটে
পোল ফেলে দিয়ে
জ্বালাতে পারবি না একটা লন্ঠন ?
একদম নিটোল করে কাটতে পারবি না পলতেটা ?
একটুও কালি পড়বে না
একটুও ধুলো না
পাতারা সবুজ --- সুবল ডোমের চোখের তলায় কালি নেই
সুডৌল আলো ছড়িয়ে পড়বে
মন্দিরের চাতালে নিজের ইচ্ছেমতো
সমস্ত অন্ধকার না তাড়িয়ে---
পারবি --- নাকু, কার্তিক, চন্দ্রশেখর, দীনু সবাইকে ডাকতে ?
আমরা নারকেল কাড়াকাড়ি খেলব |
ওদেরকে না পারিস---
নাম না জানা আরও কয়েকজনকে জোগাড় কর,
আবান ওদের সাথে খেলবে |
হুইসল্ বাজিয়ে ডাক
যেমন করে গৌতম বিকেলবেলা ডাকত সবাইকে
ফুটবল খেলার জন্য,
আর আমরা ওর বাঁশি শুনে ছিটকে বেরোতাম---
আলের ওপর দিয়ে ছ-নম্বর বলটা
হাত বদল করতে করতে |
ডাক---
আবান রোজ হার্বাট হাউস ছুটি হলে
আমার হাতে ওয়াটার বট্ ল, ব্যাগ আর আইকার্ড
দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করে
তুমি এসেছো কেন ?
ওর মামমাম-এর মাথায় আমি ব্যুটিক ঢুকিয়ে দিয়েছি
নন্দতাঁতি ঢুকে গেছে---- চাইনিজ প্রিন্ট ঢুকে গেছে
ব্রাশ পেন্ট ফেব্রিক অ্যাপ্লিক
ওর মামমাম জোলাম খায় |
আবানও আধো আধো করে জোলাম চাওয়া শিখে গেছে
আমরা ওকে প্যাপ করে দিই,
ঘাড়ে থাবড়া মেরে ঘুম পাড়িয়ে দিই |
ওর মাথায় আমরা ব্যুটিক ঢোকাইনি
কিন্তু স্কুল ছুটির পর ও
আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়
লাগোয়া একটা সিঁড়ি দিয়ে--- রোজ
রোজ ওর ওপর উঠে আমাকে বলে
ওর মামমামকে বলতে
ব্যুটিক থেকে চলে আসতে |
বাচ্চা নিতে আসা একটাও মাকে সুন্দরী মনে হয় না

আবানকে আমি কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া চিনিয়ে দিয়েছি
তাও ফুটেছে বলে
ওকে মন্দিরের চাতাল চেনাতে পারিনি
ওকে চিলছাদের ওপর ওঠাতে পারিনি |
ওখান থেকে বড়োপুকুরের তালগাছগুলো গোনাতে পারিনি !
ও আমাকে হাত ধরে টেনে উঠিয়ে দিয়েছে
ওর স্কুলের ওপরে কাঠগড়ায় |
আমাকে নামাতে পারবি ?
পারবি না ?
তাহলে ডায়েরি দিয়েছিলি কেন ?
আমি যাব--- তোদের বাড়ির পাশের বাগানে
কালবৈশাখী এলেই যাব |
ঠপ ঠাপ ঠুপ ঠাপ করে কচি কচি আমগুলো খসে পড়বে
তুলে তুলে এনে একজায়গায় জড়ো করব
কাঁচা গন্ধে ভিজে যাবে হাতের তালু
আমের বোঁটার কষে হাত চটচটে
ঝাল-নুনের কৌটোটা ফুটো করে রাখবি |
মা জর্দা খায় ?
না স্যাসের মধ্যে ঝাল-নুন চাই না
জর্দার কৌটো চাই---বেগুনি রঙের
পলিপ্যাকের পর পলিপ্যাক উড়ছে আকাশে
সব কটা ঢিল নোঙর করে নামিয়ে ফেলবি
পারবি না ?
না পারলে আবান আবার আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে
আমার কোনো কথা শুনবে না |
বলবে --- মামমামকে আসতে বলো
মামমামকে চলে আসতে বলো
কেন মামমাম ব্যুটিক যাবে ?
আমি পারব না |
তুই পলিপ্যাকগুলো নামিয়ে ফ্যাল
পাখিদের নাম দে
প্রজাপতিদের রং নে
তুই আমাকে ডায়েরি দিয়েছিস
তোর বাড়ির পাশে বাগান আছে
আমি যাব --- কালবৈশাখী এলেই যাব |
তোর কাছে দেশলাই চাইব
জর্দার কৌটো চাইব
আমি পেলেই সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে দেব আবানকে |
ওর চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দেব পলিপ্যাক
তুই বাগানটা দে
আর যেভাবেই হোক খুঁজে বের কর, ডেকে আন
নাকু-কার্তিক-দীনু-চন্দ্রশেখরদের |
আমি আর আবানের স্কুলের ওপর উঠে
ডাকতে পারছি না ওর মামমামকে
খুঁজে বের করতে পারছি না--- পারছি না
অথচ আমিই ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছি ভাবনা---

