অম্বুবাচী গেলে বাঁচি হচ্ছে বৃষ্টি ছাড়ছে না ফসল এ সন ভালো হবে শোধ হবে সব ধারদেনা
উনুনে মোটে আঁচ পড়েনি হবে না আজ রান্না ভিজে গায়ে মাটি-মায়ের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না
. এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে
৪ বৃষ্টি পড়ছে ? তবে তো এক্ষণি---
যেতে হবে রথের মেলায় যাবি তুই ? সঙ্গে গেলে তোকে দেব রথের পার্বনি | হেঁটে যাব | রাজি ?
নদী থাকলে, নৌকো থাকলে হত ভালো তবে কি জানিস ? বদ্ধস্রোত নদীতে এখন শুধু ঝাঁঝি |
আমি যাব খালি পায়ে, তুই জুতো প’রে ; কারণ তো জানিস— জীবাণুরা ওৎ পেতে থাকে এ শহরে | গণ্ডারের চামড়া গায়ে আছে আমার হয় না কিছু পেরেক বা কাঁচে | পাওয়া গেলে কিনে দেব তারপাতার ভেঁপু— যাবি দাদু, যাবি ?
চোখে ছানি, শুনি কম একটা কান একেবারে কালা নেই দম ফোলানো বেলুন কিনি, নিজে আমি দিতে পারি নে ফুঁ | তালপাতার ভেঁপু পেলে আমার কানের কাছে মুখ এনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খুব জোরে একবার বাজাবি ?
বৃষ্টি পড়ছে ? তবে তো এক্ষনি যেতে হয় রথের মেলায় | আমি যাচ্ছি | তুই যাবি ?
ভিজলে কারও হয় কিছু ? ছাই হয় | মা-বাবারা বলতে হয় বলে— তাও শুধু নিজের ছেলেকে | ভয় দেখায়, ভয় |
একটু শুধু মর্চে-পড়া, তা নয়তো— দ্যাখ্ দাদু আমার এ লোহার শরীর | আমি জানি জাদু, রোদ জল শীত গ্রীষ্ম সবই আমার স্ববশ |
মা কেমন ছিল তোর জানি না ছোটোতে যেরকম বকে তোকে সারা বেলা মনে হয়, বড্ডই মুখরা | তবে তোর বাবাকে তো জানি— ফেলে রেখে পরীক্ষার পড়া খালি খেলা, খালি খেলা, সারাক্ষণ খেলা | সেই তোর ডানপিটে দস্যি বাবা বড় হয়ে আপিসে যাবার আগে রোজ তোকে কিনা বলে— খবর্দার, বেরোবে না জলে |
বড় হয়ে লোকে এত ভুলে যায় নিজেদের ছেলেবেলাটাকে-- মাথাভর্তি টাকে হাত দিয়ে ঢাকে, শুধু ঢাকে |
রথের মেলায় আমরা যাব ভিজে ভিজে মজা হবে কী যে ! যখন ছিলাম আমি ঠিক তোর মতো যতই ঝড়বৃষ্টি হোক খেলা থাকলে বেরোতেই হত | সারাটা দুপুর কাটত ছিপ হাতে বিলে | ভিজে জামা, ভিজে জুতো রোদ উঠলে গায়েই শুকুতো | ছুটিটা মজায় কাটত ঠাকুর্দার কাছে দেশের বাড়িতে | বাবা লিখত : এ করো-না, সে করো-না খালি ডুববে, সাপে কাটবে কিংবা করবে অসুখ-বিসুখ— সব সময় ভয় | অন্ধকারে তুমি যদি দেখবে জোনাকি হাতে কেউ লন্ঠন নেয় নাকি ? ঝুঁকে পড়ে ইদারার জলে দেখা যাবে কাকে ? কথা বলে জানবে না একবার কে সেখানে থাকে ? নষ্টচন্দ্রে ফল চুরি করাই তো রীতি | তাই ব’লে ছিলাম না অবুঝও চাঁদসদাগর হয়ে দিতাম বাঁ-হাতে মনসাকে পুজো |
ইয়া ! আমার মাথায় এক, দ্যাখ দাদু, এসেছে আইডিয়া | মা-র জন্যে কিনলে কিছু ফলফুলের চারা গলে জল হয়ে যাবে দেখিস বেচারা |
আর তোর বাবার জন্যে কী যে কেনা যায় যা শেখাবে তাই শিখবে দাঁড়ে বসে এমনি এক কথা-বলা পাখি, নাকি গলায় বগ্ লস দেওয়া লোম-অলা কুকুর যারা হয় প্রভুভক্ত খুব |
আমাদের সব সাজা হয়ে যাবে তাতেই মকুব |
বৃষ্টি পড়ছে ? তবে তো এক্ষনি যেতে হয় রথের মেলায় | কি রে তুই, যাবি ?
৫ আমি রইলাম প’ড়ে . অজলে অস্থলে মনপবনে দেখ রে . ময়ূরপঙ্খী চলে রওনা হয়ে . কাগজের নৌকো আর ফেরেনি . বাড়ি মুখো ভেসে গিয়েছে . আমার সৃষ্টি চোখের কোণে .. নামিয়ে বৃষ্টি ||