কবি গণসঙ্গীতকার শুভেন্দু মাইতি - জন্মগ্রহণ করেন মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে। কবির
পরিবারে গানের চর্চা ছিল না। কবির গ্রাম মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে এক বৃদ্ধ গাইতে আসতেন। ওই বৃদ্ধ
ডোকগী বাজিয়ে গান গাইতেন, ভিক্ষা করতেন। কবি ঐ বৃদ্ধের গান শুনেই বড় হয়েছেন, বলা যায় তিনিই
কবির গানের গুরু। উনি ভাঁড় গান গাইতেন। স্ত্রী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গান গাইতেন। বলতেন একটা গাছের
চারা এক বাগান থেকে তুলে এনে আর এক বাগানে পোঁতা হয়েছে, তাকে সহনাভূতি দিয়ে দেখ। ঐ বৃদ্ধের
গান কবিকে আকর্ষণ করত। এছাড়া কবির মাসিমার বাড়ির কলের গান ( গ্রামাফোন ) শুনে আড়াইশো-
তিনশো গান মুখস্ত করে ফেলেছিলেন।
কবিকে ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে আনেন ভূপাল পাণ্ডা, আর একজন হলেন হৃষিকেশ সাউ, চারণ কবি,
নন্দীগ্রামে বাড়ি। এ ধরণের গান, গণসংগীত, মানুষের জন্য গান গাইবার প্রেরণা হৃষিকেশ সাউয়ের কাছ
থেকে পাওয়া তাঁর। গান শেখার সূত্রেই কবির কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান। তিনি সি.পি.আই.এম. দলের
সঙ্গে যুক্ত।
কবি শুভেন্দু মাইতি ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল অবধি হলদিয়ায় ছিলেন। রাজনৈতিক কাজের সঙ্গে সাংস্কৃতিক
কাজও করতেন। ১৯৯৪ সালে কলকাতায় চলে আসেন।
কবির কলকাতায় চলে আসার কারণ হল পার্টির কিছু লোক চাইছিলেন। এছাড়া হলদিয়া উত্সবে বাপী
লাহিড়ীর অংশ নেওয়া কবি সমর্থন করেন নি। হলদিয়া উত্সবের পরিকল্পনাটা কবিরই ছিল। লোকসংস্কৃতি
ও গণসংস্কৃতির বিভিন্ন আঙ্গিক, ধারা বিনিময় ও বিকাশে সাহায্য করাই এই উত্সবের উদ্দেশ্য ছিল।
সেখানে বাপী লাহিড়ীর অংশ নেওয়া কবি সমর্থন করতে পারেন নি। কবির মতে সাংস্কৃতিক অবক্ষয়,
সাম্রাজ্যবাদী অপসংস্কৃতি-ই এখন সবচেয়ে বড় বিপদ। মানুষ যদি মানুষই না থাকে তবে সে কমিউনিস্ট
হবে কিভাবে?
কবি শুভেন্দু মাইতি একশো ষাট-সত্তরটা গান লিখেছেন (১৯৯৭ পর্যন্ত)। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম গান
লিখেছেন। যেমন পূর্ব-ইউরোপের ঘটনার উপর একটি গান লিখেছেন। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে কবির গান
প্রচলিত ছিল ‘অতুল্যপ্রসাদী শ্যামাসঙ্গীত’ বলে। সেইসময় ‘এবার রক্ষা কর মা রক্ষাকালী’ খুব জনপ্রিয়
হয়েছিল। এরপর গান লেখা শুরু করেন ১৯৭৫ সালের পর থেকে। ‘মইনুদ্দিন’ কবির বিখ্যাত গান। এই গান
লেখার জন্য কবি নিজেকে গর্বিত মনে করেন।
তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো, তাঁর পরিচিতি ও ক্ষমতার সদব্যবহার করে আরও বহু
গণসঙ্গীতকার ও গায়কদের সুযোগ করে দেওয়া। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সুমন চট্টোপাধ্যায় (অধুনা কবীর
সুমন), প্রতুল মুখোপাধ্যায়, পীযূষকান্তি সরকার প্রমুখ। এঁদের সঙ্গে তিনি H.M.V. কোম্পানির যোগাযোগ
করিয়ে দেন এবং সবাইকে বলেন এঁদের গান শুনতে। (যুদ্ধ জয়ের গান পৃষ্ঠা ৬০২)।
জীবনমুখী গানের নচিকেতা, একাধিক সাক্ষাত্কারে বলেছেন যে একবার কোনো এক রেলের কামরায় মালদা
যাত্রাকালে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে তিনি গান করছিলেন। সেই কামরাতে শুভেন্দু মাইতিও সফর করছিলেন।
তিনি গিয়ে নচিকেতার সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে কলকাতায় ফিরে আসার পরে নিজেই নচিকেতাকে খুঁজে,
দেখা করে, তাঁর সঙ্গেও রেকর্ড কোম্পানির যোগাযোগ করিয়ে দেন। ( আজকাল পত্রিকা, রবিবাসর, ১৯শে
ডিসেম্বর ১৯৯৩, সাক্ষাত্কার - মধুমিতা দত্ত )। এরা সবাই পরবর্তীতে বাংলা গানের জগতে খুবই
প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। শোনা যায় যে লোপামুদ্রাকেও শুভেন্দু মাইতিই H.M.V. কোম্পানির সাথে যোগাযোগ
করিয়ে দেন।
আমরা কবি রাজেশ দত্তর কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ, কবি শুভেন্দু মাইতির এই পাতাটি তৈরী করার
সবরকম তথ্য, আমাদের দেবার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে। আমরা আরও কৃতজ্ঞ শ্রী চিররঞ্জন
পালের ( +৯১৯৪৩৪৫১৬৮৯৮) কাছে তাঁর নানাভাবে এই পাতাটি তৈরী করতে সাহায্য করার জন্য।
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত “এবং জলার্ক” থেকে ০২.০৬.১৯৯৭ তারিখে প্রকাশিত “যুদ্ধ জয়ের গান”, গ্রন্থ
থেকে তথ্যাদি নেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁদের কাছেও কৃতজ্ঞ।
আমরা মিলনসাগরে কবি শুভেন্দু মাইতির গান ও কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে
পারলে এই প্রচেষ্টার সার্থকতা।
উত্স - শুভেন্দু মাইতি : সময় এখন খ্যামটা নাচছে, স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত “যুদ্ধজয়ের গান” (১৯৯৭)।
কবি শুভেন্দু মাইতির মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২২.১১.২০১৫
...