ঢুকে যাওয়া কত সহজ
কিন্তু বেরোতে গেলেই একটা কালবৈশাখী লাগে |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ডিম নেই
কবি শিলাজিৎ

কিছু নেই পুরো ফাঁকা
শুধু দুটো ডিম ছিল গোটা  ফ্রিজে
ওকেই যদি দুটো দিয়ে দিই
কী খাব আমি নিজে

রাত্রি মধ্য গদ্য পদ্য কাব্য নিশুতি তারা
সব ঢুকে গেছে ডিমের মধ্যে
ভাবি কী লক্ষ্মীছাড়া

নিরীহ দু’ চেতন অচেতনে

অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে দুটো ডিম কটা হাত ?                               
বাইরে এখন শিশিরের সাথে সঙ্গমে রাজি রাত
হঠাৎ চাঁদের মুখ মনে পড়ে, মনে পড়ে ভাবিনি তো
ডিম তাতে এই
ভেবে দেখ যদি দু-দুখানা চাঁদ হত

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ইতিহাস ওভাবে হয় না
কবি শিলাজিৎ

ইতিহাস ওভাবে হয় না
ইতিহাস এমনি এমনি হয়

আমার শিরদাঁড়াতে খেজুর গাছের মিল খুঁজে পেতেই
আমার দিকে সে বার বার তাকিয়েছিল |

খেজুর গাছের সঙ্গে সুপুরি গাছের মিল কিন্তু
আমার চোখে পড়ে গেছেবহুকাল আগে---
দু-তিনশো বছর আগে আমি...
তোমাকে বলেছিলাম সে কথা—
তোমার মনে নেই
ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক ভুলেও গেছ
কিন্তু যা কিছুই আমরা ভুলে গেছি
তা কিছুই তো ভুল নয় |

অত আগের কথা মনে না থাকলেও
না থাকতে পারে---
কিন্তু মাত্র এক যুগ আগে
আমি তাকে সুপুরি বলেছিলাম
আর তার শিরদাঁড়াটা সোজা হয়ে গেছিল
আর তার ভুরু দুটো নৌকা হয়ে গেছিল
আর---
আর তখন তাহার ঘাড়ে বিন্দু বিন্দু ঝরে ঘাম---
সে দিকে তাকিয়ে গৃহের ভিতরে সিন্ধু দেখার
অপেক্ষায়---লক্ষ চাষার মতো মৃত্যু হতে পারত আমারও
তা হল না---
কপালের ওপর ফুরফুর করে উঠল কয়েকটা চুল
পিঠের ওপর নোনা ধরা দেওয়াল
জামার হাতায় চুনের দাগ ঝাড়তে ঝাড়তে
সেও বুঝতে পেরেছিল
ইতিহাস ওভাবে হয় না এমনি এমনি হয়
তারপর
তারপর ট্রা লা লা লা লা
তারপর ব্রা লা লা লা লা
তারপর ট্রি লি লি লি লি
তারপর খুলি লি লি লি লি
তারপর চু চু মু চু চু ম
তারপর বছর পাঁচেক ঘুম--- আর সেই ঘুম ভেঙে
উঠতে না উঠতেই
চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা পান্থপাদপ গাছ
একটা শিরদাঁড়া
হাতের মুঠোয় সাতশো আঠাশটা সুপুরি নিয়ে
ঘুম থেকে উঠলাম
তারপর দুজনেই শুয়ে আছি---
একই বিছানায়
একই কপাল নিয়ে
একই ঘরে--- এক ঘর ভর্তি বাতাস
আর পাশের বাড়ির
A C  মেশিন-এর শব্দ
কোথাও জল পড়ছে
আমাদের কোনো পাশের বালিশ নেই
পাশের বাড়ি আছে
আর আছে ছ-সাতশো বছরের কিছু স্মৃতি
যা দুহাত উজাড়করে একে অপরকে
দেওয়ার চেষ্টা করেও আমাদের হাত শুকনো হয়নি
তার কিছু কিছু মনে পড়ে না তোমার
কিছু কিছু আমিও গেছি ভুলে
তুমি শুলে আমি জাগি
আমি শুলে তুমি
তোমার জামার হাতার ওপর চুনের দাগ
চাপড় মেরে তুলতে তুলতে আমি হাসতে থাকি
তুমিও হাসতে হাসতে টলে পড়ো
আমার কাঁধে---
তোমার চোখে কাজল নেই
দূরের একটা সবজে কালো নদীর ওপর
একটা মাত্র নৌকা টলটল করছে
তখন খাতার পাতায় বিন্দু বিন্দু ঝরে ঘাম
তখন মনে পড়ে যায় দেড়শো বছর আগের
একটা ভোরবেলার কথা
চারিদিকে ছিঁড়ে যাওয়া গাঁদা ফুলের পাপড়ির তীব্র গন্ধ
একটা ক্ষুর কেউ ধরে রেখেছে কারও চোখের ওপর
একটা নর্দমা--- আপন মনে বয়ে যাচ্ছে
গঙ্গারঙা জল নিয়ে
আর আমি একা একটা আস্ত সুপুরি গাছের ছায়ার
নীচে দাঁড়িয়ে দারুণ নাচছি দুরন্ত নাচছি
প্রায় তাণ্ডব-এর মতো
উল্টে পড়ে যাব যাব --- এমত অবস্থায়
দেখতে পেলাম পোস্টার লেখা হচ্ছে
আলতা দিয়ে সাদা কাগজে
মুন্ডু চাই--- মুন্ডু চাই
আর তুমিই বোধহয় আমাকে বললে
অস্ফুটে---ইতিহাস এভাবে লেখা হয় না
এমনি এমনি হয় |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হন্টারভিউ
কবি শিলাজিৎ

স্যার আমি পারব
স্যার আমি টাইয়ের নট্ বাঁধতে পারি না
কিন্তু কোন বাস ছিদাম মুদি লেনে দাঁড়ায়
এক্ষুনি বলে দিতে পারি
এক্ষুনি বলে দিতে পারি গুমঘর লেনটা ঠিক কোথায়
আমি শিমুল গাছের পাতা চিনি
আমার বন্ধুরা বলে আমি হেভি কথা বলতে পারি
রাধা স্টোর্সের মালিকের কাছ থেকে
পঁচিশ টাকা চাঁদা একমাত্র আমিই তুলে দিতে পারি স্যার
এখান থেকেও একটিপে ঐ ল্যাম্পপোস্টের আলো
ভেঙে দিতে পারি আমি এক্ষুনি
আমি দাড়ি কামাতে পারি না
রামের সেলুনে গোবিন্দ কেটে দেয়
সপ্তাহে তিনদিন সঙ্গে মালিশ
আমি মাঞ্জা দিতে পারি
একটানে একবার একসঙ্গে তিনটে ঘুড়ি কেটেছিলাম
রাত্রিবেলা ঠোঙার মধ্যে মোমবাতি সেট করে
ঘুড়ি ওড়াতে পারি
স্যার সাধনদার দোতলার বারান্দায়
পাইপ বেয়ে উঠে বল পাড়তে হয় আমাকেই
একবার বল পারতে গিয়ে বিবসনা বৌদিকে দেখে
চেখ ফেরাতে পারি
বঙ্গ বিদ্যালয়ে পড়তাম তো---
ইংরাজি বুঝতে পারি, বলতে পারি না
কিন্তু একবার একটা সাহেবকে
নিমতলা ঘাটের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলাম --- বাংলাতেই
হল কালেকশনটা ভালো হলে
মাধ্যমিকের অঙ্কে লেটারটা পেয়ে যেতাম
তিনটে টিউশনি করি স্যার
একটা ছাত্রী এবার ক্লাসে ফিফথ্ হয়েছে
আমি একশেমিটার দূর থেকে
বাসের নম্বর ঠিক ঠিক পড়তে পারি স্যার
পেছনের গেটে ঝুলতে পারি আনায়াসে
জলের ট্যাঙ্কের ওপর একহাতে ভর দিয়ে
স্কুলের পাঁচিল টপকাতে আমার কোনো জুড়ি ছিল না স্যার
অশোককে কেন মহামতি বলা হয়
একবার ক্লাস ফাইভে পড়েছিলাম
তবুও মাধ্যমিকে চারপাতা লিখেছি
এখনও পারি
আমি মদ খাই না
কিন্তু পাড়ার স্পোর্টসে গো অ্যাস ইউ লাইকে
মাতাল সেজে প্রাইজ পেয়েছিলাম
আমি শম্ভুকে বুঝিয়ে পাতা খাওয়া ছাড়িয়ে দিয়েছি
শ্যামল আর তার দাদারা একটা নিরীহ পাগলকে বাঁশপেটা করছিল
আমি একা ওদেরকে আটকেছি স্যার
পিন্টুকে মেরেওছি বাধ্য হয়ে
আমি সাল মনে রাখতে পারি না
১৭৫৭-তে পলাশীর যুদ্ধ
১৮৫৭-তে সিপাহী বিদ্রোহ
আর ১৯৪৭-এ স্বাধীনতা ছাড়া আমার কিচ্ছু মনে নেই
কোন সালে গ্রাজুয়েট হয়েছি
সেটা সার্টিফিকেট দেখে মনে পড়ে
আমার স্যার দুটো জন্মদিন
একটা স্কুলের একটা বাড়ির
স্যার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আপনার ঘাড়ে হাত ছুঁইয়ে
সমস্ত টেনশন উধাও করে দিতে পারি
বাবার মাথা ব্যথা হলে আমি মালিশ করে দিই স্যার
বাবা বলে, আমার হাতে জাদু আছে
আমার বাবা স্যার আমার মতো না
ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন
বাবা ভালো বক্সিং করতেন
মা স্যার ক্লাস সেভেন পর্যন্ত
‘এই করেছ ভালো নিঠুর হে’ গানটা দারুণ গায়
বাবার আফ্রিকা পরো মুখস্থ
আমি স্যার একবার সুকান্তর ছাড়পত্র মুখস্থ করেছিলাম
একটা প্রতিযোগিতায় নামও দিয়েছিলাম
প্রাইজ পাইনি----ভুলেও গেছি কবিতাটা
খালি সুকান্তের ঘালে হাত দেওয়া ছবিটা
আর ‘নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’
এই লাইনটা ছাড়া কিচ্ছু মনে নেই |
মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্বস্তি হয়
একটা মেয়ে রোজ দেখতাম দূর থেকে
ও বারান্দায় ঘুরে ঘুরে পড়ত
আর আমি নীচে ট্রাম রাস্তায়
একটা চিঠি ফেলেছিল ওপর থেকে
পালিয়েছিলাম স্যার, ওপাড়াতে আর যেতাম না
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম টি টি খেলি
কেউ বিশ্বাস করত না
টপ স্পিন দিতে পারি, চপ করতে পারি
খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফেলতে পারি
সুযোগ পেলে---
আমি তবলাও ভালো বাজাতে পারি স্যার
বাড়িতে কিন্তু তবলা নেই
তবে ডেস্ক বাজাতে পারি আরও ভালো
সঞ্জু গান গাইলে আমাকেই ডেস্ক বাজাতে হয়
আমি গান গাইতে পারি না স্যার
একবার পলসায়েন্সে ব্যাক পেয়েছিলাম
পরের বার ক্লিয়ার করে ফেলেছি
অবশ্য স্নিগ্ধা না থাকলে হত না স্যার
ওই আমাকে নোটস্ লিখে দিত
আমি তো ক্লাস-ফ্লাস বিশেষ কিছু করতাম না
চন্দ্রদাকে পনেরো টাকা দেওয়ায়
আর নন-কলেজিয়েট হইনি
স্নিগ্ধা খুব ভালো মেয়ে স্যার
ওকে ঠিপ পড়লে দারুণ লাগে
ও জানত আমি গাঁজা খেতাম
তবু কিছু বলেনি
আমাকে খারাপ ভাবেনি
রজতকে, কৃষ্ণেন্দুকে রোজ আমার কথা জিজ্ঞাসা করত স্যার
ইন্টার কলেজ ক্রিকেটে ও আমার খেলা দেখতে গেছিল
ওই একমাত্র মেয়ে দর্শক ছিল সেদিন
ও ক্রিকেট কিছু বোঝে না
তবু সবার ওকে ভালো লাগে স্যার
ওকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম
স্কুলে কখনও লেটার রাইটিং ট্রাই করিনি
প্রেসিটাই চেষ্টা করতাম
স্নিগ্ধা চিঠির উত্তর দিয়েছিল
লিখে ছিল আমি নাকি ভালো চিঠি লিখি
স্নিগ্ধা আমাকে কিছু বলেনি কিন্তু আমি গাঁজা ছেড়ে দিয়েছি
পলসায়েন্সে ব্যাক পাওয়ার পরেও
ও আমার সঙ্গে ছিল স্যার
ওই আমাকে কাগজ থেকে
Appointment- এর
বিজ্ঞাপন কেটে দেয়
স্নিগ্ধার জন্য আমি দাড়ি কামিয়েছি
শার্টটা ইস্ত্রি করিয়েছি মাকে দিয়ে
সুজিতকে দিয়ে টাইয়ের নট বাঁধিয়েছি
টাইটা স্যার দাদুর
আমার দাদুর কাঠের আলমারিতে ছিল
আমি স্যার তুবড়ি বানাতে পারি
হাতে রেখে চকলেট বোম ফাটাতে পারি
আমার অ্যাপ্লিকেশনটা বাবা লিখে দিয়েছে স্যার
আমি পারব স্যার
স্নিগ্ধা বিবেকানন্দ রোডে দাঁড়াবে বলেছে
ও টেনশনে আছে স্যার
কিছু না বুঝতে পারলে ও সব বুঝিয়ে দেবে
ও অনেক কিছু জানে
শ্যাম বেনেগালের লেটেস্ট ছবির নাম জানে
সমরেশ বসুর লেখা, সুনীল গাঙ্গুলীর উপন্যাস
ও পড়েছে স্যার
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর কথা ওই আমাকে বলেছে
আমি স্যার ঘুড়ি, ক্রিকেট, গাঁজা, ডেস্কবাজানো, কবিতা
আড্ডা ছাড়া কিছুই পারি না
কিন্তু স্নিগ্ধার জন্য সব করতে ইচ্ছে করে
ওর জন্য একদিন আমি দিলরুবার সামনে
দু’ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম স্যার
ওর জন্য রাত্রি জেগে চিঠি লেখার চেষ্টা করি স্যার
ওর জন্য আমি অনেক সাহস পাই স্যার
ওর জন্য অনেক কিছু জানতে পারি
শান্তি পাই, বুকের ভেতরে পায়রা ওড়ার শব্দ পাই
ওর চোখের দিকে তাকালে কীসের যেন ডাক শুনতে পাই
স্নিগ্ধার জন্য এত কিছু পারি স্যার
এত কিছু পারি স্যার একটা চাকরি পাব না |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
সেই হরিণটা
কবি শিলাজিৎ

আমি সেই হরিণটার কথা বলছিলাম
হরিণটা দৌড়চ্ছিল
আমিও--- পেছন পেছন----
কচি ঘাস মাড়িয়ে
শাল শিমূল ফার্ন গাছের
ফাঁক ফোকর দিয়ে
জংলা কাদা জলে ক্ষুর চুবিয়ে
ছিটকে ছিটকে দৌড়চ্ছিল হরিণটা
আমিও---- পেছন পেছন
শিং—এর মধ্যে অজানা অতেনা গুল্মলতা
পিঠের মধ্যে অর্জুন গাছের ঘষটানি
অসম্ভব পিপাসা
কিন্তু নিঃশব্দে
দৌড়চ্ছিল হরিণটা
আমিও পেছন পেছন
প্রায় চার ক্রোশ পথ পেরিয়ে
জঙ্গল ছাড়িয়ে
হঠাৎ একটা গোটা আকাশ দেখতে গেলে
হরিণটা
এতটা আকাশ দেখে
একটু সংশয়ে ইতি উতি তাকিয়ে
দাঁড়িয়ে পড়ল
থমকে
কিছুক্ষণ
তারপর আলতো আলতো পায়ে হরিণটা
হাঁটতে থাকল বালির ওপর দিয়ে
আমিও--- পেছন পেছন
তারপর সে একটা মরুভূমি পেরোল
আমিও --- পেছন পেছন
তারপর কয়েকটা পাহাড় ডিঙোল
তারপর পাঁচটা সমুদ্র
সাতাশটা নদী
অজস্র শহর
অসংখ্য গ্রাম
লক্ষ লক্ষ পুকুর
শতাধিক নদী
অনর্গল পেরোতে থাকল
এক একটা সীমান্ত
এক একটা দেশ
এক একটা কাঁটাতার
এক একটা শীত
এক একটা বসন্ত
এক একটা মনুমেন্ট
শহিদ বেদি---- দেওয়াল ম্যাগাজিন
মিউজিয়াম---বিউটি পার্লার
থিয়েটার হল--- নিষিদ্ধ পল্লি
ফুটপাথ---হাইওয়ে
ওষুধের দোকান--- চা বাগান
মালভূমি ---মালটিপ্লেক্স
পেরিয়ে হরিণটা আবার দাঁড়াল
কয়েক মুহূর্ত
আমিও --- পেছন পেছন
তারপর হঠাৎ পেছন ফিরল হরিণটা
আমাকে সে দেখতে পেল না
সেটা তো আগে ভাগেই ঠিক করা ছিল
পেছনে তাকিয়ে
পড়ন্ত বিকেলে
সে দেখতে পেল নিজের ছায়াটা
তখনও লেপ্টে আছে তার সঙ্গে
এই প্রথম হরিণটা বিষণ্ণ হল
অবসন্ন হল
তারপর টলতে টলতে
হুমড়ি খেয়ে পড়ল নিজের ছায়ার ওপর
আমিও---- পেছন পেছন
বেসামাল হয়ে পড়লাম
ঝুপ করে--- আমার ছায়ার ওপর
তারপর যখন চোখ খুলল
ঘুম ভাঙল
দেখলাম আপনি আমার
মুখের খুব কাছাকাছি
ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞাসা করছেন
‘কী বলছিলে ?’
তখনই আমি বললাম---
আমি সেই হরিণটার কথা বলছিলাম |

.           **************************  
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর